দাবার বিশ্ব ‘আইপিএলে’ আনন্দের টিমের একমাত্র বাঙালি সদস্যের এখনও ঘোর কাটেনি কিংবদন্তির সংস্পর্শের!

সুদীপ পাকড়াশীঃ নাম সর্বার্থ মানি। বয়স ৯ বছর। সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। বাবা-মা দুজনেই ডাক্তার। জর্জিয়ার বাটুমি থেকে অনূর্ধ্ব-১০-এ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে সম্প্রতি ফিরেছে। সোমবার রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস একই টুর্নামেন্টে রুপোজয়ী ঐশিক মণ্ডলের সঙ্গে সর্বার্থকেও সম্বর্ধিত করলেন। সর্বার্থ খুব খুশি এই স্বীকৃতিতে। কিন্তু স্বীকৃতি তো তার কাছে নতুন নয়। ২০২৩-এ জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত তার ঝুলিতে ১৩টা আন্তর্জাতিক পদক! যার মধ্যে রয়েছে কমনওয়েলথ দাবায় সোনা, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপেও ৫টা পদক। জর্জিয়ায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এলো-রেটিংয়ে সর্বার্থ পৌঁছে যাবে ১৯৫০-এ। কিন্তু এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ খবর আছে। সাম্প্রতিককালে বাংলার দাবায় হয়ত সবচেয়ে বড় খবর! এক মাস আগে লন্ডনে দাবার আইপিএল হয়ে গেল। ফিডে-র বিশ্ব র্যাপিড এবং ব্লিৎজ টুর্নামেন্টে দলগত লড়াইয়ে ফিডে-র সিইও এবং বিখ্যাত গ্র্যান্ডমাস্টার এমিল সুটোষ্কি একটি দল কিনেছেন। তার নাম ফ্রিডম। ৬-জনের সেই দলে একমাত্র বাঙালি ও সর্কনিষ্ঠ দাবাড়ু হয়ে সুযোগ পেয়েছে সর্বার্থ। আর ‘ফ্রিডমের অধিনায়ক কে ছিলেন জানেন? বিশ্বনাথন আনন্দ! সর্বার্থর সঙ্গে কথা বলে মনে হল পদকগুলো নয়, একমাস হয়ে গেল, ও এখনও আচ্ছন্ন বিশ্বনাথন আনন্দে! দিব্যেন্দু বড়ুয়া অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত হওয়া এই খুদে প্রতিভা ফোনে বলছে, “আনন্দ স্যার যে পরামর্শগুলো দিতেন লন্ডনে থাকার সময়, সেগুলোই আমি পরে এই বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে খেলার সময় প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছি। লণ্ডনে থাকার সময় আনন্দ স্যারের সঙ্গে যে গল্প করতাম সেটাও আমি সারাজীবনে ভুলতে পারব না। এখনও পর্যন্ত আমার জীবনে সেরা প্রাপ্তি।” বাবা সিদ্ধার্থ মানিও অভিভূত এক মাসের লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতায়। “এমিল সুটোষ্কি নিজেই একদিন ফোন করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সর্বার্থর অনেক খেলার ভিডিও দেখে মুগ্ধ হয়ে উনি ফোনটা করেছিলেন। তারপর থেকে এমিল স্যার সর্বার্থর মেন্টর হয়ে কাজ করেন, শুধু ভালবেসে! এমনকী, জর্জিয়ায়ও প্রত্যেকদিন ফোন করতেন এমিল স্যর। ওর খেলা নিয়ে পরামর্শ দিতেন। আমার মনে হয় ২০২৫-এ এটাই আমাদের কাছে প্রথম বড় প্রাপ্তি।” সিদ্ধার্থ বলছেন, লন্ডনে ফ্রিডম দলের হয়ে খেলতে যাওয়াটা সর্বার্থর কাছে আরও এক অমূল্য প্রাপ্তি। “এখনও ভাবতে পারি না, মামেদভ রাউফ, অ্যালেক্সি সারানার সঙ্গে রাত ১১.৩০ টার সময় প্র্যাক্টিস করছে সর্বার্থ আর আনন্দ দেখছেন সেই খেলা। গল্প করতে করতে সর্বার্থকে পরামর্শ দিচ্ছেন। লুকিয়ে ভিডিও করে রেখেছি সেই দৃশ্য,” সিদ্ধার্থের কথায়ও আনন্দের ঘোরেরই রেশ! সেই কারণেই হয়ত ছেলের দাবা খেলার জন্য বছরে প্রায় লাখ ৪০ টাকা খরচ হলেও লড়াই চালিয়ে যেতে চান সর্বার্থর বাবা-মা। এই খরচের মূল অংশটা চলে যায় সর্বার্থর বিদেশে খেলতে যাওয়ার পেছনে আর কোচিং-এর জন্য। কোচিং নেওয়ার জন্য মাসে খ্রচ প্রায় ১২ লক্ষ টাকা! সর্বার্থ থেমে নেই। আগামি মাসেই আবুধাবিতে আর একটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সর্বার্থ। তার স্বপ্ন? বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া।