শিরোনাম দেখে অবাক লাগতে পারে। বলা যেতে পারে, এ কেমন কথা। নাইট অধিনায়কের চোট দিল্লি জয়ে দলকে সুবিধা করে দিয়েছে! এমন হয় নাকি!
কিন্তু ঘুরিয়ে দেখলে কথাটা সত্যি বলে মনে হবে। ব্যাটসম্যান রাহানের পারফরমযান্স নিয়ে কথা তোলা হচ্ছে না। প্রশ্ন উঠছে, অধিনায়ক রাহানেকে নিয়ে। ফাফ ডুপ্লেসির একটি শট আকাতে হতে চোট পান রাহানে। চোট এতটাই মারাত্মক ছিল যে তাঁকে মাঠের বাইরে যেতে হয়। ড্রেসিংরুমে যাওয়ার আগে তিনি নারাইনের হাতে অধিনায়কের দায়িত্ব তুলে দেন।
রাহানে মাঠ ছাড়লেন। নারাইনের কাঁধে দলের দায়িত্ব। তিনি কী পারবেন! তাঁকে তো কখনও দলকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়নি। তা হলে..!
এখানেই ম্যাচের টুইস্ট। দিল্লি তখন ১৩ ওভারে ৩ উইকেটে ১৩০। জিততে হলে ৪২ বলে করতে হবে ৭৫ রান। ওভার প্রতি দশ রানের কিছু বেশি। বড় রানের টার্গেটের পিছনে ছুটে ম্যাচ জিততে হলে এমন রানের পিছনে ছুটতেই হবে। ম্যাচ ফিফটি-ফিফটি। যে কেউ জিতে পারে। দিল্লি জিতলে প্লে অফের আরও কাছে তারা চলে যাবে। উল্টোদিকে কেকেআরকে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে হবে। এই অঙ্কের সামনে দাঁড়ানো দলকে কীভাবে নেতৃত্ব দেবেন নারাইন!
এটাই দেখার ছিল। তিনি ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেছন। বিরাট রান করতে না পারলেও যতটা সময় মাঠে ছিলেন, বোলারদের মাথা তুলতে দেননি। এবার দুটো জিনিস করার দরকার ছিল। প্রথমত, অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রমান করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বোলার নারাইন কী করতে পারে তা দেখার জন্য সকলে মুখিয়ে। আর এখানেই নারাইন ক্যারিশ্মা। ১৪ নম্বর ওভারে নিজেকে আক্রমনে নিয়ে এলেন। অক্ষর ব্যাট করছেন ৩৭ রানে। ডুপ্লেসির রান ৫৯। নারাইনের প্রথম বল মাঠের বাইরে ফেললেন অক্ষর। রানের ব্যবধান আরও কমল। তা হলে কি চালটা ভুল হয়ে গেল। এই ভাবনার মাঝেই নারাইন চমকে দেখা গেল। তাঁর স্পিনের ফাঁদে জড়িয়ে আউট হয়ে গেলেন অক্ষর। কভারে রানার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন অক্ষর ( ২৩ বলে ৪৩)। একই ওভারে শেষ বলে ফিরে গেলেন স্টাবস। আট রান দিয়ে দুটি উইকেট। আর তখনই খেলা ধরে ফেলল কেকেআর। পরের ওভারে নারাইন নিয়ে এলেন বরুনকে। যিনি প্রথম দুই ওভারে দিয়েছিলেন ২২ রান। বরুন উইকেট না পেলেও রান আটকে রাখলেন। য এইসময় দরকার ছিল। ১৬ নম্বর ওভারে নারাইন ভেবেছিলেন কোনও পেসারকে নিয়ে আসবেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত মতবদল। পেসার নয়, নিজে এলেন। তুলে নিলেন ডুপ্লেসিকে (৪৫ বলে ৬২)। দিল্লি ৬ উইকেটে ১৪৬। ওভার ১৫.২। ম্যাচ তখন কেকেআরের হাতে। জয়ের পার্সেন্টেজে একসময় ৪২-এ থাকা নারাইনরা চলে এলেন ৭২-এ। ম্যাচ বলতে সেখানেই শেষ। দিল্লির জয়ের রাস্তা তখন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দুওভারে ১০ রান নারাইনের তিন উইকেট সব ওলোট পালোট করে দিল। ম্যাচে ৪ ওভারে ২৯ রানে ৩ উইকেট। ভাবা যায়!
এখানেই অধিনায়কের ক্যারিশ্মা। নিজেকে সামনে রেখে সতীর্থদের পথ দেখানা। আমি পেরেছি, তোমরা করে দেখাও। সেটাই দলের সবাই মিলে করে দেখাল। কেকেআর জিতল ১৪ রানে। দিল্লি থকে অক্সিজেন নিয়ে শহর কলকাতা ফেরার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। লড়ই যে এখনও শেষ হয়নি। আরও লম্বা যেতে হবে। একট করে ম্যাচ ধরে এগোতে পারলে কাজটা সুবিধা হবে। দলের উপর বাড়তি চাপ পড়বে না।
আরও একটা কথা বলতে হবে। অধিনায়ক রাহানে মাঠে থাকলে এমনটা যে হত না তা বলা যাবে না। রাহানেও হয়তো এই ছকে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতেন। আবার নাও ভাবতে পারতেন। অধিনায়কের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নিজেকে সবার আগে রাখার কৌশল অনেকের কাছে দেখা যায় না। নারাইন নিজে সেটা করে দেখিয়েছেন। তাই ম্যাচ সেরার পুরস্কার তাঁর হাতে তুলে দিতে দুবার ভাবতে হয়নি। তাই এটা মানতেই হবে যে রাহানে না থাকায় কিছুটা হলেও সুবিধা হয়েছে কেকেআরের। ১৫ বছর দলের হয়ে খেলছেন নারাইন। কখনও এভাবে এগিয়ে আসতে তাঁকে দেখা যায়নি। প্রথমবার দায়িত্ব নিয়ে সফল। এমন সময় সেট করে দেখলেন, যেখানে দলের দুপয়েন্ট জরুরি। তাই দিল্লির মাঠে হিরো নারাইনকে নিয়ে ঝড় উঠল। ৪ মে রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচে তাঁকে এই মেজাজে দেখা গেলে নাইটরা হয়তো প্লে অফের আরও কাছে চলে যেতে পারবে। আর রাহানে! শোনা গেল তাঁর চোট লাগা হতে কয়েকটি সেলাই পড়েছে। এটা নাইটদের মুশকিলে ফেলবে না। কারন, পরের ম্যাচে মাঠে নামতে সময় পাওয়া যাচ্ছে। ততদিনে রাহানে ফিট হয়ে যাবেন। তিনি ফিট হবেন, তারও আগে দেখা গেল নাইটরা নতুন নেতা পেয়ে গিয়েছে।