সুদীপ পাকড়াশীঃ
বাঙালি স্ট্রাইকার নিয়ে আলোচনায় এখন হয়ত সাহিল হরিজনের নামটাই প্রথমে আসে। কিন্তু গোকুলে বাড়িছে আরও সম্ভাবনাময় বাঙালি স্ট্রাইকার! তনবীর দে তার নাম। বয়স ১৭। রাজ্য সরকার পরিচালিত বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমির ছাত্র (Bengal Football Academy)।
বাংলার ফুটবল মহলে নামটা অপরিচিত নয়। হওয়ার কথাও নয়। গত ফুটবল মরশুমে, এআইএফএফের (AIFF) অনূর্ধ্ব-১৭ লিগ থেকে শুরু করে রিলায়েন্স স্পোর্টস ফাউন্ডেশন লিগের জোনাল এবং মূল পর্ব, স্কুল ন্যাশনাল, ড্রিম ইলেভেন (Dream Eleven) টুর্নামেন্ট এবং সদ্য শেষ হওয়া প্রথম আইএফএ-র ডিভিশন লিগ-সব মিলিয়ে তনবীরের গোলসংখ্যা ৫৫টি!
প্রথম ডিভিশন লিগে বেঙ্গল ফুটবল আকাডেমির অনূর্ধ্ব-১৭-র দলটি অংশ নেয়। সদ্যসমাপ্ত লিগে ১২ ম্যাচ খেলে তনবীরের গোলসংখ্যা ১২। এক মরশুমে ৫৫ গোল করার আনন্দের চেয়েও প্রথম ডিভিশন লিগে ১২ ম্যাচে ১২ গোল করার আনন্দটা তনবীরের কথায় মনে হল একটু বেশি। কারণ আছে। প্রথম ডিভিশন লিগে দাদাদের বিরুদ্ধে খেলে গোল করার আনন্দ স্বাভাবিকভাবে বেশি হবে।

ফোনে কথা বলার সময় তার ব্যখ্যাও দিল দত্তফুলিয়া ইউনিয়ন অ্যাকাডেমি থেকে মাধ্যমিক পাস করা স্ট্রাইকার। “বয়সে ছোট বলে ম্যাচের সময় দাদারা ছাড়ে না। কড়া ট্যাকল করে। এমনকী, খেলা চলাকালীন বড় ট্যাকলে মাঠ থেকে বার করে দেওয়ার হুমকিও দেয়। প্রথমে ভয় করত। একটু সিঁটকে থাকতাম। পরবর্তীকালে ওই কড়া ট্যাকল, হুমকিগুলোই আমার কাছে মোটিভেশন হয়ে দাঁড়াল। আমি ওদের টপকাতে পারছি বলেই না ওরা আমাকে মারার হুমকি দিচ্ছে! খেলাটা তাতে আরও ভাল হয়,” তনবীর বলল।
রানাঘাটের দত্তফুলিয়া গ্রামে বাড়ি। বাবা তাপস দে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। পরিবারে ফুটবল কেউ খেলেননি। তার জন্য তনবীরকে উৎসাহ দেওয়ায় কোনওদিন ভাটা পড়েনি। “ছুটিতে বাড়ি ফিরলেই বাবা-মা আমাকে প্রায় রোজ পাড়ার মাঠে প্র্যাক্টিসে পাঠাবে। এতটাই ওদের উৎসাহ,” তনবীর বলছে।
গত মরশুম থেকেই তনবীরের ওপর ফুটবল মহলের নজর। কলকাতা এবং বাইরের দু’একটি ক্লাব, তার সঙ্গে কলকাতার বাইরের দু’একটি প্রতিষ্ঠিত অ্যাকাডেমিও তনবীরকে নেওয়ার জন্য আগ্রহী।

বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমিতে ছিলেন সম্প্রতি প্রয়াত কোচ পার্থ সেন। যার কোচিংয়ে এই মরশুমেই কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গলকে হারতে হয়েছিল। তনবীর সম্পর্কে পার্থ সেন বলেছিলেন, “চোরা এবং দ্রুত গতি, বক্সের মধ্যে ক্ষিপ্রতাই ওর সম্পদ। ওর উচিত একটু উন্নত, টেকনিক্যালি দক্ষ ডিফেন্ডারদের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলা।”
এই মরশুমে তনবীরকে হয়ত বিএফএ ছাড়বে না। যদিও তনবীর স্বপ্ন দেখছে কবে একটা আই লিগ দল, তারপর কবে একটা আইএসএল দল ওকে সই করাবে। আর হ্যাঁ, সাহিল দাদাকে দেখে স্বপ্নে যোগ হয়েছে ভারতীয় দলে ডাক পাওয়া!







