বৈভবকে নিয়ে মন্তব্যে সমালোচনার মুখে শুভমন গিল

পরিণত মানসিকতার পরিচয় দিতে পারেননি গুজরাট টাইটানস অধিনায়ক শুভমন গিল। যে বৈভবকে নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে গোটা দেশে, আবেগে, উচ্ছ্বাসে বৈভব বন্দনায় মুখর সকলেই, তখন তাঁকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক শুভমন গিল, সেটাকে ভালভাবে নিতে পারেননি কেউ। সমালোচনা হচ্ছে গিলের মন্তব্য নিয়ে। ম্যাচের শেষে গিলকে বৈভবের বিস্ফারক ইনিংস নিয়ে বলতে বললে তিনি বলেন, এটা বৈভবের দিন ছিল, সেটাকে ও ভালভাবে কাজে লাগিয়েছে। আসলে বাটলার বৈভবের ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন, সেটাকেই ইঙ্গিত করেছেন গিল। এমন ইনিংসের পর, এমন অবিস্মরণীয় কৃতিত্বের পর সেই ইনিংস নিয়ে এমন মন্তব্য নিয়েই এখন চর্চা। শুধু শুভমন গিল কেন, গুজরাট টাইটানসের কেউই ভাবতে পারেননি ১৪ বছর ৩২ দিনের একটা কিশোরের কাছে এভাবে নাস্তানাবুদ হতে হবে। টাইটানসের কী সব বোলার! মহম্মদ সিরাজ, ইশান্ত শর্মা, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা, রশিদ খান – সব আন্তর্জাতিক বোলার, তাঁদের নিয়ে এভাবে ছেলেখেলা করবে বাচ্চা ছেলেটা, কে ভেবেছিল! হ্যাঁ, মারতে গিয়ে ক্যাচ একটা তুলেছিলেন বৈভব, কিন্তু অবিস্মরণীয় ইনিংসে সেটা কি ভুলিয়ে দেননি বৈভব সূর্যবংশী? অথচ গিল কেন ভুলতে পারলেন না, সেটাই ভাবছেন সকলে। প্রাক্তন ক্রিকেটার অজয় জাদেজাও আশা করেছিলেন বৈভবের অনেক বেশি প্রশংসা করবেন শুভমন গিল, বিশেষ করে তিনি যখন ছিলেন প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক। গিল যেভাবে ভাগ্যের কথা নিয়ে এসেছেন, সেটা একেবারেই পছন্দ হয়নি জাদেজার। গিল যদি মন খুলে প্রশংসা করতেন তাহলে হয়ত সমালোচনার বদলে প্রশংসিত হতেন তিনিও।
৬ মাস আগেই দিওয়ালি এলো, বললেন বৈভবের বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশী

বৈভব সূর্যবংশী – এই একটা নাম নিয়েই ক্রিকেট মহলে এখন যত আলোচনা। সোমবার জয়পুরে সকলের হৃদয় জিতে নিয়েছেন ১৪ বছরের কিশোর বৈভব সূর্যবংশী। কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসাবে টি টোয়েন্টিতে শতরান করে বিশ্বরেকর্ড। ৩৫ বলে শতরান করে আইপিএলে দ্বিতীয় দ্রুততম হিসাবে অনন্য নজির। বিস্ফারক, বিধ্বংসী ওই ইনিংস নিয়ে চর্চা চলছেই। আপ্লুত বৈভবের বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশীর আবেগঘন প্রতিক্রিয়া, ৬ মাস আগেই দিওয়ালি এসে গেল। সোমবার জয়পুরে বৈভব যখন তাণ্ডব করছেন, তখন এক হাজার ১৭৭ কিলোমিটার দূরে বিহারের সমস্তিপুরে বিস্ময় কিশোরের মহল্লায় সবাই প্রার্থনায় ব্যস্ত ছিলেন। তারপর সেটাই উৎসবে পরিণত হয়ে গেল। শুভমন গিলের উঠে আসার যে গল্প, তাতেই উৎসাহিত হয়ে বৈভবের জন্যও তেমনই ব্যবস্থা করেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমী বাবা। এনসিএতে ভিভিএস লক্ষণের হাতে তৈরি। এখন রাজস্থান রয়্যালসে রাহুল দ্রাবিড়, বিক্রম রাঠোরদের তত্ত্বাবধানে আছেন বৈভব, তাই তাঁদের সকলকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছেন সঞ্জয়। শুভমন গিল, পৃথ্বী শ, অভিষেক শর্মা, সরফরাজ খানদের বাবারা যেমন তাঁদের ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন, ক্রিকেটার তৈরি করার জন্য নিজেদের সামর্থ্যকে উজাড় করে দিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই বৈভবের জন্য করেছেন সঞ্জীব সূর্যবংশী। শুভমনের গল্প জেনে বৈভবের জন্যও সিমেন্টর পিচ বানিয়ে দিয়েছিলেন। সেই শুভমনের দলের বিরুদ্ধেই এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটায় বেশি খুশি সঞ্জীব বৈভবের সৌভাগ্য, বেড়ে ওঠার সময় পাশে পেয়েছেন লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়দের। এনসিএতে কোচিং দিয়ে লক্ষ্মণই দ্রাবিড়কে বলেছিলেন এই অসামান্য প্রতিভাকে রাজস্থান রয়্যলস দলে নিতে। তাই কৃতজ্ঞতায় মাথা ঝুঁকে আসছে সঞ্জীবের। বৈভবের কোচ মনীশ ওঝা জানান, ২ বছর ধরে বৈভবকে কোচিং দিচ্ছেন লক্ষ্মণ। রাজস্থান রয়্যলসের ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোরও এই দুরন্ত প্রতিভায় মুগ্ধ, বিস্মিত।
বৈভব কীর্তি! বস বেবির ঘোরে আচ্ছন্ন ভারতীয় ক্রিকেট

১৬ বছরের সচিন তেন্ডুলকরকে টেস্ট খেলতে দেখেছিল গোটা বিশ্ব। দেখেছিল দুরন্ত ওয়াকার ইউনিসকে শাসন করতে। কিন্তু সেই সচিনও বিস্ফোরিত চোখে দেখলেন ১৪ বছরের এক বাচ্চাকে অবিশ্বাস্য কীর্তি গড়তে। বৈভব সূর্যবংশী – বিহারের এই তরুণ, না তরুণ নয়, কিশোর, বিস্ময় কিশোর জয়পুরে এ কী কাণ্ড ঘটালেন! সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসাবে টি টোয়েন্টিতে শতরানের বিশ্বরেকর্ড! আইপিএলে দ্য ইউনিভার্স বসের পরেই এই বস বেবি। হ্যাঁ, জাস্টিন ল্যাঙ্গার নামটা দিয়েছেন। দ্বিতীয় দ্রুততম শতরান। গেইল করেছিলেন ৩০ বলে আর ১৪ বছর ৩২ দিনের বস বেবি করলেন ৩৫ বলে। অবিশ্বাস্য কীর্তি গড়া দেখে বিস্ফোরিত ক্রিকেটবিশ্ব। আইপিএলে দ্রুততম শতরানে যাঁর রেকর্ড ভাঙলেন, সেই ইউসুফ পাঠান থেকে যুবরাজ সিং, হরভজন সিং থেকে কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত – বিস্ময়, আবেগ, উচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে চলেছেন বৈভবকে, বৈভবের কীর্তিকে। ১৪ বছর বয়সে তুমি কী করতে? এই প্রশ্নটাই ছুঁড়ে দিয়েছেন বিস্মিত যুবরাজ সিং। যুবির পোস্ট, “এই বাচ্চা ছেলেটা এমনভাবে বিশ্বের সেরা বোলারদের মোকাবিলা করল, চোখের পাতা ফেলতে দিল না। বৈভব সূর্যবংশী – নামটা মনে রাখুন। কী ভয়ডরহীন অ্যাপ্রোচ! পরের প্রজন্মকে উঠে আসতে দেখে গর্ব হচ্ছে।“ কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকর অবিশ্বাস্য শতরানের ক্রিকটীয় ব্যাখ্যা দিয়েছেন। লিখেছেন, ভয়ডরহীন অ্যাপ্রোচ, ব্যাটের গতি, দ্রুত বলের লেংথ বুঝে নেওয়া এবং বলের পিছনে এনার্জিকে জেনারেট করা – এগুলোই এমন দুরন্ত ইনিংসের রেসিপি। ইউসুফ খান পোস্ট করেছেন, “আমার রেকর্ড ভাঙার জন্য অজস্র অভিনন্দন। ভারতীয় হিসাবে আইপিএলে দ্রুততম শতরান। সত্যিই স্বপ্নের মত।“ শ্রীকান্তের কথায়, ১৪ বছর বয়সে তো বাচ্চারা আইসক্রিম খাওয়ার কথা ভাবে। ভারতীয় ক্রিকেটের পরের মহাতারকা এসে গেল। হরভজন সিং থেকে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদাম্বরম – সকলেই বিস্মিত, আপ্লুত, বস বেবির ঘোরে আচ্ছন্ন।