অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও রেকর্ডের মালিক বৈভব সূর্যবংশী

মাত্র ১৪ বছর বয়স। কিন্তু মাঠে নামলেই একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলেছেন বৈভব সূর্যবংশী(Vaibhav Suryavanshi)। অনুর্ধ্ব-১৯ অস্ট্রেলিয়ার(U-19 Australia) বিরুদ্ধ ওডিআই ম্যাচে নেমেছিলেন তিনি। সেখানেও বিধ্বংসী মেজাজে ছিলেন বৈভব সূর্যবংশী। ভারতীয় যুব ক্রিকেটার হিসাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মঞ্চে গড়লেন ফের নয়া রেকর্ড। তাঁকে নিয়েই এখন সরগরম ভারতীয় ক্রিকেট মহল। আইপিএল, ইংল্যান্ডের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেও দুরন্ত ফর্মেই এগিয়ে চলেছেন বৈভব সূর্যবংশী(Vaibhav Suryavanshi)। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজে নেমেছে অনুর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দল(U-19 India Team)। সেখানে প্রথম ম্যাচে অবশ্য রান করতে পারেননি তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় ওডিআই ম্যাচে বৈভব সূর্যবংশী(Vaibhav Suryavanshi) ছিলেন বিধ্বংসী মেজাজে। তিনি মাঠে নামা মানেই চার, ছয়ের বন্যা। এদিনও সেই ছবিটাই দেখা গেল এই সূর্যবংশীর ব্যাট থেকে। যতক্ষণ মাঠে থাকলেন, অজি ব্যাটারদের বিরুদ্ধে বাইশগজে শাসন করে গেলেন বৈভব সূর্যবংশী। সেইসঙ্গেই গড়লেন এক নতুন রেকর্ড। যুব ক্রিকেটে এখন ভারতীয় হিসাবে সর্বোচ্চ ছয় মারার রেকর্ডের মালিক বৈভব সূর্যবংশী(Vaibhav Suryavanshi)। এই মুহূর্তে ওডিআই ফর্ম্যাটে ৪১টি ছয়ের মালিক বৈভ সূর্যবংশী। তাঁর আগে এই রেকর্ড ছিল প্রাক্তন অনুর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দলের অধিনায়ক উন্মুক্ত চাঁদের। ৩৮টি ওভার বাউন্ডারি রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। তাঁর রেকর্ড ছাপিয়েই এখন সূর্যবংশীর ছয়ের সংখ্যা ৪১। অনুর্দ্ব-১৯ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৬৮ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন বৈভব সূর্যবংশী। সেখানে শুর থেকেই বেশ আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন তিনি। তাঁর ৭০ রানের এই ইনিংসটা সাজানো রয়েছে পাঁচটা চার এবং ছট ছয় দিয়ে। তাঁর হাত ধরেই এদিন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৩০০ রানের গন্ডীও টপকে গিয়েছিল ভারতীয় দল। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নামার আগে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নেমেছিল অনুর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দল। সেখানেই দুরন্ত ফর্মে ছিলেন বৈভব সূর্যবংশী। সেই সিরিজে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ রানের মালিকও ছলেন সূর্যবংশীই। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে বৈভবের ব্যাটে রান এসেছিল ৩৫৫। সেইসঙ্গে ছিল একটি সেঞ্চুরি ও অর্ধশতরান। অনুর্ধ্ব-১৯ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও বিধ্বংসী ফর্মেই রয়েছেন রাহুল দ্রাবিড়ের এই ১৪ বর্ষীয় ছাত্র। আইপিএল থেকেই সকলের নজর কেড়েছিলেন তিনি। সেই থেকেই অনুর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দলের জার্সি উঠেছিল বৈভবের গায়ে। এই মুহূর্তে ভারতীয় দলের দলের প্রতিটি সিরিজেই নিয়মিত সদস্য হয়ে উঠেছেন তিনি। সেইসঙ্গে নিজের পারফরম্যান্সও দেখাচ্ছেন এই কিশোর ক্রিকেটার। এখন শুধুই তাঁর ভারতীয় সিনিয়র দলে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন সকলে।
অনূর্ধ্ব ১৯ ক্যাম্পেও ছয়ের খেলায় মেতে সূর্যবংশী

আইপিএল শেষ হলেও মাঠের বাইশ গজে বৈভব সূর্যবংশীর দাপট থেমে নেই। একই মেজাজে খেলে চলেছে। সেই বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারির খেলায় মেতে সূর্যবংশী। সামনেই অনুধ্ব ১৯ ভারতীয় দলের ইংল্যান্ড সফর। ২৪ জুন প্র্যাকটিস ম্যাচ) থেকে চলবে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। ভারতীয় দল খেলবে বেসরকারি পাঁচটি ম্যাচের ওয়ান ডে সিরিজ (শুরু ২৭ জুন, চলবে ৭ জুলাই পর্যন্ত)। তারপর দুটি চারদিনের ম্যাচ। তার আগে একটি প্র্যাকটিস ম্যাচও খেলবে ভারতীয় ক্রিকেট দল। সেই সিরিজের দিকে তাকিয়ে ভারতীয় দলের ক্যাম্প বসেছে বেঙ্গালুরুর এনসিএ-তে। দুবেলার প্র্যাকটিসে ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি ম্যাচ সিচুয়েশনও চলছে। তার ভিডিও সামনে আসতে ভাইরাল হতে বেশি সময় লাগল না। ভিডিওতে দেখা গেল, বোলারদের সামনে আতঙ্কের নাম বৈভব সূর্যবংশী। সে পেসার হোক বা স্পিনার। কোনও বোলারই রেয়াদ পাচ্ছে না। পেসারদের বিরুদ্ধে বৈভবের ব্যাটিংয়ের ভিডিও দেখা গেল। লং অন থেকে মিড উইকেট, মাঠের এই অঞ্চল দিয়ে বেশি স্ট্রোক খেলছে বৈভব। অফের দিকে পয়েন্ট থেকে কভার দিয়ে বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি মারছে। যাঁরা আইপিএলে বৈভবকে দেখেছেন, তাঁদের কাছে এই ভিডিও না দেখলেও চলবে। চোখ বুজে আইপিএল ম্যাচ কল্পনা করে নিলে ক্যাম্পের ছবি পরিস্কার হয়ে যাবে। সেই বিধ্বংসী মেজাজ। বোলারকে শেষ করে দেওয়ার মানসিকতা। খুনে মেজাজের ব্যাটিং দেখে অনেকে বলছেন, ইংল্যান্ডের মাঠে এমন ক্রিকেট খেলতে পারলে ভারতীয় দল সিরিজ জিতে দেশে ফিরবে। বৈভব সূর্যবংশীর কথাতেও তাই ফুটে উঠেছে। সে বলছে এর আগে আমি কখনও ইংল্যান্ডের মাঠে খেলিনি। তাই জানি না সেখানকার উইকেট, আবহাওয়া কেমন হবে। শুনেছি বল বেশি সুইং করে সিমও করে। আসলে সেখানে গিয়ে বুঝতে পারব উইকেটে গিয়ে কেমন খেলতে পারব। এখন পর্যন্ত সব ঠিক আছে। বাকিটা ওখানে গিয়ে দেখতে হবে। ওয়ান ডে সিরিডে বৈভবের সঙ্গে অধিনায়ক আয়ুষ মাত্রে সম্ভবত পেন করবে। সিএসকের হয়ে এবারের আইপিএলে শেষদিকে আয়ুষকে খেলতে দেখা গিয়েছে। বৈভবের মতো আক্রমনাত্মক না হলেও বড় স্ট্রোক করে খেলতে পারে। আইপিএলে বড় বড় বোলারদের সামলানের পর মনে হয় না ইংল্যান্ডে গিয়ে জুনিয়র ক্রিকেটাদের সামনে দাঁড়াতে তাদের অসুবিধা হবে। আইপিএলের আগে বৈভব ভারতীয় দলের হয়ে (অনু্ধ্ব ১৯) এশিয়া কাপে খেলেছে। পাঁচ ম্যাচে করেছে ১৭৬ রান। গড় ৪৪। তাই ভারতীয় দলের জার্সির ভার তাকে চাপে ফেলে দেবে না। এই অভিজ্ঞতা তার আছে। এখন দেখার বিষয় এটাই যে শুভমান গিলদের উল্টোদিকে জুনিয়র ক্রিকেটাররা কেমন খেলে। ভারতীয় দলের ওয়ান ডে সিরিজের ম্যাচগুলি হবে হোভ, নর্দাম্পটন, উরস্টারে। লাল বলের ক্রিকেটে প্রথম ম্যাচ ১২ জুলাই। খেলা হবে বেকেনহ্যামে। দ্বিতীয় ম্যাচটি হবে ২০ থেকে ২৩ জুলাই চেমসফোর্ডে।
১১ কোটির ব্যাটসম্যানকে পিছনে ফেললেন সূর্যবংশী

এবারের আইপিএল শেষ হয়ে গিয়েছে রাজস্থান রয়্যালসের। সিএসকের বিরুদ্ধে জিতে তারা ১৪ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলে নয় নম্বর জায়গায় রয়েছে। রবিবার ধোনিরা গুজরাট টাইটান্সের কাছে হেরে গেলে রাহুল দ্রাবিড়ের দল এক ধাপ এগিয়ে থাকবে। এবার তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আইপিএল শেষ হতে না হতে প্রাপ্তির দিকে উঁকি দেওযা শুরু হয়ে গিয়েছে। সেখানে এক অদ্ভুত ব্যাপার দেখা যাচ্ছে। বৈভব সূর্যবংশী দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে লড়াইয়ে প্রথম পাঁচে ঢুকে পড়েছেন। তা-ও আবার বৈভব মাত্র সাতটি ম্যাচ খেলেছেন। অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন চোটের কারনে বাইরে চলে যাওয়ার পর প্রথম একাদশে ঢুকে পড়ার সুযোগ চলে আসে বৈভবের সামনে। তিনি ৭ ম্যাচে করেছেন ২৫২ রান। এর মধ্যে আছে একটি সেঞ্চুরি ও একটি হাফ সেঞ্চুরি। ব্যাটিং গড় ৩৬। স্ট্রাইক রেট ২০৬.৫৫। ১৪ বছরের বৈভবকে রাজস্থান দলে নিয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায়। নিজের ব্যাটিংয়ের জোরে বৈভব পিছনে ফেলে দিয়েছেন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার শিমরন হেটমায়ারকে। ১১ কোটি টাকার ব্যাটসম্যান হেটমায়ার ১৩টি ইনিংসে করেছেন ২৩৯ রান। গড় ২১.৭৩। স্ট্রাইক রেট ১৪৫.৭৩। নিজের ইনিংসে তিনি একটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে সব থেকে বেশি রান করেছেন যশস্বী জয়সওয়াল। ১৪ ইনিংসে করেছেন ৫৫৯ রান। এর মধ্যে ছটি হাফ সেঞ্চুরি আছে। গড় ৪৩। স্ট্রাইক রেট ১৫৯.৭১। রাজস্থান ১৮ কোটি টাকায় যশস্বীকে রিটেন করেছিল। দুনম্বরে আছেন রিয়ান পরাগ। ১৪ ইনিংসে রান করেছেন ৩৯৩। গড় ৩২.৭৫। স্ট্রাইক রেট ১৬৬.৫২। কেকেআরের বিরুদ্ধে তিনি খেলেছিলেন ৯৫ রানের ইনিংস। তাঁকে ১৪ কোটি টাকায় রিটেন করে রাজস্থান। তিন নম্বরে আছেন ধ্রুব জুরেল। তিনি ১৩ ম্যাচে করেচেন ৩৩৩। গড় ৩৭। স্ট্রাইক রেট ১৫৬.৩৩। দুটি হাফ সেঞ্চুরি। ১৪ কোটি টাকায় তাঁকে রিটেন করে রাজস্থান। চার নম্বরে অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন। তিনি চোটের কারনে অনেক ম্যাচ খেলতে পারেননি। ৯টি ইনিংসে করেচেন ২৮৫ রান। গড় ৩৫.৬৩। স্ট্রাইক রেট ১৪০.৩৯। একটি হাফ সেঞ্চুরি। তাঁকে ১৮ কোটি টাকায় রিটেন করে রাজস্থান।
আবার হার, ইতিহাসের পাতায় নাম লিখতে চলেছেন ধোনিরা

সিএসকে: ৮ উইকেটে ১৮৭ (২০ ওভার) রাজস্থান রয়্যালস: ৪ উইকেটে ১৮৮ (১৭.১ ওভার) আইপিএল ইতিহাসে সম্ভবত এবার নিজেদের নাম লিখতে চলেছে চেন্নাই সুপার কিংস। রবিবার লিগের শেষ ম্যাচ তারা খেলবে গুজরাট টাাইটানসের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে তাদের জয় অতি বড় সিএসকে সমর্থকও দেখতে পাচ্ছেন না। সেটাই যদি সত্যি হয়, তা হলে লিগ টেবিলে একেবারে শেষে জায়গা পাবেন ধোনিরা। দশ দলের লড়াইয়ে তারা দশ নম্বরে থাকবেন। এমন হলে সেটাই হবে সিএসকে-র কাছে আইপিএল ইতিহাসে নাম তোলা। এর আগে তরা কখনও শেষ বেঞ্চে বসেননি। এবর হয়তো সেটাই হতে চলেছে। সত্যি কি বিচিত্র ক্রিকেট। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের এমন বেহাল অবস্থা দেখে সকলেই হতবাক। এমনও হতে পারে। বাস্তব তাই বলছে। যারা প্রথম ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে হারিয়ে পথ চলা শুরু করেছিল, তারাই দশ নম্বরে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করছে। কি অদ্ভুত ঘটনা! তাই না! সিএসকে ম্যানেজমেন্ট কদিন আগে জানিয়েছিল সামনের মরশুমে তারা তরুন ক্রিকেটারদের দিকে তাকিয়ে দল তৈরি করবেন। কিন্তু সেই কথাকে প্রায় উড়িয়ে দিয়ে কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং বলছেন, না এভাবে দল তৈরি করা যায় না। সিনিয়র ও জুনিয়রদের নিয়ে আমরা এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছি। কে সত্যি বলছেন তা বোঝা মুশকিল। এটাও ঘটনা যে সিএসকে বরাবর সিনিয়র ক্রিকেটারদের উপর নির্ভর করে এসেছে। আর তাতেই সাফল্য এসেছে। তাই তাদের ড্যাডিস আর্মি বলা হয়। সামনের মরশুমে কি নতুন করে চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলবেন। এখনও সে কথা বলার সময় আসেনি। যেমন আসেনি সামনের মরশুমে ধোনি ক্রিকেটার হিসেবে দলের সঙ্গে থাকবেন কিনা। তিনি বলেই দিয়েছেন, এখনও সাত, আটমাস সময় আছে। ভাবার সময় পাচ্ছি। তখন দেখা যাবে আমি খেলার জন্য কতটা ফিট। ফিট থাকলে খেলব, না হলে অন্য কথা ভাবতে হবে। সে যাই হোক, এবার বরং রাজস্থান ম্যাচের কথায় আসা যাক। রাজস্থানের হয়ে বৈভব সূর্যবংশী যেমন চমক দিচ্ছেন, তেমনই আয়ুষ মাত্রে সিএসকে দলের হয়ে ওপেন করতে নেমে নজর কেড়ে নিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে দিল্লির মাঠে তেমনই দেখা গেল। মাত্র ২০ বল খেলে মাত্রে করলেন ৪৩ রান। আর উল্টোদিকে বৈভব ৩৩ বলে করলেন ৫৭ রান। এই দুজনকে নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে কথা শুরু হয়ে গিয়েছে। একজন ১৪ তো আর একজন ১৭। আজ না হয় কাল, ওরা জাতীয় দলের হয়ে মাঠ কাপাবেন। যেমন কাঁপিয়ে দিলেন দিল্লিতে গুরুত্বহীন ম্যাচে। রাজস্থান প্রথম পর্বের ম্যাচে সিএসকে-কে হারিয়েছিল। আবার হারাল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সিএসকে ৮ উইকেটে ১৮৭ রান করে। এই রান জয়ের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু ম্যাচ জিততে হলে বোলারদের ভাল বোলিং করতে হবে। কি করলেন বোলাররা! খলিল ৩ ওভারে দিলেন ৩৫ রান। তুলনায় কামবোজ ভাল করলেন। আর স্পিনারদের কথা যত কম বলা তত ভাল। অশ্বিন শেষ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নিজের বোলিং গড় খারাপ করলেন। তিনি ৪ ওভারে দিলেন ৪১ রান। দুটি উইকেট অবশ্য পেয়েছেন। নুর ৩ ওভারে ৪২ ও জাদেজা ২ ওভারে ২৭। এমন বোলিংয়ের পাশে উজ্জ্বল রাজস্থানের আকাশ মাডওয়াল। ম্যাচের সেরা আকাশ ৪ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট পেলেন। এর মাঝে বেভিস (২৫ বল খেলে ৪২), দুবে (৩২ বল খেলে ৩৯) দলকে সামলালেন। না হলে ১৮৭ রানে যায় না সিএসকে। আর ধোনি! তিনি আট নম্বরে ব্যাট করতে নামলেন। তার আগে অশ্বিন, জাদেজারা মাঠে নেমে আউট হয়ে ফিরে এলেন। ধোনি ১৭ বল খেলে করলেন ১৬। কেন! এই কেন-র উত্তর নেই। রাজস্থানকে জেতাল বৈভব ও স্যামসনের জুটিতে বড় রান। তারা ৯৮ রান যোগ করে দিয়ে দলের জয়কে সহজ করে দিলেন। শেষদিকে ধ্রুব জুরেল (৩১) হাওয়ায় ব্যাট ঘুরিয়ে রাজস্তানের জয় এনে দিলেন। অবশেষে রান তাড়া করতে নেমে রাজস্থান ম্যাচ জিতল। কথায় আছে যার শেষ ভাল, তার সব ভাল। এটা কি রাজস্থানের পাশে লিখে দেওয়া যায়!
পাঞ্জাব এগোচ্ছে, বৈভব-যশ্বসীর ঝোড়ো ইনিংসেও রাজস্থানকে জেতাতে পারল না

পাঞ্জাব কিংস: ৫ উইকেটে ২১৯ (২০ ওভার) রাজস্থান রয়্যালস: ৭ উইকেটে ২০৯ (২০ ওভার) রাজস্থান রয়্যালস অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন টস করতে এসে জনিয়েছিলেন, বৈভবকে ওপেনার ছাড়া অন্য কিছুতে তাঁরা ভাবছেন না। বৈভব এত ভাল খেলছে যে ওকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে রাজি নই। তাই আমি ওপেন থেকে তিনে নেমে আসব। যে ভাল খেলছে তাকে সন্মান জানাতেই হবে। এখানে বয়স ব্যাপার নয়। যে ভাল খেলছে, তার সম্পর্কে এর বেশি কিছু বলার দরকার নেই। পাঞ্জাবের বড় ইনিংসে (৫ উইকেটে ২১৯) জবাব দিতে নেমে শুরুটা অবশ্য বৈভব করেননি। অর্শদীপকে মেরে রান তোলার দিকে বেশি নজর দেন যশ্বসী। প্রথম ওভারে আসে ২২ রান। তারপর উল্টোদিকে থাকা বৈভব হাল ধরেন। তিনিও কম যাননি। বড় ইনিংসকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হলে এমন মারকাটারি ইনিংস খেলার দরকার পড়ে। সেটাই রাজস্থানের দুই ওপেনার শুরু থেকে করতে থাকেন। মানসিক দিকে থেকে যশ্বসী অনেক বেশি অভিজ্ঞ। তুলনায় বৈভব কিছুটা হলেও পিছিয়ে। কিন্তু সেটা মাঠে আর দেখা যাচ্ছে কোথায়! মাত্র১৫বল খেলে ৪০ রান করে আউট হলেন বৈভব।এর মধ্যে ছিল ৪টি বাউন্ডারি ও ৪টি ওভার বাউন্ডারি। সব থেকে বড় কথা এই ফরম্যাটে সবাই স্ট্রাইক রেটের দিকে তাকিয়ে থাকেন। বৈভবের ইনিংসে স্ট্রাইক রেট ২৬৬.৬৬। ভাবা যায়! ১৪ বছরের বৈভবের হাতে মার খেতে দেখা গেল এই ফরম্যাটে ভয়ঙ্কর অর্শদীপকেও। তিনি ২ ওভারের দেন ৩৮ রান। পাওয়ার প্লে -তে রাজস্থান তোলে ১ উইকেটে ৮০ রান। ব্যক্তিগত ৪০ রানে ব্রা-র কাছে হার মানেন বৈভব। আউট হয়ে কিছুক্ষণ উইকেটে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এভাবে তাঁকে আউট হয়ে ফিরতে হবে। ৭৯ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পর জয়পুরের মানুষ ভেবেছিলেন পাঞ্জাবের রান টপকে ম্যাচ বের করে নেবেন স্যামসনরা। প্লে অফ খেলার জায়গায় তাঁরা নেই। কিন্তু ম্যাচে জিতে আইপিএল শেষ করতে পারলে মানসিক দিক থেকে তো চাঙ্গা থাকা যায়। সেটা হলে দলের অন্দরমহলের চেহারা বদলে যায়। কিন্তু বৈভব আউট হওয়ার পর যশ্বসী দলের রানকে সেভাবে টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। জয়পুরের প্রচন্ড গরমে কাহিল হয়ে পড়েছিলেন। তারপর উল্টোদিকের উইকেটে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, একটার পর একটা উইকেট চলে যাচ্ছে। স্যামসন, পরাগ কেউ দাঁড়াতে পারলেন না। মাঝে ধ্রুব জুরলে (৫৩) দলকে টানলেন। তিন্তু দলকে জেতানোর জন্য সেই রান যথেষ্ট ছিল না। অনেকটা এগিয়েও শেষ রক্ষ হল না। রাজস্থান ২০৯ রানে আটকে গেল। পাঞ্জাব দশ রানে ম্যাচ জিতে প্লে অফের দিকে এক পা সামনে ফেলল। এই মরশুমে রাজস্থান বিরাট কিছু করতে পারেনি। লিগ টেবিলের দিকে তাকালে সেটা মনে হবে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে যে তারা চারটি ম্যাচে দশ বা তার কম রানে ম্যাচ হেরেছে। একটি ম্যাচ হেরেছে সুপার ওভারে। সেই ম্যাচের রেজাল্ট উল্টো হলে বলা য়ায় না রাজস্থান প্লে অফ খেললেও খেলতে পারত। সেটা হল না বলে তাদের খেলা নিয়ে কথা উঠতেই পারে। পাঞ্জাব জিতলেও তাদের শুরুটা একদম ভাল হয়নি। দলের ৩৪ রানে মধ্যে তিন উইকেট চলে যায়। মিডলঅর্ডারে এসে নেহাল (৭০) ও অধিনায়ক শ্রেয়স (৩০) ম্যাচ ধরেন। পরে এসে শশাঙ্ক সিং ৩০ বলে ৫৯ রানের একটা ঝোড়ো ইনিংস খেলে দিতে পাঞ্জাব দুশো রানের গন্ডী পার করে। তারপর বোলিংয়ে হরপ্রিত ব্রার (২২ রানে ৩) নজর কেড়ে ম্যাচের সেরা হন। চাহাল উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ব্যাটসম্যানদের আটকে দেন। জিতে পাঞ্জাব ১২ ম্যাচে ১৭ পয়েন্টে দাঁড়াল। রাজস্থান ১৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে ৯ নম্বরে দাঁড়িয়ে।
বৈভবকে আলাদা করে কিছু বলার নেইঃ বন্ড

তাঁকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না। একসময় নিউজিল্যান্ড পেস বোলিং অ্যাটাককে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার রিচার্ড হ্যাডলির পর দেশে তাঁকে নিয়ে সব থেকে বেশি আলোচনা হত। সেই শ্যেন বন্ড এখন রাজস্থান রয়্যালসের বোলিং কোচ। এর আগে আইপিএলে কেচিং করানোর অভিজ্ঞতা তাঁর আছে। ভারতীয় ক্রিকেট সম্পর্কে ভালই তাঁর অভিজ্ঞতা। শনিবার দুপুরে ইডেনে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে এলেন তিনি। বিভিন্ন দলের বোলারদের নিয়েই বেশি আলোচনা। তারই মধ্যে চলে এল বৈভব সূর্যবংশী। না এসে পারে। এখন ভারতীয় ক্রিকেটে বৈভবই তো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তাই যাঁরাই আসুন না কেন, সামনে বৈভব আসবেন। তো বৈভব নিয়ে কি বলছেন বন্ড! তিনি বলেন, বৈভবকে এখনই আলদা করে টিপস দেওয়ার দরকার নেই। ও সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। ওকে নিজের মতো করে খেলতে দেওয় উচিত। এককথায় বৈভব নিয়ে কিচু বলতে গেল বলতে হয়, ও অসাধারন। ওর মধ্যে সব গুন আছে। ওকে নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। আমরা সবাই ওকে গাইড করছি। এখনই বৈভবকে পেশাদারিত্বের চাপ দেওয়ার দরকার নেই। আপনার শুনলে অবাক হবেন, আমার নিজের ১৬ বছরের ছেলে আছে। বৈভব ওর থেকেও ছোট। বন্ডের কথায় বোঝা গেল, রাজস্থান শিবির বৈভবকে নিয়ে খোশ মেজাজে আছে। তাঁরা ভাবতেই পারেননি যে মাঠে নেমে এভাবে সবাইকে অবাক করে দেবে। কেকেআর নিয়েও কথা বললেন তিনি। তাঁর কথায় কেকেআরের ব্যাটিং ভাল। ওদের স্পিনারদের নিয়ে আলাদ করে কথা বলার কিছু নেই। তবে দিনের খেলা। প্রচন্ড গরমে দিনে খেলা কঠিন। তবে ব্যাপারটি চ্যালেঞ্জিং। উইকেটও তাই। এই উইকেটে বড় রন করে ম্যাচ ধরে রাখা সহজ কাজ নয়। বন্ড বলেই আইপএলে পেসারদের নিয়ে কথাও উঠল। তিনি বুমরাকে টেনে আনলেন। বলছিলেন, বুমরা দরুন কামব্যাক করেছে। রানাও দারুন। ওর মধ্যে ধারাবাহিকতা আছে। আমাদের দলকে প্রথমদিন থেকে পেস বোলিংকে নেতৃত্ব দিচ্ছে জোফ্রা আর্চার। এক হাতে পেস বোলিংকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ভাল টাচে আছে। আমার তো ভারতীয় দলের আসন্ন ইংল্যান্ড সিরিজে জোফ্রা ভাল পারফর্ম করবে। সেই বিশ্বাস দলকে এখনই দিতে পারছে।
রবিবার ইডেনে নায়ক হতে পারেন বৈভব, কেকেআরের লক্ষ্য পিচ

বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, মহেন্দ্র সিং ধোনি….! আরও অনেকের নাম তালিকায় উঠে আসবে। ইডেনে খেলা থাকলে এই সব ক্রিকেটারের নাম লেখা জার্সি গায়ে সমর্থকরা ভিড় জমান। এই ছবি অনেকদিন আগে থেকে চোখে পড়েছে। কিন্তু এবার পরিচিত ছবির বড়ই অভাব। না হলে দুহাজার টাকার টিকিট কেন বারশো টাকায় বিক্রি হবে! এ কোন আইপিএল! তা হলে কি ক্রিকেটের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গিয়েছে! সেকথাই বা বলি কী করে। চাহিদা আছে। তবে গ্যাটের পয়স খরচ না করে যদি ইডেনে ঢোকা যায়, তার থেকে ভাল কিছু হতে পারে না। রবিবার বিকেল সাড়ে তিনটেয় রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে কেকেআর। প্লে অফে যেতে হলে একদলের টার্গেট দুই পয়েন্ট। আর একদলের সামনে কোনও কিছু নেই। কারন রাজস্থান আগেই আইপিএল থেকে ছিটকে গিয়েছে। হারানোর কিছু নেই বলে অনেক সময় এই দলগুলি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। এটাই ভয় কেকেআরের। ইডেন জয় করতে না পারলে তারাও রাজস্থানের মতো টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাবে। দিল্লি জয় দলে বাড়তি অক্সিজেন দিলেও টেনশন কাজ করছে। যদি না হয়, এই ভয় রাহানেদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে এই ম্যাচে কেকেআরের থেকেও রাজস্থানের দিকে সকলের নজর। কেন তা আলাদা করে বলার নেই। ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশী এখন ক্রিকেট বিশ্বের বিস্ময় বালক। চারটি ম্যাচ মাত্র খেলেছেন। তারই মধ্যে ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছেন। কেকেআরের জয়ের পাশাপাশি বাংলা তাকিয়ে বৈভবের দিকে। তাঁদের চাহিদা বৈভবের কাছ থেকে একটা ভাল ইনিংস দেখা। কেকেআর জিতুক। আর বৈভব যেন মন ভরিয়ে দিতে পরে। বৈভব পারবেন ইডেন জয় করতে! পারবেন তিনি ইডেনের নায়ক হতে! তাঁকে নিয়ে অজানা কিছু নেই। তাঁরই জন্য বিহারের সমস্তিপুর ভারতীয় ক্রিকেট মানচিত্রে ঢুকে পড়েছে। ৩৪. ১৬, ১০১ এবং ০ করে বৈভব শনিবারের বারবেলায় ইডেনে পা ফেললেন। আট বছর আগে এই ইডেনেই খেলা দেখতে আসা ছেলেটিকে দেখতে এবার মানুষ আসবে টিকিট কেটে। এটা ভাবতে কেমন লাগে! না, বৈভবকে মিডিয়ার থেকে আড়াল করে রেখেছেন রাজস্থান রয়্যালসের কর্তারা। তাঁরা চাইছেন না সাত তাড়াতাড়ি মিডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর মাথা ঘুরে যাক। মিডিয়া তাঁকে নিয়ে লিখবে। এটা তাদের পেশা। তাই আলাদা অনুরোধে লাভ নেই। কোচ রাহুলও চাইছেন না এসব কথা বলে মিডিয়াকে আটকাতে। তার থেকে বৈভবকে যতটা আড়াল করা যায়, ততই ভাল। ইডেনে এসে চারদিক ঘুরে দেখলেন বৈভব। যা দিয়ে মাঠের বাইশ গজে শাসন করেন, সেই ব্যাট হাতে নেটে ঢুকলেন। নকিং করলেন। নেটে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে বেরিয়ে এলেন। ঢুকলেন পাশের নেটে। সেখানে থ্রোয়ারদের ছোঁড়া বলে খেললেন। সেই মেজাজ। সেই অ্যাকশন। সব কিছুর রিপ্লে দেখা গেল বৈভবেব কাছ থেকে। একজন ১৪ বছরের ছেলের ব্যাটের সুইং এত ভাল হয় কি করে। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে নিজেকে পরীক্ষায় বসিয়েছেন। সেখানে লেটার মার্কস পেয়ে পাশও করেছেন। যিনি কামিনসদের সামলে এসেছেন, তাঁর সামনে রানা বা অরোররা কি বড় বাধা হয়ে দাঁড়তে পারবেন! এই প্রশ্ন উঠছে। ইডেনের উইকেটে বল ছুটবে না। মন্থর উইকেটে স্ট্রোক খেলা কঠিন। আর বৈভব স্ট্রোক করে খেলতে ভালবাসেন। শুরুটা দেখে খেললে ভাল করবেন। এখানেই বৈভব ভুল করে ফেলেন। তিনি সব বল মাঠের বাইরে ফেলতে চান। টি২০ ফরম্যাট বলে মেরে উড়িয়ে দেব, এই মানসিকতা নিয়ে খেললে অনেক ক্ষেত্রেই বিপদকে ডেকে আনা হয়। বৈভবের বয়স কম। বুদ্ধিতে শান পড়লে মানসিক শক্তি বাড়বে। তখন এই সব ভুল হবে না। এখন দেখার অপেক্ষা ইডেনে বৈভব কি করেন। বাইশ গজের জমি যে তাঁর অপেক্ষায়। কেকেআর দুটি ঘটনাকে ভয় পাচ্ছে। এক বৃষ্টিতে ম্যাচ ধুয়ে গেলে সব শেষ হয়ে যেতে পারে। আর পিচ। এবার আইপিএলে অদ্ভুত এক জিনিস দেখা যাচ্ছে। হোম গ্রাউন্ডে কেউ ভাল রেজাল্ট করতে পারছে না। কেকেআরও তাই। দিল্লি ম্যাচের দলটিকে নিয়েই তারা মাঠে নামতে পারে। আগে ব্যাট করলে বোর্ডে দুশো রান তুলতে হবে। না হলে সুবিধা পাওয়া যাবে না। দিল্লির বিরুদ্ধে দুশো পার করে ম্যাচ জিতেছিল কেকেআর। ইডেনে আবার একটা দুশো রানের ইনিংস খেলতে হবে। তা হলে হয়তো কেকেআর ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়তে পারে। আরও একটা কাজ করতে হবে। আগে বলা হত শেহবাগকে তাড়াতাড়ি আউট কর। তা হলে ম্যাচ অর্ধেক তোমার পকেটে। বৈভব আর যাই হোক শেহবাগ নন। কিন্তু অনেকটা সেই মেজাজে খেলেন। তাই বৈভব উইকেটে থেকে গেলে অনেক কিছু হতে পারে। ম্যাচ জিততে হলে সেটা করতে দিলে চলবে না। কেকেআর কি শুনতে পাচ্ছে!
শহরে বৈভব, আইয়ারকে নিয়ে অস্বস্তিতে কেকেআর

এখন ১৪। আট বছর আগে বাবার সঙ্গে ইডেনে খেলা দেখতে এসেছিলেন বছর ছয়েকের বাচ্চা ছেলে বৈভব সূর্যবংশী। সেদিন কি ভেবেছিলেন একদিন তাঁর খেলা দেখতে মাঠে ভিড় জমাবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। দুনিয়ায় কখন কি ঘটে যায় তা কেউ জানেন না। জিন্দেগী মে সব কুছ হোতা হ্যায়। সেটাই শনিবার দুপুরে হতে চলেছে। যখন রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ইডেনে প্র্যাকটিসে নামবেন আজকের ক্রিকেটের বিস্ময় বালক। রবিবার ইডেনে কি ঘটবে কেউ জানেন না। কেকেআরের সাফল্য দেখতে সবাই ভিড় করবেন ক্রিকেটের নন্দন কাননে। তারই মধ্যে অনেকের চাওয়ার শেষ নেই। তাঁরা চান বৈভবের একটি ভাল ইনিংস দেখতে। সঙ্গে অবশ্যই রাহানেদের জয়। এই দুয়ের মিশেলের কি দেখা মিলবে রবিবার শেষ বিকেলে ইডেনের বাইশ গজে! রাজস্থানের কাছে নতুন করে পাওয়ার কিছু নেই। তারা আইপিএল থেকে ছিটকে গিয়েছে। তবু পচ শামুকে পা কাটে। তেমন হলে রাহানেরা আইপিএল থেকে ছিটকে যাবেন। কারন এখন চারে চার করতে না পারলে প্লে অফ খেলার স্বপ্ন হারিয়ে যাবে। দিল্লি জয় করে বাড়তি অক্সিজেন নিয়ে শহরে এসেছেন ক্রিকেটাররা। অক্ষর প্যাটেলদের বিরুদ্ধে ১৪ রানে জয় দলকে তাতাচ্ছে। ঘরের মাঠে আবার ধাক্কা দিতে চায় কেকেআর। সেটা কি সম্ভব হবে! তার আগে অনেকগুলি প্রশ্ন সামনে আসছে। প্রথমত কেকেআর অধিনায়ক কি রবিবার খেলতে পারবেন। দিল্লি ম্যাচে ডুপ্লেসির একটি শট আটকাতে গিয়ে হাতে বড় ধরনের চোট পান। হতে কয়েকটি সেলাইও পড়ে। ম্যাচ শুরুর ৪৮ ঘন্টা আগেও রাহানে পুরো ফিট নন। তিনি নিজেও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না যে রাজস্থান ম্যাচ খেলবেন। তবে আশা করা হচ্ছে য়ে রাহানে খেলবেন। তিনি ন খেললে দের ব্যাটিংয়ে বড় ধাক্কা। কারন এবারের আসরে অধিনায়ক রাহানে দলের হয়ে সব থেকে ভাল পারফর্ম করছেন। তাই এমন অবস্থায় নিজেকে সরিয়ে নিতে রাজি হবেন না রাহানে। রাহানেকে নিয়ে বড় চিন্তা দেখা গেল না শিবিরে। দলে অস্বস্তি বাড়িয়েছে সহঅধিনায়ক বেঙ্কটেশ আইয়ারের ফর্ম। প্রায় ২৪ কোটি টাকা দিয়ে দলে নিয়েছে কেকেআর। কিন্তু বদলে তিনি কি করছেন। একটি বড় ইিংস খেলা ছাড়া বিশেষ কিছু করতে পারেননি আইয়ার। সেটা দলকে বেশি করে ভোগাচ্ছে। রাহানে অবশ্য তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। তিন জানিয়েছেন, একটি ম্য়াচ রান পেয়ে গেলে বেঙ্কিকে রোখা যাবে না। হয়তো রবিবারের ম্যাচে ওকে দারুন মেজাজে খেলতে দেখা যাবে। আমরাও চাই তাড়াতাড়ি রানে ফিরুক বেঙ্কি। তা হলে আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। শুক্রবার প্র্যাকটিসে বেঙ্কির সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতে দেখা গেল সহকারি কোচ অভিষেক নায়ারকে। তিনি নেটের পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন ঠিক কোথায় ভুল হচ্ছে আইয়ারের। নেটের পিছনে ছিলেন রাহানেও। তিনিও চাইছেন ভুল হলে সেটা প্র্যাকটিসের পর নিজেদের মধ্যে আলোচনায় সমধান করতে। শুধু আইয়ার নয়। রিঙ্কু ও রাসেলের ব্যাটেও রানের দেখা মিলছে না। রিঙ্কু দিল্লি ম্যাচে রন পেয়েছেন। তবে তাঁকে আগের মেজাজে দেখা যাচ্ছে না। যেমন দেখা যাচ্ছে না রাসেলকে। এদের ব্যাটে রান না এলে দল কীভাবে বড় ইনিংস খেলতে পারবে। রাসেল নেটে কিছুটা সময় কাটিয়ে বাইরে চলে এলেন। বরং রিঙ্কু অনেকটা সময় ব্যাট করে নিজেকে ঝালিয়ে নিতে চাইলেন। রবিবার যে পিচে খেল হবে, সেখানে তেমন ঘাস দেখতে পাওয়া গেল না। ধরে নেওয়া যেতে পারে স্লো টার্নার উইকেটে খেলতে হবে। তা হলে তিন স্পিনারে যেতে পারে কেকেআর। সুনীল ও বরুনের সঙ্গে আবার মইনকে খেলতে দেখা যাবে। আবার আগের ম্যাচে অনুকূল রায় খারপ বল করেননি। মইনের বদলে তিনি দলে ঢুকে পড়ত পারেন। কেকেআর শিবিরে এই সব যদি বা কিন্তুর প্রস্ন উঠে আসছে। সেটা নিয়ে কেকেআর মাঠ ছেড়ে হোটেলে ফিরে গেল।
কেকেআর ম্যাচের আগে রোহিতের কথায় চাঙ্গা হতে পারেন ব্যর্থ বৈভব

মাঠের বাইরে থেকে ফের চাপে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়ে গেল। বৈভব সূর্যবংশীকে নিয়ে ঝড় উঠল সোশ্যাল মিডিয়ায়। অভিযোগ, ১৪ নয়, বৈভবের বর্তমান বয়স নাকি ১৬। প্রমান সহ বিসিসিআইয়ের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। বিসিসিআই জানিয়েছে ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটা কতটা সত্যি! কতটা মিথ্যে! ভারতীয় ক্রিকেটে বৈভব সূর্যবংশীকে নিয়ে প্রথম যখন আলোচনা শুরু হয়, তখনও এমন কথা শোনা গিয়েছিল। সেদিনও বলা হয়েছিল, বৈভবের বয়স দুবছর কমিয়ে দেখানো হচ্ছে। আইপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলার পর এক সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে বৈভবের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেদিন তিনি বলেছিলেন, আমার বয়স নিয়ে অনেক কথা শুনেছি। বিসিসিআই রেজিস্টারে আমার বয়স যা দেখানো হয়েছে সেটাই আসল। এ নিয়ে জলঘোলা করা অর্থহীন। তাই এবারের অভিযোগ নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছেন না। বৈভবকে খেলতে দিন। এভাবে চাপে ফেলার দরকার নেই। বয়সের কারচুপি করা হয়েছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব বোর্ড কর্তারা। তারা সরকারিভাবে এ নিয়ে কোনও কিছু না জানানো পর্যন্ত চুপ থাকাই ভাল। ১৪ নাকি ১৬, এই বিতর্কে না ঢুকে ক্রিকেট মাঠে ফিরে যাওয়া যেতে পারে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে দুবলের ইনিংসে কোনও রান না পেয়ে হতাশ বৈভব মাঠেই কেঁদে ফেলেন। তখন এগিয়ে এসে রোহিত শর্মা তাঁর পিঠে রাখেন। এখানেই শেষ নয়, খেলার শেষে মাঠের একধারে বৈভবকে দেখে এগিয়ে যান ভারত অধিনায়ক। তিনি কিছুটা সময় কথাও বলেন। তিনি কি বলেছেন, তা জানা যায়নি। বৈভবকে মোটিভেট করার মতো কথা তিনি শুনিয়েছেন। সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়েই সাইকে এগোতে হয়। শুধু সাফল্য আসবে, এমনটা হতে পারে না। ব্যর্থতাকেও দেখতে হবে। এই দুয়ের মিশেলকে সঙ্গে নিয়ে চলে নিজেকে মানসিক দিক তৈরি করতে হবে। যাঁরা পারবেন, তাঁরা নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পরবেন। না হলে আটকে যেতে হবে। রোহিত ও বৈভবের কথোপকথন জানা না গেলেও ভারতীয় দলের প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রীর কথায় উজ্জ্বীবিত হতে পারেন বিস্ময় বালক। শাস্ত্রী বলেন, এর থেকে বড় কিছু আর হতে পারেনা। রোহিতের কথা শুনে বৈভব নিজেকে নিশ্চয় গুছিয়ে নিতে পারবে। আমি আগেও বলেছি, একদিন আসবে যেদিন ব্যাটে রানের দেখা পাওয়া যাবে না। সেদিন ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। নিজেকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তারপর ঠিক রান আসবে। শুক্রবার রাতের মধ্যে কলকাতায় ঢুকে পড়বে রাজস্থান রয়্যালস। রবিবার তারা কেকেআরের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে। একদিক থেকে দেখলে মনে হতেই পারে যে রাহানেদের কিছুটা চাপে ফেলে দিল রাজস্থান। গুজরাটের বিরুদ্ধে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করা বৈভব আকাশের মাথায় উঠে পড়েছিলেন। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে রান করতে না পেরে আকাশ থেকে একেবারে নিচে পড়েছে। এই সাপ লুডোর খেলা ক্রিকেট মাঠে চলতেই থাকবে। এটাই ক্রিকেটারদের জীবন। একে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। এবার দেখতে হবে রোহিতের কথায় নিজেক কতট মোটিভেট করতে পারলেন বৈভব। তাঁর ব্যাটের সুইং দেখার মতো। ব্যাটের ফ্লো খুব ভাল। ইডেনে সেই ভেল্কি তাঁর কাছ থেকে সকলে দেখার অপেক্ষায়। রাহুল দ্রাবিড় আগেই বৈভবকে জানিয়েছিলেন সব বলকে ওভার বাউন্ডারি মারা যায় না। নিজেকে ধরে নিতে হবে। সেটাই কি ইডেনে দেখিয়ে ছাড়বেন। হতে পারে। আর সেট হলে কেকেআর চাপে পড়ে যাবে। মানসিক দিক থেকে চাঙ্গা কেকেআরও। আগের ম্যাচ তারা জিতেছে। এখন চারে চার করতে হবে। সেই লক্ষ্যে কতটা ছুটতে পারেন রাহানেরা, সেটই এখন দেখার বিষয়। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের পেসার দীপক চাহার বলেছেন, তাঁরা পরিকল্পনা করে বৈভবকে আউট করে দিয়েছেন। সবাইকে নিয়ে আলাদা করে পরিকল্পনা হয়। যখন কাজে লাগে, তখন ভাল লাগে। না লাগলে হতাশা আসে। দীপকের পরিকল্পনা কাজে লাগায় তিনি বলতে পারছেন, বৈভবের দুর্বলতা বের করে ফেলেছেন। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, দীপকের এক স্লোয়ার মাঠের বাইরে ফেলতে গিয়ে সময়ের ভুল চুক করে ফেলেন। বল সোজা মিড অনে দাঁড়ানো জ্যাকসের হাতে চলে যায়। ২১৮ রান তাড়া করতে নেমে মারমুখী মেজাজে খেলর চেষ্টা করেছিলেন বৈভব। তিনি অবশ্য এভাবেই খেলেন। সেটা করতে গিয়ে সময়ের ভুল। কেকেআর পেসারদের মাথায় রাখতে হবে। ফুল বল করে সুবিধা পাওয়া যাবে না। যশ্বসী আছেন। তবে বৈভবকে নিয়ে এমন আলাদা ভাবনা মাথায় নিয়ে রানা অরোরাদের ছুটতে হবে। তাঁদের কাজ শুরুতে বৈভবকে আউট করা। এটা করতে পারলে রাজস্থানের রান তোলার গতি শ্লথ হয়ে পড়বে। যা কেকেআরকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আর উল্টো হলে চাপ পড়বে কেকেআর।
ভারতীয় দলের হয়ে ইংল্যান্ড যাচ্ছেন বৈভব ও মাত্রেরা

বিরাট কোহলিরা যখন ইংল্যান্ডে সিরিজ খেলতে ব্যস্ত থাকবেন, তখন বৈভব সূর্যবংশীরা সাদা বলের ক্রিকেটে চ্যালেঞ্জ জানাতে লড়াইয়ে নামবেন। আগামি জুনে একই সঙ্গে চলবে সিনিয়র ও জুনিয়রদের ক্রিকেট। আইপিএল শেষে বিরাটরা ইংল্যান্ড যাবেন। তার আগে ভারতীয় এ দলের ইংল্যান্ড যাওয়ার কথা। কথা হয়েছে, ভারতীয় এ দলের সঙ্গে কয়েকজন সিনিয়র দলের ক্রিকেটারকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তেমনই ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন হেড কোচ গৌতম গম্ভীর। বিরাটদের সিরিজ শুরু হওয়ার কথা ২০ জুন। ভারতীয় এ দল দুটি বেসরকারি টেস্ট ম্যাচ খেলবে। আইপিএলের কারনে প্রথম ম্যাচে সিনিয়র দলের ক্রিকেটাররা খেলতে না পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁদের খেলার কথা। সিনিয়র দলের টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে ক্রিকেটারদের পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে এমন ভাবনা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের। এখন শোনা যাচ্ছে যে অনুদ্ধ্ ১৯ ভারতীয় দল একই সময় ইংল্যান্ড যাবে। সেখানে ভারতীয় দল পাাঁচটি ওয়ান ডে ক্রিকেটের পাশাপাশি দুটি টেস্ট ম্যাচও খেলবে। ওয়ান ডে ক্রিকেট শুরু হবে জুনে। পাঁচ ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পর জুলাইয়ে তারা দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলবে। সেই দলে ঢুকে পড়ার কথা এই মুহূর্তে ভারতীয় ক্রিকেটে বিস্ময় বালক বৈভব সূর্যবংশীর। তাঁর জায়গা একপ্রকার নিশ্চিত। বিশেষ করে গুজরাটের বিরুদ্ধে বৈভবের দুর্দান্ত ১০১ রানের ইনিংস দেখার পর সবই তাঁকে দলে ঢুকিয়ে দিতে চাইছেন। ১৪ বছর বয়স হলেও এর আগে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া জুনিয়র দলের বিরুদ্ধে খেলেছেন বৈভব। সেই সিরিজের একি ম্যাচে করেছিলেন ৫৮ বলে সেঞ্চুরি। তাই এবার তাঁর দলে ঢুকে পড়া নিশ্চিত। শুধু বৈভব নন, তাঁর সঙ্গে ভারতীয় দলে ঢুকে পড়তে চলেছেন আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলা আয়ুষ মাত্রে। এবার আইপিএলের মাঝপর্বে সিএসকের প্রথম একাদশে ঢুকে পড়েছেন মাত্রে। তাঁর ব্যাটিং দেখে অধিনায়ক ধোনিও প্রশংসা করেছেন। একবারল দলে ঢুকে পড়ার পর তাঁকে বাইরে বসানোর কথা ভাবেননি সিএসকে টিম ম্যানেজমেন্ট। আইপিএলে এই দুই ক্রিকেটারেরল জায়গ নিশ্চিত। দুজনকে রেখে বাকিদের নিয়ে দল গড়া হবে। জুনিয়রদের এই সিরিজের জিকে তাকিয়ে থাকবেন নির্বাচকরাও। কারন আগামি বছরের শুরুতে অনুদ্ধ্ ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। যাঁরা এই সিরিজে ভাল খেলবেন, তাঁরা বিশ্বকাপ দলে ঢুকে পড়বেন। আস করা যায়, বৈভব সেই দলেও থাকবেন। বর্তমানে যে ফর্মে তিনি আছেন, তা ধরে রাখতে পারলে বিশ্বকাপ খেলা শুধু সময়ের অপেক্ষা। আর কিছু নয়।