অসুস্থ দিদির চিকিৎসা নিয়ে ভাবনা, নিজের অ্যাকাডেমি-র সম্প্রসারণের পরিকল্পনা-সাফল্যেও আকাশদীপের পা মাটিতেই

সুদীপ পাকড়াশীঃ দুর্গাপুর থেকে কলকাতায় এসে ভিডিওকন ক্রিকেট অ্যাকাদেমিতে তার স্যরের কাছে মাত্র তিন বছর ছিলেন আকাশদীপ সিং। সে তো প্রায় ১৫ বছর আগের কথা। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। দুর্গাপুরে টেনিস-বলে ক্রিকেট জীবন থেকে ২০১০-এ ইউনাইটেড স্পোর্টসের হয়ে প্রথম ডিভিশন খেলা, ভিশন-২০২০-তে নজর কাড়া, বাংলার জার্সি পরা থেকে শুরু করে আইপিএলের স্বাদ পাওয়া আকাশদীপ রবিবার বার্মিংহ্যামে নায়ক হয়ে উঠলেন। মহম্মদ সিরাজ আর আকাশদীপের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ৫৮ বছর পর এজবাস্টনে ভারতের ইতিহাস গড়া। প্রতিষ্ঠা, বিশেষত আর্থিক প্রতিষ্টা তাকে প্রথম জীবনের কোচকে ভুলিয়েই দিতে পারত। কিন্তু ভোলায়নি! সেই কথা বলতে গিয়ে ভিডিওকন অ্যাকাডেমিতে আকাশের কোচ সৌতম মিত্র অভিভূত! টেস্ট শুরু হওয়ার আগে কোচ মেসেজ করেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে জবাব। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট নিয়েছেন। কোচ আবার ধন্যবাদ জানিয়ে মেসেজ করেছেন। তার উত্তরে আর মেসেজ নয়, বার্মিহ্যাম থেকে সোমবার কোচকে ফোন করেছেন ভারতের জয়ের অন্যতম নায়ক। “আমাকে ফোন না-ও করলে পারত। এখন তো ওর বৃত্তটা আর বাংলার ক্রিকেটে আবদ্ধ নেই। কিন্তু পা-টা এখনও মাটিতে আছে। শিকড়কে ভোলেনি।” মানুষ আকাশদীপে মুগ্ধতার আরও একটি কারণ সৌতমের মনে হয়েছে, ওর সংযমী কথাবার্তায়। “নিজের বোলিং নিয়ে উচ্ছ্বাস কম। বলছিল, এই পারফরম্যান্সটা ধরে না রাখতে পারলে উচ্ছ্বসিত হয়ে লাভ নেই।” সৌতম জানালেন, একইসঙ্গে, ফোনে তার স্যরের সঙ্গে ওই টুকু সময়েই আকাশদীপের কথায় পরিবার নিয়ে ভাবনার প্রতিফলন। “ও কিন্তু ভাবছে ক্যানসারে আক্রান্ত দিদি-র চিকিৎসার কথা, মা-র জন্য ভাবনা। এমনকী, এবছরই সাসারামে নিজের নতুন বাড়ির পৃহপ্রবেশে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। তখন শুনেছিলাম, জমি কিনে নিজের অ্যাকাডেমি করতে চলেছে। তার সম্প্রসারণ নিয়েও ভাবছে আকাশদীপ,” বলছেন সৌতম। প্রসঙ্গত, রবিবার, টেস্টের পর, টেস্ট সস্প্রচারকারী সংস্থাকে সাক্ষাৎকারে আকাশদীপ জানিয়েছেন, তার ১০টা উইকেট দিদি-কে-ই উৎসর্গ করছেন। এ-ও জানিয়েছেন, দু’মাস আগে ক্যানসার ধরা পরা দিদ এখন শারীরিকভাবে অনেকটাই স্থিতিশীল। কিন্তু পেশার সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রথম সাফল্যের ছোঁয়া ঝড়ের মতই অনেক কিছুকে ভুলিয়ে দেয়। সৌতম বলছেন, এখানেই আকাশদীপ ব্যতিক্রম। আর এই মানসিকতার পেছনে কোচের মনে হয়েছে শৈশবের লড়াইয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থেকে গিয়েছে। অপ্রত্যাশিতভাবে ছোটবেলায় বাবা আর দাদার প্রয়াত হওয়া। সংসার চালানোর দায়িত্ব অল্প বয়সেই নিজের কাঁধে এসে পরা, বিহার ক্রিকেট সংস্থা নির্বাসনে থাকায় ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ায় প্রতিবন্ধকতা-অল্প বয়স থেকেই আকাশদীপ জেনে গিয়েছেন লড়াই ছাড়া তার জীবনে কোনও প্রাপ্তি সম্ভব নয়। আর বোলার আকাশদীপ? সৌতম বলছেন, “আমার আনন্দ এখানে যে অনেকবছর পর ভারত একজন প্রকৃত সুইং বোলার পেল এবং সে বাংলার। আর ভারতীয় ক্রিকেটের এই প্রাপ্তিতে আমার যৎসামান্য হলেও অবদান থেকে গেল।”