রাজ্য ব্যাডমিন্টনে েজায়ার আসতে চলেছে। তেমনই দাবি জানালেন রাজ্য সংস্থার সচিব শেখর বিশ্বাস। সিনিয়র নয়, জুনিয়র স্তরে বাংলার জয় জয়কার হওয়ার মূলে একজনই, তিনি হলেন পুল্লেলা গোপীচঁাদ। প্রায় প্রতিমাসে তিনি কলকাতায় আসেন। িতনি না এলেও তিনি হায়দরাবাদ থেকে পাঠিয়ে দেন কোনও কোচকে। মূূলত গোপীচঁাদের তত্ত্বাবধানেই বাংলার ব্যাডমিন্টনে জোয়ারের ছাপ।
সায়নদু্যতি ঘোষ, আর্যমা চক্রবর্তী, প্রতিষ্ঠা পাল-রা হলেন বাংলার মুখ। সামনে আসছে এশিয়া ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে বাংলার দুই শাটলারকে দেখার প্রত্যাশায় দিন গুনছেন বাংলার কর্তারা। এমন কী কনিষ্কা বিজয়িনী সারা ভারতের ক্রমতালিকায় আটের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন। আবার রায়ন ভট্টাচার্য অনূর্ধ্ব-১৫ বিভাগে ভারতের ক্রমতালিকায় ভাল জায়গায় চলে এসেছেন। “আমরা জুনিয়র স্তরে বেশ কিছু ভাল ছেলে-মেয়েকে পেয়ে গিয়েছি। এটুকু বলতে পারি, আগামী দিনে এরাই শুধু বাংলার মুখ রক্ষা করবে তাই নয়, ভারতের ব্যাডমিন্টনে বিশাল প্রভাব ফেলতে বাধ্য। মানছি, সকলে সিনিয়রদের খেঁাজ রাখেন। হয়তো বলবেন, সিনিয়র স্তরে বাংলার সাফল্য কোথায়। কিন্তু সিনিয়র স্তরে সাফল্য পাওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকে। যেমন বিদেশি কোচের ছড়াছড়ি রয়েছে। তার উপর রয়েছেন গোপীচঁাদ, প্রকাশ পাড়ুকোনের মতো ব্যক্তিত্বরা। ফলে সিনিয়র স্তরে ভাল করার জন্য এঁদের নজর সবসময় শাটলারদের উপর থাকে। আমরা সেই জায়গায় একটু পিছিয়ে আছি ঠিকই। কিন্তু সার্বিক চিন্তাৃভাবনা করলে মানতে হবে, বাংলার অগ্রগতিতে একটা ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে। বিশেষ করে সারা ভারতের যখন জুনিয়র স্তরে প্রতিযোগিতা হয়, সেখানে।” একটানা কথাগুলো বলে গেলেন শেখর বিশ্বাস।
অনূর্ধ্ব-১৯ বাংলা দল সম্প্রতি আন্তঃ অঞ্চলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তারপর অল ইন্ডিয়া জোনাল চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পায় বাংলা। এই সাফল্যের মূলে গোপীচঁাদের অবদানকে স্মরণ করলেও বাংলা জুড়ে এখন প্রচুর ব্যাডমিন্টন কোর্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে। কথায় বলে সংখ্যাধিক্য বরাবর গুণগত মানকে বাড়াতে সাহায্য করে। বাংলার ক্ষেত্রে ঠিক তাই ঘটছে। রাজ্য সংস্থার সচিব জানিয়ে দিলেন, “আগে আমরা ওয়াইএমসিএ-র কোর্টে খেলব বলে বিকেল তিনটের সময় গিয়ে রাত ৯টায় খেলার সুযোগ পেতাম। এখন তো সারা বাংলা জুড়ে প্রায় ২০০-২৫০ কোর্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেখানে ছেলেরা গিয়ে খেলার সুযোগ পায়। আমার কথা হল, বাংলার যে যেখানে পারুক খেলাটা খেলুক। তারপর ভাল খেলতে পারলে আমরা নিয়ে এসে রেখে দেব একটা ছাতার তলায়।” বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ শুধু নয়, অসমেও হয়েছে সেন্টার অব এক্সেলেন্সের সেন্টার। এইসব জায়গায় কোনও শাটলার ঢুকে পড়লে কোচ, শাটল কক, জিম, থাকার জায়গা, পুষ্টিবিদ, ফিজিও, জোগা থেকে শুরু করে সবকিছু নিখরচায় পেয়ে যায়। ঠিক সেইরকম হরিণাভির স্টার ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমিতে শাটলারদের সবকিছু জোগান দেওয়া হয়ে থাকে। ২০২২ সালে জুলাই মাসে তৈরি হওয়া এই অ্যাকাডেমি এখন বাংলার পথ দেখানো শুরু করেছে। ৩০-টা করে ছেলে-মেয়েকে এক ছাতার তলায় রেখে সামনের পথ দেখানো শুরু করেছেন শেখর বিশ্বাস। “আমি কোনওদিন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কাজ করিনা। সেই কাজে আমি বিশ্বাসীও নই। নিজের গ্যাঁটের পয়সা খরচ করে এই অ্যাকাডেমি গড়েছি। এখানে ৬টা কোর্ট আছে। সবকিছু আধুনিক মানের ব্যবস্থাপনা রয়েছে। ফলে বাংলার ছেলে-মেয়েরা আর বাইরে যেতে চাইছে না। বরং উল্টোটা হচ্ছে। যারা বাইরে ছিল তারা ফিরে আসছে বাংলায়।” দৃপ্তকন্ঠে জানিয়ে দিলেন শেখর। এখন রাজ্য মিট সব স্টার অ্যাকাডেমিতে হয়। এই অ্যাকাডেমি এখন কেন্দ্রীয় সরকারের খেলো ইন্ডিয়ার অধীনে চলে এসেছে।
সদ্য সমাপ্ত রাজ্য জুনিয়র ব্যাডমিন্টনে সফল হওয়া দুই শাটলার। সঙ্গে রয়েছেন সংস্থার রাজ্য সচিব শেখর বিশ্বাস -সহ আরও অনেকে।
তাছাড়া বাংলার ব্যাডমিন্টের উন্নতির পেছনে রয়েছে প্রচুর প্রতিযোগিতা। সারা বছর ধরে প্রতিটি জেলায় ক্রমতালিকার প্রতিযোগিতাগুলি হয়। সেখানেও থাকে বড়সড় প্রাইজমানি। ফলে শাটলাররা চাইলে সারা বছর প্রতিযোগিতার মধ্যে কাটিয়ে দিতে পারেন। সঙ্গে থাকছে উপার্জনের রাস্তা। “ সম্প্রতি রাজ্য জুনিয়র মিট যে হল সেখানে আমাদের প্রাইজমানি ছিল ১লাখ ৪০ হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, চ্যাম্পিয়ন, রানার্সরা পেয়েছে তিন বাক্স করে ইয়োনেক্স শাটল। যার এক একটা বাক্সের দাম প্রায় আড়াই হাজার টাকার কাছাকাছি। সিনিয়র স্তরে থাকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অনূর্ধ্ব-১৭-১৯ রাজ্য মিটে দেওয়া হবে এক লাখ ৭০ হাজার টাকার পুরস্কার মূল্য।” বলছিলেন শেখর। আগস্ট মাসে সারা ভারত অনূর্ধ্ব-১৩ ক্রমতালিকার প্রতিযোগিতা বাংলায় হবে। ৩৩টা রাজ্যের খুদেরা আসবে কলকাতায় খেলতে। গত তিন বছর ধরে এই ধরনের প্রতিযোগিতা বাংলায় হওয়ায় স্থানীয় ছেলে-মেয়েরা প্রতিযোগিতার মানকে চাক্ষুষ করতে পারে। মনে মনে বুঝে যায়, ঠিক কোথায় তারা দঁাড়িয়ে। ফলে বাংলার ব্যাডমিন্টন এগিয়ে যাওয়ার মূলে এইসব কারণ-ই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই আগামী দিনে বাংলার শাটলারদের নিয়ে স্বপ্ন দেখা যেতেই পারে।