মণীষ ওঝার বক্তব্য মেনে নিতে পারছেন না বীরেন্দ্র শেহবাগ। তাঁর কথায় এখনই এসব কথা বলে মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। বৈভব সূর্যবংশীকে খেলতে দাও। সবে শুরু করেছে। এখনও ওকে অনেক দূর যেতে হবে। শুরুতে এসব কথা ওর মাথায় ঢুকিয়ে দিলে সমস্যয় পড়বে।
শেহবাগকে সবাাই চিনি। মণীষ ওঝা আমাদের কাছে অচেনা। শুরুতে আলাপ করিয়ে দেওয়া ভাল। মণীয ওঝা হলেন রাজস্থান রয়্যালসের বৈভব সূর্যবংশীর কোচ। ক্রিকেট জীবনের শুরুতে তাঁর কাছেই তালিম নিয়েছে বৈভব। রাজস্থানের হয়ে আইপিএলে বৈভবের অভিষেক ম্যাচ দেখে মণীষ বলেছেন, ওর ব্যটিংয়ে ব্রায়ান লারা ও যুবরাজ সিংয়ের মিশ্রন দেখতে পাওয়া যায়। নিজেকে এভাবেই তৈরি করেছে বৈভব। আক্রমনাত্মক ক্রিকেট খেলতে ভালবাসে বলে বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারির পিছনে ছোটে। অভিষেক ম্যাচের আগেরদিন রাহুল দ্রাবিড় জানিয়ে দিয়েছিল, বৈভব খেলছে। একথা শোনার পর আমাকে ফোন করে। আমি বলি, সুযোগ এসেছে। এটা কাজে লাগাতে চেষ্টা কর। শুনে বৈভব বলে ভাল খেলব। মারার বল পেলে নিজেক ধরে না রেখে ওভার বাউন্ডারি মারব।
ওভার বাউন্ডারি মেরেছিলেন বৈভব। সব থেকে বড় কথা আইপিএলে তাঁর অভিষেক ম্যাচের প্রথম বল কভারের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে ফেলেন। তারপর আরও দুটি ওভার বাউন্ডারি মারেন। কিন্তু ব্যাটে ঝড় তোলার পরও ৩৪ রানের বেশি করতে পারেননি। আরসিবির বিরুদ্ধে করেন ১২ বলে ১৬ রান। এর মধ্যে দুটি ওভার বাউন্ডারি। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি থেমে গেলে চলবে কী করে। রাজস্থান অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন চোট সারিয়ে মাঠে নামলে বৈভবকে তো আবার বাইরে বসতে হবে। তখন মেনে নিতে পারবেন তো!
এখানেই শেহবাগ একটা জিনিস মনে করিয়ে দিচ্ছেন মণীষ ও বৈভবকে। বলছেন, মাঠে নামলে একটা বা দুটো ম্যাচে বাচ্চা ছেলে বলে চলে যাবে। কিন্তু তারপর! তখন কেউ মাথায় রাখবে না তোমার বয়স ১৪ নাকি ৪০। আসল কথা হল পারফরম্যান্স। সেটা ঠিকঠাক করতে পারলে সবাই তোমাকে নিয়ে কথা বলবে। এখনও বলছে। বলা শুরু হয়ে গিয়েছে। ইন্টারভিউ নিচ্ছে। তবে এ আর কতদিন। রান না এলে আর এসব হবে না। আমি কতজনকে দেখেছি, শুরুটা দারুন করে হারিয়ে গিয়েছে। তারা মনে করেছে আমি এখন স্টার হয়ে গিয়েছি। কোটি কোটি টাকা পকেটে চলে এসেছে। তারপর সুযোগ না পেলে হতাশা কাজ করবে। এখন কাগজে ছবি বেরোবে। লেখা হবে। স্যোশাল মিডিয়ার ঝড় উঠবে। এসব দেখে মাথা ঘুরে গেলে সব শেষ। তাই আমি বলি, স্যোশাল মিডিয়া থেকে দূরে থাক। তোমার কাজ ক্রিকেট খেলা। সেখানে মন দিতে হবে। মাঠে পড়ে থাকতে হবে। ট্রেনিং করতে হবে। শরীর তৈরি করতে নিয়মিত জিম করতে হবে। অনেকটা সময় এখানেই দিতে হবে। বন্ধু,বান্ধব, সব হবে। কিন্তু তার একটা সময় থাকবে। সেখানে পড়ে থাকলে ক্রিকেট হারিয়ে যাবে। মানসিক শক্তি দরকার। ফোকাস চলে গেলে সব শেষ। নিজেকে সামনে নেওয়া যাওয়া যাবে না।
শেহবাগের দুই ছেলে আর্যবীর ও বেদান্ত। তারাও ক্রিকেট খেলে। ১৭ বছরের আর্যবীর ভালই খেলেন। কোনও ম্যাচে ভাল খেলার পরদিন কাগজ বা স্যোশাল মিডিয়ায় চোখ রাখে। সব কিছু নিমেষে পড়ে ফেলে। আমি বলি, সাফল্য পড়তে ভাল লাগছে। একইভাবে ব্যর্থতা এলে সমালোচনা যখন হবে, তখনও তা পড়তে হবে। সেটা নিতে না পারলে কষ্ট হবে। তাই এসবে চোখ না রেখে আসল কাজে ন দাও। দেখবে তুমি একদিন নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছ।
এসবে কি বাচ্চা ছেলের মন ঘুরে যায়! না, শেহবাগ স্বীকার করে নিচ্ছেন। তাই বলছেন, এখনই ওদের সম্পর্কে ভাল কিছু বলার দরকার নেই। ওকে তৈরি হতে দাও। ও একদিন বুঝবে কীভাবে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। না হলে সব কিছু হারিয়ে যাবে। সব থেকে ভাল কাগজ, স্যোশাল মিডিয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখ। মাঠে বেশি সময় দাও। আগে স্টার হও। তারপর বাকি সব কিছু।