গুজরাট টাইটান্স: ৪ উইকেটে ২০৯ ( ২০ ওভার)
রাজস্থান রয়্যালস: ২ উইকেটে ২১২ (১৫.৫ ওভার)
এত তাড়াতাড়ি রাতটা আসবে আগে কে ভেবেছিলেন। বৈভব সূর্যবংশীও নন। ইচ্ছে ছিল ভাল কিছু করার। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে প্রথম দুটি ম্যাচ খেলার পর ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। আরও ভাল খেলার আশা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু আইপিএলে নিজের তিন নম্বর ম্যাচে জাতীয় দলের বোলারদের মেরে ৩৮ বলে ১০১ রান করবেন, তা সতীর্থরাও ভাবেননি। কিন্তু জয়পুরের মাঠে সেটাই করে দেখালেন ১৪ বছরের বৈভব। তাঁর ব্যাটিং দাপটে রাজস্থান ৮ উইকেটে হারিয়ে দিল হট ফেভারিট গুজরাট টইটান্সকে। অবাক করার বিষয় এটাই যে ২১০ রানের টার্গেটে ছুটতে গিয়ে ২৫ বল বাকি থাকতে রাজস্থান ম্যাচ বের করল। সেট সম্ভব হল বৈভব সূর্যবংশীর দাপুটে ব্যাটিংয়ের জন্যই। ২৬৫.৭৮ স্ট্রাইক রেটে ৭টি বাউন্ডারি ও ১১টি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ভারতীয়দের মধ্যে তিনি দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান। তাঁর সেঞ্চুরি এল ৩৫ বলে। প্রথমজন ক্রিস গেইল। তিনি ৩০ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এই লড়াইয়ে ম্যাকুলামের কথাও উঠে আসে। প্রথম আইপিএলে তিনি নাইটদের হয়ে বিধ্বংসী মেজাজ দেখিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর মাঠে। ৭৩ বল করেছিলেন ১৫৮ রান। পাঁচ বছর পর আরসিবির হয়ে পুনে ওয়ারিয়ার্সের বিরুদ্ধে গেইল করেছিলেন ১৭৫ রান। এঁরালকেউ বৈভবের পাশে দাঁড়াতেে পারছেন না। কারন ওঁরা আইপিএল খেলেছিলেন অনেকটা পরিণত হয়ে। আর বৈভব বলতে গেলে দুধের শিশু। তাঁর সঙ্গে ওদের লড়াই চলে না। এগিয়ে রাখতে হচ্ছে বৈভবকে।
সোমবারের রাতটা জয়পুরের মানুষ কোনদিন ভুলতে পারবেন না। যাঁরা মাঠে ছিলেন, তাঁরা উপভোগ করেছেন। পয়সা উশল বলে একটা কথা আছে। সেটাই শেষপর্যন্ত তাঁরা পেয়ে গেলেন। সিরাজ, ইশান্ত, প্রসিদ্ধ, রশিদ, কেউ বাদ গেলেন না। সবাইকে মেরে বুঝিয়ে দিলেন ক্রিকেট বিশ্বকে শাসন করতে তিনি এসে গিয়েছেন। এতদিন খেলেছেন জুনিয়র ক্রিকেটে বোলারদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আইপিএলের মঞ্চে কেউ কাউকে ছেড়ে দেওয়ার লোক নন। বাউন্সার, ইয়র্কার দিয়ে ব্যাটসম্যানকে চাপে ফেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু বৈভব শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে এতটাই শক্তিশালী যে তাঁকে টলানো গেল না। সঙ্গে টেকনিকেও খামতি ছিল না। পুরো ইনিংসে দুএকটা ভুল যে হয়নি তা নয়। ফিল্ডাররা সজাগ থাকলে অনেক আগে তাঁকে ফিরতে হত। কথায় বলে সাহসীদের ভাগ্য সাথ দেয়। তেমনই সূর্যবংশী। কখনও ভয় পাননি। সাহসে ভর করে বোলারদের ঘাড়ে চেপে রানের পিছনে ছুটেছেন। ১১টি ওভার বাউন্ডারির মধ্যে বেশিরভাগ স্ট্রোক এসেছে অনের দিকে খেলে। মিড উইকেট থেকে স্কোয়ার লেগ, এই অঞ্চল দিয়ে বল মাঠের বাইরে ফেলেছেন। যশ্বসীর সঙ্গে ব্যাট করতে ভাল লাগে। ১১.৫ ওভারের ইনিংসে যশ্বসী ( ৪০ বলে ৭০ রান) বারবার বলেছেন, উইকেট যেন ছুঁড়ে দিয়ে না আসে। নিজের স্ট্রোক খেলে রান তোলার দিকে ছুটতে বলেছেন। বৈভব সেটাই করেছেন। শেষে প্রসিদ্ধর ইয়র্কারে হার মানেন। প্রথম উইকেটে ১৬৬ রানের পার্টনারশিপ গড়ে বৈভব যখন ফিরছেন, তখন গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে। তিন নম্বরে ব্যাট করতে আসছিলেন নীতিশ রানা। তিনিও বুকে জড়িয়ে ধরেন। আর ডাগ আউটে বসা ক্রিকেটারদের কথা কী বলব। সবাই চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছেন। বৈভব কাছে আসতে অনেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। কেউ পিঠ চাপরে দিলেন। যাঁকে ঘিরে এত আনন্দ, এত উত্তেজনা, সেই বৈভবের মুখে চওড়া হাসি। তিনি পেরেছেন। স্বপ্নকে বাস্তবে নামিয়ে এনেছেন। এবার এটা ধরে রাখতে হবে। থেমে গেলে চলে না।
কিন্তু সে সব তো পরের কথা। এই রাত কি তাড়াতাড়ি শেষ হয়। স্টেডিয়ামের সার্চলাইট পুরোটাই বৈভবকে ধরে রেখেছে। দলের জয় না আসা পর্যন্ত তিনি ডাগআউটে বসেছিলেন। তারপর মাঠে ঘুরে বেড়ালেন। এই রাত তাঁর একান্ত আপন। যে ছবির জন্য অপেক্ষায় অনেকেই ছিলেন, তাঁকে দেখা গেল না। হ্যাঁ, তিনি রাহুল দ্রাবিড়। এই রাতটা তো তাঁরও। তাঁর কথায় রাজস্থান অকশন থেকে লড়াই করে তুলে এনেছিল। ফল পেতে অপেক্ষা করতে হল না। রাজস্থানের কঠিন সময়ে সঞ্জু স্যামসন চোট পেয়ে বাইরে চলে যেতে সুযোগ এল বৈভবের কাছে। তার পরের কথা সকলের জানা। তাই এই রাতটা বৈভবের সঙ্গে রাহুলেরও। কিন্তু তাঁকে দেখতে পাওয়া গেল না।