দলের তরুণ গোলরক্ষকদের সুযোগ দেওয়ার কথা ভেবেই ফুটবলকে বিদায় অরিন্দম ভট্টাচার্যের

সুদীপ পাকড়াশীঃ অবসর নিলেন ভারতের জাতীয় দলের প্রাক্তন গোলরক্ষক অরিন্দম ভট্টাচার্য্য। বয়স হয়েছিল ৩৫। কিন্তু গত আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ইন্টার কাশীর হয়ে তার পারফরম্যান্স দেখে ক্লাব কর্তৃপক্ষের মনে হয়নি অরিন্দম অবসর নেবেন। আই লিগে ২১টি ম্যাচ খেলেছিলেন। ৬টা ক্লিন-শিট। ২১ ম্যাচে গোল খেয়েছেন ৩০টি। তবু অবসর নেওয়ার অন্যতম কারণ ইন্টার কাশির তরুণ গোলকিপারদের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার ভাবনা। রবিবার গোয়া থেকে ফোনে প্যারালাল স্পোর্টসকে অরিন্দম বললেন, “সুপার কাপে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের সঙ্গে আমাদের ড্রয়ের ম্যাচে শুভম শুরু করেছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে চোট পেয়ে বসে যাওয়ায় পরিবর্ত হয়ে আমারই নামার কথা। কিন্তু আমি না নেমে, মোহিত নামের একজন নতুন গোলকিপারকে বললাম নামতে। খুব খুশি হয়েছিলাম দেখে যে ওর প্রথম কম্পিটিটিভ ম্যাচে মোহিত খুব ভাল খেলেছিল। যদি সুযোগটা না পেত তাহলে ওর পেশাদার ফুটবল জীবনটা হয়ত আরও পিছিয়ে পড়ত। ক্লাবের শীর্ষকর্তারা আমাকে একাধিকবার অনুরোধ করেছিল আইএসএলে খেলার জন্য। কিন্তু মোহিত, শুভমদের কথা ভেবে আমার মনে হল আর নয়। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আইএসএলে উত্তীর্ণ হয়েছে দল। অবসর নেওয়ার এটাই সেরা সময়।” মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। ২০ বছর আগে এক ১৭ বছরের কিশোরকে প্রথম একাদশে সুযোগ কেউ করে দেয়নি। টিএফএ থেকে পাস-আউট হয়ে অরিন্দম ভট্টাচার্যের ফুটবলজীবন শুরু হয়েছে চার্চিল ব্রাদার্সে। অনুশীলনে পারফর্ম করে প্রথম একাদশে ঢুকেছিলেন। গোয়া লিগে প্রথম ম্যাচ ছিল ডেম্পোর বিরুদ্ধে। ফল ২-২। ১৭ বছরের সেই অরিন্দম সেদিন মাঠ ছেড়েছিলেন প্রশংসা নিয়ে। পরবর্তীকালে তার মুকুটে অনেক পালক লেগেছে। ভারতীয় ফুটবলে প্রায় সব বড় দলের জার্সি পরেছেন। ১০ বছর আইএসএল খেলেছেন। আই লিগে সেরা গোলকিপার হয়েছেন। সাফ কাপের ফাইনালে মলদ্বীপের বিরুদ্ধে পেনাল্টি বাঁচিয়ে টুর্নামেন্টে সেরা হয়েছেন। ফেডারেশনের বর্ষসেরা গোলকিপার হোয়েছেন। তবু, প্রথম ম্যাচে পারফরম্যান্সের স্মৃতিই এখনও উজ্জ্বল। গোয়ায় সুপার কাপে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে শেষ মিনিট দশেকের জন্য পরিবর্ত হিসাবে মাঠে নেমেছিলেন ৩৫ বছর বয়সী অরিন্দম। এই সময়ের মধ্যে একটি গোল বাঁচিয়ে করে ও তারপর মাঠেই বিশেষ অনুষ্ঠানে ইন্টার কাশীর ২০২৪-২৫ আই লিগ জয়ের ট্রফি গ্রহণ করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের অবসরের কথা ঘোষণা করলেন প্রাক্তন জাতীয় গোলরক্ষক। মাঠে নেমে কোচিং করানোর ইচ্ছে আর নেই অরিন্দমের। “আপাতত কয়েক মাস নিখাদ ছুটি কাটাই। তারপর দেখি। অনলাইনে স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশুনো করছি। ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে ফুটবলের জন্য কিছু করার। ফুটবলই তো আমাকে সব দিয়েছে,” বললেন অরিন্দম।
ভারতীয় ফুটবলে আবার নজীরবিহীন ঘটনাঃ চার্চিলের অস্বীকারে নতুন আই লিগ ট্রফি তৈরি করে ইন্টার কাশীকে দিল এআইএফএফ!

ভারতীয় ফুটবলে এখন সবই সম্ভব! শনিবার আরও এক কীর্তি করলেন সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা। গোয়ায় সুপার কাপে, বাম্বোলিমে জামশেদপুর এফসি আর ইন্টার কাশীর ম্যাচের পর ইন্টার কাশীর অধিনায়ক ও গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যের হাতে নতুন আই লিগ ট্রফি ও এক কোটি টাকার চেক তুলে দিলেন তারা। নতুন আই লিগ ট্রফিটি তৈরি করা হয়েছে! কারণ এবছর এপ্রিল থেকে আই লিগের আসল ট্রফি চার্চিল ব্রাদার্সের কাছে। ভারতীয় ফুটবলে নজীরবিহীন এই ঘটনা নিয়ে নিউজ ৯ স্পোর্টসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেডারেশনের এক কর্তা বলেছেন, “চার্চিল ট্রফি ফেরত দেয়নি। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের নতুন ট্রফির ব্যবস্থা করতে হল।” এপ্রিল মাসের এক রবিবার চার্চিল ব্রাদার্সকে গোয়ায় গিয়ে এআইএফএফ সচিব ২০২৪-২৫-এর আই লিগ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে কাবের প্রেসিডেন্টের হাতে আই লিগের ট্রফি দিয়ে এসেছিল। এপ্রিল থেকে নভেম্বর। আই লিগে অনেক জল গড়িয়েছে। মাঠের গণ্ডী পেরিয়ে লিগের গুরুত্বপূর্ণ খেলা হয়েছে কোর্টে। প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা খরচ করে সুইৎজারল্যান্ডের কোর্ট অফ আর্বিট্রেশন অফ স্পোর্টে (ক্যাস)ইন্টার কাশী দুটো মামলা জেতার পর, নিজেদের কমিটির ওপর ভরসা না রাখা এআইএফএফ আবার ইন্টার কাশীকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে ফেলে! ক্যাসের নির্দেশ পাওয়ার পর ফেডারেশনের দু’জনের একটি কমিটি সেই নির্দেশকেই মান্যতা দিয়ে দেয়! কিন্তু ট্রফি তো সেই এপ্রিল মাস থেকে চার্চিল ব্রাদার্সের কাছে। ট্রফি ফেরত পাওয়ার একাধিক ই-মেল পাওয়ার পরও তারা ট্রফি ফেরত দেয়নি। বরং তারা আবার ইন্টার কাশীর আই-লিগ খেতাবজয় নিয়ে এআইএফএফের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। এমনকী, চার্চিল ব্রাদার্স তাদের সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে এ-ও জানিয়েছে যে, ক্যাস তাদের আজ পর্যন্ত লিখিতভাবে ট্রফি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়নি। বিজ্ঞপ্তিতে চার্চিল লিখেছে, ক্যাসের চূড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষায় তারা রয়েছে এবং সুবিচার না পেলে তারা সুইস ফেডারাল ট্রাইবুনালেও আবেদন করবে। আর ইন্টার কাশী? তাদের এক কর্তা নিউজ ৯ স্পোর্টসকে জানিয়েছে, “আমাদের কাছেই আসল ট্রফিটা এল। চার্চিলের কাছে রয়েছে এর রেপ্লিকা!”
আইএসএলে উত্তীর্ণ হয়ে হোম-ম্যাচের ভেনু ঠিক করতে উত্তরপ্রদেশ ফুটবল সংস্থা, আইএসএলের আয়োজকদের সহায়তা চাইবে ইন্টার কাশী

সুদীপ পাকড়াশীঃ এই মরশুমের আইএসএলে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ১৩ থেকে বেড়ে ১৪ হল। বুধবার সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (AIFF) তরফে গত মরশুমের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন ইন্টার কাশীকে (Inter Kashi) চিঠি দিয়ে জানানো হল তারা আইএসএলে উত্তীর্ণ হয়েছে। ফেডারেশনের তরফ থেকে আসা চিঠিতে জানানো হয়েছে, ‘দীর্ঘ আলোচনা এবং CAS-এর রায়কে মান্যতা দিয়েই এআইএফএফ ইন্টার কাশীকে আনুষ্ঠানিকভাবে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করছে। ফিফার সদস্য হিসেবে ফেডারেশন ক্যাসের সিদ্ধান্তকে পুরোপুরিভাবে সম্মান করে। আই লিগ এবং ভারতীয় ফুটবলের গঠনতন্ত্রকে সম্মান জানিয়ে, এআইএফএফ এবার ইন্টার কাশীকে আগামী মরশুমের জন্য আইএসএল খেলার ছাড়পত্র দিচ্ছে। ইন্টার কাশী, আইএসএল-এর আর্থিক এবং টেকনিক্যাল সমস্ত নিয়মও পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।’ তবে আইএসএলে পা রাখার আগে ইন্টার কাশীর গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হোম-ম্যাচের ভেনু স্থির করা। গত দু’বছর ধরে বারাণসীর সিগরায় সম্পূর্ণানন্দ স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ফুটবল স্টেডিয়ামটি ইন্টার কাশী লিজ নেওয়ার চেষ্টা করছে নিজেদের হোম ম্যাচের ভেনু করার জন্য। কিন্তু স্টেডিয়ামের সংস্কারকাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এই মরশুমে সেই কাজ শেষ হওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা। ইন্টার কাশির প্রেসিডেন্ট পৃথ্বীজিৎ দাস বুধবার প্যারালাল স্পোর্টসকে ফোনে বললেন, “সিগরায় স্টেডিয়ামের কাজ এখনও শেষ হয়নি। এবছর শেষ হবে কি না সেই নিয়েও প্রবল অনিশ্চয়তা। তবে আগামি মরশুমে আমরা বারাণসীতেই আইএসএলের হোম-ম্যাচ খেলব।” গত দু’মরশুম ইন্টার কাশী কল্যাণী স্টেডিয়ামে আই লিগে হোম-ম্যাচ খেলেছিল। কিন্তু কল্যাণী স্টেডিয়াম আইএসএলের জন্য অনুমোদিত হয়নি। ক্লাব প্রেসিডেন্ট জানালেন তারা উত্তর প্রদেশ ফুটবল সংস্থা এবং এআইএফএফের সহায়তা চাইবেন এই বিষয়ে। “উত্তর প্রদেশ ফুটবল সংস্থা, আইএসএলের আয়োজক এবং সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে আমরা কথা বলব এই মরশুমের আইএসএলে আমাদের হোম-ম্যাচের ভেনু নিয়ে। ওরা এবছরটা একটু সহায়তা করুক। আমরা নিশ্চিত যে, পরের মরশুমে বারাণসীতেই আমাদের হোম-ম্যাচের ভেনু স্থির হয়ে যাবে। আই লিগে সুযোগ পাওয়ার পর ফেডারেশনকে আমরা কিন্তু বলেছিলাম যে পাঁচ বছরে আমাদের নিজস্ব মাঠ আর স্টেডিয়াম তৈরি হয়ে যাবে,” বললেন পৃথ্বীজিৎ দাস। আইএসএলের দল কি নতুন হবে? দাসের জবাব, “যে ফুটবলারদের জন্য আমরা আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হলাম তাদের ছেড়ে দেওয়া কি মানবিক হবে? এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ ফুটবলারকেই রেখে দেওয়ার ভাবনা আছে, যদি না কেউ অন্য ক্লাব থেকে ভাল আর্থিক প্রস্তাবে চলে যায়। এছাড়া, কোচ হাবাসের পরামর্শে ভাল বিদেশি আনার চেষ্টা তো করবই।”
২০২৪-২৫-এর আই লিগ জীবনের সেরা ট্রফি! বলছেন অরিন্দম

তার ক্যাবিনেটে সাজানো ভারতীয় ফুটবলের একাধিক অমূল্য খেতাব। আইএসএল, ডুরান্ড, রোভার্সের মত ঐতিহ্যবাহী ট্রফি। আইএসএলে গোল্ডেন গ্লাভসও পেয়েছেন তিনি। এমনকী, সুখবিন্দর সিংয়ের কোচিংয়ে জুনিয়র ফুটবলারদের নিয়ে গড়া যে ভারতীয় দল সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারও সদস্য ছিলেন তিনি। তারপরও সেই অরিন্দম ভট্টাচার্য বলছেন ইন্টার কাশির হয়ে ২০২৪-২৫-এর আই লিগ তার জীবনের সেরা ট্রফি! তার বক্তব্যে কারণও রয়েছে। প্যারালাল স্পোর্টসকে ফোনে শুক্রবার বললেন, “তিন মাস পর সত্যের জয় হল। আমরা আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হলাম। এই তিন মাস আমাদের কারও রাতে ভাল করে ঘুম হয়নি। প্রত্যেক দিন অপেক্ষা করেছি ক্যাসের রায়ের জন্য। ভারতীয় ফুটবল জগতের প্রায় সবাই আমাদের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল। ফেডারেশন থেকে শুরু করে ক্লাবগুলো-সোশ্যাল মিডিয়ায় তিন মাস ধরে দেখেছি কীভাবে আমাদের বিরুদ্ধে ‘অনৈতিকভাবে’ ফুটবলার খেলানোর অভিযোগ করে যাওয়া হয়েছে। আর আমরা শুধু দাঁতে দাঁত চেপে অপেক্ষা করে গিয়েছি।” ভারতীয় ফুটবলের মূলস্রোতে এখন বাঙালি গোলকিপার নেই বললেই চলে। প্রদীপের মত জ্বলছেন অরিন্দম ভট্টাচার্য। প্রসঙ্গ তুলতে তার বিশ্লেষণ, “আমরাও কিছুটা দায়ী। ভবিষ্যত প্রজন্মের গোলকিপার তৈরি করার ক্ষেত্রে আমাদের উদ্যোগটাও নিশ্চয় যথাযথ নেই। প্রতিভাবান কিন্তু লম্বা গোলকিপার খুঁজে বার করতে হবে। তারপর তাদের যথাযথ ট্রেনিং দেওয়ার কাজটা করতে হবে। তবে সন্দীপ নন্দী, শুভাশিষ রায়চৌধুরী, অভিজিৎ মণ্ডলরা কিন্তু কাজ করছে এবং যথেষ্ঠ যত্ন নিয়েই করছে। আশা করা যায় ওদের হাত থেকে ভবিষ্যতে আর্ন্তজাতিক মানের বাঙালি গোলকিপার পাওয়া যাবে।” আইএসএলে খেলবে ইন্টার কাশি। তার জন্য কি নিজেকে মোটিভট করা শুরু করে দিয়েছেন? অরিন্দমের সহাস্য জবাব, “একবার আইএসএল জিতেছি। দ্বিতীয়বার জিততে পারলে তো ভালই লাগবে। কিন্তু তার চেয়েও মনে হয় মোটিভেশনের বড় উপাদানটা হচ্ছে তরুণদের সঙ্গে লড়াই করে নিজের জায়গাটা এই বয়সেও নিশ্চিত করতে পারা।” ফুটবল ছাড়ার পর কোচিং করবেন? অরিন্দম বলছেন না। “সারাজীবন ফুটবলের জন্য পরিবারকে সময় দিতে পারিনি। তাই খেলা ছাড়ার পর আর কোচিংয়ে আসব না। তবে ফুটবলকে ঘিরেই কিছু একটা করব,” বললেন অরিন্দম।
ফুটবলকে বিদায় জানালেন অদিতি চৌহান; ক্যাসের রায়ের অপেক্ষায় ইন্টার কাশী

অবসর নিলেন ভারতের মহিলা জাতীয় দলের প্রাক্তন গোলরক্ষক অদিতি চৌহান। মাত্র ৩২ বছর বয়সেই ১৭ বছরের দীর্ঘ ফুটবল কেরিয়ারের ইতি ঘটালেন তিনি। অদিতিই প্রথম ভারতীয় ফুটবলার, যিনি ইংল্যান্ডের উইমেন্স সুপার লিগে খেলেছেন। ২০১৫-১৮ টানা তিন মরসুম, বিখ্যাত ক্লাব ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের হয়ে সেদেশের সর্বোচ্চ মহিলা লিগে খেলেছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ভারতের অনুর্দ্ধ-১৯ মহিলা জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ঘটে অদিতি চৌহানের। এরপর ২০১১ সালে সিনিয়র জাতীয় দলেও সুযোগ পেয়ে যান তিনি। তবে তখনও ভারতীয় মহিলা ফুটবল পেশাদার হয়নি এবং এখনকার মতো জাতীয় পর্যায়ে মেয়েদের লিগ হতো না। ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডের লাউবরো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে খেলা শুরু করেন অদিতি। সেখান থেকেই তিনি নজরে পড়ে যান ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের এবং বলতে গেলে লন্ডনের ক্লাবটিতেই তাঁর পেশাদার কেরিয়ার শুরু হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, নিজের কেরিয়ারের সেরা সময়টাতে ইংল্যান্ডে পড়াশোনা ও ক্লাব ফুটবলে নিয়োজিত থাকায় তাঁকে সেই সময়ে ভারতীয় দলে সেভাবে পাওয়া যায়নি। ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগ শুরু হলে তিনি ভারতে ফিরে ইন্ডিয়া রাস এসসি ও তারপর গোকুলম কেরল এফসি-র হয়ে খেলেন। মাঝে ২০২১ সালে একবার আইসল্যান্ডের মহিলা লিগে খেলে আসেন হামার হভেরাগার্ডির হয়ে। গত মরসুমে তিনি ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগে বাংলা থেকে নবোন্নীত ক্লাব শ্রীভূমি এফসি-তে যোগ দেন এবং দলটিকে প্রথমবারেই লিগে তৃতীয়স্থান পাওয়াতে বড় ভূমিকা পালন করেন। তবে এবার আর কেরিয়ার দীর্ঘায়িত করতে চাইছেন না তিনি। ইতিমধ্যেই সি-কিকস্ নামের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমি খুলেছেন অদিতি, যেখানে তিনি বালিকাদের ফুটবল পাঠ দেন। অবসরের পর জানিয়েছেন আকাডেমির জন্যই বেশি সময় দেবেন। ভারতের হয়ে অনুর্দ্ধ-১৯ পর্যায়ে চারটি ও সিনিয়র পর্যায়ে ৫৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন অদিতি, জিতেছেন ২০১২, ২০১৬ ও ২০১৯ স্যাফ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০১৬ ও ২০১৬ সাউথ এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক। ক্লাব কেরিয়ারে গোকুলম কেরল এফসি-র হয়ে ২০১৯-২০ ও ২০২১-২২ ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগ জিতেছেন তিনি। অন্যদিকে সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ ক্রীড়া আদালত, কোর্ট অব্ আরবিট্রেশন অব্ স্পোর্ট বা ক্যাসে, ইন্টার কাশী বনাম চার্চিল ব্রাদার্স, নামধারী এফসি, রিয়াল কাশ্মীর এফসি ও এআইএফএফ মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী পরশু, অর্থাৎ ১৮ জুলাই এই মামলার রায় বেরোনোর কথা। প্রসঙ্গত, ইন্টার কাশীর স্পেনীয় ফুটবলার মারিও বার্কোর রি-রেজিস্ট্রেশন অবৈধ দাবি করে এআইএফএফের লিগ কমিটির কাছে আবেদন করে আই লিগের তিনটি ক্লাব, চার্চিল ব্রাদার্স, নামধারী এফসি, রিয়াল কাশ্মীর এফসি। লিগ কমিটি এই রি-রেজিস্ট্রেশনকে বৈধ বলে জানালেও পরবর্তীতে এআইএফএফের আপিল কমিটি আবেদনকারী তিন ক্লাবের দাবীকেই মান্যতা দেয় এবং তিন ক্লাবের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় লেগের (যে ম্যাচগুলিতে মারিও বার্কো খেলেছিলেন) সেই ম্যাচগুলি থেকে ইন্টার কাশীর প্রাপ্ত পাঁচ পয়েন্ট কেটে নেয়। এখন ইন্টার কাশী তাকিয়ে আছে ক্যাসের সিদ্ধান্তের দিকে। ক্যাসের রায় ইন্টার কাশীর পক্ষে গেলে তারাই আই-লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে।
চার্চিলকে আই লিগ জয়ী স্থগিত করল ক্রীড়া আদালত

১৯ এপ্রিল এআইএফএফ বা ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের আপিল কমিটি ঘোষণা করেছিল, আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হল চার্চিল ব্রাদার্স। কিন্তু রবিবার কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টস বা ক্যাস জানিয়ে দিল, চার্চিলকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন ফেডারেশন ঘোষণা করতে পারবে না। ফেডারেশনের নেওয়া আপিল কমিটির সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে। ্এমন কী চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য যদি কোনও ট্রফি বা পদক দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে ফেডারেশন তাও বন্ধ রাখতে হবে। ক্যাস-এর আপিল আরবিট্রেশন বিভাগের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট এই আদেশ জারি করেছেন। ২২ ম্যাচে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে আই লিগ টেবিলের শীর্ষে ছিল চার্চিল ব্রাদার্স। সুতরাং তাদের চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করার মধ্যে কোনও ভুল ছিল না। সমস্যা দঁাড়ায় অন্য জায়গায়। ইন্টার কাশি বনাম নামধারী এফসি ম্যাচে এক অবৈধ ফুটবলার খেলিয়ে দিয়েছিল নামধারী এফসি। যদি সেই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পেয়ে যায় ইন্টার কাশি তাহলে লিগ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে চার্চিল ব্রাদার্সের নাম উঠে আসবে না। লিগ টেবিলের শীর্ষে চলে যাবে ইন্টার কাশি। মজার ঘটনা হল, ফুটবল ফেডারেশনের আপিল কমিটির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার কথা ছিল ২৮ এপ্রিল। অথচ কমিটি ১২ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করে। আই লিগ খেলা শেষ হওয়ার দু-সপ্তাহ পরে চার্চিল ব্রাদার্সকে চ্যাম্পিয়ন বলে ঘোষণা করে দেয় ফেডারেশন। ১৯ এপ্রিল চার্চিলকে চ্যাম্পিয়ন করার কথা ঘোষণা করার দিন ইন্টার কাশি জানিয়ে ছিল তারা ক্রীড়া আদালতের দ্বারস্থ হবে। রবিবার তাই ইন্টার কাশি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ক্যাস-এ আমরা যে মামলা করেছিলাম তার মামলা নম্বর ছিল ২০২৫/এ/১১৩৭৪। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ক্রীড়া আদালতের আপিল বিভাগের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট যে আদেশ নির্দেশ করেছেন তাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।” ফলে ফেডারেশনের আপিল কমিটির সিদ্ধান্তের আর কোনও গুরুত্ব রইল না। ফলে ২০২৪-২৫ আই লিগ বিজয়ী হিসেবে চার্চিল ব্রাদার্সকে এখন আর ধরা যাচ্ছে না। ইন্টার কাশি বিবৃতিতে আরও জানিয়েছে, “ক্রীড়া আদালতে এবার অবাধ ও সুষ্ঠু শুনানির জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব। এই মামলায় আসল তথ্য আশাকরছি বেরিয়ে আসবে। যেখানে আর কারও কিছু নতুন করে উত্তর খেঁাজার প্রয়োজন হবে না।” ক্রীড়া আদালত ইন্টার কাশির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জানিয়েছে, ২৯ এপ্রিলের মধ্যে ফুটবল ফেডারেশন, চার্চিল ব্রাদার্স, এফসি গোয়া ও নামধারী এফসিকে পূর্ণাঙ্গ জবাব দিতে হবে। বোঝাতে হবে ইন্টার কাশি যা বলতে চাইছে তারমধ্যে কতটা সত্যতা রয়েছে।
আইনের পথে ইন্টার কাশী

আফশোস করছে চার্চিল ব্রাদার্স। প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পরও আই লিগ চ্যাম্পিয়ন দলের নাম ঘোষণা করতে গড়িমসি করছিল ফেডারেশন। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল ইন্টার কাশিকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করতে আগ্রহী ফেডারেশন। চার্চিলের উপর আস্থা রাখতে পারছিল না ফুটবল ফেডারেশন। আসলে চার্চিলকে চ্যাম্পিয়ন না করে উপায় ছিল না। যেহেতু তাদের পয়েন্ট ২২ রাউন্ড খেলার পর ৪০ হয়ে গিয়েছিল। ইন্টার কাশির পয়েন্ট সেখানে ৩৯। নামধারী-ইন্টার কাশি ম্যাচে ঝামেলা হয়। সেই ম্যাচ থেকে কাশি তিন পয়েন্ট পায় কিনা সেটাই ছিল দেখার। যদি তিন পয়েন্ট পেয়ে যেত কাশি তাহলে চ্যাম্পিয়ন হত ইন্টার কাশি। সেইজন্য ফেডারেশন জানিয়ে ছিল, অ্যাপিল কমিটি যে সিদ্ধান্ত নেবে তার উপর নির্ভর করবে কোন দল হবে আই লিগ সেরা। মাননীয় বিচারপতি রাজেশ ট্যান্ডনের নেতৃত্বে থাকা কমিটি পুরো বিষয়টা অনুসন্ধান করে জানিয়েছে, “টেবিল অনুসারে প্রথমে চার্চিল ব্রাদার্স এফসি, দ্বিতীয় স্থানে আছে ইন্টার কাশি ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে নামধারী এফসি। তাদের পয়েন্ট যথাক্রমে ৪০, ৩৯ ও ৩২।” পরবর্তীকালে প্রাক্তন বিচারপতি রাজেশ ট্যান্ডন রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বলেন,“৬ এপ্রিল আই লিগ শেষ হয়েছে। তাই টেবিলের পয়েন্ট পাওয়া দলের ক্রমতালিকা অনুযায়ী চ্যাম্পিয়ন, রানার্স সহ অন্যান্য দলের নাম যথাক্রমে ঘোষণা করুক ফেডারেশন।” এই ঘোষণার পরে চার্চিলের আইএসএল খেলা নিশ্চিত হয়ে গেল। তার মানে আগামী বছর তারা ভারতের সর্বোচ্চ লিগে খেলতে পারে। এবার নিয়ে চার্চিল ব্রাদার্স তৃতীয়বার আই লিগ পেল। তাছাড়া ১২ বছরের মধ্যে প্রথম কোনও বড়সড় সাফল্য পেল চার্চিলরা। পরে এক সাক্ষাতকারে নিজস্ব অভিমত তুলে ধরতে গিয়ে দলের মালিক আলেমাও চার্চিল বলেন,“সর্বশক্তিমান ঈশ্বর ও গোয়ার মানুষদের এত সমর্থন কোনওদিন ভুলতে পারব না। তঁারা সকলে পাশে দঁাড়িয়ে ছিলেন বলেই আমরা আই লিগে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পেরেছি।” কিন্তু সংশয়ে থাকা চার্চিল ব্রাদার্স ভাবেনি তারা এমন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাবে। তাই সুপার কাপ থেকে দল তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ফলে মোহনবাগান প্রথম ম্যাচ বাই পেয়ে যায়। চার্চিলের পক্ষে এখনও সম্ভব নয়, সুপার কাপে খেলা। না খেলার পেছনে দুটো কারণ। এক, ফেডারেশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তারা সুপার কাপে যোগ দিচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, ২০ তারিখে মোহনবাগানের সঙ্গে খেলা ছিল। সেই ম্যাচ আর হওয়া সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে সুপার কাপ থেকে দল তুলে নেওয়ার জন্য আফশোস করছে চার্চিল ব্রাদার্স। অন্যদিকে ইন্টার কাশি সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনের আশ্রয় নেবে। তারা যে ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে অখুশি তা জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছে ইন্টার কাশী। সেই বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, “আমরা সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেভাবে আমাদের বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হল তা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়। তাই আমরা চেষ্টা করব ক্রীড়া আদালতের দ্বারস্থ হওয়া।” সেই সঙ্গে তারা হুমকির সুরে এও জানিয়েছে,“ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য আমরা শেষদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এরমধ্যে কোনও কিছু আগ বাড়িয়ে যদি ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নেওয়ার চে্ষ্টা করে তাহলে তারা ঠকবে।”এখন দেখার ইন্টার কাশীকে কীভাবে সামাল দেয় ফেডারেশন।