শুধু বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলিয়ে বুমরার ম্যাচ-টাইম আরও কমানোর ভাবনা বোর্ডের!

জসপ্রীত বুমরা এখন বিসিসিআইয়ের কাছে শাঁখের করাত! তিনি ভাল খেললেও দল হারছে। আবার তার অনুপস্থিতিতেও দল জিতছে! টেস্ট ক্রিকেটের সিরিজ ৫ টেস্টের হলেই বুমরাকে নিয়ে বিড়ম্বনা! চোট-আঘাত, ফিটনেসের সঙ্গে ক্রমাগত লড়াই চলছে এই বোলারের। যে কারণে টানা দুটো টেস্ট খেললেই দ্বিতীয় টেস্টে তার শরীর বিদ্রোহ করছে! নিজেই বিশ্রাম চাইছেন। আর মিডিয়ার সামনে কারণ হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট’। ইংল্যান্ড সফর শেষ হয়েছে। বুমরাহকে নিয়ে এবার পাকাপাকি একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিকল্পনা বিসিসিআই-এর। বোর্ডের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বুমরার প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের সময় আরও সীমিত করতে চাইছে বোর্ড। লক্ষ্য একটাই—দলের প্রধান বোলারের ফিটনেস আর শরীর বাঁচানো, যাতে কেরিয়ার দীর্ঘায়িত হয়! বিসিসিআই-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী বুমরাকে রাখা হবে শুধু বড় টুর্নামেন্টের জন্য। সেক্ষেত্রে আপাতত আগামী বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারতে হতে চলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই পাখির চোখ। পাশাপাশি নজরে রয়েছে আইসিসি-র অন্যান্য প্রতিযোগিতা এবং গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট ও বোর্ডের কর্মকর্তারা নাকি বুমরাকে যতটা সম্ভব বিশ্রাম দেওয়ার বিষয়ে এখনই একমত! প্রসঙ্গত, দলের নির্ভরযোগ্য পেসার এ বছরই পিঠের অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। তাতে তাঁকে লম্বা সময় মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে। গত বছর বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি শেষে বিশ্রামে পাঠানো হয়। এমনকি আইপিএলেও পুরো সিজন খেলতে পারেননি। প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকর এবং হেড কোচ গৌতম গম্ভীর তখনই সাফ সাফ বলে দেন—যাই হয়ে যাক না কেন, ইংল্যান্ডে পাঁচ টেস্টের সিরিজে তিনটির বেশি ম্যাচ বুমরাহকে খেলানো হবে না। অথচ মজার বিষয়, যে দুই টেস্টে তিনি খেলেননি, ভারত জিতেছে। সৌজন্যে বাকি সিমারদের দুরন্ত পারফরম্যান্স। মহম্মদ সিরাজ একাই পাঁচ টেস্টে ২৩ উইকেট নেন। আকাশ দীপ তিন টেস্টে ১৩ উইকেট। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের ঝুলতে ১৪টি। সিরাজ, আকাশদীপ আর প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের এই পারফরম্যান্স বিসিসিআই কর্তাদের আশা জুগিয়েছে। যদিও চোটপ্রবণ বোলার নাকি বোর্ডকে জানিয়ে দিয়েছেন—তিনি তিন ফরম্যাটেই খেলতে চান। কিন্তু বিসিসিআইয়ের মেডিক্যাল টিমের সতর্কবার্তা—বেশি চাপ দিলে পুরনো চোট ফিরে আসতে পারে। সব মিলিয়ে ছবিটা পরিষ্কার। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এখন বুমরার ম্যাচের সংখ্যা কমিয়ে তার দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য চাইছে। মাঠে যত কম চাপ, বড় মঞ্চে আগুন ঝরানোর সম্ভাবনা তত বেশি।
পন্থের পর চোট বুমরারও! দুশ্চিন্তা বাড়ছে ভারতের

ঋষভ পন্থ ইতিমধ্যে ৬ সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে চলে গিয়েছেন। ভারতীয় দলের থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে এবার জসপ্রীত বুমরার পালা! ম্যাঞ্চেস্টারে তৃতীয় দিন মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর দ্বিতীয় নতুন বল পায় ভারত। সেই বলে মাত্র এক ওভার বল করেন বুমরাহ। তার পরেই উঠে যান তিনি। সাজঘরে যাওয়ার জন্য যখন সিঁড়িতে উঠছিলেন, তখনই দেখা যায় পড়ে গিয়েছেন। তার পর উঠে কোনও রকমে খোঁড়াতে খোঁড়াতে সাজঘরে যান তিনি। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর। চা বিরতির ২০ মিনিট আগে মাঠে ফিরলেও সেই সেশনে আর বল করতে পারেননি বুমরাহ। চা বিরতির পর যখন বুমরাহ বল করতে যান, তখনও দেখে বোঝা যাচ্ছিল তাঁর পায়ে সমস্যা হচ্ছে। নিজের স্বাভাবিক ছন্দে বল করতে পারছিলেন না তিনি। বলের গতি কমে গিয়েছিল। নিয়ন্ত্রণ ছিল না। প্রতিটা বলের পর বুমরাহের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল, সমস্যা হচ্ছে। তবে গোড়ালি, না পায়ের পেশিতে তাঁর সমস্যা হচ্ছিল তা জানা যায়নি। ধারাভাষ্যকারেও বলছিলেন, বুমরাহের সমস্যা হচ্ছে। শুধু বুমরাহ নন, তৃতীয় দিন বল করার সময় হালকা চোট পেয়েছেন মহম্মদ সিরাজও। ইনিংসে তাঁর ২২ নম্বর ওভার করার পর সিরাজ মাঠ ছাড়েন। অনেক ক্ষণ মাঠে ছিলেন না তিনি। ফলে অনেকটা সময় দলের দুই প্রধান বোলারকে পায়নি ভারত। পরে অবশ্য সিরাজ মাঠে ফেরেন। আবার বল করেন তিনি। তবে দুই বোলারকে নিয়েই চিন্তা বেড়েছে ভারতের। যে ভাবে তৃতীয় দিন তাঁরা নিষ্প্রভ থেকেছেন, তা ভাল ইঙ্গিত নয়। ভারতের পেস আক্রমণ এমনিতেই চোটে জর্জরিত। আকাশদীপ চোটের কারণে চতুর্থ টেস্টে খেলতে পারেননি। অর্শদীপ সিংহও চোটের জন্য চতুর্থ টেস্টের বাইরে। নীতীশ রেড্ডি তো সিরিজ় থেকেই ছিটতে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে অংশুল কম্বোজকে উড়িয়ে এনে খেলাতে হচ্ছে। পরের টেস্টে বুমরাহ খেলবেন না। ফলে ভারতের পেস আক্রমণ কী হবে, তা নিয়ে এখন থেকেই শুরু হয়েছে জল্পনা।
আকাশ থেকে মাটিতে বৈভব, রয়্যালসকে পিষে ফেলে মগডালে মুম্বই

হল না। জমবে কী, লড়াইটাই যে হল না। জয়পুরের সোয়াই মান সিং স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল রাজস্থান রয়্যালস ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। বিস্ময় বালক বৈভব সূর্য়বংশীর সঙ্গে বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার জসপ্রীত বুমরার রোমাঞ্চকর লড়াইটাই ছিল মূল আকর্ষণ। মজুদ ছিল মশলা, কিন্তু রাজস্থান ইনিংসের শুরুতেই সব বারুদ মিইয়ে গেল। পিঙ্ক আর্মির সব উৎসাহ শুষে নিয়ে দীপক চাহারের প্রথম ওভারেই দুটি বল খেলে শূন্য রানে আউট বৈভব। বুমরাও নিশ্চয় অপেক্ষায় ছিলেন, ওয়ান্ডারবয়ের মুখোমুখি হওয়ার জন্য, তা আর হল কই! বুমরা বল করতে আসার আগেই যে প্যাভিলিয়নে বৈভব। তার আগে রাজস্থানের জন্য বেশ বড় ২১৮ রানের টার্গেট রেখেছিল মুম্বই। দুটি জুটিতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ইন্ডিয়ান্স। প্রথম উইকেটে রোহিত (৩৬ বলে ৫৩) আর রিকেলটনের (৩৮ বলে ৬১) জুটিতে উঠল ১১৬ আর তৃতীয় উইকেটে সূর্য আর হার্দিকের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৯৬ রান। দুজনেই ২৩ বল খেলে করেছেন অপরাজিত ৪৮ রান। মুম্বই ইনিংস শেষ করল ২ উইকেটে ২১৭ রানে। তারপর শুধু আসা আর যাওয়ার গল্প। রাজস্থান ইনিংসে বৈভব দিয়ে শুরু। পরপর উইকেট হারিয়ে কোনও রকমে ১১৭ রানে ইনিংস শেষ করল রয়্যালস। হার ১০০ রানে। বোল্ট আর কর্ণ শর্মা তিনটি করে ও বুমরা দুটি উইকেট নিলেন। রান রেট এতটাই বাড়িয়ে নিলেন যে একেবারে শীর্ষে চলে গেলেন হার্দিকরা। খুব খারাপভাবে শুরু করে আবার স্বমহিমায় মুম্বই। সত্যিই মুম্বইয়ের জন্য যেন কথাটা এক`শ শতাংশ প্রযোজ্য, সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে।