দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১৫ সদস্যের দলে সুযোগ হল না সামির

রঞ্জি ট্রফিতে(Ranji Trophy) দুরন্ত পারফরম্যান্স করেও ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার(South Africa) বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে জায়গা পেলেন না মহম্মদ সামি(Mohammed Shami)। বাংলার হয়ে প্রথম দুটো ম্যাচে খেলেছিলেন মহম্মদ সামি। দুই ম্যাচেই সামির ঝুলিতে এসেছিল উইকেট। এরপর অনেকেই প্রত্যাশা করেছিল যে সামি হয়ত ভারতীয় দলে সুযোগ পেতে চলেছেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা হল না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেও ব্রাত্য মহম্মদ সামি(Mohammed Shami)। তবে এই সিরিজেই চোট কাটিয়ে ফিরলেন ঋষভ পন্থ। শুভমন গিলের(Shubman Gill) নেতৃত্বে সহ অধিনায়কের দায়িত্ব ঋষভ পন্থের(Rishabh Pant) কাঁধেই এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে কী প্রধান নির্বাচকের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জেরেই ভারতীয় দলে জায়গা হল না মহম্মদ সামির। কারণ রঞ্জি ট্রফি শুরুর আগেই প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকরের(Ajit Agarkar) সঙ্গে বাকযুদ্ধে জড়িয়েছিলেন মহম্মদ সামি(Mohammed Shami)। ভারতীয় দলে সুযোগ না পাওয়ার ক্ষেত্রে আগরকরের দিকেই আঙুল তুলেছিলেন তিনি। একইরকমভাবে আবার পাল্টা দিয়েছিলেন অজিত আগরকরও। 🚨 News 🚨#TeamIndia squad for Test series against South Africa and India A squad against South Africa A announced. Details 🔽 | @IDFCFIRSTBank https://t.co/dP8C8RuwXJ — BCCI (@BCCI) November 5, 2025 এরপর মাঠ থেকেই জবাবটা দিয়েছিলেন মহম্মদ সামি। বাংলার হয়ে দুই ম্যাচ মিলিয়ে সামি(Mohammed Shami) একাই তুলে নিয়েছিলেন ১৫টি উইকেট। যদিও তৃতীয় ম্যাচে ত্রিপুরার বিরুদ্ধে নেই মহম্মদ সামি। অনেকেই মনে করছিলেন যে হয়ত এবার ভারতীয় দলে ডাক পেতে চলেছেন সামি। বুধবারই ভারতীয় দল ঘোষণা হয়েছে ভারতের টেস্ট স্কোয়াড। ভারতীয় দলের টেস্ট স্কোয়াড শুভমন গিল, ঋষভ পন্থ, যশস্বী জয়সওয়াল, কেএল রাহুল, সাই সুদর্শন, দেবদূত পাড়িক্কল, ধ্রুব জুরেল, রবীন্দ্র জাদেজা, ওয়াশিংটন সুন্দর, জসপ্রীত বুমরাহ, অক্ষর পটেল, নীতিশ কুমার রেড্ডি, মহম্মদ সিরাজ, কুলদীপ যাদব, আকশদীপ। আগামী ১৪ নভেম্বর ইডেন গার্ডেন্সেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে নামবে ভারতীয় দল।
চলতি মাসের শেষেই রিহ্যাব শুরু করতে পারেন ঋষভ পন্থ

সময়ের আগেই কি সেরে যেতে পারেন ঋষভ পন্থ(Rishabh Pant)। সূত্রের তরফ থেকে কিন্তু তেমনই একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে অক্টোবরের শুরু থেকেই বিসিসিআইয়ের(BCCI) সেন্টার অব এক্সিলেন্সে প্রস্তুতিও শুরু করে দিতে পারেন ঋষভ পন্থ(Rishabh Pant)। না তবে জোরকদমে প্রস্তুতি সারতে পারবেন না তিনি। তবে হাল্কা প্রস্তুতিতে নেমে যেতে পারবেন তিনি। আর এই খবরটা যে ভারতীয় শিবিরের কাছে অনেকটাই স্বস্তি যোগাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতীয় দলের(Indian Cricket Team) অন্যতম সেরা পারফর্মার ছিলেন ঋষভ পন্থ। তাঁর হাত ধরেই একের পর এক ম্যাচ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। গোটা সিরিজে দুরন্ত ফর্মে ছিলেন এই তারকা ক্রিকেটার। কিন্তু চতুর্থ টেস্টেই ঘটে আসল অঘটন। প্রথম দিনই পায়ের পাতায় বড়সড় চোট পান তিনি। সেখানেই তাঁর পায়ের পাতায় হাল্কা চিড়ও ধরে। এরপরই ছিটকে যান ঋষভ পন্থ(Rishabh Pant)। যদিও দ্বিতীয় ইনিংসে আর সেই পা নিয়ে নামতে পারেননি ঋষভ পন্থ(Rishabh Pant)। তবে দেশের প্রয়োজনে তিনি যে নামতে প্রস্তুত ছিলেন সেই কথাও জানিয়েছিলেন ঋষভ পন্থ। এরপরই অবশ্য ছিটকে গিয়েছিলেন ভারতীয় দলের এই তারকা ক্রিকেটার। এরপর থেকেই ঋষভ পন্থের মাঠে ফেরা নিয়ে নানান জল্পনা হয়েছিল। নিজেই তাঁর ক্রাচ নিয়ে চলার ভিডিও দিয়েছিলেন ঋষভ পন্থ। সেইসঙ্গে তাঁর পায়ে বাঁধা ছিল টেপও। এবার তাতেই স্বস্তি। ঋষভ পন্থের পায়ে বাঁধা টেপ নাকি খুলে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। শুধুমাত্র তাই নয়, ঋষভ পন্থ নাকি এখন অনেকটা স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতেও শুরু করে দিয়েছেন। আর এই ছবিটা যে ভারতীয় ক্রিকেট মহলে অনেকটাই স্বস্তি যোগাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে প্রশ্ন হল ঋষভ পন্থ কবে ফের ভারতীয় দলে ফিরবেন। চলতি মাসের শেষে কিংবা পরবর্তী মাসেই নাকি বিসিসিআইয়ের(BCCI) সেন্টার অব এক্সিলেন্সে ফিরতে চলেছেন ঋশভ পন্থ। সেখানে হাল্কা রিহ্যাবও শুরু করতে পারেন ভারতীয় দলের এই তারকা ক্রিকেটার। সামনেই রয়েছে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে। সেখানে ঋষভ পন্থকে ভারতীয় দলের ফেরানোর একটা মরিয়া চেষ্টা চলছে। কিন্তু তিনি কতটা খেলার মতো অবস্থায় থাকবেন তা এখন থেকেই অবশ্য বলা সম্ভব হচ্ছে না। এরপরই আবার রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ। শেষপর্যন্ত ভারতীয় দলের জার্সিতে ঋষভ পন্থ কবে ফেরেন সেটাই দেখার অপেক্ষায় সকলে।
হতাশা বাড়ছে ঋষভ পন্থের

চোট সারিয়ে ঘরের মাঠে সম্ভবত ফেরা হচ্ছে না ঋষভ পন্থের(Rishabh Pant)। সবকিছু ঠিকঠাক চললে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই হয়ত মাঠে ফরতে চলেছেন ঋষভ পন্থ। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চতুর্থ টেস্টেই পায়ের পাত ফ্র্যকচার হয়েছিল তাঁর। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন না পড়লেও তাঁর সেরে উঠতে এখনও বেশ খানিকটা সময় লাগবে বলেই মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ঋষভ পন্থ(Rishabh Pant) নিজেও সোশ্যাল মিডিয়াতে তাঁর হতাশা প্রকাশ করেছেন। আর তাতেই শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা। ঋষভ পন্থ নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি সেখানে লিখেছেন, “কবে যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠব”। আর ভারতীয় তারকা উইকেট কিপারের এই মন্তব্যের পরই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে নানান গুঞ্জন। তবে সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের(West Indies) বিরুদ্ধে তাঁর ফেরার সম্ভাবনা নাকি খুবই কম। প্রথমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেই তাঁর ফেরার একটা সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু যতটা সেরে ওঠার প্রয়োজন ছিল তাঁর, ততটা নাকি হয়নি। প্রথমে শোনা গিয়েছিল ঋষভ পন্থের(Rishabh Pant) সেরে উঠতে সময় লাগবে প্রায় চার থেকে ছয় সপ্তাহ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ঋষভ পন্থের মাঠে নামার মতো পরিস্থিতি নেই। এশিয়া কাপের(Asia Cup) পরই ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে নামবে ভারতীয় দল। ঋষভকে অবশ্য এখনও অপেক্ষাই করতে হবে। সূত্রের খবর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজের আগেই সম্পূর্ণ সেরে উঠতে পারেন তিনি। শেষপর্যন্ত কী হয় সেটাই দেখার।
হেডিংলেতে ইংল্যান্ডের কাছে হার, জঘন্য বোলিং-ফিল্ডিংয়ে মাশুল দিল টিম ইন্ডিয়া

মর্মে মর্মে উপলব্ধি করল ভারতীয় দল, ক্যাচ ফস্কালে ম্যাচও ফস্কাতে হয়। একটা ম্যাচে পড়ল সাতটা ক্যাচ। পাল্লা দিয়ে খারাপ বোলিং। হেডিংলেতে প্রথম টেস্টে যে ৫ উইকেটে হারতে হল, তার পিছনে আর একটা বড় কারণ লোয়ার মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা। গোটা ম্যাচে ৭২ রানে লোয়ার মিডল অর্ডারের ১৩টি উইকেট হারিয়েছে ভারত। সে কারণেই যে ম্যাচে দলের পাঁচটি শতরান আছে সেই ম্যাচও এভাবে হারতে হল। শেষ দিন জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৩৫০ রান। ভারতীয় বোলিং ফিল্ডিংয়ের এমনই অবস্থা, শেষ দিনের পরিস্থিতিতেও সহজেই সেই রান তুলে নিয়ে গেলেন ডাকেট-ক্রলিরা। এই মাঠে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জিতল ইংল্যান্ড। ওপেনিং জুটিতে ক্রলি আর ডাকেট তুলে ফেললেন ১৮৮ রান। তখনই কী হতে যাচ্ছে, সেটা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। ডাকেট করলেন ১৪৯ রান। ক্রলি ৬৫ রান করে যোগ্য সঙ্গত দিয়ে গেলেন। এরপর স্টোকস ৩৩ রানে আউট হলেও রুট ৫৩ রানে ও জেমি স্মিথ ৪৪ রানে অপরাজিত রইলেন। অথচ টেস্টটা কী দুর্দান্তভাবে শুরু করেছিল ভারত। প্রথম ইনিংসে যশস্বী, গিল ও পন্থ তিনজনই শতরান করেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও শতরান পন্থ ও রাহুলের। তবু হার ওই তিন কারণে। ক্যাচ মিস, বাজে বোলিং ও লোয়ার মিডল অর্ডারের নির্ভরতা দিতে না পারা। অ্যঠান্ডারসন-তেন্ডুলকর ট্রফিতে পাঁচ টেস্টের সিরিজে ০-১ এ পিছিয়ে পড়ল টিম ইন্ডিয়া। তরুণ ভারতীয় দলের আত্মবিশ্বাসে যেমন বড়সড় ধাক্কা লাগল, তেমনি প্রশ্ন উঠে গেল জসপ্রীত বুমরার ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের জন্য তাঁকে কীভাবে বিশ্রামে রাখা যাবে? এরপর হয়ত দলে ঢুকতে পারেন অর্শদীপ সিং, কিন্তু তাতে ছবি কতটা বদলাবে?
পন্থের শতরানের জবাব পোপের, বুমরার আগুনে বোলিং সত্ত্বেও ক্যাচ ফেলে সুযোগ হাতছাড়া ভারতের

প্রথম দিনটা যদি শুভমন গিল ও যশস্বী জয়সওয়ালের হয়, তাহলে দ্বিতীয় দিনটা ঋষভ পন্থ, জসপ্রীত বুমরা ও ইংরেজ ওলি পোপের। পন্থের শতরানের জবাব দিলেন পোপ। অপরাজিত শতরানে। তবে আগুনে বুমরার সামনে বিপদে পড়তে পারত ইংল্যান্ড, যদি না রবীন্দ্র জাদেজা ও যশস্বী জয়সওয়াল ক্যাচ ফেলতেন। গতদিনের ৩ উইকেটে ৩৫৯ রান নিয়ে দিনের খেলা শুরু করেছিল ভারত। গিল ও পন্থ প্রথম দিন যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই শুরু করেন। একই রকম আত্মবিশ্বাসী, জমাট ব্যাটিং। যশস্বী, গিলের পর এদিন পন্থও শতরান করলেন। ইংল্যান্ডের মাটিতে তৃতীয় শতরান। একমাত্র ভারতীয় উইকেটরক্ষক হিসাবে টেস্ট সাতটি শতরান করলেন। এখনই পিছনে ফেলে দিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। মাহি করেছিলেন ৬টি শতরান। ১৩৪ রান করে আউট হলেন। গিল করেন ১৪৭ রান। চতুর্থ উইকেটে দুজনে যোগ করেন ২০৯ রান। তারপরই বিরাট ধস। ৩ উইকেটে ৪৩০ থেকে ৪৭১ রানে অল আউট। শেষ সাতটি উইকেট পড়ল মাত্র ৪১ রানে। আর কোনও ব্যাটসম্যানই রান পেলেন না। ৮ বছর পর প্রত্যাবর্তনটা সুখের হল না করুণ নায়ারের। কোনও রান না করেই ফিরলেন। টং ও স্টোকস চারটি করে উইকেট নিয়ে ভেঙে দিলেন ভারতের লোয়ার মিডল অর্ডার। এরপর বুমরার আগুনে বোলিং। শুরুতেই তুলে নিলেন জ্যাক ক্রলিকে। তারপরই বেন ডাকেটকেও পেয়ে যেতেন, যদি ক্যাচটা ধরতে পারতেন জাদেজা। সেই ডাকেট ৬২ রান করে গেলেন। ওলি পোপ শতরান করে বড় জবাবের দিকে নিয়ে গেলেন ইংল্যান্ডকে। দিনের শেষে স্টোকসদের রান ৩ উইকেটে ২০৯। কিন্তু জয়সওয়াল যদি ক্যাচ না ফেলতেন তাহলে সমস্যায় পড়তে পারত ইংল্যান্ড। একা লড়াই চালিয়ে গেলেন জসপ্রীত বুমরা। ইংল্যান্ডের তিনটি উইকেটই নিলেন তিনি। ৪৮ রানে ৩ উইকেট। কিন্তু বাকি বোলাররা কী করলেন? বুমরাকে যদি অন্যরা নূন্যতম সহযোগিতা না করতে পারেন, তাহলে আর স্পিডস্টারের ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট হবে কী করে?
জোড়া শতরানে টেস্টের প্রথম দিনে লেটার মার্কস তরুণ ভারতীয় দলের

দুরন্ত শুরু। অনেক সংশয় ছিল। অনেক উদ্বেগ ছিল। অনেক সন্দেহও ছিল। কিন্তু তাগিদ, প্রয়োগ দক্ষতা ও দুর্দান্ত মানসিকতায় সেসব কিছুকে দূরে সরিয়ে দিয়ে হেডিংলে টেস্টের প্রথম দিনে শুধু সসম্মানে পাস করা নয় রীতিমত লেটার মার্কস পেয়ে পাস করল তরুণ ভারতীয় দল। প্রথম দিনের শেষে ভারতের স্কোর ৩ উইকেটে ৩৫৯। শতরান করলেন শুভমন গিল ও যশস্বী জয়সওয়াল। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে বাদ দিয়ে ইংল্যান্ডে টেস্ট খেলতে নেমেছে তরুণ ভারতীয় দল। চাপ ছিল বৈকি! টসে জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠান ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। আত্মবিশ্বাসী শুরু করেন রাহুল ও জয়সওয়াল। রাহুল ব্যক্তিগত ৪২ রানে ও সাই সুর্দশন শূন্য রানে আউট হলেও গিলের সঙ্গে জুটি বেঁধে দুর্দান্ত ইনিংস খেললেন যশস্বী জয়সওয়াল। শতরান করে ব্যক্তিগত ১০১ রানে আউট হওয়ার আগে তৃতীয় উইকেটে জুড়ে দিয়েছেন ১২৯ রান। ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ও কেরিয়ারের পঞ্চম শতরান করলেন জয়সওয়াল। এরপর হাল ধরেন অধিনায়ক গিল ও সহঅধিনায়ক পন্থ। অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেট দুজনে যোগ করেছেন ১৩৮ রান। শুভমন গিল ১২৭ রান করে ও ঋষভ পন্থ ৬৫ রান করে অপরাজিত আছেন। গিল হলেন চতুর্থ ভারতীয় যিনি অধিনায়ক হিসাবে অভিষেকেই শতরান করলেন। তাঁর আগে এই নজির আছে বিজয় হাজারে, সুনীল গাভাসকর ও বিরাট কোহলি। প্রথম দিনেই শুভমন গিলের তারুণ্যেভরা ভারতীয় দল এভাবে ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলে দেবে সেটা অনেক ভারতীয় যেমন ভাবেননি, তেমনি ইংল্যান্ড তো ভাবতেই পারেনি। প্রথম দিনেই গোটা সিরিজের জন্য অন্তত আত্মবিশ্বাসটা পেয়ে গেল গিলের ভারত।
পন্থের সেঞ্চুরিও বিরাটদের আটকাতে পারল না

বাঁদিকে ম্যাচের সেরা জিতেশ শর্মা। হেরেও স্পোর্টসম্যানশিপে নায়ক ঋষভ পন্থ।
ইংল্যান্ড সফরে চারে ঋষভকে চান শেহবাগ, নায়ারে ভোট গাভাসকরের

ভারতীয় ক্রিকেটে গত ৩০ বছর ধরে যে জায়গাটি দুই ক্রিকেটার ধরে রেখেছিলেন, তাঁদের অনুপস্থিতিতে তা সামাল দেওয়া হবে কীভাবে! তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিতর্ক আছে। যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির খেলায় অনেকের নাম সামনে আসছে। এখন দেখার ব্যাপার এটাই যে গুরু গম্ভীরের চাল কী হয়! কোন ক্রিকেটারকে তিনি সেই শূন্যস্থান ভরাট করেন। হ্যাঁ, শচীন তেন্ডুলকর ও বিরাট কোহলি এতদিন টেস্ট ক্রিকেটে চার নম্বর জায়গাটি ধরে রেখেছিলেন। শচীনের পর বিরাট। কিন্তু এবার কে! ভারতীয় ক্রিকেটে এ নিয়ে অনেকের নাম সামনে আসছে। কে এল রাহুল, শুভমান গিল, করুন নায়ার, এমন অনেক ক্রিকেটারকে নিয়ে আলোচনা চলছে। তা হলে কে দায়িত্ব নেবেন। চার নম্বর জায়গাটি টেস্ট ক্রিকেটে দলের সেরা ক্রিকেটারকে নিয়ে আসা হয়। না হলে শচীন ও বিরাটকে এখানে কাজে লাগানো হত না। তা হলে এবার কে! ভারতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার বীরেন্দ্র শেহবাগকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমার পছন্দ ঋষভ পন্থ। প্রথমত বাঁহাতি ক্রিকেটার। অভিজ্ঞতার দিক থেকে বিচার করলে পিছিয়ে রাখা যাবে না। অনেক কঠিন ম্যাচ সামলে দলকে জিতিয়ে নিয়ে এসেছে। তাই আমার মনে হয় চার নম্বর জায়গাটি ঋষভের জন্য ছেড়ে রাখা উচিত। শেহবাগের সঙ্গে এ ব্যাপারে একমত হতে পারছেন না প্রাক্তন অধিনায়ক সুনীল গাভাসকর। তিনি বলছেন, আমার তো মনে হয় করুন নায়ারকে এই জায়গায় কাজে লাগানো উচিত। আট বছর পর জাতীয় দলে ফিরে এসেছে। এই লেভেলের ক্রিকেটে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। কাউন্টি ক্রিকেটে একসময় দাপটের সঙ্গে খেলেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে বিদর্ভের হয়েও ওকে চার নম্বরে খেলতে দেখা গিয়েছে। এর কাছে এই জায়গাটি নতুন বলে মনে হবে না। আসলে ওপেনিং ও মিডলঅর্ডারের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করার দায়িত্ব চার নম্বরে খেলতে নামা ক্রিকেটারের। তাই নায়ারের বদলে অন্য কারোর নাম মনে পড়ছে না। একসময় নির্বাচকরা চার নম্বরে শুভমান গিলকে নামানোর কথা ভেবেছিলেন। সেই ভাবনা অবশ্য চূড়ান্ত নয়। তবে নাম যখন একবার এসেছে, তখন আলাচনা হয়েছে। এই ভাবনার বিরুদ্ধে কথা বলছেন গাভাসকর। তিনি বলেছেন, শুভমানকে চারে নিয়ে আসা মানে দুটি উইকেট চলে গেল। শুভমান ওপেন করে। ওপেনে জায়গা না হলে বড় জোর তিন নম্বরে নিয়ে আসা যেতে পারে। কখনও চার নম্বরে নয়। তিন নম্বরে নামানোর পিছনে যুক্তি আছে। একজন ওপেনার ইনিংসের শুরুতে খেলতে নামা মানে সে গিয়ে নতুন বল খেলে। শুরুতে উইকেট পড়ে গেলে তিনে গিয়ে নতুন বল সামালানোর কাজটি করতে পারে। কিনতু চার গেলে সেটা সম্ভব হয় না। তাই শুভমান দলের প্রয়োজনে তিনে খেলতে পারে। কখনই চারে নয়। গাভাসকরের পছন্দের ব্যাটিং অর্ডার হল এমন – যশস্বী জয়সওয়াল, কে এলে রাহুল, শুভমান গিল, করুন নায়ার, ঋষভ পন্থ। প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকে এভাবে রেখে তারপর বাকিদের নিয়ে আসার কথা ভাবা যেতে পারে।
অভিজ্ঞতার কারনেই অধিনায়ক গিলের ডেপুটি ঋষভ

মহম্মদ শামিকে ইংল্যান্ড সফরে দলে না নেওয়ার ব্যাপারে আইপিএল অগ্রাধিকার পেয়েছে। আইপিএলে ৯টি ম্যাচে শামির উইকেট মাত্র ৬টি। এমন পারফরম্যান্স করার পর কেউ কি জাতীয় দলে খেলার ব্যাপারে আলোচনায় থাকতে পারেন! পারেন না বলেই শামি দলের বাইরে। সেখানে তাঁর আগের পারফরম্যান্স দেখা হয়নি। ট্রেনার বা ফিজিওর সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়নি, শামিকে টেস্টের উপযোগী করতে তুলতে কতদিন সময় লাগবে। এমন কি এটাও ভেবে দেখা হয়নি, ভারতীয় এ দলে খেলিয়ে তাঁকে ফিট করে তোলা যায় কিনা। আসলে আইপিএল নির্বাচকদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে, শামিকে ইংল্যান্ড নিয়ে গেলে ভুগতে হবে। তা হলে কি ঋষভ পন্থের ব্যাপারে আলোচনায় আইপিএল আসেনি। নিশচয় আসেনি। এলে ঋষভ দলে আসেন না। এই মরশুমে ১২টি ম্যাচে ঋষভ রান করেছেন ১৫১। গড় ১৩.৭২। তিনি নিজেও এই মরশুমের আইপিএলকে ভুলে যেতে চাইবেন। ২৭ কোটি টাকা জলে গেল, একথা ভাবতে পারেন লখনউয়ের কর্তারা। তবু ঋষভকে দলে নেওয়া হয়েছে। শুধু দলে নেওয়াই নয়, তাঁকে অ্ধিনায়ক শুভমান গিলের ডেপুটি করা হয়েছে। কোন যুক্তিতে ঋষভ দলের সঙ অধিনায়ক হলেন তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন নির্বাচক প্রধান অজিত আগারকর। তিনি বলেছেন, আসলে টেস্টে অভিজ্ঞতার কারনে ঋষভকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ৪৩টি টেস্টে ওর রান প্রায় তিন হাজারের (২৯৪৮) কাছে। গড় ৪২-এর উপর। সেঞ্চুরি ৬টি। ৫টি হাফ সেঞ্চুরি আছে। সব থেকে বড় ব্যাপার এটাই যে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিন আফ্রিকার উইকেটে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে বড় ইনিংস খেলার ক্ষমতা আছে। ২০২১ সালে ব্রিসবেন টেস্টের কথা নিশ্চয় সকলের মনে আছে। গাব্বায় ঋষভের অসাধারন ৮৯ রানের ইনিংস দলকে সিরিজ জিতিয়েছিল। এত সব দেখার পর আগারকর বলছেন, গত চার-পাঁচ বছর ধরে জাতীয় দলের হয়ে টেস্টে খেলছে ঋষভ। আমি বিশ্বাস করি, উইকেটের পিছন থেকে খেলা দেখে দলকে মতামত দিতে পারে। খেলা ভাল বোঝে। জাতীয় দলে খেলে ওর অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন আসতে পারে না। শুভমানকে ঠিকভাব বোঝাতে পারবে। ওর মতো তরুন ক্রিকেটারদের দিকে আমদের সকলের নজর রয়েছে। যার আগামিদিনে দলকে ঠিকভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। তাই ওকে সহ অধিনায়ক করা হয়েছে। তবে কি অধিনায়কের দৌড়ে অন্য কোনও ক্রিকেটারের নাম ওঠেনি! বুমরা বা রাহুল আলোচনায় আসেনি। আগারকর বলছেন, বুমরার নাম ওঠেনি। ওর সঙ্গে আগে এ নিয়ে কথা হয়েছে। ও নিজেও জানিয়েছে তিনটির বেশি টেস্ট খেলতে পারবে না। তাই আমরা ওর উপর বাড়তি চাপ দিতে চাই নি। আমরা চাই বোলিংয়ে নিজের সেরাট দেওয়ার চেষ্টা করুক। অন্য কিছু ভাবতে হবে না। তাই বুমরা কখনই আলেচনায় ছিল না। রাহুলের কথাও সেভাবে আসেনি। আমরা বিশ্বাস করি এই সিরিজে রাহুলের অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে লাগবে। রাহুল এর আগেও ইংল্যান্ডের মাঠে খেলেছে। ওর কাছ থেকে বড় রানের ইনিংস দরকার। বাকি কাজে মাথা ঢুকিয়ে নিজের খেলায় চাপ বাড়াক, সেটা আমরা চাই নি। তাই গিলের জায়গায় অন্য কারোর নাম আসেনি। ভাল কথা। নিজের ব্যাটিংয়ে নজর দিতে হবে রাহুলকে। বোলিংয়ের বাইরে কিছু ভাবার দরকার নেই বুমরার। তবে গিলকে কি করতে হবে। নিজের ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি দলের সব ক্রিকেটারদের নিয়ে ওকে বসতে হবে। ওর নিজেরও ব্যাটে রান কোথায়। ইংল্যান্ডে তিন টেস্টে গিল রান করেছেন ৮৮। তা হলে! তাঁর উপর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। আসলে গম্ভীর জমানায় অন্য কিছু হতে পারে না। তিনি যা ভাববেন তাই হবে। এবং তাঁর সঙ্গে সঙ্গত করবেন আগারকর। এর বাইরে ভারতীয় ক্রিকেটে তো আর কিছু পড়ে রইল না।
ভারতীয় টেস্ট দলের অধিনায়ক হলেন শুভমন গিল, সহঅধিনায়ক ঋষভ পন্থ, দলে বাংলার অভিমন্যু ঈশ্বরণ, বাদ সামি

জল্পনার অবসান। ইংল্যান্ড সফরে ভারতীয় দলের অধিনায়ক হলেন শুভমন গিল। সহঅধিনায়ক ঋষভ পন্থ। বাংলার জন্য ভাল খবর, দলে সুযোগ পেয়েছেন বঙ্গ ওপেনার অভিমন্যু ঈশ্বরণ। কয়েকদিন ধরে অধিনায়ক নিয়ে কম আলোচনা হয়নি। কে হবেন টেস্টে রোহিত শর্মার উত্তরসূরী সেটা নিয়ে জল্পনা চললেও শুরু থেকেই দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন গিল। জসপ্রীত বুমরা, কেএল রাহল, ঋষভ পন্থদের নাম নিয়ে আলোচনা চললেও গিল যে কোচ গৌতম গম্ভীর ও নির্বাচকদের প্রথম পছন্দ ছিলেন, সেটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত শনিবার সরকারভাবে অধিনায়ক হিসাবে শুভমন গিলের নাম ঘোষণা করা হল। ভারতের ৩৭তম অধিনায়ক হলেন গিল। এবং সাম্প্রতিক সময়ে কনিষ্ঠ অধিনায়ক। এর আগে ২০২৪-এ জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে টি টোয়েন্টিতে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সফলভাবে আইপিএলে গুজরাট টাইটানসকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাছাড়া টি টোয়েন্টি ও একদিনের ম্যাচে রোহিত শর্মার ডেপুটি হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। এবার অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ৩২টি টেসেট খেলার পর মাথায় উঠল নেতৃত্বের মুকুট। ইংল্যান্ডে পাঁচটি টেস্ট খেলবে ভারত। এই সিরিজ দিয়েই শুরু হবে এবারের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সাইকেল। ঋষভ পন্থ সহঅধিনায়ক হলেন। পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেট, ভারতীয় এ দলে নিয়মিত পারফরম্যান্স করার পুরস্কার পেলেন ঈশ্বরণ। আবার সুযোগ পেলেন সিনিয়র দলে। বাংলা থেকে আকাশদীপও সুযোগ পেলেন। তবে বাদ পড়লেন মহম্মদ সামি। এদিন যে ১৮ জনের দল ঘোষণা করা হবল, তাঁরা হলেন, শুভমন গিল(অধিনায়ক), ঋষভ পন্থ (সহঅধিনায়ক), যশস্বী জয়সওয়াল, কেএল রাহুল, সাই সুদর্শন, অভিমন্যু ঈশ্বরণ, করণ নায়ার, নীতীশ কুুমার রেড্ডি, রবীন্দ্র জাদেজা, ধ্রব জুরেল, ওয়াশিংন সুন্দর, শার্দূল ঠাকুর, জসপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সিরাজ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা, আকাশদীপ, অর্শদীপ সিং ও কুলদীপ যাদব।