সুপার কাপের আগে ফুটবলারদের কড়া নির্দেশ অস্কারের

শনিবার সুপার কাপে(Super Cup) নামবে ইস্টবেঙ্গল(Eastbengal)। গোয়ায় তারই প্রস্তুতির মাঝে ফুটবলারদের সঙ্গে সন্দীপ নন্দী(Sandip Nandy) ইস্যু নিয়ে একান্তে বৈঠক অস্কার ব্রুজোঁর(Oscar Bruzon)। সদ্য প্রাক্তন হওয়া ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার কোচকে নিয়ে এই মুহূর্তে বাইরে যা চলছে, সেই ব্যপার নিয়ে একেবারেই ফুটবলাররা যাতে মাথা না ঘামায় সেই নির্দেশেই স্পষ্ট করে দিলেন অস্কার ব্রুজোঁ(Oscar Bruzon)। শুধুই এখন সুপার কাপ। বিশেষ করে দলের গোলকিপার প্রভসুখন গিল এবং দেবজিৎ মজুমদারদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন তিনি। বাইরে কী হচ্ছে সেদিকে নয়, এখন শুধুমাত্র সুপার কাপেই ফোকাস করার বার্তা দিয়ে দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল হেডস্যার অস্কার ব্রুজোঁ। সেই ব্যপারটা একেবারেই ম্যানেজমেন্ট দেখছে, তাই ফুটবলাররা যাতে ফুটবল ছাড়া অন্য কোনওকিছু নিয়ে না ভাবেন, সেই দিকেই বাড়তি ফোকাস অস্কার ব্রুজোঁর। ইতিমধ্যেই গোয়ায় প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল(Eastbengal)। আগামী শনিবার তাগের প্রথম ম্যাচ ডেম্পো। ধারেভাবে এগিয়ে থাকলেও, একেবারেই যে তাদের হাল্কা ভাবে নেওয়া যাবে সেই দিকেই নজর রয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের। হিরোশি(Hiroshi Ibusuki) থেকে কেভিন, রশিদদের(Mohammed Rashid) নিয়ে অবশ্য হাল্কা অনুশীলনেই রয়েছেন অস্কার ব্রুজোঁ(Oscar Bruzon)। তবে বারবার একটাই বার্তা দিচ্ছেন তিনি। প্রতিপক্ষ ডেম্পো হলেও, শুধু জয় নয়, বড় গোলব্যবধানেই জিততে হবে তাদের। কারণ এই গ্রুপ থেকে একটি দলই যাবে। মনে করা হচ্ছে যে দল ডার্বি জিতবে সেই হয়ত যাবে। কিন্তু ডার্বি ড্র হলে, সেক্ষেত্রে গোল ব্যবধানই যে ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই কারণেই তো এখন থেকেই অত্যন্ত সতর্ক ইস্টবেঙ্গল(Eastbengal) কোচ অস্কার ব্রুজোঁ। শেষ ডার্বিতে মোহনবাগানের কাছে হেরেছে ইস্টবেঙ্গল। সেইসঙ্গে ডুরান্ডে ডায়মন্ডহারবারের কাছে। বারবারই যেন সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন লাল-হলুদ শিবিরের কোচ। সুপার কাপ এখন তাদের পাখির চোখ। সেখানেই শেষপর্যন্ত ইস্টবেঙ্গল ঘুরে দাঁড়াতে পারেন কিনা সেটাই দেখার।
‘সমর্থকদের ভুল বোঝানো হচ্ছে; ভিকুনার কাছে ব্যবহার শিখুক অস্কারঃ’ সন্দীপ নন্দী

সুদীপ পাকড়াশীঃ ভারতীয় ফুটবলে অস্কার ব্রুজোর প্রোফাইল, তার পাশাপাশি ভারতীয় ফুটবলে সন্দীপ নন্দীর প্রোফাইল-তুলনা হয়? ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা নিশ্চয়ই জানেন। ২০১২-য় স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়ার কোচ হয়ে আসার পর অস্কার ব্রুজোর সাফল্য ছিল ২০১৩-১৪-র গোয়া পেশাদার লিগ জেতা। তারপর থেকে যাযাবরের মত ওঁর শুধু দেশ, শহর আর ক্লাব বদল। এখনও পর্যন্ত এক ক্লাবে কোচ হয়ে তার স্থায়িত্ব একমাত্র বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসে। ৬ বছর কোচিং করিয়ে ইস্টবেঙ্গলে এসেছেন তিনি। আর সন্দীপ নন্দী? তার ঝুলিতে রয়েছে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ছাড়াও মাহিন্দ্রা ইউনাইটেড, চার্চিল ব্রাদার্স, আইএসএলে কেরালা ব্লাস্টার্সে খেলার অভিজ্ঞতা। পালকে রয়েছে আই-লিগে সেরা গোলকিপারের সম্মান, সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সেরা ফুটবলারের সম্মান, লাল-হলুদ জার্সিতে আশিয়ান কাপ টুর্নামেন্টে সেরা গোলকিপারের পুরষ্কার-ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা নিশ্চয়ই জানেন। সার্টিফিকেট ছাড়া তো এখন আবার কোচের কদর হয় না! সেখানেও আরও অনেকের সাথে গোলকিপারের সেরা ‘লেভেল-থ্রি’ ডিগ্রির সার্টিফিকেটও সন্দীপ নন্দী পকেটে নিয়েই ইস্টবেঙ্গলে এসেছিলেন। ততদিনে তার গোলকিপার কোচ হয়ে কাজ করা হয়ে গিয়েছে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি, গোকুলম কেরালা এফসিতে এবং অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় দলের গোলকিপিং কোচ হয়ে। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা নিশ্চয়ই জানেন! কিন্তু সত্যিটা অন্যরকম ছিল। অস্কার ব্রুজো প্রথম থেকেই ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার কোচের পদে সন্দীপকে চাননি। গোয়ার এক বর্ষীয়ান গোলকিপার কোচ ছিলেন তাদের তালিকায়। তখনও ক্লাবের এই ছবিটা প্রকাশ্যে আসেনি যে, দিয়ামান্তাকোসকে কোচ ছেড়ে দিলেন আর তার পরের দিন ক্লাবের সর্বময় কর্তা সাংবাদিকদের বলছেন তিনি জানতেন না গ্রীক স্ট্রাইকারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে! তাই সন্দীপ নন্দীকেই শেষপর্যন্ত কোম্পানিকে গোলকিপার কোচের পদে নিতে হয়েছিল ক্লাবের শীর্ষনেতৃত্বের চাপে। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা নিশ্চয়ই এটাও জানেন! মঙ্গলবার সকালে গোয়া ফেরৎ সন্দীপ প্যারালাল স্পোর্টসকে বললেন, “কোচ যে চাইত না সেটা যোগ দেওয়ার পরই বুঝেছিলাম। গোলকিপারদের নিয়ে কোনওদিন আধ ঘন্টাও আলাদাভাবে ট্রেনিং করতে পারতাম না। এমনকী, ট্রেনিং-এর নির্ধারিত সময়ের আগে গোলকিপারদের নিয়ে প্র্যাক্টিসে নামতাম। তাও ওদের ডেকে নিয়ে মিটিংয়ে বসে যেত অস্কার।” লাল-হলুদের সমর্থকরা, যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় এই প্রাক্তন জাতীয় গোলকিপারের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছেন তারা নিশ্চয়ই দেখেছেন এই দৃশ্য! সন্দীপের আক্ষেপ, ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদেরও ভুল বোঝানো হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে ট্রোল করা হছে মিথ্যে অভিযোগ করে! বলা হচ্ছে, সন্দীপ নাকি আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে হারের পর ড্রেসিংরুমে অস্কারকে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলেছেন! অস্কার নাকি তাকে ভদ্রভাবেই বলেছিলেন, সন্দীপের পরামর্শটা ভুল ছিল! সন্দীপ বলছেন, “সমর্থকরা ভুল বুঝছেন। সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। আপনি কোনও কোচকে শুনেছেন, ফুটবলারদের সামনে, টাই-ব্রেকারের আগে দলের দ্বিতীয় গোলকিপারকে চ্যালেঞ্জ করে বলা, পারবে তো ম্যাচটা জেতাতে? সেই ফুটবলারের মনের জোর তাতে বাড়বে না সে নার্ভাস হয়ে পড়বে?” আমাকে উনি সকলের সামনে হুমকির সুরে বলছেন, কার প্ররোচনায় আমি দেবজিৎকে নামানোর পরামর্শ দিয়েছি!” সন্দীপের সোজাসাপটা জবাব, “অস্কার ব্রুজোর ম্যান-ম্যানেজমেন্ট স্কিল শূন্য। আর কোচ হিসেবে ওর চেয়ে সঞ্জয় সেন একশো গুণ এগিয়ে।” অস্কারের দুর্ব্যবহারের আরও একটা বড় উদাহরণ দিলেন সন্দীপ। “বিনো জর্জ একদিন কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের দল নিয়ে মাঠে ট্রেনিং করছিল। সেই বিনোকে প্রচন্ড অপমান করেছিল অস্কার। বলেছিল, কলকাতা লিগ একটা আমেচার লিগ। তার জন্য ট্রেনিং করে বিনো মাঠ খারাপ করে দিচ্ছে! কলকাতা লিপের দলটা ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের দল। এখান থেকেই সায়ন, বিষ্ণু, জেসিনের মত ছেলেরা কলকাতা লিগে ভাল খেলে প্রথম দলে সুযোগ পেয়েছে। সেই লিগকে অস্কার বলছে অ্যামেচার লিগ!” সন্দীপ বললেন। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা নিশ্চয়ই জানেন না এই ঘটনার কথা! জাতীয় গোলরক্ষকের পরামর্শ, অস্কার যান ডায়মন্ড হারবার এফসি-র আর এক স্প্যানিশ কোচ কিবু ভিকুনার কাছে। “অস্কার শিখুক ভিকুনার কাছে, কীভাবে দলের প্রত্যকেকে সম্মান করতে হয়, কীভাবে ম্যাচের আগে ফুটবলারদের মোটিভেট করতে হয়। ভিকুনার কাছে ওর নেওয়া উচিৎ কোচিং আর ম্যান-ম্যানেজমেন্ট স্কিল শেখার পাঠ,” সন্দীপের বক্তব্য। যার বিরুদ্ধে সন্দীপের এত অভিযোগ সেই অস্কার ব্রুজোর প্রতিক্রিয়া জানার উপায় নেই। কারণ কোম্পানির নিযুক্ত মিডিয়া বিভাগ প্রায় নিরাপত্তারক্ষীদের মত ব্যবহার করেন কোনও ফুটবলার, এমনকী কোচের সঙ্গেও কথা বলতে চাইলে! তাদের অনুমতি ছাড়া দলের কারও কথা বলার উপায় নেই!
সন্দীপ নন্দীর পরামর্শেই গিলের পরিবর্তে দেবজিত, ড্রেসিংরুমে ফিরেই হুঁশিয়ারি অস্কারের

সৌভিক মোহন্ত মোহনবাগানের(MBSG) কাছে হারের পর ড্রেসিংরুমে ফিরেই গোলকিপার কোচ সন্দীপ নন্দীকে(Sandip Nandy) হুঁশিয়ারি অস্কার ব্রুজোঁর(Oscar Bruzon)। হঠাত্ সবাইকে ছেড়ে সন্দীপ নন্দী(Sandip Nandy) কেন। কারণ গিলকে তুলে দেবজিতকে(Debjit Majumder) খেলানোর পরামর্শটা তো সন্দীপ নন্দীরই ছিল। আর সেটাই তো ইস্টবেঙ্গলের(Eastbengal) ডার্বি হারের অন্যতম প্রধান কারণ। প্রশ্ন তুলছেন সকলে। ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে ফিরেই সন্দীপ নন্দীকে ভবিষ্যতে আরও ভেবে পরিকল্পনার হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলেন কোচ অস্কার ব্রুজোঁ(Oscar Bruzon)। কার্যত গোলকিপার কোচের বিরুদ্ধে ক্ষোভই উগরে দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল(Eastbengal) কোচ। তাঁকে যে আরও বুঝতে হবে সেই কথাও সাফ বুঝিয়ে দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের হেডস্যার। ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে হঠাত্ই দেখা যায় ডাগ আউটে প্রস্তুতি সারছেন দেবজিত(Debjir Majumdar)। সেই সময়ই অস্কারকে(Oscar Bruzon) তাঁকে খেলানোর কথা বলতে যান সন্দীপ নন্দী(Sandip Nandy)। কিন্তু প্রথমে তা নাকোচ করে দেন লাল-হলুদ কোচ। কিন্তু সন্দীপ নন্দী তাঁকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছিলেন। একটা সময় দেখে বোঝাই যাচ্ছিল বেশ বাগবিতন্ডা হচ্ছিল দুজনের মধ্যে। পরে অবশ্য দেবজিতকে(Debjit Majumdar) খেলানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। টাইব্রেকারে নামেন তিনি। কিন্তু একটিও বল আটকাতে পারেননি। এরপরই সন্দীপ নন্দীকে সোজা সাপ্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে দিয়েছেন অস্কার ব্রুজোঁ। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যপারে আরও ভাবনার কথাই বলেছেন অস্কার(Oscar Bruzon)। ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে গেলে যে আরও ভেবে চিন্তেই নিতে হবে সেই কথাও লাল-হলুদের গোলকিপিং কোচকে বুঝিয়ে দিয়েছেন অস্কার। তবে ফুটবলারদের খেলায় খুব একটা অসন্তুষ্ট নন ইস্টবেঙ্গল কোচ। পারফরম্যান্সের প্রশংসাই নাকি করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে এই পেনাল্টির ফলাফলও যতদূর সম্ভব ভুলে যাওয়ার বার্তাও দিয়েছেন লাল-হলুদের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোঁ(Oscar Bruzon)। তবে ইস্টবেঙ্গলের হারের পর থেকে কিন্তু এই দেবজিতকে খে্লানো নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন প্রাক্তন থেকে বিশেষজ্ঞরাও।