বয়স বেশি নয়। শুক্রবার নিউ চন্ডীগড়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে গুজরাট টাইটান্সের খেলা দেখতে সে মাঠে এসেছিল। কিন্তু গুজরাট হারতেই ভিআইপি গ্যালারির চেয়ারে বসে থাকতে পারল না আরুষ নেহরা। চলে এল রেলিংয়ের ধারে। চোখ জল। কান্নায় ভেঙ্গে পড়া ছেলেটির সঙ্গে আরও অনেককে কাঁদতে দেখা গেল। দেখে মনে হল, গুজরাট শিবির কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে। মুম্বই ইন্ডিয়ন্সের কাছে ২০ রানে হেরে আইপিএল থেকে গুজরাট টাইটান্সের বিদায় নেওয়ার মুহুর্তকে কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
কী করে মানবেন! যারা গ্রপ লিগে দুর্দান্ত খেলে সবর আগে প্লে অফে ঢুকে পড়েছিল, তারা এভাবে কেন ভেঙ্গে পড়বে। যাদের গ্রুপে একনম্বরে থেকে শেষ করার কথা, তারা কিনা তিন নম্বরে দাঁড়িয়ে প্লে অফে এল। এটা বিশ্বাস করা যায়! তারপর টানা তিন ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়। খেলা শেষে ক্যামেরা ধরেছিল দলের হেড কোচ আশিস নেহরার ছেলেকে। বারবার তাকে চোখ মুছতে দেখা গেল। মুখে অসহায়তার ছবি। এ কোন গুজরাট! যারা লিগে প্রথম ম্যাচ হেরেও দারুনভাবে ফিরে এসে সবাইকে চমকে দিয়েছিল। তারা কেন এভাবে বিদায় নেবে। এট মেনে নেওয়া যায় না।
তবে বাস্তবকে তো মানতেই হবে। যে রোহিত শর্মা ৮১ রানে আউট হলেন, তিনি ইনিংসের শুরুতে ক্যাচ তুলেও জীবন পান। তিন ওভারের মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। ডিপ ফাইনলেগে কোয়েতজার রোহিতের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন। এখানেই শেষ নয়, এরপর উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিসও একবার রোহিতের ক্যাচ হাতছড়া করেন। রোহিতের মতো ব্যাটসম্যানের ক্যাচ দুবার ফেলার খেসারত তো দিতে হবে। কুশল আরও একবার ক্যাচ ফেললেন। কোয়েতজারের বোলিংয়ে সুর্যকুমার যাদবের ক্যাচ ফেলে দেন কুশল। এমন দুর্বল ফিল্ডিং হলে কোনও দল ম্যাচ জিততে পারে। তাই গুজরাটও জেতেনি।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া এসব দেখে হাসতে পারেন। ম্যাচ জিতে হাসছিলেনও। তবে গুজরাটের ব্যর্থতা হয়তো তাঁকে বেশি আনন্দ দিয়েছে। চারবছর আগে আইপিএলে প্রথমবার খেলতে দেখা যায় গুজরাট টাইটান্সকে। দলে বড় চমক ছিল অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়াকে দায়িত্ব দিয়ে। ছিলেন মহম্মদ শামিও। কোচ করে নিয়ে আসা হয় আশিস নেহরাকে। শুরুতেই সবাইকে অবাক করে চ্যাম্পিয়ন হয় গুজরাট। দ্বিতীয় বছর ধোনিদের কাছে হেরে রানার্স। হার্দিক নিজে পারফরম্যান্স করেছেন। দল নিয়ে ছুটেছেন। দুবছর বোলিংয়ের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন শামি। তঁর দাপুটে বোলিংয়ের কাছে ব্যাটসম্যানরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। কিন্তু তারপর! তৃতীয় বছর (২০২৪) দল ভেঙ্গে গেল। হার্দিক অধিনায়ক হয়ে চলে এলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে। সেখানে কিছু করতে না পারলেন না। গুজরাটের অবস্থাও একইরকম। তারা লিগ টেবিলে আট নম্বরে শেষ করল। এবার (২০২৫) কিছুটা ভাল পারফরম্যান্স করতে দেখা গেল। কিন্তু চার নম্বরে শেষ করল আশিস নেহরার দল। এর উত্তরে কি বলবেন আশিস। এটা তো অবিশ্বাস্য ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। যাঁরা তাদের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ধরে এগিয়েছিলেন, তাঁরা দেখলেন মুম্বইয়ের কাছে হেরে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে গুজরাট ক্রিকেটাররা। একটা ঘটনার কথা বলতে হবে। জাতীয় দলে খেলার জন্য তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা জোস বাটলারের সার্ভিস গুজরাট পায়নি। এটা তাদের বড় ধাক্কা দিয়েছে। কিন্তু বাকিরা কি করলেন! উত্তর নেই। তই চোখের জলে মাঠ ভাসিয়ে রাতে সবাই স্টেডিয়াম ছাড়লেন।