কোমরে টায়ার বেঁধে পাহাড়ি রাস্তায় দৌড়ের অভ্যাসেই সহজাত গতি আর শক্তি সুজলের

সুদীপ পাকড়াশীঃ তিনদিন আগে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে হেভিওয়েট ডায়মন্ড হারবার এফসি-র বিরুদ্ধে ইউনাইটেড স্পোর্টসের ২ গোলে জয়ে একটি গোল ছিল তার। তিনি সুজল মুণ্ডা। দলের কোচ, প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার লালকমল ভৌমিক ২২ বছর বয়সি এই স্ট্রাইকারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী। বলেছিলেন ছেলেটার গতি আর শক্তি সহজাতটা। শেখার জেদ আছে, একাগ্রতা আছে। এই মরশুমে এখনও পর্যন্ত তিনটি গোল করেছেন সুজল। ডায়মন্ড হারবার এফসি-র গোল করে ম্যাচের সেরার পুরষ্কারও পেয়েছেন। কিন্তু তার প্রতিক্রিয়ায় বিশেষ উচ্ছ্বাস নেই। ফোনে কথা বলার সময় বরং বললেন, “সাহিল তো এখন জাতীয় দলের খেলছে। তাই দলের একজন ফরোয়ার্ড হিসেবে আমার বাড়তি দায়িত্ব ধারাবাহিকতা দেখানো, গোল করা।” সুজলের বাড়ি ভুটান সীমান্তে আলিপুরদুয়ারের একটা পাহাড়ি শহর জয়গাঁওয়ে। বাবা একটি কোম্পানির গাড়ি চালান। দাদা গানের শিক্ষকতার কাজ করেন। শৈশবে স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার। কিন্তু ১২ বছর বয়সে, স্থানীয় একটি কোচিং ক্যাম্পে কোচ বিমল মুখিয়ার কাছে খেলার হাতেখড়ি হওয়ার পর থেকে ফুটবলই তার একমাত্র প্রেম হয়ে ওঠে। ২০২৩-এ ট্রায়ালে পাস করে ইউনাইটেড স্পোর্টসে যোগ দেওয়ার আগে একটা মরশুম খেলেছেন বেঙ্গালুরুর হ্যালে। সুদূর জয়গাঁও থেকে একা চলে গিয়েছিলেন বেঙ্গালুরু! টেনশন হয়নি? সুজল বলছেন, “হ্যাল একটা নোটিশ দিয়েছিল ফুটবলার নেওয়া হবে বলে। একাই রওনা দিয়েছিলাম। একটু ভয় ভয় করছিল প্রথমে। কিন্তু নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল।” বিশ্বাস তৈরি হওয়ার পেছনেও একটা গল্প আছে। ছোট থেকেই নিজের ফিটনেস তৈরি করার জন্য অনুশীলনে ডুবিয়ে দিয়েছেন। “দৌড়ের নানারকম অনুশীলন করেছি, আমার গডফাদার বিমল মুখিয়ার তত্বাবধানে। আমাদের শহরটা তো পাহাড়ের কোলে। তাই পাহাড়ি রাস্তায় দিনের পর দিন হাই-অল্টিটিউড ট্রেনিং করেছি। কোমরে টায়ার বেঁধেও স্যার দৌড় করিয়েছেন। তারই ফসল আত্মবিশ্বাস তৈরি হওয়া,” বললেন সুজল। ২০২৩-এ ইউনাইটেড স্পোর্টসে যোগ দেওয়ার পর থেকে কল্যণীতেই থাকেন। ক্লাবের ডিরেক্টর নবাব ভট্টাচার্য আর কোচ লালকমল স্যরের কথা সুজলের মুখে। “নবাব স্যার যে যত্নে খোঁজখবর রাখেন আমার তাতে বাড়ি না যাওয়ার আক্ষেপটা মিটে যায়। আর লালকমল স্যারের কাছে নিজের টেকনিক আর স্কিল উন্নত হয়,” সুজলের মন্তব্য। বহুদিন বাড়ি যাননি সুজল। মন খারাপ হতে পারে। কিন্তু সুজলের কথায় আবার সেই একাগ্রতা আর জেদের রেশ। “কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের সুপার-সিক্সেও ধারাবাহিকতা রাখতে দৃঢপ্রতিজ্ঞ আমরা সবাই। যাতে দল চ্যাম্পিয়ন হয়। তারপর সেই সাফল্যটা নিয়ে বাড়ি ফিরব!” বললেন সুজল।