মহাকাবি্যক ম্যাচ। সিটিকে হারানোর সাথে সাথে পুরো মাঠ উচ্ছ্বাস-আবেগে ভেসে যায়। বিশেষ করে আল হিলালের সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়তে থাকেন। প্রত্যেকের মুখ থেকে যেন বেরিয়ে আসছিল, আমরা পেরেছি, আমরা পেরেছি। কোচ সিমোন ইনজাঘি থেকে শুরু করে জয়ের অন্যতম নায়ক জোড়া গোলদাতা মার্কোস লিওনার্দো, সকলে ম্যাচের পর নিজস্ব অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বুঝিয়েছেন, এই ম্যাচ তঁাদের মর্যাদা যেন বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়ে গেল।
কোনও সন্দেহ নেই, বিশ্ব ফুটবলে নিজেদের শক্তি তুলে ধরার জন্য কোটি কোটি অর্থ খরচ করেছে সৌদি আরব। এতদিন সেই অর্থ খরচ করেও ফলপ্রসূ হতে পারছিল না। সোমবার রাতে মহাকাব্যিক ম্যাচ বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছে, পরিশ্রম করলে ফল একদিন আসবেই। খেলার পর প্রাক্তন ইংল্যান্ড উইঙ্গার আন্দ্রোস টাউনসেন্ড উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে ফেলেন, “আল হিলাল বিশ্ব ফুটবলকে হতবাক করে দিয়ে গেল।” ম্যাচ জেতানোর নায়ক মার্কোস লিওনার্দোর কাছে সন্ধ্যাটা ছিল বেশ আবেগঘন পূর্ণ। খেলার পর ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার বলেই দিলেন, এই জয় তিনি তঁার মাকে উত্্স্বর্গ করছেন। কেন করছেন তার পেছনে একটা কারণ রয়েছে। সেই কারণ তুলে ধরতে গিয়ে লিওনার্দো বলছিলেন, “গত দু-মাস ধরে মা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। গুরুতর অসুস্থ। আইসিইউ-তে রাখতে হয়েছিল। খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন। আজ কিছুটা সুস্থ। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে চাই, মা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন।” মায়ের কথা বলতে গিয়ে আরও যোগ করেন লিওনার্দো, “দুটো গোল যখন করলাম তখন চোখের সামনে ভেসে উঠলো মায়ের মুখ। বারবার মায়ের কথা মনে পড়ছিল। আশাকরি মা খেলাটা দেখেছেন। এরচেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না।”খেলার শেষে জানিয়ে দিলেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার।
জয় দেখে দলের ফুটবলারদের নিয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেন আল হিলালের সমর্থকরা।
আল হিলালের প্রধান কোচ সিমোন ইনজাঘি জানিয়ে দিলেন, এই জয়ের সঙ্গে একটাই তুলনা হতে পারে, অক্সিজেন ছাড়া মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার মতো ঘটনা। যা এককথায় অসাধ্য। সেই অসাধ্য কাজে সফলতা অর্জন করায় আপ্লুত ইনজাঘি। “সাফল্যের মূল চাবিকাঠি যদি ধরি তাহলে অব্শ্যই সামনে আসবে ছেলেরা। যারা অসাধ্য সাধন করে দেখাতে পেরেছে। হৃদয় উজাড় করে ছেলেরা খেলে গিয়েছে।” বলেন ইনজাঘি। যিনি এক মাস আগে চরম অপমান সহ্য করে ইন্টার মিলানের কোচিং ছাড়তে রাজি হয়ে যান। যেহেতু তঁার দল পিএসজির বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ৫ গোল খেয়েছিল। ক্লাবকর্তারা পত্রপাঠ তঁাকে বিদায় করে দেন। সেই ইনজাঘি আল হিলালের দায়িত্বে এসেছেন এক মাস আগে। বুঝিয়ে দিলেন, পঁাচ গোল খেতে পারেন। ফুটবল মস্তিষ্ক যথারীতি ক্ষুরধার রয়েছে। “সকলের জানা ছিল, সিটি কতটা ভয়ংকর। কী করতে পারে তাও আমাদের অজানা ছিল না। ছেলেদের একটা কথাই বলেছিলাম, যদি তোমরা সিটিকে হারাতে চাও, তাহলে বাড়তি পরিশ্রম করতে হবে। অক্সিজেন ছাড়া মাউন্ট এভারেস্ট ওঠা যেমন অসম্ভব। ঠিক তেমনি সেই অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য তোমাদের এমন কিছু করতে হবে যা সকলে তোমাদের দেখে চমকে ওঠে।” ইনজাঘি আরও বলেছেন, দৃঢ় সংকল্প নিয়ে যেন ছেলেরা খেলতে নেমেছিল। খেলার মাঝে সেটাই টের পেয়েছেন তিনি। যোগ্য দল হিসেবে তঁাদের জয় এসেছে। প্রতিটি বলের জন্য সকলে লড়াই করতে ছাড়েনি। কোচের কাছে, এই দলটা হল আল হিলালের একটা পরিবারের মতো। হিলালের খেলা দেখলে সৌদির লোকজনরা দারুন খুশি হয়।