কেকেআর অধিনায়ক অজিঙ্কে রাহানেদের কাছে এখন সব ম্যাচই ডার্বি। জিতলে টিঁকে আছ। হারলে বাপি বাড়ি যাও।
একথা বলার পিছন কারন আছে। ৯ ম্যাচ খেলে কেকেআরের পয়েন্ট ৭। বাকি পাঁচ ম্যাচ জিতলে পৌঁছবে ১৭ পয়েন্টে। সেক্ষেত্রে প্লে অফ খেলার সুযোগ হয়তো মিলে যাবে। কিন্তু এর মধ্যে একটা ম্যাচে পা হড়কালে কেকেআর ১৬ পয়েন্টেও ঢুকতে পারবে না। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মঙ্গলবার দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে খেলতে নামছেন রাহানেরা। বোঝাই যাচ্ছে, তাঁদের সামনে এই ম্যাচের গুরুত্ব কতটা। তাই দলের স্লোগানই ক্রিকেটারদের অক্সিজেন দিতে পারবে- করব, লড়ব, জিতব রে। মাঠে এই লড়াই দেখাতে পারলে চিন্তা থাকবে না। অক্ষর প্যাটেলের দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে এখন এটাই কেকেআরের মন্ত্র। ক্রিকেটাররা জানেন। তাঁদের আলাদা করে কিছু বলার দরকার নেই। তবু কখনও কানের কাছে বারবার এটাই বলে যেতে হয়। সেই কাজটাই করে যেতে হবে কোচ চন্দ্রকান্ত পন্ডিত, মেন্টর ডোয়েন ব্র্যাভোদের।
প্রতিপক্ষ দিল্লি ক্যাপিটালস এই মুহূর্তে অনেক ভাল জায়গায়। ৯ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে তারা প্লে অফ খেলার দিকে এক পা দিয়ে রেখেছে। বাকি ম্যাচগুলি থেকে চার পয়েন্ট তুলে নিতে পারলে দিল্লি টুর্নামেন্টের শেষ চারে চলে যাবে। তা হলে একথা লিখে দেওয়া যায় যে মানসিক দিক থেকে তারা অনেক এগিয়ে। তবু খেলা শুরুর আগের খেলায় দিল্লি নিশ্চিত হতে পারছে কোথায়! রবিবার রাতে ঘরের মাঠে তারা বিরাট কোহলিদের কাছ বাজেভাবে হেরেছে। শুধু হার নয়, সব বিভাগে পিছিয়ে থেকে মাথা নত হয়েছে অক্ষরদের। এখানেই ধাক্কা দিতে হবে রাহানেদের। পারলে ম্যাচ বের করতে ঝামেলায় পড়তে হবে না।
পোড় খাওয়া অধিনায়ক হিসেবে অক্ষর খুব বেশি নাম্বার পাবেন না। আইপিএলে দলকে ভালভাবে সামাল দিয়েছেন। জাতীয় দলে (টি ২০) সহকারি অধিনায়ক হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু আইপিএলে কপিবুক স্টাইলে দল পরিচালনা করতে গিয়ে মারও খাচ্ছেন। এই যেমন আরসিবি ম্যাচ অক্ষর হারলেন ভুল ট্যাকটিসে। প্রয়োগ ক্ষমতা ঠিকভাবে করতে পারলে ম্যাচে তারাই দাপট দেখাতেন। কিনতু সেটা হল কোথায়! জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক অনিল কুম্বলে বলছিলেন, ১৯ নম্বর ওভারে দলের সেরা বোলারকে দিয়ে বল করাতে হয়। আরসিবির তখন দরকার ১৭ রান। কিন্তু কি দেখা গেল! ১৭ নম্বর ওভারে ১২ রান দেওয়া মুকেশ কুমারের হাতে আবার বল তুলে দিল অক্ষর। স্টার্কের এক ওভার হাতে ছিল। তাকে দিয়ে শেষ ওভার করাতে চেয়ে দলকে ডুবিয়ে দিল। মুকেশের প্রথমম চার বলে চিম ডেভিড ১৯ রান নিয়ে ম্যাচ বের করে নিল। একটা ভুলে মাত হয়ে গেল দিল্লি। স্টার্ক ১৯ নম্বর ওভার বল করলে আরসিবি ম্যাচ বের করতে পারত না, একথা বলছি না। কিন্তু অধিনায়কের পরিকল্পনা এতেই ধরা পড়ে যায়। কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে ঠিকভাব এগোতে পারলে ম্যাচ জেতা যায়। আসলে অক্ষরের মাথায় কাজ করছিল রাজস্থান ম্যাচ। সেই ম্যাচে শেষ ওভার বল করে দিল্লিকে জিতিয়ে দিয়েছিল স্টার্ক। সুপার ওভারে ম্যাচ নিয়ে গিয়ে কাজের কাজ করে দিয়েছিল। সেই ফর্মুলায় এগোতে গিয়ে ধাক্কা। দুঁদে অধিনায়ক বলতে যাদের নাম আনা যেতে পারে, সেই তালিকায় অক্ষর পড়ে না।
এই একটা ভুল কেকেআরের সামনে দিল্লিকে কিছুটা হলেও চাপে ফেলে দিয়েছে। ম্যাচ জিতে সামনে খেলতে নামা, আর হেরে মাঠে নামার মধ্যে ফারাক থাকে। এখানেই কেকেআর শিবির কিছুটা স্বস্তি পাবে। দিল্লি বাধা ছকে খেলছে। শুরু করছেন অক্ষর। উল্টোদিকে স্টার্ক। মাঝে মুকেশ ও স্পিনাররা। এটা বুঝে খেলতে হবে কেকেআরকে। নারাইন শুরুতে অক্ষরকে মেরে দিতে পারলে কেকেআর ম্যাচে থাকবে। আবার স্টার্ককে খেলে দিতে পারলে দিল্লি শুরুত ধাক্কা খাবে। তাই রাহানদের ডার্বি ম্যাচে ওপেনারদের দায়িত্ব বেশি। পাওয়ার প্লে-তে উইকেট হারানো চলবে না। রান তুলে নিতে হবে। পাঞ্জাব ম্যাচের দলটিই সম্ভবত খেলবে। রাসেল, পাওয়েল রিঙ্কুদের কাজ মিডলওভারে রানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ব্যাটিং ক্লিক করছ না বলে কেকেআর মার খাচ্ছে। সেটা দিল্লির মাঠে পুষিয়ে নিতে পারলে জিততে অসুবিধা হবে না।
দিল্লির ওপেনাররা শুরু থেকে আক্রমনে যেতে পছন্দ করে। পোড়েল, ডুপ্লেসি, মার্কউই, রাহুল, অক্ষর, দলের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যান রানের মধ্যে আছেন। এদের বিরুদ্ধে অরোরা, রানাদের লাইন ধরে বল করতে হবে। পাওয়ার প্লে-তে স্পিনাররা লাইনে গোলমাল করলে বল মাঠের বাইরে গিয়ে পড়বে। মাথায় রাখতে হবে বোর্ডে যেন দুশো রানের বেশি না ওঠে। সেক্ষেত্রে রান তাড়া করতে ঝামেলায় পড়ে যেতে পারেন রাহানেরা। সব থেকে ভাল হয় টস জিতলে আগে ব্যাট করে নেওয়া। তারা টার্গেট সামনে রাখুন। তারপর না হয় বোলারদের উপর ভরসা। মাথায় রাখতে হবে এই ম্যাচ জিততেই হবে। দিল্লি জয় করতে না পারলে এবারের মতো আইপিএল শেষ হয়ে যাবে।