পুতিন নিয়ে মোদীকে সতর্কবার্তা কাসপারভেরঃ ‘গোটা ভারত বেচে দিতে পারে’!

প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু গ্যারি কাসপারভ এবার পুতিনের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ নিয়ে সাবধান করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। মোদির উদ্দেশে প্রাক্তন এই রুশ দাবাড়ুর সতর্কবার্তা, ‘স্বৈরাচারী পুতিন আপনাকে ও গোটা ভারতকেই বেচে দিতে পারেন।’ আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক-সংঘাতের আবহে পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। পুতিনকে এক্স হ্যান্ডলে ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টি উল্লেখ করেই সুর চড়িয়েছেন পুতিনের রাজনীতির প্রকাশ্য সমালোচক বলেই পরিচিত কাসপারভ। তাঁর অভিযোগ, রুশ জনতার গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাকে গলা টিপে মারছেন পুতিন। পুতিনের সঙ্গে মোদির ফোনালাপের প্রসঙ্গ টেনে কাসপারভ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধী ভ্লাদিমির পুতিন আপনার বন্ধু? নিজের স্বৈরাচারী শাসন দীর্ঘায়িত করার জন্য আপনার এই বন্ধু আপনাকে ও গোটা ভারতকে বেচে দিতে পারেন।’ প্রসঙ্গত, ২০২২-এ রাশিয়ার বিচারমন্ত্রক কাসপারভকে “বিদেশি এজেন্টদের” তালিকায় যুক্ত করেছে। গতবছর তাঁকে জঙ্গি তকমাও দেওয়া হয়। যদিও কাসপারভ এই মুহূর্তে রাশিয়ার বাসিন্দা নন। নিপীড়ন এবং প্রাণনাশের আশঙ্কায় সেই ২০১৪ সালে রাশিয়া ছাড়েন তিনি।বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন কিংবদন্তি দাবাড়ু। সেখান থেকেই মোদিকে সতর্ক করলেন তিনি।
আচার্য বিনোবা ভাবের দাবা খেলার সঙ্গী ছিলেন বাবা; দিব্যার জিনে রয়েছে দাবার প্যাশন, বলছেন মা!

স্বাধীনতা সংগ্রামী, ভূদান আন্দোলনের জনক, গান্ধিজীর ‘আধ্যাত্মিক উত্তরসূরী’ বিনোবা ভাবে নিয়মিত দাবা খেলতেন পনবর আশ্রমে। আর সেখানে তার অনেক সঙ্গীর মধ্যে একজনের নাম? দুর্গা প্রসাদ শর্মা। সদ্য মহিলা দাবার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দিব্যা দেশমুখের প্রপিতামহ! দুর্গাপ্রসাদের নাতনি নম্রতা দেশমুখ। নাগপুরের চিকিৎসক। এখন তিনিও বিখ্যাত হয়েছেন মেয়ের খ্যাতিতে। কিন্তু মেয়ের খ্যাতিতে তার গর্ব যেন আরও বেড়ে গিয়েছে! তিনি ও দিব্যার বাবা-দুজনেই চাইতেন তাদের দুই মেয়েই দাবা খেলুক। চাওয়ার পেছনে কারণও ছিল। মেয়েদের জিনেও তো দাদুর দাবা খেলার ভালবাসার প্রভাব ছিল। বিশ্বজয়ের উত্তেজনা এখনও থিতিয়ে যায়নি। জর্জিয়ার লড়াইয়ে ভারতেরই কোনেরু হাম্পিকে পরাস্ত করে দেশে ফেরার পর নাগপুরে দিব্যাকে নিয়ে জমকালো উৎসব হয়েছে। ১৯ বছরের মেয়েটা জর্জিয়ার বাটুমিতে গিয়েছিলেন আন্ডারডগ হয়ে। সেখান থেকে চ্যাম্পিয়নের শিরোপা নিয়ে ঘরে ফেরা। নম্রতা দেশমুখ এই সাফল্যের আড়ালে পারিবারিক পূর্বসূত্র ও জিনের কারসাজি দেখছেন। দিব্যার কৃতিত্ব, তাঁর মায়ের চোখে, অনেকটাই পূর্বজদের কৃপা। দুর্গাপ্রসাদ যাঁর অন্যতম। খুশিতে ভরে ওঠা চোখে নম্রতা বলেছেন, “এটা ওর জিনেই রয়েছে। আমার মায়ের বাবা ডা. দুর্গাপ্রসাদ, আচার্য বিনোবা ভাবের অনুগামী, ছিলেন দাবার পরম অনুরাগী। প্রতি শনিবার তাঁরা পনবর আশ্রমে খেলতে বসতেন!” নম্রতা ও তাঁর স্বামী জীতেন্দ্রর খুব ইচ্ছে ছিল, তাঁদের দুই কন্যা দাবা শিখুক। প্রথম মেয়ে আর্যা এই পথে এগতে চাননি। বদলে বেছে নিয়েছেন বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন। ছোট মেয়ে দিব্যা পেয়েছেন দুর্গাপ্রসাদের ধাত। নাগপুরের শঙ্কর নগরের কলোনির রাহুল যোশীর অ্যাকাডেমিতে হাতেখড়ি। তারপর ধাপে ধাপে উত্থান। ছয় পেরিয়ে সাতে পা রেখেছেন যে বছর, সেই ২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-৭ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে নাম লেখান দিব্যা। আর ঘরে ফেরেন পদক জিতে। প্রথম বড় টুর্নামেন্ট। আর শুরুতেই বাজিমাত! এরপর ২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে আয়োজিত অনূর্ধ্ব–১০ বিশ্বখেতাব, ২০১৭-তে ব্রাজিলে অনূর্ধ্ব–১২ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জয়… উড়ান ছিল বাধাহীন, সাবলীল। প্রভূত সাফল্যের জেরে খুব অল্প বয়সেই অর্জন করেন মহিলাদের ফিডে মাস্টার (WFM) খেতাব। ২০২১-এ গ্র্যান্ডমাস্টার (WGM)। বিদর্ভ অঞ্চলের প্রথম দাবাড়ু হিসেবে এই স্বীকৃতি অর্জন করেন দিব্যা দেশমুখ। সেই সঙ্গে ভারতের ২২তম মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার হিসেবে রেকর্ড বুকে নাম লেখান। বছর দুই বাদে হাতে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার (IM) উপাধি। ২০২৪-এ দাবার জগতে সামনের সারিতে এনে এনে দেয় বিশ্ব জুনিয়র (অনূর্ধ–২০) গার্লস চ্যাম্পিয়নশিপ জয়। সেই অভিযান তিনি শেষ করেন অবিশ্বাস্য স্কোরে—১১ গেমে ১০ পয়েন্ট! স্রেফ চোখধাঁধানো সাফল্য নয়, ধারাবাহিকভাবে ভাল ফর্ম ধরে রাখাই দিব্যাকে বাকিদের থেকে আলাদা করে তুলেছে। ২০২৪-এর ৪৫তম দাবা অলিম্পিয়াডে ভারতের মহিলা দলের সোনাজয়ী সদস্য ছিলেন। দলের জয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। একই বছর ওয়ার্ল্ড টিম র্যাপিড অ্যান্ড ব্লিট্জ চ্যাম্পিয়নশিপে তাঁর পারফরম্যান্স রেটিং ২৬০০-র ওপরে ওঠে, যা এক কথায় অবিশ্বাস্য! দিব্যার ঝুলিতে ইতিমধ্যে এসেছে: তিনটি দাবা অলিম্পিয়াড সোনা, একাধিক এশীয় ও বিশ্ব বালিকা দাবা খেতাব, বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে বিশ্ব এক নম্বরকে হারানোর অভিজ্ঞতা। চেন্নাইয়ের চেস গুরুকুলে গ্র্যান্ডমাস্টার আরবি রমেশের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ নেন দিব্যা। তাঁর খেলার ধরন রীতিমতো ছকভাঙা। বয়স আঠারো হলেও পরিকল্পনায় পরিণতির ছাপ স্পষ্ট। চাল দেওয়ার শৈলী আগ্রাসী হলেও অহেতুক ঝুঁকি নিতে নারাজ। তীক্ষ্ণ রণকৌশল, ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত আর সৃষ্টিশীলতা—দিব্যার ক্যারিশমায় মুগ্ধ দাবা দুনিয়া। হ্যাঁ, এর সঙ্গে আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ কথা দিব্যার মুখে শোনা গিয়েছে। “মহেন্দ্র সিং ধোনিকে দেখে শিখেছি, মাথা কীভাবে ঠাণ্ডা রাখতে হয়!” দিব্যার ঠাণ্ডা মাথাই ওকে হয়ত আরও অনেকদুর নিয়ে যাবে।
দাবার বিশ্ব ‘আইপিএলে’ আনন্দের টিমের একমাত্র বাঙালি সদস্যের এখনও ঘোর কাটেনি কিংবদন্তির সংস্পর্শের!

সুদীপ পাকড়াশীঃ নাম সর্বার্থ মানি। বয়স ৯ বছর। সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। বাবা-মা দুজনেই ডাক্তার। জর্জিয়ার বাটুমি থেকে অনূর্ধ্ব-১০-এ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে সম্প্রতি ফিরেছে। সোমবার রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস একই টুর্নামেন্টে রুপোজয়ী ঐশিক মণ্ডলের সঙ্গে সর্বার্থকেও সম্বর্ধিত করলেন। সর্বার্থ খুব খুশি এই স্বীকৃতিতে। কিন্তু স্বীকৃতি তো তার কাছে নতুন নয়। ২০২৩-এ জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত তার ঝুলিতে ১৩টা আন্তর্জাতিক পদক! যার মধ্যে রয়েছে কমনওয়েলথ দাবায় সোনা, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপেও ৫টা পদক। জর্জিয়ায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এলো-রেটিংয়ে সর্বার্থ পৌঁছে যাবে ১৯৫০-এ। কিন্তু এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ খবর আছে। সাম্প্রতিককালে বাংলার দাবায় হয়ত সবচেয়ে বড় খবর! এক মাস আগে লন্ডনে দাবার আইপিএল হয়ে গেল। ফিডে-র বিশ্ব র্যাপিড এবং ব্লিৎজ টুর্নামেন্টে দলগত লড়াইয়ে ফিডে-র সিইও এবং বিখ্যাত গ্র্যান্ডমাস্টার এমিল সুটোষ্কি একটি দল কিনেছেন। তার নাম ফ্রিডম। ৬-জনের সেই দলে একমাত্র বাঙালি ও সর্কনিষ্ঠ দাবাড়ু হয়ে সুযোগ পেয়েছে সর্বার্থ। আর ‘ফ্রিডমের অধিনায়ক কে ছিলেন জানেন? বিশ্বনাথন আনন্দ! সর্বার্থর সঙ্গে কথা বলে মনে হল পদকগুলো নয়, একমাস হয়ে গেল, ও এখনও আচ্ছন্ন বিশ্বনাথন আনন্দে! দিব্যেন্দু বড়ুয়া অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত হওয়া এই খুদে প্রতিভা ফোনে বলছে, “আনন্দ স্যার যে পরামর্শগুলো দিতেন লন্ডনে থাকার সময়, সেগুলোই আমি পরে এই বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে খেলার সময় প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছি। লণ্ডনে থাকার সময় আনন্দ স্যারের সঙ্গে যে গল্প করতাম সেটাও আমি সারাজীবনে ভুলতে পারব না। এখনও পর্যন্ত আমার জীবনে সেরা প্রাপ্তি।” বাবা সিদ্ধার্থ মানিও অভিভূত এক মাসের লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতায়। “এমিল সুটোষ্কি নিজেই একদিন ফোন করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সর্বার্থর অনেক খেলার ভিডিও দেখে মুগ্ধ হয়ে উনি ফোনটা করেছিলেন। তারপর থেকে এমিল স্যার সর্বার্থর মেন্টর হয়ে কাজ করেন, শুধু ভালবেসে! এমনকী, জর্জিয়ায়ও প্রত্যেকদিন ফোন করতেন এমিল স্যর। ওর খেলা নিয়ে পরামর্শ দিতেন। আমার মনে হয় ২০২৫-এ এটাই আমাদের কাছে প্রথম বড় প্রাপ্তি।” সিদ্ধার্থ বলছেন, লন্ডনে ফ্রিডম দলের হয়ে খেলতে যাওয়াটা সর্বার্থর কাছে আরও এক অমূল্য প্রাপ্তি। “এখনও ভাবতে পারি না, মামেদভ রাউফ, অ্যালেক্সি সারানার সঙ্গে রাত ১১.৩০ টার সময় প্র্যাক্টিস করছে সর্বার্থ আর আনন্দ দেখছেন সেই খেলা। গল্প করতে করতে সর্বার্থকে পরামর্শ দিচ্ছেন। লুকিয়ে ভিডিও করে রেখেছি সেই দৃশ্য,” সিদ্ধার্থের কথায়ও আনন্দের ঘোরেরই রেশ! সেই কারণেই হয়ত ছেলের দাবা খেলার জন্য বছরে প্রায় লাখ ৪০ টাকা খরচ হলেও লড়াই চালিয়ে যেতে চান সর্বার্থর বাবা-মা। এই খরচের মূল অংশটা চলে যায় সর্বার্থর বিদেশে খেলতে যাওয়ার পেছনে আর কোচিং-এর জন্য। কোচিং নেওয়ার জন্য মাসে খ্রচ প্রায় ১২ লক্ষ টাকা! সর্বার্থ থেমে নেই। আগামি মাসেই আবুধাবিতে আর একটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সর্বার্থ। তার স্বপ্ন? বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া।