ম্যান অব দ্য ম্যাচ বা ম্যাচের সেরা হতে গেলে কি করতে হয়। সোজা বাংলায় বলতে হয়, ম্যাচে এমন কিছু পারফরমযান্স করতে হয় যা সবইকে চমকে দেবে।
তা হলে সোমবার লখনউয়ের একানা স্টেডিয়ামে ধোনিকে সেরা বাছতে গিয়ে অসুবিধা কোথায়! যাঁদের উপর দায়িত্ব ছিল, তাঁরা তো ঠিক কাজই করেছেন। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে অন্যম্যাচের মতো নিজের সেরাটা দিয়েছেন। আবার চাপের মুখে ব্যাট করতে নেমে ১১ বল খেলে ২৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। এমন পারফরম্যান্সের পর তাঁকে তো সেরা বেছে নেওয়া অন্যায় নয়। কিন্তু যাঁকে সেরা বাছা হল, তিনি পুরস্কার হাতে আবার সবাইকে চমকে দিলেন। ধোনি বললেন, এই ঘোষনা আমাকে অবাক করেছে। ভেবেছিলাম নুর আমেদকে সেরা হিসেবে বেছে নেওয়া হবে। কিন্তু আমার নাম ঘোষনা হতে সত্যি অবাক হয়েছি।
কেন ধোনির মনে হল নুর আমেদকে সেরার পুরস্কার দেওয়া উচিত ছিল। নুর ম্যাচে কোনও উইকেট পাননি। এটা ঘটনা যে কৃপন বোলিংয়ের দৃষ্টান্ত তিনি একানা স্টেডিয়ামে রেখেছেন। ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৩ রান। উইকেট না পেলেও তাঁর কাছে আটকে গিয়েছিল লখনউ। তাঁরা অন্য স্পিনারদের সামনে আক্রমনাত্মক হতে পারলেও আটকে যান নুরের কাছে। একবার হরভজন সিং বলেছিলেন, ওয়ান ডে ম্যাচে ১০ ওভারে ৩০ রান দিয়ে উইকেট না পেলেও চলবে। কিন্তু রান কিছুটা বেশি দিয়ে ফেললে তোমাকে কমপক্ষে তিনটি উইকেট নিতে হবে। তবেই তোমাকে নিয়ে আলোচনা হবে। নুর তো তেমনই করে দেখালেন। টি ২০ ফরম্যাটে এর থেকে ভাল উদাহরন আর কি হতে পারে। তাই ধোনির কথাকে গুরুত্ব দিতে হবে। নুরকে সেরা হিসেবে বেছে নিলে কেউ সমালোচনা করতেন না।
আফগান ক্রিকেটার নুর আমেদকে সাড়ে দশ কোটি টাকায় এবার দলে নিয়েছে চেন্নাই। সাত ম্যাচের মধ্যে টাকা যে উশুল হয়ে গিয়েছে তা আলাদা করে বলার দরকার পড়ে না। প্রত্যেকটি ম্যাচে নুর জাত চিনিয়েছেন। আফগান ক্রিকেটার বলতে গেলে সারা বছর ক্রিকেট খেলেন। ক্রিকেট বিশ্বের সব দেশে তাঁকে এই ফরম্যাটে খেলতে দেখা যায়। সে বিগ ব্যাশ থেকে শুরু করে বিপিএল, কোনও কিছু বাদ যায় না। তাই অকশনে তাঁর দর অনেক বেশি। তাঁকে দলে নিয়ে চেন্নাই বাড়তি সুবিধা পেয়েছে।
নুর নিয়ে ধোনির আবেগ একটা কথা নতুন করে মনে করিয়ে দেয়। কেকেআরের বিরুদ্ধে ধোনি কেন পাওয়ার প্লে-তে নুরকে আক্রমনে নিয়ে আসেন নি। ১০৩ রানের পুঁজি নিয়ে লড়াই করতে নেমে শুরুতেই তো আক্রমনে যাওয়ার কথা। সেটা সেদিন অধিনায়ক ধোনির কাছ থেকে দেখতে পাওয়া যায়নি। আনলে ম্যাচের রেজাল্ট অন্যরকম হলেও হতে পারত। নুরকে ধোনি নিয়ে আসেন আট নম্বর ওভারে। তার আগে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছিল। খলিলদের সামনে নারাইনদের আক্রমনাত্মক মেজাজের কাছে হারার আগে হেরে গিয়েছিল চেন্নাই। নুর বল করতে এসে প্রথমেই নারাইনের উইকেট পান। কিন্তু তারপর লড়াই করার জায়গা ছিল না। সেই ম্যাচ ছাড়াও নুর নিজেকে প্রমান করেছেন। আফগানিস্তানের রশিদ খানের জায়গা এখন বলতে গেলে নিয়ে ফেলেছেন নুর। তিনি এৎন ধোনির দলের কোহিনূর। তাঁকে সামনে রেখে ম্যাচ জয়ের কথা ভাবতে হবে।
ধোনি মনে করছেন লখনউ জয় দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। প্লে অফ নিয়ে তিনি বেশি কিছু ভাবছেন না। সবে দুটি জয় পেলেন। এখন লক্ষ্য যতটা সম্ভব ম্যাচ জিতে সামনে যাওয়া যায়। লিগ টেবিলে তলানিতে থাকা দলকে ধোনি কতটা উপরে তুলতে পারেন এখন সেটাই দেখার বিষয়।