ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের জার্সি পরে খেলার জন্য মুখিয়ে আছেন রাহুল কেপি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪-৯ জুন সেভেন আ সাইড ‘দ্য সকার টুর্নামেন্ট’ বা টিএসটি অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই খেলতে যাওয়ার জন্য যেন তর সইছে না রাহুলের। তবে তিনি যা করে দেখাতে চলেছেন তা ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে এর আগে কেউ করে দেখাতে পারেননি। সুতরাং প্রথম ভারতীয় হিসেবে নিজেকে মেলে ধরবার জন্য যেন তর সইছে না তঁার।
“আমাদের পরিবারের অনেকে উচ্চস্তরে ফুটবল খেলেছেন। তাই ফুটবল নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন বাবা-মা। তঁারা আমাকে জিজ্ঞেস করে যখন জানতে পারেন সত্যি এটা প্রিমিয়ার লিগে খেলা ক্লাব। তখন তঁারাই আমাকে বলে বসেন, তুমি কি পাগল হয়েছো?” সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন রাহুল। ২০২৩ সাল থেকে দ্য সকার টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে। টুর্নামেন্টের পুরস্কার মূল্য ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যে দল চ্যাম্পিয়ন হবে তারাই পাবে এই আর্থিক পুরস্কার। এবার মোট ৪৮টি দল যোগ দিচ্ছে। ১২টা গ্রুপে ভাগ করা হচ্ছে। রাহুলের দল ওয়েস্ট হ্যাম রয়েছে গ্রুপ জি-তে। একই গ্রুপে রয়েছে লা লিগায় খেলা ভিলারিয়াল সিএফ ও দুটো অপেশাদার দল ব্রাউন ব্যালার্স এফসি ও টেনফিফটিন এফসি। দুটি দল মূলত যুক্তরাষ্ট্রের। প্রতিটি গ্রুপ থেকে দুটো শীর্ষ স্থানাধিকারী দল পরবর্তী রাউন্ডে যাবে। তাছাড়া তৃতীয় স্থানাধিকারী সেরা আটটা দলকে ওঠার সুযোগ দেওয়া হবে। ফাইনাল হবে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনায়।
গত বছর এই প্রতিযোগিতায় সার্জিও আগুয়েরো, নানি , মার্কো মাতেরাজ্জির মতো তারকারা খেলেছিলেন। এবারও তঁাদের খেলার কথা। তাই ওয়েস্ট হ্যামে খেলার স্বপ্ন পূরণ হতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছিলেন রাহুল। ব্যাপারটা ঘটে ওড়িশা এফসির সিইও রাজ আথওয়ালের সৌজন্যতায়। রাজ গত কয়েক বছর আগেও ইংলিশ ক্লাব কভেন্ট্রি সিটি ও ওয়াটফোর্ডের সঙ্গে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন। প্রায় দু-দশক সেখানে কাটানোর পর চলে আসেন ভারতে। ২০২০ সালে যোগ দেন ওড়িশা এফসিতে। তিনিই প্রথম ওয়েস্ট হ্যামের হয়ে খেলার জন্য রাহুলকে প্রস্তাব দেন। অন্যান্যদের মতো রাহুলও প্রথম বিশ্বাস করতে পারেননি। চিঠিপত্র দেখানো সত্ত্বেও রাহুলের মনে হয়েছিল, ব্যাপারটা বোধহয় সত্যি নয়। পরবর্তীকালে ভিসা, ফ্লাইটের টিকিট হাতে পাওয়ার পর কেরলবাসীর মনে বিশ্বাস জন্মায়। “এশিয়া থেকে একজন ফুটবলারকে তারা খঁুজছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল জাপান, কোরিয়ার মতো এশিয়ায় উন্নত ফুটবল দেশগুলো থেকে কাউকে নিয়ে যাওয়ার। তবে আমি তাদের বোঝাই, রাহুল অনেক ভাল মানের ফুটবলার। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ওখানে গিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারবে রাহুল।” বলছিলেন আথওয়াল।
কেরল মানেই সেভেন আ সাইড ফুটবল। যেখানে সেভেন সাইডের টুর্নামেন্ট ঘন ঘন হয়ে থাকে। তাই কেরলে এই প্রতিযোগিতায় খেলে খেলে অভ্যস্থ রাহুল কেপি। কেরলের ফুটবল প্রেমীরা এই ম্যাচ দেখতে মাঠে ভালোই ভিড় জমান। তাছাড়া স্বল্প সময়ের মধ্যে খেলা শেষ হয়ে যায়। এই ধরনের প্রতিযোগিতায় প্রায় নিয়মিত খেলতেন বিজয়ন, আনচেরির মতো প্রাক্তনরা। তাই তিনিও মনে প্রাণে চাইতেন, সেভেন সাইডের কোনও প্রতিযোগিতায় যদি বিদেশে খেলার সুযোগ পান। অবশেষে তঁার মনের সাধ পূরণ হতে চলেছে। “নিশ্চয় আমরা শুরুতে রিয়াল মাদ্রিদে খেলার স্বপ্ন দেখব না। তাই ইউরোপের কোনও ক্লাবের হয়ে যদি সেভেন আ সাইড খেলতে পারি তাহলেই ভাববো বিদেশে খেলার মতো অন্তত এই প্রতিযোগিতায় নামার যোগ্যতা আছে।” রাহুলের মতো প্রাক্তন কিংবদন্তী ফুটবলার বিজয়ন, আনচেরিরা প্রায় নিয়মিত সেভেন সাইড এক সময় খেলেছেন। তাই কেরলের মানুষ সেভেন বা ফাইভ সাইড খেলাকে ভালমতো উপভোগ করেন।
রাহুল ফুটবলের পরিমন্ডলের মধ্যে বড় হয়েছেন। তঁারা বাবা প্রবীণ কেপি একটা সময় নিয়মিত খেলতেন। যদিও পেশাদার ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তঁার দাদা পিভি সন্তোষ একটা সময় কেরল পুলিশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সন্তোষকে দেখেই ফুটবলে হাতেখড়ি হয় রাহুলের। ২০১২ সালে ফুটবল ফেডারেশন তঁাকে জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য ডেকে নেয়। তখন উদ্দেশ্য ছিল একটাই, পঁাচ বছর পর অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের জন্য ফুটবলার বাছাই। পরবর্তীকালে তিনি সেই বিশ্বকাপে নিয়মিত খেলেছিলেন। শুধু তাই নয়, একটা মিনিটও তাঁাকে মাঠের বাইরে করা যায়নি। পরবর্তীকালে ফের তিনি স্বমহিমায় ফিরে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন ২০২৩ সালে। চিনের বিরুদ্ধে এশিয়ান গেমসের শুরুতে গোল করে ভারতকে এগিয়ে দিয়েছিলেন রাহুল। পরবর্তীকালে সেই ম্যাচ হেরে বসে। তাই আফসোসের সুরে রাহুলকে বলতে শোনা যায়, “খুব খারাপ লাগছে। আমরা কিনা েসই ম্যাচ হেরে বসেছিলাম ১-৫ গোলে। তবে আমার গোলে যখন ভারত এগিয়ে ছিল তখন নিজেকে গর্ব অনুভব করছিলাম। আসলে দেশের জার্সি পরে খেলতে নামলে যদি গোল করতে পারি তখন খুব ভাললাগে।”

ইংল্যান্ড সিরিজে কে এল রাহুলকে অধিনায়ক করা যেতে পারতঃ মঞ্জরেকর
সঞ্জয় মঞ্জরেকর এমনই। কোন কথায় বিতর্ক দানা বাঁধবে, সবসময় সেটাই তিনি খোঁজেন। এবং তাঁকে ঘিরেই বিতর্ক বেড়ে ওঠে। এই