সাদার্নের পর বিদ্রোহের তালিকায় টালিগঞ্জ

২৪ ঘন্টা আগে প্রতিবাদ পত্র পাঠিয়ে ছিল সাদার্ন সমিতি। শুক্রবার দিল টালিগঞ্জ অগ্রগামী। দুই ক্লাবের বক্তব্যে ফুটে উঠল, আইএফএ যা করছে তা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়। সুতরাং নতুন করে সবকিছু করুক আইএফএ। নাহলে ঘরোয়া লিগ করার উপর নিষেধাজ্ঞা আনার দিকে এগোবে টালিগঞ্জ অগ্রগামী। বুধবার লটারি করে ঘরোয়া লিগের সূচী ঠিক করা হয়েছে। মোট ২৬টা দলকে গ্রুপ বিন্যাস করে জানানো হয়েছে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল এক গ্রুপে। অপর গ্রুপে রয়েছে মহামেডান স্পোর্টিং, ডায়মন্ডহারবারের মতো দল। প্রতিবারে লটারির মাধ্যমে সাধারণত গ্রুপ বিন্যাস করা হয়ে থাকে। সাদার্নের অভিযোগ, এবার সেই লটারি যে নিয়মে করা উচিত ছিল তা করা হয়নি। যেভাবে গ্রুপ বিন্যাস করা হয়েছে তাকে মেনে নিতে পারা যায়না। তাই চিঠি দিয়ে সাদার্ন প্রতিবাদ জানিয়েছে। সাদার্নের আরও অভিযোগ হল, লিগের উপর যেখানে আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। তাছাড়া গতবার লিগের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স কোন দলগুলো হল তাও ঠিক হয়নি। সেখানে কীভাবে এই লটারি হত পারে। সাধারণত গতবারের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স দলকে দুটো গ্রুপে রেখে লটারি করা হয়ে থাকে। গতবারের যেখানে লিগের ফয়সালা হল না সেখানে গ্রুপ বিন্যাস করাটাই তো অবৈধ। টালিগঞ্জ অগ্রগামী এই ফঁাকে নেমে পড়েছে ঘোলা জলে মাছ ধরতে। গতবার লিগে তারা অবনমনে চলে গিয়েছে। এমন কী শেষ কয়েকটা ম্যাচ তারা খেলেইনি। যেহেতু দল অবনমনে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে যায় তাই আর দল নামানোর প্রয়োজন মনে করেননি টালিগঞ্জ কর্তারা। সেই টালিগঞ্জ অগ্রগামী প্রতিবাদ পত্র পাঠিয়ে জানিয়েছে, চ্যাম্পিয়ন-রানার্স দল যেখানে ঠিক হল না সেই জায়গায় তাদেরকে বাদ দিয়ে কেন ঘরোয়া লিগের প্রিমিয়ার ডিভিসনের লটারি করা হবে। তাছাড়া তারা নাকি অবনমনে চলে যাওয়ার সরকারি চিঠি তাদের কাছে আইএফএ পাঠায়নি। সেই জায়গায় দঁাড়িয়ে টালিগঞ্জ অগ্রগামীও চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, সত্যিই কি গ্রুপ বিন্যাস করার ক্ষমতা আইএফএ-র আছে? বিশেষ করে যেখানে প্রিমিয়ার ডিভিসনের লিগের উপর আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে? আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত কি পারেন এভাবে আদালতকে অবমাননা করতে? আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত সাফ জানিয়ে দিলেন, রাজ্য ফুটবল সংস্থা যা করেছে তা মোটেই অবৈধ নয়। টালিগঞ্জ অগ্রগামীর চিঠি প্রসঙ্গে অনির্বাণ দত্ত বলেন, “আমরা যা করেছি তার মধ্যে কোথাও আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে না। ডায়মন্ডহারবার আদালত থেকে যে ইনজাংশন এনেছে তা হল, ইস্টবেঙ্গলকে যেন কোনওভাবে গতবার লিগের চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে ঘোষণা করা না হয়। এর সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন বা রানার্স দলের সম্পর্ক আসবে কোথা থেকে। তাছাড়া টালিগঞ্জ অগ্রগামী হল অবনমনের দল। তারা গতবার লিগের বেশ কিছু ম্যাচ খেলেনি। এমনিতেই তারা রেলিগেশনে চলে গিয়েছে। সেখানে আদালতের রায় শোনানোর দিকে তাকানোর মানে কি।” পরমুহূর্তে অনির্বাণ বলেন, “যে কোনও লিগে চ্যাম্পিয়ন দল উঠবে আর রেলিগেশন দল চলে যাবে পরের ধাপে। সেখানে আদালতের রায়ের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। তবু কিনা টালিগঞ্জ অগ্রগামী চিঠি দিয়ে বসল।” লিগ শেষ হয়নি বলে যা বলা হচ্ছে তাকে মানতে পারছেন না আইএফএ সচিব। তঁার বক্তব্য খুব পরিষ্কার। “দেখুন আমরা লিগ শেষ করে দিয়েছি। যারা বলছে লিগ শেষ করিনি তঁারা ভুল বলছেন। আমরা লিগের যত ম্যাচ ছিল তা করে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া টালিগঞ্জ যেখানে দল নামায়নি সেখানে রাজ্য ফুটবল সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী এমনিতেই পয়েন্ট কাটা যায়। তাহলে আর চিঠি দিয়ে লাভ কী হল বুঝলাম না।”
ঘরোয়া লিগে ভূমিপূত্রের সংখ্যা বাড়ল

এবার থেকে ঘরোয়া লিগে পঁাচজন বাংলার ছেলেকে খেলা বাধ্যতামূলক করল আইএফএ। যা গতবছর ছিল চারজন। একজন বাড়িয়ে শুধু থেমে থাকল না আইএফএ। আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আগামীবছর ঘরোয়া লিগে সেই সংখ্যাটা গিয়ে পঁাচের জায়গায় ছয় হবে। যা এতদিন থেকে প্রতিটি দলকে জানিয়ে দিল আইএফএ। ফলে বাংলার ফুটবলারদের দলে অন্তর্ভুক্ত করানো নিয়ে আর কোনও সমস্যা থাকবে না। বৃহস্পতিবার আইএফএ ঘরোয়া লিগে নিয়ে আলোচনা সভায় বসেছিল। সেখানে একজন ভূমিপুত্র বাড়াবার প্রস্তাব আনতেই দুই প্রধান ইস্টবেঙ্গল ও মহামেডান আপত্তি জানায়। মোহনবাগান বৃহস্পতিবারের সভায় ছিলই না। তাই সবুজ-মেরুন শিবিরের বক্তব্য জানা যায়নি। কিন্তু দুই প্রধানের মূল বক্তব্য ছিল, ইতিমধ্যে তঁারা ঘরোয়া লিগের জন্য দলগঠন করে ফেলেছেন। তাই তঁারা জানতেন না। ফলে এবার যেন একসঙ্গে দুজন ভূমিপুত্রের সংখ্যা বাড়ানো না হয়। আইএফএ বক্তব্যটা যুক্তিসঙ্গত মনে করে সরে আসে। তখন ঠিক হয়, একজন বাড়ানো হবে। পরের বছর সেই সংখ্যাটা নিয়ে যাওয়া হবে ছয়ে। তারমানে ছয়জন বাংলার ছেলেকে প্রথম একাদশে রাখা বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। এবার যা থাকছে পঁাচজন। ্এদিনের সভায় আরও ঠিক হয়েছে, ঘরোয়া লিগে প্রতিটি প্রিমিয়ার ডিভিসনে খেলা ক্লাবগুলো ৪০জন ফুটবলার সই করাতে পারবে। যারমধ্যে ভূমিপুত্রের সংখ্যা থাকা চাই ১৫জন। এরচেয়ে কম সই করালে চলবে না। এই প্রসঙ্গে নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে আইএফএ সভাপতি অজিত বন্দে্যাপাধ্যায় বলছিলেন, “বড় ক্লাবগুলোর একটা সমস্যা আছে আমরা তা মানছি। তাই তারা যা বলেছে তা এবার মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে এতিদন থেকে আমরা প্রতিটি ক্লাবকে জানিয়ে দিচ্ছি, আগামী বছর এই সংখ্যাটা পাল্টে যাবে। ছয়জন হয়ে যাবে বাংলার ভূমিপুত্র। আর পঁাচজন আন্তরাজ্য ছাড়পত্র নিয়ে আসা ফুটবালররা খেলতে পারবে।” আগে থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে বলে ২৫ জুন থেকে প্রিমিয়ার ডিভিসনের খেলা শুরু হবে। তবে এবার পুজো অনেক আগে হবে। তারজন্য আইএফএ চাইছিল দিন পঁাচেক এগিয়ে আনতে। যেহেতু সিদ্ধান্ত আগে থেকে নেওয়া হয়ে আছে তাই আর দিন বদল করা হয়নি। বৃহস্পতিবারের সভায় আরও ঠিক হল, প্রথম ম্যাচের আগে কমপক্ষে ২১জনকে সই করানো বাধ্যতামূলক। তার কমে সই করালে দলকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। প্রশ্ন হল, ২৫ জুন লিগ শুরু করা সম্ভব হবে কি করে? যেহেতু প্রিমিয়ার ডিভিসনের উপর মামলা করে বসে আছে ডায়মন্ডহারবার দল? আইএফএ সভাপতি জানিয়ে দিলেন তাতে কোনও সমস্যা হবে না। তিনি বলছিলেন, “ডায়মন্ডহারবার মামলা করেছে ২০২৪-২৫ লিগের উপর। আমরা এবার চালু করছি ২০২৫-২৬ সালের লিগ। লিগটাই তো সম্পূর্ন আলাদা। তাই এই লিগকে আটকানো যায়না। সুতরাং লিগ করতে কোনও সমস্যা হবে না।” ্আইএফএ আশাবাদী কিছুদিনের মধ্যে মামলার রায় বেরিয়ে যাবে।