সাফল্য উৎসর্গ বাবাকে; বিপক্ষের সমর্থকদের চিৎকারেও মায়ানমারকে হারানো স্মরণীয়ঃ সুলঞ্জনা

সুদীপ পাকড়াশীঃ এই প্রথম জাতীয় দলের হয়ে কোনও টুর্নামেন্ট জয়ের পর ইনসেনটিভ পাওয়ার ঘোষণা শুনলেন তারা। রবিবার ২০ বছর পর অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপ ফুটবলের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে ভারতের মেয়েরা। গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে মায়ানমারকে হারিয়ে। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন দলের জন্য ২২ লক্ষ টাকার ইনসেনটিভ ঘোষণা করেছে। জাতীয় দলে বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন স্ট্রাইকার সুলঞ্জনা রাউল। অনূর্ধ্ব-২০-র ভারতের হয়ে দ্বিতীয়বার তার প্রতিনিধিত্ব করা। অনূর্ধ্ব-১৭-র জাতীয় দলেরও জার্সি দু’বার পরেছেন এর আগে। কিন্তু ইনসেনটিভ ঘোষণা নয়, সোমবার দুপুরে দিল্লি থেকে ফোনে কথা বলার সময়ও সুলঞ্জনার ঘোরে রবিবারের ম্যাচ। “গ্যালারি জুড়ে ছিল মায়ানমারের সমর্থকরা আর তাদের প্রচণ্ড চিৎকার। মাঠে তৈরি হয়েছিল একটা শব্দব্রক্ষ্ম। তার মধ্যে আমাদের ৯০টা মিনিট খেলতে হয়েছে। কোচ জোয়াকিম অ্যালেকজান্ডারসন মাঠে নামার আগে ড্রেসিংরুমে একটাই কথা বলেছিলেন, এটা গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচ নয়, একটা নক-আউট টুর্নামেন্টের ফাইনাল। তাই গুরুত্বটা উপলব্ধি করে মাঠে নেমো। তাই অনুভূতিটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে,” বললেন সুলঞ্জনা। ম্যাচের পর বাবার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে তার ভগবানপুর গ্রাম এখন থেকেই সুলঞ্জনার বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু তার ক্লাব ইস্টবেঙ্গলের হয়ে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে পারফর্ম করার মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন সুলঞ্জনা। বললেন, “এখন তো বাড়ি যাওয়া হবে না। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে এএফসি কাপ খেলে তারপর বাড়ি ফিরব। বাবার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। ভীষণ খুশি হয়েছেন। আমার ফুটবলার হয়ে ওঠার পেছনে তার অবদান তো ভোলার নয়।” সাফল্যের আনন্দে আরও একজনের কথা মনে পড়ছিল সুলঞ্জনার। তিনি সুনীল ছেত্রী। বেঙ্গালুরুতে জাতীয় দলের প্রস্তুতি শিবির চলাকালীন, সুনীল এসেছিলেন মেয়েদের উৎসাহ দিতে। কোয়ালিফায়ারে ২ গোল করা সুলঞ্জনা বলছেন, “গুরপ্রীত সিং সান্ধুও এসেছিলেন আমাদের উৎসাহ দিতে। সুনীল স্যর বলেছিলেন, মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেই তোমরা ফিরবে। শুধু জেদটা ধরে রাখতে হবে।” সুনীলের উৎসাহ ইস্টবেঙ্গলের হয়ে এএফসি কাপেও সুলঞ্জনার কাছে মোটিভেশন হয়ে কাজ করবে!
ঝুঁকিপূর্ণ বলেও সুনীলকে অবসর ভেঙে জাতীয় দলে ফেরানোর সিদ্ধান্ত ঠিক বললেন মানোলো

সুনীল ছেত্রীকে অবসর ভেঙে আবার জাতীয় দলে ফেরানোয় সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। কিন্তু সর্বভারতীয় এক দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এফসি গোয়ার কোচ মানোলো মার্কুয়েজ বলেছেন, “হ্যাঁ, এটি ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু আমাদের তখন গোল করার সমস্যা ছিল। সুনীল তখন আইএসএলে ভালো পারফর্ম করছিল। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তার একটি বড় সুযোগ ছিল, যদি সে গোল করত, তাহলে পুরো ছবিটাই বদলে যেত। কিন্তু আমি মনে করি এটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না। সুনীলের মত একজন টপ প্রফেশনাল ফুটবলারকে দলে পেয়ে কে না খুশি হয়!” মার্কুয়েজের সময়ে ভারতীয় দল ৮ ম্যাচে মাত্র একটায় জিতেছিল। এএফসি এশিয়ান কাপেও যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে ধাক্কা খেয়েছে দল। এই ব্যর্থতার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মার্কুয়েজ বলেছেন, “জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য খেলোয়াড়দের আরও গর্ব নিয়ে মাঠে নামা উচিত। তাদের মানসিকতা আর দৃষ্টিভঙ্গিতে আরও নিষ্ঠা ও আত্মবিশ্বাস থাকা প্রয়োজন।” স্প্যানিশ কোচের মনে হয়েছে, তাঁর কোচিংয়ের সময় সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল একটি নির্দিষ্ট মূল দল তৈরি না হওয়া। তিনি জানান, “আমি প্রথম সাংবাদিক বৈঠকেই বলেছিলাম যে আমি একটি নির্দিষ্ট মূল দল নিয়ে কাজ করতে চাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “যদি আপনি পাঁচটি ফিফা উইন্ডোতে ৪৯ জন খেলোয়াড়কে ডাকেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনি এখনও সঠিক দল খুঁজে পাননি।”