ছয় গোলে হারের পর নেমারদের চড় মারার হুমকি! ক্লাবের গেট ভেঙে চড়াও স্যান্টোস সমর্থকরা

ব্রাজিল প্রিমিয়ার লিগে ভাস্কোর বিরুদ্ধে ৬ গোলে হারের পর সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন নেমার। গত জুনে ব্রাজিলের ক্লাবের নতুন চুক্তিতে সই করেছিলেন নেইমার। সম্প্রতি ব্রাজিল প্রিমিয়ার লিগে স্যান্টোসকে ৬ গোলে বিধ্বস্ত করেছে ভাস্কো দা গামা। হারের পর আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি ব্রাজিলীয় ফুটবলার। মাঠেই কাঁদতে দেখা যায় তাঁকে। ম্যাচের ঘন্টাখানেকের মধ্যে বরখাস্তও করা হল স্যান্টোস কোচকে। তাতেও ক্ষোভ মেটেনি ক্লাবের সমর্থকদের। লিগ টেবিলে স্যান্টোস রয়েছে ১৫তম স্থানে। অবনমনের ভয় এখনও কাটেনি। নেমারদের অনুশীলনের পরও আছড়ে পড়ল তাঁদের বিক্ষোভ। ক্লাবের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন তাঁরা। ক্লাব কর্তাদের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হন সমর্থকরা। নেমার-সহ অন্যান্য ফুটবলাররাও তাঁদের মুখোমুখি হন। ৩৩ বছর বয়সি তারকাকে উদ্দেশ্য করে তারা বলেন, “আপনি কাঁদলে দলের মনোবল কোথায় থাকবে?” সব প্লেয়ারদের তাঁরা বলেন, “আপনাদেরও গালে চড় মারা উচিত!” নেমাররা ঠান্ডা মাথাতেই সমর্থকদের মুখোমুখি হওয়ার পর ব্রাজিলের জাতীয় তারকা বলেছেন, “আমিও খুব হতাশ। আপনাদের প্রতিবাদ করার পূর্ণ অধিকার হয়েছে। কিন্তু হিংসাত্মক কিছু করবেন না। আমাদের অপমান করুন। আমরা নিজেরাও লজ্জিত। কেরিয়ারে এত খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে কখনও যাইনি।”
ছয় গোলে বিধ্বস্ত স্যান্টোস! চোখের জলে মাঠ ছাড়লেন নেমার

১১ বছর আগে, ২০১৪-র বিশ্বকাপ ফাইনালে, বেলো অরিজন্তে স্টেডিয়ামের ৫৮ হাজার দর্শক দেখেছিলেন চোখের জলে স্ট্রেচারে শুয়ে তাকে মাঠ ছাড়তে। সেবার জার্মানির বিরুদ্ধে ১-৭ গোলে হেরেছিল ব্রাজিল। বৃহস্পতিবার আবার স্যান্টোসের ঘরের মাঠে, স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক দেখল নেমারের কান্না। ম্যাচের শেষে। ততক্ষণে স্যান্টোস ব্রাজিলিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ভাস্কো দা গামার বিরুদ্ধে তার দল ৬ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে! নেমারকে তার ক্লাব ফুটবলজীবনে এরকম বিপর্যস্ত হতে হয়নি। ২০ দলের ব্রাজিলিয়ান প্রিমিয়ার লিগের টেবিলে এই হারের পর স্যান্টোস ১৫ নম্বরে চলে গিয়েছে! অবনমনের ঠিক দু’পয়েন্ট পেছনে! লজ্জার এই পরাজয়ের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে স্যান্টোস কোচকে। গত জুনে ব্রাজিলের এই ক্লাবের নতুন চুক্তিতে সই করেছিলেন নেইমার। কিন্তু তাঁর কেরিয়ারের এটাই সবচেয়ে হতাশাজনক পরাজয়ের নজির। যা মেনে নিতে পারেননি তিনি। শেষ বাঁশি বাজার পর মাঠে বসে কেঁদে ফেলেন। তাঁকে সতীর্থরা টেনে তোলার চেষ্টা করলেও উঠতে চাইছিলেন না। এরপর তাঁকে সান্ত্বনা দিতে আসেন ক্লাবের এক স্টাফ। নেইমারকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। পরাজয়ের পর নেইমার বলেন, “আমি সত্যিই লজ্জিত। অত্যন্ত হতাশাজনক পারফরম্যান্স করেছি আমরা। সমর্থকদের প্রতিবাদের সম্পূর্ণ অধিকার আছে। এটা আমার জীবনে সবথেকে খারাপ এবং লজ্জাজনক অভিজ্ঞতা। রাগে আর হতাশায় কান্না আসছে। এই ক্লাবের জার্সি গায়ে এভাবে খেলা লজ্জার। প্রত্যেকেরই বাড়ি গিয়ে মাথা বালিশে রেখে ভাবা উচিত, তাদের আসলে কী করণীয়।”
নেমারের স্যান্টোসে খেলা শেষ!
লালকার্ড দেখে রেফারির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেন নেমার। জানিয়ে দিলেন, এই ধরনের রেফারি থাকলে আর যাইহোক ভাল কিছু আশা করা ঠিক হবে না। ১৭ এপ্রিল চোট পাওয়ার পর মাঠ থেকে ছিটকে যান ব্রাজিলিয়ান তারকা। প্রায় দেড় মাস পরে সোমবার ফিরেছিলেন মাঠে। কিন্তু সেই ফেরা মোটেই সুখকর হল না। হাত দিয়ে গোল করার অপরাধে রেফারি তঁাকে লালকার্ড দেখালেন। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার দশ মিনিট পর গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ল স্যান্টোস। সেই গোলই ম্যাচের ফল নির্ধারিত করে দেয়। সোমবার স্যান্টোসের খেলা ছিল বোতাফোগোর সঙ্গে। প্রথমার্ধে বোতাফোগোর এক ফুটবলারকে ফাউল করায় রেফারি নেমারেক হলুদ কার্ড দেখান। দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখলেন আবার ৭৬ মিনিটে। স্যান্টোস আক্রমণে উঠে যে শট নিয়েছিল তা বোতাফোগোর গোলকিপার কোনওমতে সামাল দেন। কিন্তু সেই বল আদৌ তঁার নিয়ন্ত্রনে ছিল না। গোলকিপারের বঁাচানো বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে ছুটে আসেন নেমার। সেই সময় বোতাফোগোর এক ডিফেন্ডার পা উঁচিয়ে বল ক্লিয়ার করতে মরিয়া মনোভাব দেখান। ছুটে যান নেমারও। কিন্তু বোতাফোগোর ডিফেন্ডার বল ক্লিয়ার করার আগেই নেমার হাত দিয়ে বল জালে ঢুকিয়ে দেন। ব্যস, শুরু হয়ে যায় হইচই। বোতাফোগোর ফুটবলাররা ছুটে আসেন। রেফারিকে তঁারা ক্রমাগত প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। এই ঘটনার জন্য নেমারকে দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড সহ লালকার্ড দেখান রেফারি। নেমার মাঠ ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই গোল করে চলে যায় বোতাফোগো। ফলে নেমার যেমন একদিকে দীর্ঘদিন পর খেলতে নেমে স্যান্টোস সমর্থকদের চক্ষুশূল হলেন। অন্যদিকে দলকে হারানোর জন্য তিনি হয়ে গেলেন এক নম্বর ভিলেন। ম্যাচ শেষে দেখা যায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা পোস্ট করেছেন নেমার। সেই পোস্টে মূলত দোষী সাব্যস্ত করেছেন রেফারিকে। তঁার দাবি প্রথম কার্ড দেখানোটাই ছিল আসলে ভুল। “দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখানো নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। বলব ঠিকই আছে। কিন্তু রেফারি প্রথম কার্ড কেন যে দেখালেন সেটাই বুঝলাম না। আমার মনে হয় পুরোটাই তিনি তামাশা করলেন। সামান্য আঘাত করেছিলাম। দেখলাম রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে কার্ড বের করে দেখিয়ে বসলেন। রেফারিং এতটাই খারাপ যে বলার কিছু নেই। তবে যা জানাচ্ছি তা আমার ব্যক্তিগত মত। দয়া করে আমাকে যেন বাড়তি শাস্তি দেওয়া না হয়।” সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন নেমার। তবে ফুটবল মহলের খবর স্যান্টোসে হয়তো শেষ ম্যাচ খেলে ফেললেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। জুনে তঁার সঙ্গে চুক্তি শেষ হচ্ছে স্যান্টোসের। লিগের একটা ম্যাচ বাকি। তারপর মরশুম শেষ হয়ে যাবে। লালকার্ড দেখায় সেই ম্যাচ তিনি খেলতে পারবেন না। মনে হয়না স্যান্টোস চুক্তি নবীকরণের দিকে এগোবে। তাই বলে দেওয়া যায়, নেমারের হয়তো শেষ ম্যাচ খেলা হয়ে গেল। হারের ফলে অবনমনে থাকা স্যান্টোসের অবস্থা মোটেই ভাল জায়গায় থাকলো না। ২০ দলের মধ্যে লিগ টেবিলে স্যান্টোসের অবস্থান এখন ১৮ নম্বরে। (ছবি-নেমারকে লালকার্ড দেখাচ্ছেন রেফারি।)