অঘটনের ক্লাব বিশ্বকাপ? নাকি বিশ্ব ফুটবলের বিপ্লব? যে যেভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন। আসল কথা হল, এমন দুটো ঘটনা ক্লাব বিশ্বকাপে ঘটে গেল যা ইতিহাসের পাতা জ্বলজ্বল করবে। বিশ্ব ফুটবলে বিস্ময়ের ঘোর কাটাতে সময় নেবে। ভাবুন ম্যাঞ্চেস্টার সিটি কিনা হেরে যাচ্ছে সৌদির দল আল হিলালের কাছে। অন্যদিকে ইন্টার সিটি কিনা হেরে বসেছে ব্রাজিলের দল ফ্লুমিনেজের বিরুদ্ধে। এই দুটো খেলার ফল দেখার পর কে বলবে, এই ঘটনা ইতিহাসের পাতায় থাকবে না।
হালান্ডের গোল করার মুহূর্ত।
খেলার আগে আল হিলাল হারবে, এই কথাগুলো বলার জন্য কোনও ফুটবল বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন ছিল না। সকলেই জেনে গিয়েছিলেন। খেলায় দেখা গেল উল্েটা ছবি। সেয়ানে সেয়ানে দু-দলের লড়াই। কেউ যেন এক ইঞ্চি মাটি ছাড়তে নারাজ। আল হিলালের গোলকিপার ইয়েসিন বুনু অসাধারণ পারফরম্যান্স সিটির মুখের গ্রাস কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। যে দল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে প্রতিপক্ষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। যারা খেলতে নামার আগে প্রতিপক্ষ বুঝে যাচ্ছিল, এক পয়েন্ট পেলে তাদের কাছে বিরাট বড় সৌভাগ্যের হবে। ক্লাব বিশ্বকাপে খেলতে এসেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। গ্রুপ লিগের তিনটে ম্যাচে ১৩টা গোল করেছিল। একমাত্র দল ছিল যারা গ্রুপ লিগের তিনটে ম্যাচ জেতে। সেই দল কিনা চতুর্থ ম্যাচে এসে মাথা নীচু করে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হল। সিটিকে ৩-৪ গোলে হারিয়ে দিল আল হিলাল। শুক্রবার সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ব্রাজিলের দল ফ্লুমিনেজের। যারা কিনা ইন্টার মিলানকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেছে।
গোল করলেই এভাবে উদযাপনে মেতে উঠেছেন আল হিলালের ফুটবলাররা।
অরল্যান্ডোর ক্যাম্পিং ওয়ার্ল্ড স্টেডিয়াম নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী থাকল। যেখানে কিনা রুদ্ধশ্বাস লড়াই লড়ে ইউরোপের একটা দলকে ফিফার কোনও টুর্নামেন্টে হারাল এশিয়ার একটা ক্লাব। যদিও খেলার শুরুতে ৯ মিনিটের মাথায় গোল করে সিটিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন বের্নার্দো সিলভা। তখন সিটির দাপট অব্যাহত। স্টেডিয়ামের দর্শকরা তখন বুঝে গিয়েছেন, যা হওয়ার ছিল তাই ঘটছে। বিরতির আগে পর্যন্ত সিটির আক্রমণভাগ নাজেহাল করে তোলে আল হিলালের রক্ষণকে। সেই সময় দুটো হাতের সঙ্গে বুদ্ধির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে একের পর এক আক্রমণ ভেঁাতা করে দেন গোলকিপার ইয়েসিন বুনু। ম্যাচের শেষে হিসাব কষে দেখা গিয়েছে নিশ্চিত গোটা দশেক গোল বঁাচিয়েছেন ইয়েসিন। ম্যাচের সেরাও হয়েছেন তিনি। পুরো চিত্রনাট্য লেখা হয়ে থাকবে বিরতির পরের ঘটনা। যেখানে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না। মুর্হুমুর্হূ এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে গোল হয়ে চলেছে। পিছিয়ে থেকে আল হিলাল যায় বিরতিতে। শেষার্ধ খেলা শুরু হওয়ার এক মিনিটের মধ্যে গোল পেয়ে যায় সৌদি ক্লাব। মার্কোস লিওনার্দো গোল করে দলকে সমতায় ফেরান। ফের গোল হয় ৫২ মিনিটে। এবারও গোল পেয়ে যায় আল হিলাল। ২-১ করে দেন ম্যালকম। ফের গোল করে সমতায় ফিরে আসে সিটি। গোলটি ৫৫ মিনিটে করেন আর্লং হালান্ড। নির্ধারিত সময়ে খেলা শেষ হয় ২-২ ব্যবধানে। অতিরিক্ত সময়ে খেলা শুরু হলে কালিদু কোলিবালি ৯৪ মিনিটে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে দেন আল হিলালকে। তার ঠিক দশ মিনিটের মধ্যে ফের গোল করে ৩-৩ করে দেন ফিল ফোডেন। জয়সূচক গোলটি করেন আল হিলালের লিওনার্দো। তখন ১১২ মিনিটের খেলা হয়ে গিয়েছে। তারপর আর ঘুরে দঁাড়াতে পারেনি সিটি। সমাপ্তি ঘটলো ইউরোপীয় দলের বিপক্ষে এশিয়ান ক্লাবগুলোর টানা ২০ ম্যাচের জয়খরা।