জিৎ কর্মকার এবং সায়ক ঘোষ। দুর্গাপুর এনআইটি থেকে বি-টেক ডিগ্রিধারী দুই তরুণ তুর্কী। প্রযুক্তি নিয়ে ডিগ্রি অর্জন তারা আরও বাড়াতে পারতেন। বিদেশে গিয়ে নিজেদের আর্থিক স্বাছন্দ্য, লাইফস্টাইলকে আরও উন্নত করার চেষ্টা তাদের কাছে অস্বাভাবিক হত না।
কিন্তু তাহলে হয়ত স্টেপ আউট করা হত না! সৃষ্টি হত না বিশ্বজুড়ে ফুটবল কোচিংয়ে এক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি হওয়া যে প্রযুক্তি ফুটবলবিশ্বে কোচেদের উত্তেজিত করে তুলেছে। দীর্ঘ অধ্যবসায় এবং পরিশ্রমের বিনিময়ে করা একটি রিসার্চ অনেকটাই সহজে করে দিচ্ছে এই প্রযুক্তি। একটি পোর্টাল যার নাম স্টেপ আউট।
না হলে নেদারল্যান্ডস এবং ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি ডিফেন্ডার জাপ স্ট্যাম, বর্তমানে একজন কোচ বা পর্তুগালের আর এক কিংবদন্তি পাওলো ফুতরে কেন উত্তেজিত হয়ে পড়বেন স্টেপ আউটের আবিষ্কারে? কেন তারা দুই বাঙালি তরুণ তুর্কীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দেবেন? কেনই বা চেলসির মত পৃথিবী বিখ্যাত ক্লাব আগ্রহী হয়ে পড়বে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য? কেনই বা জিরোধার মত নামী কোম্পানির ডিরেক্টর নীতিন কামাথ আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসবেন? কেনই বা মেজর লিগ সকারের প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্ট যুক্ত হবেন স্টেপ আউটের সঙ্গে!
কি করে স্টেপ আউট? এই পোর্টালে আপনার দলের একটি ম্যাচ বা ট্রেনিং সেশনের ভিডিওটি আপলোদ করে দিন। আপনার প্রত্যেকটি ফুটবলারের, যারা মাঠে নামল, তাদের বেসিক স্কিল কোন পর্যায়ে আছে, অ্যাকিউরেসি-লেভেল, ফিটনেস সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানিয়ে দেবে স্টেপ আউট!
জিৎ জানালেন, স্টেপ আউটের কাজ শুধু ইউথ ডেভেলপমেন্টে। স্টেপ আউটের ভিশন, আজকের প্রডিজিকে কালকের তারকা তৈরি করা! “একটা ৮ বা ১০ বা ১৪ বছরের ছেলে ফুটবলার হিসেবে ভবিষ্যতে কতটা দক্ষ, কতটা প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে তার বিশ্লেষণ একজন কোচ স্টেপ আউট থেকেই পেয়ে যাচ্ছেন। এই কাজটা সেই কোচকে দীর্ঘদিন ধরে অধ্যবসায়, ধৈর্য্য ধরে হাতে-কলমে করতে হত। তাতে হয়ত তার এক সপ্তাহ বা ১০ দিন লাগত। আমাদের এই প্রযুক্তি সেই কোচকে কাজটা কয়েক ঘন্টায় করে দিচ্ছে,” জিতের বিশ্লেষণ।
২০২৩-এ সরকারিভাবে চালু করলেও স্টেপ আউটের প্রয়োগ কিন্তু শুরু হয় ২০২০-২১ মরশুমে, মহামেডান স্পোর্টিংয়ের বড়দের ওপর। তখন কোচ ছিলেন ইয়ান ল। জিৎ বলছেন, “২০২০-২১-এর দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগ জিতে পরের বছর মহামেডান স্পোর্টিং-এর এলিট আই লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জনের পেছনে আমাদেরও কিন্তু ভূমিকা ছিল।”
কেউ মনে রাখেনি! বরং সীমানা ছাড়িয়ে স্টেপ আউট দেশের বাইরে পা রাখার পর ফুটবলের আর্ন্তজাতিক মঞ্চ তাদের স্বীকৃতি দিল। মাত্র চার বছরের মধ্যে পৃথিবীর ১৯টা দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছে স্টেপ আউট। যাদের মধ্যে লা লিগার ক্লাব রায়ো ভ্যালেকানো উল্লেখযোগ্য। ভীষণভাবে উল্লেখযোগ্য ইউরোপীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা অ্যাকাডেমি এএফসি অ্যাজাক্স। ভারতে বেঙ্গালুরু এফসি-র সঙ্গেও গত দেড় বছর ধরে যুক্ত স্টেপ আউট।
আগামি মাসে সায়ক আর জিতের ঝুলিতে আসছে আরও এক বড় স্বীকৃতি। পর্তুগালের লিসবনে আগামি মাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কেপিএমজি পরিচালিত গ্লোবাল টেক ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্ট। সেখানে ২৫টি দেশ থেকে একটি করে কোম্পানি এই সামিটে অংশ নেবে। ভারত থেকে নির্বাচিত হয়েছে স্টেপ আউট।