লড়াইয়ের দিন ফেলে বিসিসিআই-এর এখন বছরে রোজগার প্রায় ১০ হাজার কোটি!

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও গরিব ছিল! আজ, ২০২৫-এ এই কথা বিশ্বাসযোগ্য না-ও হতে পারে। কিন্তু ৪০ বছর আগে বোর্ড অফ কন্ট্রোল ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) ভাঁড়ারে দিন আনি দিন খাওয়ার মতই অবস্থা। ১৯৮৭-র বিশ্বকাপ আয়োজন করতে অনেক লড়াই করতে হয়েছিল বোর্ডকে। সেই বিশ্বকাপ স্পনসর করেছিল রিলায়েন্স। নামও যথারীতি পালটে গিয়ে হয়েছিল রিলায়েন্স কাপ। কিন্তু বিনিময়ে বোর্ডের আর্থিক প্রাপ্তি? ইন্ডিয়া টুডে জানাচ্ছে মাত্র ৬ কোটি টাকার কাছাকাছি! রিলায়েন্সের সঙ্গে এই টাকাতেই চুক্তি হয় বোর্ডের। দারিদ্র্য প্রথমবার ঘোচে ১৯৯২-এ। ২১ বছর পর নির্বাসনের শাপমুক্তি হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার ইডেন গার্ডেন্সে তিনটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে আসা ছিল উপলক্ষ। এই সিরিজের আয়োজন করে যে বিরাট অর্থ প্রাপ্তি হয়েছিল বোর্ডের তা কিন্তু নয়। ম্যাচ প্রতি মাত্র ৪০ হাজার ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় ১০ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকার বিনিময়ে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট বোর্ডকে টিভি রাইটস বিক্রি করে বিসিসিআই। কিন্তু সোনার খনি আবিষ্কারের রাস্তা দেখিয়েছিল ওই সিরিজ। কীভাবে টিভি রাইটস বিক্রি করতে হবে আর কীভাবে তার দাম বাড়িয়ে নিজেদের আর্থিক সমৃদ্ধি তৈরি করতে হবে সেই রাস্তা পেয়ে যায় বিসিসিআই। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি বোর্ডকে। বর্তমানে ভারতীয় বোর্ড ম্যাচ প্রতি ৬৭ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা আয় করে, শুধুমাত্র ব্রডকাস্টিং রাইটস বিক্রি করে। কোটি কোটি টাকা তারা শুধু মিডিয়া রাইটস বিক্রি করে উপার্জন করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে তা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৯ হাজার ৭৪১ কোটি টাকায়। এই ভারতীয় বোর্ড আইসিসি থেকেও বিরাট পরিমাণ অর্থ নিয়ে আসে। গত অর্থবর্ষে প্রায় ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা বিসিসিআই পেয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের থেকে। যা আইসিসির মোট লভ্যাংশের ৩৮.৫ শতাংশ। ভারতের পর সর্বোচ্চ লভ্যাংশ পায় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। তাদের অংশ যথাক্রমে ৬.৮৯ শতাংশ ও ৬.২৫ শতাংশ। আর এর পিছনেও রয়েছে একটা বড় কারণ। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে ক্রিকেট থেকে আইসিসির আয়ের বেশিরভাগটাই আসে যদি ভারতের ম্যাচ থেকে। স্পনসর থেকে টিভি রাইটস, উপার্জনের সমস্ত ক্ষেত্রে ভারত থাকলে অনেক বেশি লাভ হয় আইসিসির। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের স্টেটমেন্ট বলছে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে তাদের উপার্জন হয়েছে ৩১০ মিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। আর তার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের উপার্জন ৯ হাজার ৭০০ কোটির বেশি। ২০১৩ সালের এনডিটিভির একটি রিপোর্ট বলছে ভারত যদি দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে না যায়, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ডের দৈনিক ১ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার ক্ষতি হবে। ২০২১ সালের একটি রিপোর্ট বলছে, ভারতের সঙ্গে ৫ টেস্টের সিরিজে ইংল্যান্ডের লাভ হয় প্রায় ১৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় ১ হাজার ১৮১ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা। ওই সিরিজের শেষ ম্যাচ না খেলায় ব্রডকাস্টিং রাইটস ও টিকিট বিক্রি থেকে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের ২০ মিলিয়ন ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় ২৩২ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছিল। সব মিলিয়ে এই ক্ষতি ছুঁয়েছিল প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। ফলে, কোনও ছোট দেশ ভারতের সঙ্গে একটা সিরিজ খেললে যে পরিমাণ অর্থ তারা উপার্জন করে, তাতে হয়তো সেই দেশের কয়েক বছরের খরচ চলে যায়। আর এই কারণেই, একাধিক ছোট ক্রিকেট খেলিয়ে দেশ ভারতের সঙ্গে তাদের দেশে একদিনের ম্যাচের বা টি-২০ সিরিজ খেলতে চায়। এছাড়াও ২০০৮-এর পর থেকে বিসিসআই-এর রোজগারের একটা বড় অংশের উৎস আইপিএল! ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের উপার্জনের প্রায় ৫৯ শতাংশ বা ৫ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা এসেছিল আইপিএল থেকেই। আর এই ভাবেই পৃথিবীর অন্যতম ধনী ক্রীড়া সংস্থায় পরিণত হয়েছে বিসিসিআই।