সোজাসুজি কথাটি বলা যাবে না। বললে ভুল হবে । তবু মঙ্গলবার রাতে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিতে পারেন পাঞ্জাব কিংসের অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। তবে মুম্বইকে হারিয়ে ফাইনালের
টিকিট হাতে পাওয়ার পর এক অনন্য নজির গড়ে ফেলেছেন শ্রেয়স। তিনিই একমাত্র অধিনায়ক, যিনি তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালে তুলেছেন। ২০২০ দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। দিল্লি ফাইনাল খেলেছিল। গতবছর কেকেআরকে নেতৃত্ব দিয়ে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। আর এবার পাঞ্জাবকে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালে তুললেন। এখনও পর্যন্ত আইপিএলে কোনও অধিনায়কের এমন রেকর্ড নেই। আর পাঞ্জাবকে ট্রফি দিতে পারলে ধোনির পাশে নাম লিখিয়ে তিনি আরও একটা রেকর্ড গড়বেন।
এখনও পর্যন্ত আইপিএল জেতেনি পাঞ্জাব। ২০১৪ সালে শেষবার ফাইনালে উঠেছিল। তারপর ১১ বছর পার। আবার ফাইনালে পাঞ্জাব। এবং সেটা সম্ভব হয়েছে শ্রেয়স আইয়ারের হাত ধরে। কদিন আগে প্লে অফে বিশ্রিভাবে তারা হেরেছে আরসিবির কাছে। ট্রফি জিততে হলে সেই বিরাটদের হারাতে হবে। পারবেন শ্রেয়সরা!
শুরুতে বলেছি, ফাইনাল জিতলে ধোনিকে ছুঁতে পারবেন শ্রেয়স। কীভাবে! সেটা বরং একবার দেখে নেওয়া যেতে পারে। ২০১০ ও ২০১১ আইপিএল জিতেছিল চেন্নাই সুপার কিংস। অধিনায়ক ধোনির হাতে ট্রফি দেখা গিয়েছিল। তারপর কোনও অধিনায়ক টানা দুবার ট্রফি জিততে পারেননি। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সিএসকেও তাই। কিন্তু কোনও অধিনায়ক ধোনির মতো নয়। এবার জিতলে শ্রেয়স জায়গ পাবেন ধোনির পাশে বসার। তবে এখানে একটু গরমিল আাছে। ২০২৪ আইপিএলে কেকেআরকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন শ্রেয়স। এবার তিনি পাঞ্জাবের অধিনায়ক। দল বদলেছে। কিন্তু নেতা একজনই। এই জায়গায় ধোনিকে ছুঁতে পারবেন শ্রেয়স!
মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ জিতে সেরার পুরস্কার হতে নিয়ে পাঞ্জাব অধিনায়ক বলছিলেন, ফাইনাল নিয়ে এখনই ভাবছি না। ফাইনাল নিয়ে ভাবার সময় আছে। সোমবার পুরোটা আমরা হাতে পাব। তারপর মঙ্গলবার প্রায় পুরো দিন। তাই ফাইনল নিয়ে ভাবনার সময় আছে। আগে এই জয় দলের সতীর্থরা আনন্দ করে কাটাক। রাতটা এভাবে কাটার পর সবাইকে নিয়ে আমরা আলোচনায় বসব।
ব্যস এটুকু। আর বেশি কথা বললেন না শ্রেয়স। মাঝরাতে কথা বলার অবস্থায় তিনি ছিলেন না। তখন ঘড়ির কাঁটা রাত দুটোর ঘর পার করে গিয়েছে। রাতটা ভাল করে ঘুমিয়ে ফাইনাল নিয়ে ভাবার সময় তিনি পাবেন। তাঁর ৪১ বলে অপরাজিত ৮৭ রানের ইনিংস (৫টি বাউন্ডারি ও ৮টি ওভার বাউন্ডারি) দলের হাতে ফাইনালের টিকিট তুলে দেওয়ার পর ডাগ আউটে উল্লাসের ছবি কি তিনি হারিয়ে ফেলতে পেরেছিলেন। দলকে জিতিয়ে মাঠের বাইরে আসতে না আসতেই কোচ রিকি পন্টিং জড়িয়ে ধরলেন। ততক্ষণে গ্যালারি থেকে মাঠে নেমে এসেছেন মালকিন প্রীতি জিন্টা। তিনিও জড়িয়ে ধরলেন শ্রেয়সকে। এমন ছবিই স্বাভাবিক। কারন ১১ বছর পর পাঞ্জাব যে আইপিএল ফাইনালে। এমনই তো হওয়ার কথা।
মু্ম্বইয়ের বিরুদ্ধে ফাইনল জেতার মন্ত্র কি! নানা জনে নানা কথা বলছেন। প্রাক্তন ক্রিকেটার বীরেন্দ্র শেহবাগ বলছিলেন, ১১ থেকে ১৫ ওভার, এই পাঁচ ওভারে ম্যাচ ঘুরিয়েছে পাঞ্জাব। শ্রেয়স ও নেহাল জুটি ৪৯ রান যোগ করে। ১০ ওভারে পাঞ্জাবের রান ছিল ৩ উইকেটে ৯৮। ১৫ ওভারে গিয়ে দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ১৪৭। তখন জেতার জন্য দরকার পাঁচ ওভারে ৫৭ রান। ফর্মে থাকা শ্রেয়স ও নেহাল উইকেটে। এই জায়গা থেকে ম্যাচ বের করা কঠিন নয়। মুম্বই ১১ থেকে ১৫ ওভারে করেছিল ৪৪ রান। কিন্তু তাদের দুটি উইকেট পড়ে গিয়েছিল। ফারাক এখানেই। জয়ের মন্ত্র এই জায়গা থেকে পেয়ে গিয়েছে পাঞ্জাব।
অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার টম মুডি ব্যপারটা মেনে নিলেও তিনি বলেন ১৩ রানের মাথায় নেহালের সহজ ক্যাচ ফাইনলেগে ফেলে দেয় বোল্ট। এমন ক্যাচ ১০০ বারের মধ্যে ৯৯ বার ক্রিকেটার ধরবে। জীবন পেয়ে নেহাল তারপর ৩৫ ( ম্যাচে করে ৪৮ রান) রান করে। এখানেই ম্যাচ ঘুরে যায়। আমি বলছি না, নেহাল আউট হলেও পাঞ্জাব ম্যাচ বের করতে পারত না। হয়তো পারত। কিন্তু সেটা সহজ হত না। একজন নতুন ব্যাটসম্যান এসে কঠিন সময়ে ম্যাচকে টেনে নিয়ে যেতে পারত না।
এমন সব ঘটনা ম্যাচে হয়েই থাকে। ইনিংসের শেষ পাঁচ ওভারে ৫৭ রান মানে ওভার প্রতি প্রায় ১২ রান। সেটাও সহজ নয়। বোলাররা লাইন ধরতে পারলে কাজটা কঠিন ছিল। শেষ দুওভারে দকার ছিল ২৩ রান। অশ্বিনী এসে সব শেষ করে দিলেন। তাঁর ওভারে শ্রেয়স নিলেন ২৬ রান। এর মধ্যে চারটি ওভার বাউন্ডারি। আর কি! মুম্বই সাবরমতীর জলে ভেসে গেল। এবং সব থেকে অদ্ভুত ব্যাপার এটাই যে মুম্বই হারল একজন মুম্বইকরের কাছে। মালকিন নীতা আম্বানি কি আফসোস করছিলেন। ইস, অকশন থেকে শ্রেয়সকে তুলে নিতে পারলে এমন দিন দেখতে হত না।