বঞ্চনার প্রতিবাদে মধ্যপ্রদেশের দুই প্যারালিম্পিয়ান ফিরিয়ে দিচ্ছেন অর্জুন পুরস্কার!

অর্জুন পুরষ্কার ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মধ্যপ্রদেশের দুই প্যারালিম্পিয়ান। কপিল পারমার এবং প্রাচী যাদব। কারণ, রাজ্য সরকার তাদের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও রাখেনি। তাঁরা নগদ পুরষ্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের কোনও কর্মসংস্থান হয়নি।। হতাশায় দুই প্যারা-অ্যাথলিট সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ফাইল আটকে রাখার অভিযোগও করেছেন। ২০২৪-এর প্যারিস প্যারালিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ পদকজয়ী কপিল পারমার বলেছেন, তিনি গত একবছর ধরে মন্ত্রী এবং আধিকারিকদের কাছে বহুবার যাতায়াত করেছেন। তাঁকে ১ কোটি টাকা এবং একটি সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তিনি টাকা পেয়েছেন, কিন্তু চাকরি পাননি। প্রত্যেকবার তাকে বলা হয়েছে ফাইলটি “প্রক্রিয়াধীন”। কপিলের অভিযোগ, মধ্যপ্রদেশে প্যারা অ্যাথলিটদের সম্মান দেওয়া হয় না। মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব তাঁকে গেজেটেড অফিসার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। কপিল বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের টপস স্কিম এবং অলিম্পিক্স গোল্ড কোয়েস্টের সহায়তা ছাড়া তিনি কিছুই পাননি। তাঁর কাছে জ্বালানির জন্যও টাকা নেই। অনেক বাবা-মা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, সন্তানদের জুডো প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত কি না, কিন্তু তাঁর কাছে কোনও উত্তর নেই। কপিলের আশঙ্কা, তাঁদের সন্তানরাও তাঁর মতোই কষ্ট পাবে। কপিল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতায় সোনার পদক জয়ের জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। কিন্তু চাকরির দাবিতে অফিসে ঘন ঘন যাতায়াতের কারণে তিনি অনুশীলন করতে পারছেন না। কপিল ২০২৬ সালের এশিয়ান গেমস এবং ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক্সের জন্য প্রস্তুতি নিতে চেয়েছিলেন। পরিবর্তে, তিনি সরকারি বিলম্বের শিকার। কপিল আরও জানিয়েছেন, পদকজয়ের পর যে মন্ত্রী ও আধিকারিকরা তাঁর সঙ্গে ছবি তুলতে আগ্রহী হতেন এখন তাঁরা তাঁকে এড়িয়ে চলে যান। চাকরির বিষয়টি উত্থাপন করতে পারেন এই ভয়ে নাকি তাঁকে কোনও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণও জানানো হয় না। রাজনীতিতে তাঁর পরিচিত অনেকেই এখন তাঁর ফোনও ধরেন না। কপিল এখন তাঁর অর্জুন পুরস্কার মধ্যপ্রদেশের স্পোর্টস ডিরেক্টরের টেবিলে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কীভাবে এটি দিল্লিতে পাঠানো হবে তা কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। প্যারালিম্পিয়ান এবং বিক্রম পুরস্কার বিজয়ী প্রাচী যাদবও তাঁর অর্জুন পুরস্কার ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাজ্য সরকার তাঁকে বাস্তবিক অর্থে কোনও সাহায্য করেনি। প্যারিস প্যারালিম্পিক্স ২০২৪ চলাকালীন, প্রাচী তাঁর একটি চোখের কর্নিয়ায় আঘাত পান। তিনি নিজের চিকিৎসার জন্য ১৬-১৭ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। তিনি বলেছেন, রাজ্য সরকার কোনও সাহায্য করেনি, এমনকি ক্ষতিপূরণও দেয়নি। আন্তর্জাতিক পদকের জন্য পুরস্কারের অর্থও দেওয়া হয়নি। গত বছর প্রাচীকে পূর্ত বিভাগে কেরানির চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তখন তিনি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, এটি তাঁর সাফল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সেই সময়, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে আরও ভাল পদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু তারপর থেকে কিছুই হয়নি। তিনি বলেন, মন্ত্রী এবং বিধায়করা নিজেদের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের বাইরে সাড়া দেন না। প্রাচী বলেন, আধিকারিকরা তাঁকে ক্রীড়া ইভেন্টে আমন্ত্রণ জানাতে দ্বিধা করেন। তাঁরা ভয় পান যে, তিনি কর্মসংস্থানের বিষয়টি তুলে ধরবেন। বিশেষ ভাবে সক্ষম হওয়ার কারণে, তিনি শৈশব থেকেই সংগ্রাম করেছিলেন। আজ, আন্তর্জাতিক পদক জিতেও, তিনি অবহেলিত এবং অপমানিত বোধ করছেন। প্রাচী বলেছেন, তিনি খুবই হতাশ। তিনি মনে করেন, পদক জেতার পর ক্রীড়াবিদদের প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হয় কিন্তু পরে তাঁদের ভুলে যাওয়া হয়। প্রতিবাদে তিনি তাঁর অর্জুন পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।