আকাশদীপের শাস্তির দাবি ডাকেটের শৈশবের কোচ নটের!

ওভালে বেন ডাকেটকে আউট করে আকাশদীপ যে আচরণ করেছিলেন তার জন্য শাস্তি চেয়েছেন ইংরেজ ব্যাটারের কোচ। শুক্রবার আকাশদীপ নিজের সমাজমাধ্যমে একাধিক ছবি পোস্ট করেছেন। সেখানেই দেখা গিয়েছে তাঁর নতুন গাড়ি। সঙ্গে লিখেছেন, “স্বপ্ন পূরণ হল। হাতে চাবি পেলাম। আমার জীবনে যাঁরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাঁরাই সঙ্গে রয়েছেন।” আকাশদীপের গোটা পরিবারকে দেখা গিয়েছে এই মুহূর্তের সঙ্গী হতে। বাড়ির সকলকে নিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন তিনি। কিন্তু, ওভাল টেস্টে ডাকেটকে আউট করে তাঁর গলা জড়িয়ে ধরে বিদায় জানিয়েছিলেন আকাশদীপ। বিষয়টা একেবারেই পছন্দ হয়নি ডাকেটের ছোটবেলার কোচ জেমস নটের। তিনি ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’কে বলেছেন, “খুব হাড্ডাহাড্ডি সিরিজ়ের একটা অংশ ছিল ওটা। তবে তরুণ ক্রিকেটারেরা ভবিষ্যতে যাতে ওই কাজ না করে তার জন্য শাস্তি দেওয়া দরকার ছিল। ব্যক্তিগত ভাবে ওই ঘটনায় অবশ্য আমি বিশেষ চিন্তিত নই।” উল্লেখ্য, ওভালে ইংল্যান্ডের ইনিংসের শুরু থেকেই লেগে গিয়েছিল আকাশদীপ ও ডাকেটের। তাঁর একটা বল রিভার্স পুল করে ছক্কা মারেন ডাকেট। তার পর ইংরেজ ব্যাটার আকাশদীপকে বলেন, “তুমি আমাকে আউট করতে পারবে না।” এতে আকাশদীপও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। দু’জনের মধ্যে লড়াই চলতে থাকে। অবশেষে ৪৩ রানের মাথায় আকাশদীপের বলে রিভার্স স্কুপ করার চেষ্টা করেন ডাকেট। বল ব্যাটের কানায় লাগে। উইকেটরক্ষক ধ্রুব জুরেল ক্যাচ ধরেন। ৩৮ বলে ৪৩ রান করে আউট হন ডাকেট। তার পরে দেখা যায়, আকাশদীপ ডাকেটের গলা জড়িয়ে ধরে কিছু একটা বলছেন। তাঁর মুখে হাসি থাকলেও ধারাভাষ্যকারদের মনে হয়েছে বিদ্রুপ করছেন তিনি। ডাকেটের মুখে কিন্তু হাসি ছিল না। কিছুক্ষণের মধ্যে আকাশদীপকে সরিয়ে নিয়ে যান লোকেশ রাহুল।
আউট হওয়া বেন ডাকেটের কাঁধে হাত রেখে আকাশদীপের ফিসফিসই এখন ওভাল জুড়ে বড় গুঞ্জন!

ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় দিন। বেন ডাকেটকে আউট করলেন আকাশদীপ সিং। তারপরই ওভাল দেখল এক আভিনব দৃশ্য। আকাশদীপ এগিয়ে গেলেন ডাকেটের দিকে, তার কাঁধে হাত রেখে ফিসফিস করে কী যেন বললেন। প্যাভেলিয়নে ফিরে যাওয়া ডাকেটকেও তাতে উত্তেজিত হয়ে পড়তে দেখা যায়। চাপা তর্কেও জড়িয়ে পড়েন আকাশদীপের সঙ্গে। কিন্তু এই ঘটনায় অবাক ইংল্যান্ড শিবির। মুখ খুলেছেন দলের সহকারী কোচ মার্কাস ট্রেসকোথিক। বলেছেন, “আকাশ দীপ ভাগ্যবান যে, ডাকেট বড় কোনও পদক্ষেপ নেননি। শুধু মুখের জবাবেই থেমে গিয়েছেন। তাঁদের আমলে এমন ঘটনা হলে জল অনেক দূর গড়াতেই পারত। জীবনে কোনও বোলারকে এরকম করতে দেখিনি!” সাংবাদিক বৈঠকে ট্রেসকোথিক প্রশ্ন তুলেছেন, “এরকমভাবে কোনও ব্যাটসম্যানকে মাঠ থেকে বিদায় দেওয়ার দরকার ছিল?’ প্রসঙ্গত, ডাকেটের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং তাঁকে শেষমেশ বিপদে ফেলে। আকাশ দীপের বল খেলতে গিয়েই উইকেট হারান। তাতেই হালকা ঝামেলা। যদিও এখানেই শেষ নয়। কিছুক্ষণ পর আরও এক উত্তেজনার ছবি মাঠে ধরা পড়ে। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন জো রুট। এতটাই যে, পরিস্থিতি শান্ত করতে এগিয়ে আসতে হয় আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনাকে। ম্যাচের পর কৃষ্ণ অবশ্য বিষয়টি লঘু করেই দেখলেন। তিনি বলেন, ‘খুব ছোটখাটো ব্যাপার। আসলে তখন খেলার লড়াইয়ের উত্তাপটাই বেরিয়ে এসেছিল। মাঠের বাইরে ওর সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক। একটু ঠাট্টা-মশকরি চলছিল, যা দু’জনেই উপভোগ করেছি!’
মা লাডোলা চান আকাশ দেশকে গর্বিত করুক

মা লাডোলা দেবী ও দিদি জে্যাতি সিং আকাশদীপের পারফরম্যান্সে উচ্ছ্বাসের সাগরে ভাসছেন।
অসুস্থ দিদির চিকিৎসা নিয়ে ভাবনা, নিজের অ্যাকাডেমি-র সম্প্রসারণের পরিকল্পনা-সাফল্যেও আকাশদীপের পা মাটিতেই

সুদীপ পাকড়াশীঃ দুর্গাপুর থেকে কলকাতায় এসে ভিডিওকন ক্রিকেট অ্যাকাদেমিতে তার স্যরের কাছে মাত্র তিন বছর ছিলেন আকাশদীপ সিং। সে তো প্রায় ১৫ বছর আগের কথা। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। দুর্গাপুরে টেনিস-বলে ক্রিকেট জীবন থেকে ২০১০-এ ইউনাইটেড স্পোর্টসের হয়ে প্রথম ডিভিশন খেলা, ভিশন-২০২০-তে নজর কাড়া, বাংলার জার্সি পরা থেকে শুরু করে আইপিএলের স্বাদ পাওয়া আকাশদীপ রবিবার বার্মিংহ্যামে নায়ক হয়ে উঠলেন। মহম্মদ সিরাজ আর আকাশদীপের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ৫৮ বছর পর এজবাস্টনে ভারতের ইতিহাস গড়া। প্রতিষ্ঠা, বিশেষত আর্থিক প্রতিষ্টা তাকে প্রথম জীবনের কোচকে ভুলিয়েই দিতে পারত। কিন্তু ভোলায়নি! সেই কথা বলতে গিয়ে ভিডিওকন অ্যাকাডেমিতে আকাশের কোচ সৌতম মিত্র অভিভূত! টেস্ট শুরু হওয়ার আগে কোচ মেসেজ করেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে জবাব। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট নিয়েছেন। কোচ আবার ধন্যবাদ জানিয়ে মেসেজ করেছেন। তার উত্তরে আর মেসেজ নয়, বার্মিহ্যাম থেকে সোমবার কোচকে ফোন করেছেন ভারতের জয়ের অন্যতম নায়ক। “আমাকে ফোন না-ও করলে পারত। এখন তো ওর বৃত্তটা আর বাংলার ক্রিকেটে আবদ্ধ নেই। কিন্তু পা-টা এখনও মাটিতে আছে। শিকড়কে ভোলেনি।” মানুষ আকাশদীপে মুগ্ধতার আরও একটি কারণ সৌতমের মনে হয়েছে, ওর সংযমী কথাবার্তায়। “নিজের বোলিং নিয়ে উচ্ছ্বাস কম। বলছিল, এই পারফরম্যান্সটা ধরে না রাখতে পারলে উচ্ছ্বসিত হয়ে লাভ নেই।” সৌতম জানালেন, একইসঙ্গে, ফোনে তার স্যরের সঙ্গে ওই টুকু সময়েই আকাশদীপের কথায় পরিবার নিয়ে ভাবনার প্রতিফলন। “ও কিন্তু ভাবছে ক্যানসারে আক্রান্ত দিদি-র চিকিৎসার কথা, মা-র জন্য ভাবনা। এমনকী, এবছরই সাসারামে নিজের নতুন বাড়ির পৃহপ্রবেশে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। তখন শুনেছিলাম, জমি কিনে নিজের অ্যাকাডেমি করতে চলেছে। তার সম্প্রসারণ নিয়েও ভাবছে আকাশদীপ,” বলছেন সৌতম। প্রসঙ্গত, রবিবার, টেস্টের পর, টেস্ট সস্প্রচারকারী সংস্থাকে সাক্ষাৎকারে আকাশদীপ জানিয়েছেন, তার ১০টা উইকেট দিদি-কে-ই উৎসর্গ করছেন। এ-ও জানিয়েছেন, দু’মাস আগে ক্যানসার ধরা পরা দিদ এখন শারীরিকভাবে অনেকটাই স্থিতিশীল। কিন্তু পেশার সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রথম সাফল্যের ছোঁয়া ঝড়ের মতই অনেক কিছুকে ভুলিয়ে দেয়। সৌতম বলছেন, এখানেই আকাশদীপ ব্যতিক্রম। আর এই মানসিকতার পেছনে কোচের মনে হয়েছে শৈশবের লড়াইয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থেকে গিয়েছে। অপ্রত্যাশিতভাবে ছোটবেলায় বাবা আর দাদার প্রয়াত হওয়া। সংসার চালানোর দায়িত্ব অল্প বয়সেই নিজের কাঁধে এসে পরা, বিহার ক্রিকেট সংস্থা নির্বাসনে থাকায় ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ায় প্রতিবন্ধকতা-অল্প বয়স থেকেই আকাশদীপ জেনে গিয়েছেন লড়াই ছাড়া তার জীবনে কোনও প্রাপ্তি সম্ভব নয়। আর বোলার আকাশদীপ? সৌতম বলছেন, “আমার আনন্দ এখানে যে অনেকবছর পর ভারত একজন প্রকৃত সুইং বোলার পেল এবং সে বাংলার। আর ভারতীয় ক্রিকেটের এই প্রাপ্তিতে আমার যৎসামান্য হলেও অবদান থেকে গেল।”
আকাশের সেরাটা দেওয়া বাকি, বললেন লাল

বাংলা রঞ্জি দলে খেলার জন্য আকাশকে কিটস তুলে দিচ্ছেন অরুণলাল। ফাইল চিত্র।
কোচের কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে চান আকাশদীপ

উইকেট নেওয়ার পর আকাশদীপকে ঘিরে ভারতীয় ক্রিকেটারদের উচ্ছ্বাস।