বিশ্বকাপ জয়ের পরই শেফালির মুখে সচিন স্তুতি

বিশ্বকাপটা খেলার কথাই ছিল না তাঁর। কিন্তু সেই শেফালি বর্মাই(Shafali Verma) মহিলাদের বিশ্বকাপের ফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ। ম্যাচ শেষে শেফালি(Shafali Verma) যে আপ্লুত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেইসঙ্গে তাঁর মুখে সচিনের নামই শোনা গেল। সচিন তেন্ডুলকরকে(Sachin Tendulkar) দেখেই নাকি অনুপ্রানিত হয়েছেন। আর সেটাই যে তাঁকে সাফল্য এনে দিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই কথাই শোনা গেল শেফালির মুখেও। প্রতিকা রাওয়ালের পা ভেঙে যাওয়ায় বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ আসে শেফালির(Shafali Verma) সামনে। সেই সময় থেকেই তিনি জানতেন কিছু একটা ভাল করার জন্যই নাকি এই সুযোগ পেয়েছেন। সেমিফাইনালে ব্যর্থ। কিন্তু ফাইনালেই সেই শেফালি হয়ে উঠল ভারতের প্রধান অস্ত্র। সর্বোচ্চ ৮৭ রান যেমন তিনি করলেন, তেমনই আবার তিনটি উইকেটও তুললেন। ম্যাচের সেরাও হয়েছেন তিনি। আর ম্যাচ শেষে শেফালির মুখে সচিনের কথা। সচিনকে দেখেই পেয়েছিলেন অনুপ্রেরণা। মাস্টার ব্লাস্টারের কথাই তাঁকে জুগিয়েছিল আত্মবিশ্বাস। ম্যাচ শেষে শেফালি বর্মা জানান, “আমি শুরুতেই বলেছিলাম যে ভগবান ভালো কিছু করার জন্যই আমাকে বোধহয় এখানে পাঠিয়েছিল। আর সেটা এই ম্যাচেই প্রমাণিত হল। আমি যখন ফাইনালের দিন সচিন তেন্ডুলকরকে সামনে দেখলাম, সেই মুহূর্তটাই আমাকে শক্তি যুগিয়েছিল। আমি তাঁর সঙ্গে ক্রমাগত কথা বলেছলাম, সেটাই আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছিল আমাকে। তিনি ক্রিকেটের মাস্টার। আর সেটা আমাদের সকলের কাছেই ছিল অনুপ্রেরণা”। ফাইনালের দিন শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন শেফালি বর্মা। একের পর এক বড় শটে কার্যত নাজেহাল করে দিয়েছিলেন প্রোটিয়া বাহিনীকে। ৮৭ রানের ইনিংস যেমন খেলেছিলেন। তেমনই বল হাতেও হয়েছিলেন সফল। তুলে নিয়েছিলেন প্রতিপক্ষের তিনটি উইকেট।
গেম চেঞ্জার দীপ্তি, মুম্বইয়ে বিশ্বজয় হরমনপ্রীতদের

ঝুলন(Jhulan Goswami) পারেননি। পারেননি মিতালী রাজও(Mithali Raj)। অবশেষে স্বপ্নপূরণ হল। হরমনপ্রীত কৌরের(Harmanpreet Kaur) হাত ধরেই মহিলাদের প্রথম বিশ্বকাপ জিতল ভারত। নভি মুম্বইয়ের ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে তৈরা হল এক নতুন ইতিহাস। দীপ্তি শর্মার(Deepti Sharma) বলে ডে ক্লার্কের শট। হরমনপ্রীত কৌরের(Harmanpreet Kaur) হাতে ক্যাচ। প্যাক্ট আপ স্টেডিয়াম শুরু গর্জন। কারণ ভারত যে বিশ্বকাপ জিতেছে। ঘরের মাঠে ঘরের মেয়েরা বিশ্বজয়ী। ক্যাচ নিয়েই তো সেই কারণে একেবারে গ্যালারীর দিকে ছুটে গেলেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক। তিনি বলেছিলেন হারের যন্ত্রনা ভুলে এবার সাফল্যের উত্সব দেখতে চাই। সেটাই যে করে দেখালেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর বিশ্বকাপটা হাতে তুললেন হরমনপ্রীত কৌররা। তবে ভুললেন না পূর্বসুরীদেরও। মঞ্চে ঝুলন, মিতালীদের হাতেও তুলে দিলেন সেই সফল স্বপ্নের ট্রফিটা। চেখের জল যেন এদিন বাঁধ মানল না কারোর। গোটা গ্যালারী তখন স্বাগত জানাচ্ছে ভারতের বাঘিনীদের। ভয়ঙ্কর দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশেষ করে তাদের অধিনায়ক লওরা উলভার্ট। গোটা গ্যালারী তখন চুপচাপ। ভারতের গেম চেঞ্জার দীপ্তি শর্মা(Deepti Sharma)। ব্যাট হাতে যেমন ৫৮ রান করেছেন, তেমনই মোক্ষম সময়ে তুলে নিয়েছেন প্রোটিয়া শিবিরের একের পর এক উইকেট। উলভার্ট, ডার্কসেন থেকে ডে ক্লার্ক – দক্ষিণ আফ্রিকার বিধ্বংসী ক্রিকেটাররা ছিলেন এদিন তাঁর ঝুলিতে।ব্যাট হাতে ৫৮ রানের পাশাপাশি নিলেন একাই পাঁচ উইকেট দীপ্তি শর্মা(Deepti Sharma)। উলভার্টের সেঞ্চুরির পর যখন একটা সময় মনে হচ্ছিল ম্যাচটা হয়ত বেড়িয়েই গেল, সেই সময়ই দীপ্তির(Deepti Sharma) বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ। আবার যে ডে ক্লার্ক গ্রুপপর্বে ভারতের সামনে ত্রাস হয়ে গিয়েছিলেন। সেই তিনিও দীপ্তিরই শিকার। ফাইনালের মঞ্চে ভারতের পারফেক্ট গেমচেঞ্জার এদিন দীপ্তি। প্রতিযোগিতার সেরাও তো তিনিই হলেন। আর ম্যাচের সেরা ২ উইকেট ও ৮৭ রান করে শেফালি বর্মা(Shafali Verma)। বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাস তৈরির পর মাঠেই তাদের বাঁধনহীন উচ্ছ্বাস। ভিআইপি বক্সে দাঁড়িয়ে হরমনপ্রীত(Harmanpreet Kaur), স্মৃতিদের স্বাগত জানাচ্ছেন রোহিত শর্মাও(Rohit Sharma)। টস জিতে এদিন ভারতকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সুযোগ দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমিফাইনাল থেকে সুযোগ পাওয়া শেফালি বর্মা এদিন প্রথম থেকেই ছিলেন অত্যন্ত ফোকাসড। তিনিই করলেন ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ রান। সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত স্মৃতি মন্ধনার। শেফালি করেন ৮৭ রান। স্মৃতি মন্ধনা ফেলেন ৪৫ রানে। তবে এদিন জেমিমা(Jemimah Rodriguez), হরমনপ্রীত(Harmanpreet Kaur) বেশীক্ষণ থাকতে পারেননি। তবে দীপ্তি(Deepti Sharma) ছিলেন আক্রমণাত্মক ছন্দে। তাঁর ৫৮ রানের ইনংসটাই তো ভারতের মন্থর রানের গতিতে নতুন বেগ দিয়েছিল। এরপর রিচা ঘোষের একটা শেষ মুহূর্তের ২৪ বলে ৩৪ রানের ঝোড়ো ইনিংস। শেষপর্যন্ত ভারত করে ২৯৮ রান। ইনিংস শেষে নানান হিসাব নিকাশ চলছে। কারণ প্রতিপক্ষ শিবিরে রয়েছেন উলভার্ট। চলতি বিশ্বকাপে যার রেকর্ড সবচেয়ে বেশি অপরাজিত থাকার। উইকেট তুলতে পারলেও, উলভার্টের উপস্থিতি ক্রমশই চিন্তা বাড়াচ্ছিল। সময় যত এগোচ্ছিল ততই ভয়ঙ্কর হচ্ছিলেন তিনি। অপর দিকে উইকেট গেলেও, উলভার্ট থাকা মানে যেকোনও সময়ই যে অসম্ভব কিছু হয়ে যেতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্যাপ, লুইসদের শেফালি ফেরালেও, আসল চিন্তার কারণ ছিলেন এই উলভার্ট। এমন সময়ই হরমনপ্রীতের মোক্ষম চাল। হঠাত্ই বোলিং চেঞ্জ। আসেন দীপ্তি শর্মা(Deepti Sharma)। ডার্কসেনকে বোল্ড করেন তিনি। আর কিছুক্ষণ পরই সেঞ্চুরি করা উলভার্টের ক্যাচ দীপ্তির বলে। ভারতীয় শিবিরের নতুন অক্সিজেন। এরপরই ট্রাইয়নকেও সাজঘরে ফেরান। কিন্তু তখনও ক্রিজে রয়েছেন ডে ক্লার্ক। দীপ্তির বলেই রান আউট খাকা। তখনও চেষ্টা চালাচ্ছেন ডে ক্লার্ক। কিন্তু চাপটা আর সামলাতে পারেননি। শেষপর্যন্ত দীপ্তির বলে হরমনপ্রীতের হাতে তাঁর ক্যাচ। আস সেইসঙ্গেই বিশ্বকাপ ভারতীয় মহিলাদের হাতের মুঠোয়।