স্বমহিমায় প্রত্যাবর্তন ব্রাজিলের। দল জিতল। মাঠে হলুদ ঝড় উঠলো। ছন্দ ফিরলো খেলায়। সব মিলিয়ে ব্রাজিল ফিরলো ব্রাজিলেই। শুধু তাই নয়, প্যারাগুয়েকে ১-০ গোলে হারিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার গ্রুপ থেকে বিশ্বকাপ খেলার ছাড়পত্র জোগাড় করে ফেলেছে। ৪৪ মিনিটে একমাত্র গোলটি করেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র।
ম্যাচের ২৪ ঘন্টা আগে ৬৬তম জন্মদিন ছিল কার্লো আনচেলেত্তির। জন্মদিন উপলক্ষ্যে ফুটবলারদের কাছে উপহার হিসেবে প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট চেয়েছিলেন ইতালিয়ান কোচ। সেই চাওয়া তঁার যেমন পূর্ণ করেছেন শিষ্যরা। অন্যদিকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পেরেছেন আনচেলেত্তি। প্রশ্ন উঠতেই পারে, ব্রাজিল যদি এতো ভাল খেললো তাহলে গোলের ব্যবধান সেই ১-০ থেকে গেল কেন? কারণ একটাই, প্রচুর সুযোগ নষ্ট। বল দখলে ছিল ৭৩ শতাংশ। ১১টা শট প্রতিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে নিয়েছিল ব্রাজিল। তারমধ্যে লক্ষ্য ছিল চারটে। শেষমেশ সেই গোলের সংখ্যা আটকে যায় ১-০-তে। আসলে ইকুয়েডরের বিপক্ষে দলের খেলা দেখে ব্রাজিলিয়ানরা খুব হতাশ হয়েছিলেন। ব্রাজিল বিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে শট নিয়েছিলেন মাত্র দুটো। না ছিল খেলায় গতি, না ছিল কোনও বৈচিত্র্য। তাই ব্রাজিলকে নিয়ে হতাশ হওয়া ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু আনচেলেত্তি ঠিক করে ফেলেছিলেন, এবার তঁার করণীয় কী। আসলে পোড় খাওয়া কোচ জানেন, কীভাবে এগোলে প্রতিপক্ষদের ধরাশায়ী করে দেওয়া যায়। কিংবা ব্রাজিলিয়ানদের মন জয় করতে হলে তঁাকে ঠিক কী করতে হবে।
ম্যাচের ২৪ ঘন্টা আগে তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন প্রথম একাদশ থেকে তিনটে পরিবর্তন করবেন। রাফিনিয়ার নাম তিনি ম্যাচের আগেই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। সুতরাং রাফিনিয়ার খেলা নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। কিন্তু বাকি দুজনের নাম ব্রাজিল মিডিয়া তুলে ধরলেও আনচেলেত্তি ছিলেন নিশ্চুপ। দেখা গেল মিডিয়ার কথা মতো তিনি প্রথম একাদশে গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি, মাতেউস কুনিয়ার সঙ্গে নিয়ে এসেছেন রাফিনিয়াকে। তঁার এই ছোট্ট পরিবর্তনে দলের খেলা পুরোটাই ঘুরে গেল। বুধবারের ম্যাচে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিতে থাকে ব্রাজিল। বলের দখলে রাখার পাশাপাশি আক্রমণে পুরো দল ঝঁাপিয়ে পড়ে। তবে বাহবা দিতে হবে প্যারাগুয়ের রক্ষণভাগকে। ক্রমাগত ব্রাজিলের আক্রমণে কোনও সময়ের জন্য রক্ষণের প্রাচীর ভেঙে পড়েনি। অবশেষে ৪৪ মিনিটে জয়সূচক গোলটি করে বসেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। গোলের পেছনে অবদান থাকবে রাফিনিয়া, কুনিয়াদের। আক্রমণ থেকে রাফিনিয়ার বাড়ানো বল কুনিয়া ধরে বক্সের ভিতরে থাকা ভিনিসিয়াসকে দেন। এবার আর গোল করতে ভুল করেননি রিয়াল মাদ্রিদের সুপারস্টার।
নিজস্ব ভঙ্গিতে জয়োত্্সব পালন করলেন কার্লো আনচেলেত্তি।
আশা করা গিয়েছিল বিরতির পর ব্রাজিলের সামনে মাথা নোয়াতে বাধ্য হবে প্যারাগুয়ে। কিন্তু ঘটনার পরম্পরা একইরকম চলতে থাকে। ব্রাজিলের আক্রমণ প্রতিরোধ করে যেতে থাকে প্যারাগুয়ে। তবে শেষার্ধে মাঝে মাঝে হুল ফোটানোর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে তারা। প্রতি-আক্রমণ থেকে গোল করে যাওয়া লক্ষ্য ছিল। কিন্তু প্যারাগুয়ে সুবিধে করতে পারেনি। খেলা শেষ হয় সেই ১-০ গোলে। এখন ব্রাজিলের পয়েন্ট গিয়ে দঁাড়াল ১৬ ম্যাচে ২৫। লিগ টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে চলে এলো। আর্জেন্টিনা সেখানে সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে।
তবে চিলিকে এবার বিশ্বকাপের মূলপর্বে সম্ভবত দেখা যাবে না। বলিভিয়ার কাছে ২-০ গোলে হেরে একপ্রকার বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছে। ১৬ ম্যাচে মাত্র ১০ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ লিগ টেবিলের সবচেয়ে নিচে রয়েছে তারা। তবে খেলার শেষে জয়সূচক গোলদাতা ভিনিসিয়াস নিজস্ব উচ্ছ্বাসকে ঢাকা দিতে পারেননি। বরং বোঝাতে পেরেছেন, তঁাদের কাছে এই ম্যাচের গুরুত্ব কতটা ছিল। এমন কী বিশ্বকাপে ছাড়পত্র পেয়ে যাওয়ায় তঁাকে আরও বেশি খুশি করেছে। “ফলাফলে আমরা সকলে খুশি। সমর্থকদের জন্য নিজেদের মাঠে এই জয়টা খুব প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে যেখানে জিতলে বিশ্বকাপের ছাড়পত্র পেয়ে যাব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা খেলতে নেমেছিলাম। তাতে আমরা পুরোপুরি সফল।” পরমুহূর্তে কোচ আনচেলেত্তির ক্রিয়াকান্ড নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জুনিয়র বলেন, “দলের পারফরম্যান্সে উন্নতি ঘটানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় পেয়ে গেলেন আনচেলেত্তি। এটুকু বলতে পারি, আমরা আরও ভাল খেলার ক্ষমতা রাখি। সেই সূত্রে বলছি, এই ম্যাচ আমাদের সেরা নয়। আবার এও ঠিক, বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জনের জন্য আমাদের এই জয়টা খুব প্রয়োজন ছিল। এবার আমরা বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য এগোতে পারি।”