ফেরার লড়াইয়ে ঐহিকার অনুপ্রেরণা এশিয়ান গেমসের ব্রোঞ্জ! আর সঙ্গী শরথ কমলের অ্যাকাডেমি

সুদীপ পাকড়াশীঃ শারীরিক অসুস্থতার জন্য প্রায় মাস খানেক তিনি টেবিল টেনিস বোর্ডের বাইরে। শুধু চর্চা চলছে ফিটনেস ট্রেনিংয়ের। তবু উদ্বিগ্ন নন তিনি। তার মুখে আগের মত একইরকম আত্মবিশ্বাস আর হাসির ছবি। শেষ এশিয়ান গেমসে ডাবলসে সুতীর্থা মুখার্জির সঙ্গে জুটি বেঁধে ব্রোঞ্জ পদক পাওয়া ঐহিকা মুখার্জির এবার স্বপ্ন ২০২৬-এর এশিয়ান গেমসে পদকের রঙটা বদলে দেওয়া! মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগণার জেলা ক্রীড়া সংস্থা ফুটবলার সুব্রত পালের পাশাপাশি তাকেও জেলার ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ করল। সেই অনুষ্ঠানে প্যারালাল স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলার সময় ঐহিকা বললেন, “২০২৪-এর এশিয়ান গেমসের ব্রোঞ্জটা আমার অন্যতম মোটিভেশনের কাজ করে। পদকটা দেখার সময় শুধু নিজেকে প্রমিস করি যে ২০২৬-এর এশিয়ান গেমসে পদকের রঙটা বদলে দিতে হবে।” মানে এখন থেকেই ঐহিকা পাখির চোখে দেখছেন সোনা, অথবা রূপো! আর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে, ঐহিকার সিড়ি তার বর্তমান প্রশিক্ষক, ভারতীয় টেবিল টেনিসের এক কিংবদন্তি খেলোয়াড় শরথ কমল এবং তার চেন্নাইয়ের অ্যাকাডেমি। জানালেন, মাস চারেক হল চেন্নাইয়ে শরথ কমল অ্যাকাডেমিতে জার্মান কোচ ফিফার ক্রিসের কাছে ট্রেনিং করছেন। “ওখানে জার্মান কোচ ছাড়াও শরথ ভাই নিজে ট্রেনিং করান। সঙ্গে ওর ভাই রজত কমলও আছেন। পরিকাঠামো অত্যাধুনিক। শরথ ভাই এত বছর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলেছেন। তাই টেবিল টেনিসে ট্রেনিং-এর আধুনিক জ্ঞানে শরথ ভাই দেশের অন্যতম সেরাদের মধ্যেই পড়ে। মানব ঠক্করের মত খেলোয়াড়রা আছে। ওদের সঙ্গে ট্রেনিং করি,” ঐহিকা বলছেন। সম্প্রতি ঐহিকা সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়েছিল যে, ও মূলত ডাবলস খেলোয়াড়। ঐহিকার জবাব, “ট্যাগটা তোলার চেষ্টা করছি। ওঠা উচিত। জুলাইয়ে বুয়েনস আইরেসে ডব্লিউটিটি কনটেন্ডারে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে সিঙ্গলসেই বিশ্বের ২০ নম্বর খেলোয়াড় ব্রাজিলের ব্রুনা তাকাহাশিকে হারিয়েছিলাম। তারও আগে আরও একটি টুর্নামেন্টে বিশ্বের আরও এক প্রথম সারির খেলোয়াড়কে হারিয়েছিলাম।” ডিসেম্বরে ঐহিকা চেন্নাই চলে যাবেন। শুরু করবেন প্রস্তুতি। জানুয়ারি থেকে শুরু হবে একের পর এক টুর্নামেন্ট।
উত্তর ২৪ পরগণা ডিএসএ-র অভিনব প্রয়াসঃ সাঁতারের ‘আধুনিক’ পাঠ দিতে আসছেন দ্রোনাচার্য প্রদীপ কুমার

মঙ্গলবার তাদের বিজয়া সম্মেলনীর অনুষ্ঠানে উত্তর ২৪ পরগণার জেলা স্পোর্টস সংস্থার সচিব সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য (নবাব ভট্টাচার্য) ঘোষণা করলেন, জেলার প্রতিভাবান সাঁতারু এবং কোচদের সাঁতারের ‘আধুনিক পাঠ’ দিতে আগামি মাসে আসছেন সাঁতারের দ্রোনাচার্য প্রদীপ কুমার শ্রীধরণ। তার সঙ্গে আসছেন তারই অন্যতম সেরা ছাত্র, অলিম্পিয়ান, ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে জাতীয় রেকর্ড করা সাজন প্রকাশ। সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য বললেন, “উত্তর ২৪ পরগণায় প্রচুর প্রতিভাবান তরুণ সাঁতারু আছেন। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, জেলায় সাঁতারুদের তুলনায় কোচের সংখ্যা অনেক কম। প্রদীপ কুমারকে আনার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য, জেলার কোচদের সাঁতারের আধুনিক পাঠে শিক্ষিত করা, যারা নতুন কোচিংয়ে এসেছেন তাদের গাইড করা এবং একইসঙ্গে সাঁতারুদেরও ক্লাস তিনি নেবেন।” সাঁতারের পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগণা ডিএসএ অন্যান্য অলিম্পিক্স স্পোর্টসেও গুরুত্ব দিচ্ছে। সর্বভারতীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টও তারা আয়োজন করছে। ভলিবল, বাস্কেটবলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় তুলে আনার চেষ্টাও তারা সমানভাবে করছে। মঙ্গলবার ডিএসএ-র খেলাধুলোর অগ্রগতিকে আগামিদিনে উৎসাহিত করতে দুই আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জজয়ী আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিস খেলোয়াড় ঐহিকা মুখার্জি এবং প্রাক্তন জাতীয় আন্তর্জাতিক ফুটবলার সুব্রত পালকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরও ঘোষণা করা হল। আর এই কর্মযজ্ঞে প্রয়োজন আর্থিক সহায়তা। সেই উদ্দেশে মঙ্গলবারের বিজয়া সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কিছু শিল্পপতি। তাদের নিয়ে একটি আলোচনারও আয়োজন হল। শিল্পপতিদের আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা রাজ্যের দমকল ও অগ্নিনির্বাপণ মন্ত্রী সুজিত বসুর মুখেও শোনা গেল ডিএসএ-কে সহায়তার কথা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র, নৈহাটির বিধায়ক সনৎ দে, আইএফএ সচিব অনিবার্ণ দত্ত, প্রেসিডেন্ট অজিত ব্যানার্জি, মোহনবাগান ক্লাবের সচিব সৃঞ্জয় বসু, মহামেডান স্পোর্টিং-এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট কামারুদ্দিন, কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান নীলিমেশ রায়চৌধুরী। এদের সঙ্গে সমরেশ চৌধুরী, দীপেন্দু বিশ্বাস, সুব্রত পাল, সুমিত মুখার্জি-সহ উত্তর ২৪ পরগণার আরও প্রাক্তন আন্তর্জাতিক ভারতীয় ফুটবলার। উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জজয়ী আর্ন্তজাতিক টেবিল টেনিস খেলোয়াড় ঐহিকা মুখার্জি, তার শৈশবের কোচ মিহির ঘোষ ও আরও অনেকে।
মনোবিদের ক্লাস, জাতীয় খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্র্যাক্টিসে প্রথম জাতীয় সাফল্য, বলছে অহনা

সুদীপ পাকড়াশীঃ জাতীয় পর্যায়ে প্রথম রূপো জয়। দিল্লিতে সম্প্রতি জাতীয় র্যাঙ্কিং টেবিল টেনিস টুর্নামেন্টে অনূর্ধ্ব-১৫-য় রূপো জিতল বাংলার অহনা রায়। গত দু’বছর ধরে যার টেবিল টেনিস চর্চার কেন্দ্র চেন্নাইয়ে রমন টিটি হাই-পারফরম্যান্স সেন্টার। গত মরশুমে সাফল্য আসেনি। এই মরশুমেও প্রথম জাতীয় র্যাঙ্কিং টুর্নামেন্টে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। দিল্লিতে রূপো পাওয়ার রহস্য কী? চেন্নাই থেকে ফোনে কথা বলার সময় অহনা জানাল, মূল পরিবর্তন এসেছে আত্মবিশ্বাসে। বড় ম্যাচ জেতার মনসংযোগ তৈরি হয়েছে। “রমন স্যারের অ্যাকাডেমিতে প্রায়ই মনোবিদের ক্লাস করি আমরা। নারায়ণ আইয়ার আমাদের ক্লাস নেন। সেই ক্লাসটা আমার কাজে লেগেছে। একইসঙ্গে ট্রেনিংয়ের সময় বাড়িয়েছি। সারাদিনে প্রায় ৭ ঘন্টা অনুশীলন চলে বিভিন্ন সেশনে। আরও গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাডেমিতে জাতীয় খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্র্যাক্টিস করার সুযোগ পাওয়া। তাতে ফিটনেস যেমন উন্নত হয়েছে, টেকনিকও ভাল হয়েছে,” বললেন অহনা। উত্তর ২৪ পরগণার নৈহাটিতে মিহির ঘোষের অ্যাকাডেমিতে যার খেলার শুরু। দিল্লিতে ফাইনালে হেরেছেন মহারাষ্ট্রের নায়িশা রেওয়াসকরের বিরুদ্ধে। তার আগে হারিয়েছেন বাংলার প্রতীতি পালকে। কিন্তু অহনার মনে রয়েছে অঙ্কোলিকা চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ৩-২ ফলে জেতা। একটা লড়াকু ম্যাচ্য জেতার পর নিজের খেলার পরিবর্তনটা বিশ্লেষণ করতে হয়ত সুবিধে হয়। টেবিল টেনিসের বাইরে ক্রিকেট অহনার প্রিয় খেলা এবং সেখানেও অহনার নিঃশব্দ শিক্ষকের নাম বিরাট কোহলি! “মাঠে বিরাটের আগ্রাসন, নিখুঁত হওয়ার জন্য প্র্যাক্টিসে ওর একাগ্রতা-এগুলো শেখার চেষ্টা করি,” অহনার মন্তব্য। নিজের জেতা ম্যাচের ভিডিও দেখে মোটিভেশন আনে অহনা। এবার সে জীবনে প্রথমবার দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে। তার আগে অহনার প্রস্তুতিতে অবশ্যই থাকবে ‘বিরাট-পাঠ’!
সুতীর্থা, অঙ্কুরদের সংবর্ধ্বনা দিল বিএসটিটিএ

২০২৩-থেকে ২০২৫-এই দুবছরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সফল হওয়া বাংলার টেবিল টেনিস খেলোয়াড়দের সংবর্ধ্বনা দিল বেঙ্গল স্টেট টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশন। বুধবার শহরের একটি রেস্তোঁরায়। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে এই দু’বছরে আর্ন্তজাতিক মঞ্চে বাংলার টেবিল টেনিসের উজ্জ্বলতম তথ্য ২০২৩-এ চিনে, হ্যাংঝাউ এশিয়ান গেমসে সুতীর্থা এবং ঐহিকা মুখার্জির ডাবলসে ব্রোঞ্জ পদক। পদকের চেয়েও বেশি তাৎপর্যের, টেবিল টেনিস বোর্ডে দুই মহিলার চিনের আধিপত্য ভাঙা। একইরকমভাবে, অঙ্কুর ভট্টাচার্য, বোধিসত্ব চৌধুরী, পুনীত বিশ্বাসরাও বাংলার টেবিল টেনিসে গৌরব এনে দিয়েছেন। সাউথ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সোনাজয়ী অঙ্কলিকা চক্রবর্তী, সিন্ড্রেলা দাস, আরুষী নন্দী, প্রতীতি পালদেরও সংবর্ধ্বিত করা হল। একইসঙ্গে চারজন সফলতম কোচকেও সংবর্ধিত করা হল। আর্ন্তজাতিক টুর্নামেন্টের ব্যস্ততায় উপস্থিত থাকতে পারেননি ঐহিকা মুখার্জী,অঙ্কুর ভট্টাচার্য, সিণ্ড্রেলা দাস। একই কারনে থাকতে পারেননি কোচ সৌরভ চক্রবর্তীও। তবুও যারা ছিলেন তারা সম্মাননার আন্তরিকতায় আপ্লুত। সংস্থার যুগ্মসচিব শর্মি সেনগুপ্ত জানালেন, ২০২২-এ তাদের এই সংবর্ধ্বনার বাজেট ছিল ১০ লক্ষ টাকা। তাই ক্যাশ ইনসেন্টিভও দেওয়া গিয়েছিল। এবার টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে প্রত্যেককে একটা করে রিস্ট ওয়াচ আর মেমেন্টো দেওয়া হয়েছে। ক্রীড়াগুরু মিহির ঘোষের মুখে বাংলার টেবিল টেনিসের অগ্রগতির কথা। আরও উন্নতির জন্য সামগ্রিক প্রচেষ্টার আরও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন। আরেক ক্রীড়াগুরু তপন চন্দ্র জানিয়েছেন এবার থেকে বেঙ্গল টেবিল টেনিস অ্যাকাডেমীতে সকলের প্র্যাকটিসের সুবিধা থাকবে। পরিকাঠামো গত সবরকম সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। বাংলার টেবিল টেনিসের ধারাবাহিক সাফল্য এবং কর্মসূচী যে আগামী দিনে বেশি করে আসতে চলেছে তার ইঙ্গিত রাজ্য টেবিল টেনিস সংস্থার সভাপতি স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। এই সম্মানজ্ঞাপন অনুষ্ঠানের ভাবনা তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। আগামীতেও সফলদের সম্মানিত করার অঙ্গীকার করলেন। সব মিলিয়ে শ্রাবনের বৃষ্টিভেজা দিনে টেবিল টেনিস জগতের চাঁদের হাট বিএসটিটিএ-র অনুষ্ঠানে।
তিনজন চিনা খেলোয়াড়কে দিব্যাংশীর হারানোর একটা রহস্যঃ বাড়িতে রোবটের সঙ্গে নিবিড় অনুশীলন!

এশিয়ান যুব চ্যাম্পিয়নশিপে ৩৬ বছর পর অনূর্ধ্ব-১৫-য় সিঙ্গলসে সোনা জিতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল মুম্বইয়ের কান্দিভেলির ১৪ বছরের মেয়েটা। নাম দিব্যাংশী ভৌমিক। কমলেশ মেহতার মত ন’বারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন, বর্তমানে টিটিএফআই-এর সাধারণ সম্পাদকও মুগ্ধ দিব্যাংশীর খেলায়। বলেছেন, “ওর মনের জোর প্রশংশনীয়। খেলার স্টাইলও খুব আধুনিক।” কোভিডের সময় দিব্যাংশীর বাবা রাহুল বাড়িতে একটা টেবিল টেনিস এনেছিলেন। রোজ প্রায় ৫ ঘন্টা করে বাড়িতে প্র্যাক্টিস করত মেয়েটা বাবা আর বোনের সঙ্গে। তারপরেও ওর প্রথম ন্যাশনালসে প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নিতে হয়েছিল। রাহুল ভৌমিক জানিয়েছেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে, “লক্ষ্য করতাম চিনা খেলোয়াড়দের প্রধান সম্পদ ওদের বল কন্ট্রোল। তার জন্য ওরা যন্ত্রের মত অনুশীলন করে কন্ট্রোলটা বাড়ায়।” রাহুল ভৌমিক তারপরই বাড়িতে আনেন একটা পাওয়ার ওমেগা রোবট। শুরু হয় দিব্যাংশীর সেই রোবটের সঙ্গে অবিরাম অনুশীলন। রোবতে প্রোগ্রামিং করে দেওয়া হত বিশেষ বিশেষ শট। তার বিরুদ্ধে দিব্যাংশী হাজারটা করে শট মারত! এশিয়ান যুব চ্যাম্পিয়নশিপে পরপর তিনজন চিনা খেলোয়াড়কে হারিয়ে সিঙ্গলসে সোনাজয়ের পর আজ দিব্যাংশী নিশ্চয়ই উপলব্ধি করছে রোবটের ভূমিকা। বাবার ভূমিকাও কম নয়। ২০২২-২৩-এ প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোয় অংশ নেওয়ার সময় দিব্যাংশীর কোনও স্পনসর ছিল না। কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করেছেন ওর বাবা। ২০২৪-এ একটু স্বস্তি আসে রাহুল ভৌমিকের যখন মুম্বইয়ের একটি স্পোর্টস ফাউন্ডেশন দিব্যাংশীর সঙ্গে চুক্তি করে। এর পাশাপাশি রাহুল জাতীয় কোচ ম্যাসিমো কনস্ট্যানটিনির কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এশিয়ান যুব চ্যাম্পিয়নশিপের আগে ম্যাসিমো নিজে দিব্যাংশীর সঙ্গে অনুশীলন করতেন জাতীয় শিবিরে। চিনা খেলোয়াড়দের দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা করতেন। তবে দিব্যাংশী কিন্তু উচ্ছ্বাসে ভাসছে না এরপরও। সে জানে সাফল্যের আসল মাপকাঠি সিনিয়র পর্যায়ে।
স্বপ্ন অলিম্পিকে পদক, ভরসা গো স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতা আর রমন স্যারের কোচিং

সুদীপ পাকড়াশীঃ অহনা রায়। সাম্প্রতিককালে মিহির ঘোষ টেবিল টেনিস ফাউন্ডেশনের অন্যতম সেরা ছাত্রী। গতবছর অনূর্ধ্ব-১৩ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সিঙ্গলস এবং ডাবলসে অঙ্কোলিকা চক্রবর্তীর সঙ্গে জুটি বেঁধে সোনা জয়ের পরই ভারতীয় টেবিল টেনিস সমাজের নজর কেড়েছিল ১৪ বছরের মেয়েটি। নৈহাটিতে মিহির ঘোষের শিক্ষতায় বড় হওয়া মেয়েটির টেবিল টেনিস ক্যারিয়ারে তারপরই আসে বড় দুটো সুযোগ। এক, গো স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের ‘গার্লস ফর গোল্ড’ প্রোজেক্টের তালিকাভূক্ত হওয়া। দুই, চেন্নাইতে প্রাক্তন জাতীয় খেলোয়াড় ও জাতীয় কোচ এস. রমনের হাই-পারফরম্যান্স সেন্টারে ট্রেনিংয়ের সুযোগ পাওয়া। গত একবছর ধরে চেন্নাইতে থাকা সেই মেয়ে নৈহাটিতে এসেছে। মিহির ঘোষ টিটি ফাউন্ডেশন আয়োজিত বাংলার র্যাঙ্কিং টুর্নামেন্ট স্ট্যাগ সরোজ ঘোষ মেমোরিয়াল চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে এসেছে। প্যারালাল স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলার সময় অহনার রমন এইচপিসি নিয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাস। “আমার সার্ভিস খুব খারাপ ছিল। খেলায় স্পিনের ব্যবহার ছিল না বললেই চলে। মূলত ফ্ল্যাট শটের ওপর নির্ভর করতাম। গত একবছরে দুটো স্কিলেরই অনেক উন্নতি হয়েছে। এছাড়াও, ওখানে ফিটনেস ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি মেন্টাল ক্লাস হয়। ম্যাচ-টেম্পারামেন্ট ভাল হয়েছে আগের তুলনায়,” বলছে অহনা। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অহনা জানাল। “জি. সাথিয়ানের মত দেশের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের সঙ্গে প্র্যাক্টিস করার সুযোগ পেয়েছি। প্রথমবার ভেতরে ভেতরে খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। প্র্যাক্টিস করলাম। খেলার উন্নতি কীভাবে হবে সেই নিয়ে ওর পরামর্শ পেয়েছি। সেগুলো আমার কাছে এখন অনুপ্রেরণা।” ওখানে ট্রেনিং শুরু করার পর, অহনা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের অনুর্ধ্ব-১৫ বিভাগে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। গো স্পোর্টসের উদ্যোগে সুইডেনে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের অনূর্ধ্ব-১৩ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, বার্লিনে আর একটি টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল। কিন্তু আঁতুড়ঘরকে ভোলেনি অহনা। “ভিতটা তো মিহির স্যরই তৈরি করে দিয়েছিলেন। তার ওপর দাঁড়িয়েই আমার ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হওয়া, চেন্নাইতে সুযোগ পাওয়া।” মেয়ের স্বপ্ন সেনিয়র জাতীয় দলের হয়ে অলিম্পিক্সে খেলার সুযোগ পাওয়া এবং পদক নিয়ে ফেরা। আর অহনা বিশ্বাস করছে রমন স্যরের অ্যাডভান্স-ট্রেনিং আর গো স্পোর্টসের সহায়তায় সে নিজেকে একদিন সেই পর্যায়ে নিয়ে যাবে। যেদিন তার আদর্শ দিয়া চিতালের সঙ্গে সে-ও ভারতের জার্সিতে নামবে বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে।