অবিশ্বাস্য হার! চাহালের ঘুর্ণিতে কাঁপতে কাঁপতে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল কেকেআর

অবিশ্বাস্য! অকল্পনীয়! কেকেআর দেখালো এভাবেও ম্যাচ হারা যায়। এমনিতেই কেকেআরের ইতিহাসের সঙ্গে একটা ব্যাপার লেগে আছে, বেশ কিছু ম্যাচে দেখা গিয়েছে যে ম্যাচ জেতার কথা নয়, সেই ম্যাচ তারা জিতে গিয়েছে আবার যে ম্যাচ হারার কথা নয়, তেমন ম্যাচ অবিশ্বাস্যভাবে হেরে গিয়েছে। মঙ্গলবার আরও একটি তেমন ম্যাচ। আরও একটি তেমনই হার।নিজেদের বোলারদের ফর্ম নিয়ে চিন্তা ছিল বলেই টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন শ্রেয়স আইয়ার। কিন্তু ২০ ওভারও ব্যাট করতে পারল না পঞ্জাব কিংস। ১৫.৩ ওভারে ১১১ রানেই অল আউট। পান চিবোতে চিবোতে যেখানে জিতে যাওয়ার কথা, সেখানে কিনা ১৫.১ ওভারে মাত্র ৯৫ রানেই ভেঙে পড়ল নাইট বাহিনী। খাদের কিনারা থেকে ফিরে এসে ১৬ রানে ম্যাচ জিতে আইপিএলের ইতিহাসে রেকর্ড করে ফেলল প্রীতি জিন্টার দল। সবচেয়ে কম রান ডিফেন্ড করে ম্যাচ জেতার রেকর্ড। ভেঙে দিল ধোনির সিএসকের গড়া নজির। ২০০৯ সালে এই পঞ্জাবের বিরুদ্ধেই ১১৬ রান ডিফেন্ড করে ম্যাচ জিতেছিল সিএসকে। এতদিন এটাই ছিল রেকর্ড। মঙ্গলবার সেই রেকর্ডকে চুরমার করে নতুন চণ্ডীগড়ে নতুন নজির গড়লেন শ্রেয়সরা। ব্যাপারটা এমন ছিল, আলোচনা চলছে পঞ্জাবের দেওয়া ১১২ রানের টার্গেট কত ওভারে তুলে ফেলতে পারবে কেকেআর? জোর গবেষণা, ১৫ ওভারের মাঝামাঝি যদি তুলে ফেলতে পারে তাহলে লিগ টেবিলের শীর্ষে চলে যাবেন রাহানেরা। একদিকে যখন এই গবেষণা, অন্যদিকে তখন পটাপট উইকেট হারিয়ে চাপ বাড়িয়ে তুলছে নাইটরা। অবস্থা এমন দাঁড়ালো, শেষ ৫ ওবারে মাত্র ১৭ রান করতে হবে, কিন্তু হাতে যে আর উইকেট নেই! শেষ উইকেটের জুটিতে রাসেলের সঙ্গে ব্যাট করছেন আনরিখ নকিয়া। তখন ভরসা ওই রাসেল। কিন্তু রাসেল যে আর দ্রে রাস নেই! পারলেন না। হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে লজ্জার হার। কারও ব্যক্তিগত রানের কথা বলার কিছু নেই। কথা শুধু ওই একজনকে নিয়েই। যজুবেন্দ্র চাহাল। চার ওভার হাত ঘুরিয়ে ২৮ রান খরচ করে তুলে নিলেন চারটি উইকেট। রক্তের স্বাদ পাওয়া সিংহের মত ক্রমশ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলেন চাহাল। রিস্ট স্পিনারের ঘুর্ণিতে হামাগুড়ি দিতে দিতে তলিয়ে গেল কেকেআর। এমনকী তখন ম্যাক্সওেয়লকেও মনে হচ্ছে আনপ্লেয়েবল স্পিনার। ২ ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে একটি উইকেট তুলে নিলেন। মার্কো জনসেনের ঝুলিতে ১৭ রানে ৩ উইকেট। অথচ তার আগে হর্ষিত রানা, বরুণ চক্রবর্তী, সুনীল নারিনরা দুর্ধর্ষ বোলিংয়ে ম্যাচ প্রায় কলকাতায় নিয়ে চলে এসেছিলেন।রানার তিন, বরুণ, নারিনের দুটি করে উইকেট। কিন্তু অবিশ্বাস্য হারাকিরিতে সেই ম্যাচ শ্রেয়সের হাতে তুলে দিয়ে এল নাইটরা। না, রান পাননি শ্রেয়স। দুটি বল খেলে শূন্য রানে ফেরেন। কিন্তু নেতৃত্বে বোঝালেন তাঁর সঙ্গে ঠিক কাজ করেনি কেকেআর ম্যানেজমেন্ট। কম রানে অল আউট হওয়ার পর আক্রমণাত্মক স্ট্র্যাটেজি, বোলিং পরিবর্তন, বিশেষ করে নিখুঁত ফিল্ড প্লেসিংয়ে যেন বারবার মনে করাচ্ছিলেন অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরকে। বেচারা রাহানে! কী আর করেন! একে তো অনভিজ্ঞ পার্টনার অঙ্গরীশ রঘুবংশীর ভুল পরামর্শে তাঁর এলবিডব্লুর ডিআরএস নিলেন না। নিলে বেঁচে যেতেন। হয়ত বেঁচে যেত কেকেআরও। কারণ ইমপ্যাক্ট আউট সাইড দ্য লাইন ছিল। তারপর দেখলেন তাঁর ব্যাটসম্যানদের আয়ারাম-গয়ারাম মিছিল। হতাশ, অসহায় রাহানে ম্যাচের শেষে ব্যাটিং ইউনিটকে দোষারোপ করেও জানালেন, ক্যাপ্টেন হিসাবে সব দায় তাঁর। ধাক্কাটা বেশ বড়সড়ই লাগল। ঘুরে দাঁড়াতে ব্র্যাভোকে যে এবার গম্ভীর হতে হবে!
ম্যাচ সেরার ঘোষনায় অবাক হন ধোনি, ভেবেছিলেন নুরকে বেছে নেওয়া হবে

ম্যান অব দ্য ম্যাচ বা ম্যাচের সেরা হতে গেলে কি করতে হয়। সোজা বাংলায় বলতে হয়, ম্যাচে এমন কিছু পারফরমযান্স করতে হয় যা সবইকে চমকে দেবে। তা হলে সোমবার লখনউয়ের একানা স্টেডিয়ামে ধোনিকে সেরা বাছতে গিয়ে অসুবিধা কোথায়! যাঁদের উপর দায়িত্ব ছিল, তাঁরা তো ঠিক কাজই করেছেন। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে অন্যম্যাচের মতো নিজের সেরাটা দিয়েছেন। আবার চাপের মুখে ব্যাট করতে নেমে ১১ বল খেলে ২৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। এমন পারফরম্যান্সের পর তাঁকে তো সেরা বেছে নেওয়া অন্যায় নয়। কিন্তু যাঁকে সেরা বাছা হল, তিনি পুরস্কার হাতে আবার সবাইকে চমকে দিলেন। ধোনি বললেন, এই ঘোষনা আমাকে অবাক করেছে। ভেবেছিলাম নুর আমেদকে সেরা হিসেবে বেছে নেওয়া হবে। কিন্তু আমার নাম ঘোষনা হতে সত্যি অবাক হয়েছি। কেন ধোনির মনে হল নুর আমেদকে সেরার পুরস্কার দেওয়া উচিত ছিল। নুর ম্যাচে কোনও উইকেট পাননি। এটা ঘটনা যে কৃপন বোলিংয়ের দৃষ্টান্ত তিনি একানা স্টেডিয়ামে রেখেছেন। ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৩ রান। উইকেট না পেলেও তাঁর কাছে আটকে গিয়েছিল লখনউ। তাঁরা অন্য স্পিনারদের সামনে আক্রমনাত্মক হতে পারলেও আটকে যান নুরের কাছে। একবার হরভজন সিং বলেছিলেন, ওয়ান ডে ম্যাচে ১০ ওভারে ৩০ রান দিয়ে উইকেট না পেলেও চলবে। কিন্তু রান কিছুটা বেশি দিয়ে ফেললে তোমাকে কমপক্ষে তিনটি উইকেট নিতে হবে। তবেই তোমাকে নিয়ে আলোচনা হবে। নুর তো তেমনই করে দেখালেন। টি ২০ ফরম্যাটে এর থেকে ভাল উদাহরন আর কি হতে পারে। তাই ধোনির কথাকে গুরুত্ব দিতে হবে। নুরকে সেরা হিসেবে বেছে নিলে কেউ সমালোচনা করতেন না। আফগান ক্রিকেটার নুর আমেদকে সাড়ে দশ কোটি টাকায় এবার দলে নিয়েছে চেন্নাই। সাত ম্যাচের মধ্যে টাকা যে উশুল হয়ে গিয়েছে তা আলাদা করে বলার দরকার পড়ে না। প্রত্যেকটি ম্যাচে নুর জাত চিনিয়েছেন। আফগান ক্রিকেটার বলতে গেলে সারা বছর ক্রিকেট খেলেন। ক্রিকেট বিশ্বের সব দেশে তাঁকে এই ফরম্যাটে খেলতে দেখা যায়। সে বিগ ব্যাশ থেকে শুরু করে বিপিএল, কোনও কিছু বাদ যায় না। তাই অকশনে তাঁর দর অনেক বেশি। তাঁকে দলে নিয়ে চেন্নাই বাড়তি সুবিধা পেয়েছে। নুর নিয়ে ধোনির আবেগ একটা কথা নতুন করে মনে করিয়ে দেয়। কেকেআরের বিরুদ্ধে ধোনি কেন পাওয়ার প্লে-তে নুরকে আক্রমনে নিয়ে আসেন নি। ১০৩ রানের পুঁজি নিয়ে লড়াই করতে নেমে শুরুতেই তো আক্রমনে যাওয়ার কথা। সেটা সেদিন অধিনায়ক ধোনির কাছ থেকে দেখতে পাওয়া যায়নি। আনলে ম্যাচের রেজাল্ট অন্যরকম হলেও হতে পারত। নুরকে ধোনি নিয়ে আসেন আট নম্বর ওভারে। তার আগে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছিল। খলিলদের সামনে নারাইনদের আক্রমনাত্মক মেজাজের কাছে হারার আগে হেরে গিয়েছিল চেন্নাই। নুর বল করতে এসে প্রথমেই নারাইনের উইকেট পান। কিন্তু তারপর লড়াই করার জায়গা ছিল না। সেই ম্যাচ ছাড়াও নুর নিজেকে প্রমান করেছেন। আফগানিস্তানের রশিদ খানের জায়গা এখন বলতে গেলে নিয়ে ফেলেছেন নুর। তিনি এৎন ধোনির দলের কোহিনূর। তাঁকে সামনে রেখে ম্যাচ জয়ের কথা ভাবতে হবে। ধোনি মনে করছেন লখনউ জয় দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। প্লে অফ নিয়ে তিনি বেশি কিছু ভাবছেন না। সবে দুটি জয় পেলেন। এখন লক্ষ্য যতটা সম্ভব ম্যাচ জিতে সামনে যাওয়া যায়। লিগ টেবিলে তলানিতে থাকা দলকে ধোনি কতটা উপরে তুলতে পারেন এখন সেটাই দেখার বিষয়।
ঘুরিয়ে পন্থের সমালোচনায় রবি, আমাকে এক ওভার দিলে পারত

সোজাসুজি নয়, ঘুরিয়ে লখনউ সুপার জায়ান্টসের অধিনায়ক ঋষভ পন্থের সমালোচনা করলেন রবি বিষু। ধোনিদের কাছে পাঁচ উইকেটে ম্যাচ হেরে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন ঋষভ পন্থ। অনেকে ভেবেছিলেন, খেলা শেষে হয়তো আবার পুরনো ছবি ভেসে উঠবে। মাঠের মধ্যেই দলের অন্যতম কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কার কথা শুনতে হবে পন্থকে। কিন্তু তেমন কিছুই হল না। গোয়েঙ্কা মাঠে এলেন। হাসি মুখে ঋষভের সঙ্গে কথাও বললেন। কি কথা হয়েছে তা অবশ্য জানা যায়নি। পরিবেশ ঠান্ডাই মনে হল। তা হলে ঋষভ এতটা হতাশ কেন! এখানেই শেষ নয়। খেলার শেষে ধোনি এসে তাঁর সঙ্গে কথাও বললেন। অবাক লাগল ধোনির চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারলেন না পন্থ। কেন! উত্তর নেই। পুরস্কার মঞ্চে দাঁড়িয়ে একবারও তাঁকে চেনা ছন্দে দেখা গেল না। ম্যাচ আগেও হেরেছেন। সেদিন খেলা শেষে হাসতে দেখা গিয়েছিল। তা হলে এবার কেন নিজেকে খোলসের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলেন! তবে কি চালে ভুল করেছেন ভেবে মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল পন্থের! হতে পারে। লখনউয়ের ১৬৬ রানের পিছনে ছুটতে গিয়ে সিএসকে একসময় ১৫ ওভারে তোলে ৫ উইকেটে ১১১ রান। জিততে হলে পাঁচ ওভারে করতে হবে ৫৬ রান। কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। বিশেষ করে স্পিনারদের সামলাতে হিমশিম অবস্থা চেন্নাই ব্যাটসম্যানদের। এবং তা প্রমানও করে দিয়েছিলেন লখনউ স্পিনাররা। কিন্তু ডেথ ওভারে এসে লখনউ অধিনায়ক ঋষভ পন্থ পেসারদের উপর বেশি ভরসা রাখলেন। এবং সেখানেই ম্যাচ হাত থেকে বেরিয়ে গেল। তিন বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে গেলেন ধোনিরা। খেলার শেষে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে এসে দলের লেগ স্পিনার রবি বিষু বলছিলেন, আমার কোটার এক ওভার বাকি ছিল। কেন যে আমাকে দিয়ে বল করানো হল না তার ব্যাখ্যা নেই। মাহিভাইয়ের সামনে আমি দাঁড়াবার সুযোগ পেলাম না। আশা করেছিলাম, ঋষভ আমাকে দিয়ে এক ওভার করিয়ে নেবে। কথায় ক্ষোভ থাকলেও সোজাসুজি সমালোচনা করলেন না রবি। বলছিলেন, উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে পুরো মাঠ দেখতে পাচ্ছিল ঋষভ। হয়তো ওর মনে হয়েছিল, স্পিনারদের থেকে পেসারদের দিয়ে বোলিং করালে উইকেট তুলে আনা যাবে। তাই আমার কথা ওর মাথায় আসেনি। ভেবেছিলাম, মাহিভাইয়ের সামনে আমাকে বল করতে দেওয়া হবে। তাই কিছুটা হলেও অবাক লেগেছে। রবির এই প্রশ্নের উত্তর মিলেছে ঋষভের কাছ থেকে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল রবি তিন ওভারে ১৮ রান দিয়ে দুটি উইকেট পেয়েছিলেন। তাঁকে দিয়ে আর একটা ওভার কেন করালেন না। উত্তরে ঋষভ বলেন, রবির কথা আমার মাথায় ছিল। ভেবেছিলাম, ২০ নম্বর ওভারে ম্যাচ কিছুটা ছোট হয়ে য়াবে। তখন রবিকে আক্রমনে এনে চেন্নাইকে চাপে ফেলব। শেষ ওভার ওকে দিয়ে করাবো বলে মাহিভাই উইকেটে আসার পরও রবিকে আনিনি। কিন্তু শেষ ওভারে ওদের দরকার ছিল পাঁচ রান। তাই রবির বদলে আভেসকে নিয়ে আসি। তিন বল বাকি থাকতে ওরা ম্যাচ বের করে নিল। রবির কথায় যুক্তি থাকলেও ঋষভকে নিয়ে তা বলা যাচ্ছে না। এটা ঘটনা যে শেষ ওভার কেন একজন স্পিনারকে নিয়ে আসা হবে। আর যখন ধেনি মাঠে আসেন, তখন চেন্নাই চাপে পড়ে গিয়েছে। কেউ ভাবতে পারেননি, সেই জায়গা থেকে ম্যাচ বের করে নেবে চেন্নাই। তাই ঋষভের উচিত ছিল, রবিকে দিয়ে টানা বল করানো। সেই সময় দুবে বা ধোনির উইকেট তুলে নিতে পারলে লখনউয়ের জয় নিশ্চিত হয়ে যেত। আইপিএলে অনেকদিন ধরে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঋষভ। লখনউয়ে আসার আগে তিনি দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক ছিলেন। চেন্নাই ম্যাচ বুঝিয়ে দিল, নেতা হিসেবে ঋষভ এখনও পাকাপোক্ত হননি। সময় লাগবে। এই সব ভুল হয়তো আগামিদিনে তাঁকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। কারন, রবি ভুল বলেননি। ভুল ছিল ঋষভের ভাবনায়। তাই ম্যাচ হাতছাড়া হল।
ক্লেইটনকে নিয়ে অশান্তিতে সুর কাটল ইস্টবেঙ্গলের নববর্ষের উৎসবে

নববর্ষের সকাল। ময়দানজুড়ে বারপুজো। তারই মধ্যে মোহনবাগানে যেমন ভোটের আবহ, তেমনি ইস্টবেঙ্গলে অশান্তির আঁচ। নববর্ষের শপথ, অঙ্গীকার, উৎসব, উচ্ছ্বাস সব ছিল, কিন্তু লালহলুদে সুর কাটল অনুশীলনে। উৎসবের মাঝেই অশান্তি। অশান্তি সেই ক্লেইটন সিলভাকে নিয়ে। কোচের সঙ্গে আগের দিনের অশান্তির রেশ। দলের সঙ্গে নয়, ক্লেইটনকে দেখা গেল একা একা আলাদা আলাদা অনুশীলন করতে। কোচ অস্কারের সঙ্গে কোনও কথা নেই। কোচ কথা বলতে এলেও দেখা গেল মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। পাত্তা দিচ্ছেন না ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড। এক সময় সিটিও অময় ঘোষালের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেল ক্লেইটনকে। কথা থেকে তর্ক। উত্তপ্ত হয়ে উঠল পরিস্থিতি। কোচ এগিয়ে এলেও ভ্রুক্ষেপ করলেন না ক্লেইটন। শেষ পর্য়ন্ত সামাল দিতে এগিয়ে আসতে হল সৌভিকদের। আরও অশান্তি বাড়ার আগে সতীর্থরা ক্লেইটনকে মাঠের বাইরে সরিয়ে দিয়ে এলেন। নববর্যে সবার সামনে এই ঘটনা। শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার আর কী করেন! পরিস্থিতি হালকা করতে সাংবাদিকদের বলেন, সুভাষ ভৌমিকের সময় দেখেননি! এমন গণ্ডগোল হত না? কিন্তু তাতে কি ট্রফি আসত না? তবে মেনে নিলেন এমন ঘটনা ঘটা উচিত নয়। কাঙ্খিত নয়। তিনি মুখে যাই বলুন, ভিতরের খবর, কোচ যদি অভিযোগ জানান, তাহলে শাস্তির মুখে পড়তে পারেন ক্লেইটন সিলভা। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল আগের দিন অনুশীলনে। কোচ ক্লেইটনকে তাঁর পছন্দের জায়গায় না খেলানোয় ভয়ঙ্কর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন ব্রাজিলায় তারকা। আলাদা কিছুক্ষণ অনুশীলন করে মাঠ থেকে বেরিয়ে চলে গিয়েছিলেন। সেই আগুন নেভেনি। সুপার কাপ এগিয়ে আসছে। তার আগে নতুন অশান্তি ঢুকে পড়ল লালহলুদ শিবিরে। ছবি সৌজন্য- ফেসবুক
সুপার কাপে বদলে যাচ্ছে মোলিনার ভূমিকা

সুপার কাপে মোহনবাগানের ডাগ আউটে বসছেন কোচ বাস্তব রায়, এটা আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছে। আর তাই প্রশ্ন, তাহলে কি সুপার কাপের মঞ্চে থাকছেন না হোসে মোলিনা? হ্যাঁ, থাকছেন, খুব ভালোভাবেই থাকছেন। তবে বদলে যাচ্ছে তাঁর ভূমিকা। সোমবার ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে মিটিংয়ে বসেছিলেন স্প্যানিশ কোচ। সেখানেই সুপার কাপে তাঁর ভূমিকা নিয়ে একটা রূপরেখা তৈরি হয়ে যায়। সুপার কাপ থেকে মোহনবাগানের আর বিশেষ কিছু পাওয়ার নেই, তাই ঠিক হয়েছে এই টুর্নামেন্টে জুনিয়র ফুটবলারদের খেলানো হবে। সোমবার আরএফডিএলে মোহনবাগানের যে দলটি চ্যাম্পিয়ন হল, মূলত তাদেরই খেলানো হবে সুপার কাপে। সঙ্গে গ্লেন মার্টিনস, অভিষেক সূর্যবংশী, সৌরভ ভানওয়ালা, সুহেল ভাট, আমনদীপদের নিয়ে তৈরি হবে সুপার কাপের দল। একমাত্র বিদেশি হিসাবে থাকবেন নুনো রেইজ। প্রথম ম্যাচে মোহনবাগানের বাই পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সরাসরি চলে যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে। ইস্টবেঙ্গল যদি তাদের প্রথম ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সকে হারায় তাহলে কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা হবে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের। তখন অবশ্য বদলে যেতে পারে পরিকল্পনা। তখন কয়েকজন সিনিয়র ফুটবলারকে দলে নেওয়ার ভাবনা রয়েছে। নাহলে সুপার কাপে মোটামুটিভাবে মোহনবাগানের প্রথম দল হতে পারে এ রকম। গোলে ধীরজ সিং। দুই স্টপারে নুনো রেইজ ও দীপেন্দু বিশ্বাস। দুই সাইডব্যাকে সম্ভবত আমনদীপ ও সৌরভ ভানওয়ালা। মাঝমাঠে গ্লেন মার্টিনস, অভিষেক সূর্যবংশীর সঙ্গে রবি রানার মত আরএফডিএলের কয়েকজন তরুণ সুযোগ পাবেন। ফরোয়ার্ডে সুহেল ভাটের সঙ্গে আরএফডিএলের তরুণ ফুটবলাররা থাকবেন। বাস্তব রায় কোচের দায়িত্বে থাকবেন। তবে হেড কোচ হোসে মোলিনাও সম্ভবত ভুবনেশ্বর যাচ্ছেন। তিনি মূলত স্পটারের কাজটা করবেন। দলের প্র্যাকটিসে থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন দলের ম্যাচ দেখবেন। আগামি মরসুমের জন্য ফুটবলার বাছাইয়ের কাজটা করবেন। মোহনবাগান এখন দুজন ভারতীয় সাইডব্যাক খুঁজছে। শুভাশিস বোস ও আশিস রাইয়ের ব্যাক আপের প্রয়োজন। মোলিনার নজরে রয়েছেন পঞ্জাব এফসির অভিষেক সিং, কিন্তু তাঁর জন্য মোটা টাকা ট্রান্সফার ফি চাইছে পঞ্জাব। মোহনবাগান অবশ্য বেশি ট্রান্সফার ফি দিয়ে ফুটবলার নিতে চাইছে না। এছাড়া বেঙ্গালুরু এফসির নাওরেম রোশন সিং নজরে রয়েছেন। রয়েছেন মেহতাব সিংও। এর বাইরেও কয়েকজনকে সুপার কাপে দেখবেন মোলিনা। তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন শুভাশিস-আশিসের ব্যাক আপ কারা। মূলত এই কাজটা করতেই সুপার কাপের মঞ্চে হাজির থাকবেন আইএসএলে ডাবল করা মোহনবাগানের স্প্যানিশ হেডস্যর।
৪৩ বছরেও দলকে জিতিয়ে ম্যাচ সেরা ধোনি

কেকেআরের কাছে হারের পর সিএসকে অধিনায়ককে নিয়ে সমালোচনা থামেমি। আইপিএলকে তিনি কবে গুডবাই জানাবেন তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু সোমবার লখনউয়ের একানা স্টেডিয়ামে সকলে উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলেন। ঋষভ পন্থদের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেটে জয়ের পর ধোনিকে নিয়ে শুরু হল অন্যরকম আলোচনা। টনা পাঁচ ম্যাচ হারের পর জয়ের সরণীতে পা ফেলল চেন্নাই। এবং সেটা সম্ভব হল অধিনায়ক ধোনির সৌজন্যে। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে নিজের কাজ ঠিকভাবে করার পাশাপাশি ব্যাট হাতে ১১ বলে ২৬ রান। শিভম দুবেকে নিয়ে ষষ্ট উইকেটে ২৭ বলে ৫৭ রানের পার্টনারশিপ। এরপর ম্যাচের সেরা বাছাই করতে কারোর অসুবিধা হয়নি। সবাই ধোনিকে বেছে নিলেন। পুরস্কার হাতে নিয়ে সিএসকে অধিনায়ক বললেন, এখনও এই পুরস্কার হাতে পেতে ভাল লাগে। মনে হয়, দলের জন্য কিছু একটা করতে পেরেছি। এরপর আর কি চাই! ৪৩ বছর বয়সে দলকে জেতাচ্ছেন। সেরার পুরস্কার পাচ্ছেন। তরুনদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছোটা ধোনিকে দেখে সবাই হিংসে করতে পারেন। একানা স্টেডিয়ামের চেহারা দেখলে মনে হবে না চিপকের বাইরে এসে ধোনিরা খেলতে নেমেছেন। গোট গ্যালারি হলুদ ফুলে ঢাকা। অনেকের হাতেই ধোনির পোস্টার। এসব দেখে কি বাকিদের মনে জ্বালা ধরে না! মনে হয় না আর কতদিন তিনি এভাবে দলকে টেনে নিয়ে যাবেন। মানুষের মনে আলাদা জায়গা করে নেবেন। নিশ্চয় হয়। তাঁরাও তো মানুষ। কিন্তু তাঁদের একপাশে রেখে সব কিছু নিজের দিকে টেনে নিয়ে চলেছেন ধোনি। তাই সিএসকে মানেই ধোনি। আর ধোনি মানে …..! লিগ টেবিলের তলানিতে থাকা সিএসকে আদৌ কি উপরে উঠতে পারবে! এই প্রশ্ন ধোনির মধ্যেও ছিল। তাই দললে কিছু বদল করে পন্থদের বিরুদ্ধে খেলতে নামেন। ওপেন নিয়ে আসেন শেখ রাশেদকে (১৯ বল খেলে ২৭ রান)। কনওয়ের বদলে আসেন ওভারটন। খুব এখটা সুবিধা করতে পারছেন না বলে অশ্বিনকে এদিন বাইরে রাখা হয়। তবে বদল নয়, লখনউ ক্রিকেটারদের ভুলে শুরুতে ম্যাচে জাঁকিয়ে বসে সিএসকে। ২৩ রানে দুটি উইকে যাওয়ার পর পন্থ এসে হাল ধরেন। উইকেট মন্থর ছিল। শট নেওয়া সহজ ছিল না বলে পন্থ স্ট্রাইক রোটেড করে খেলার চেষ্ট করেন। আগের ম্যাচগুলিতে রান পাননি। এদিন ৪৯ বল খেলে ৬৩ রানের ইনিংস দলকে ভরসা দেয়। তবে ১৬৬ রান ম্যাচ জয়ের পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। খেলা শেষে নিজেই স্বীকার করে নিলেন। বলছিলেন রানটা ১৯০ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারলে জেতা সম্ভব ছিল। কিন্তু যা হয়নি তা নিয়ে আলোচনা করার কোনও মানে হয় না। তবে লখনউকে আটকে দিয়েছিলেন বাঁহাতি চায়নাম্যান নুর আমেদ। উইকেট না পেলেও কৃপন বোলিং করে গেলেন। তাঁর বোলিং গড় ৪-০-১৩-০। ভাবা যায়! এই ফরম্যাটে এই বোলিংকে তো সবাই স্বপ্নের বোলিং বলবেন। হ্যাঁ, নুরের কারনেই মাঝপথে আটকে গেল লখনউ। তবে আগের ম্যাচগুলিতে পাওয়ার প্লে-তে সুবিধা করতে পারছিল না সিএসকে। সেটাই তাদের চাপে ফেলে দিচ্ছিল। এদিন পাওয়ার প্লে-তে উঠল ১ উইকেটে ৫৯ রান। রাশেদ সিএসকে প্রোডাক্ট। অনেকদিন এই দলের সঙ্গে আছেন। ২০ বছরের রাশেদ সুযোগ পেলেন দলের বাকিরা কিছু করে উঠতে পারছেন না বলে। তিনি খারাপ খেললেন না। ধোনির সার্টিফিকেট পেয়ে মানসিক দিক থেকে হয়তো নিজেকে চাঙ্গা করতে পারবেন। তাঁর পাশাপাশি রচিনের ৩৭ রান ছাড়া বলার মতো কিছু ছিল না। ত্রিপাঠি, জাদেজা, বিজয় শঙ্কররা ব্যর্থ হওয়ায় চাপে পড়ে যায় সিএসকে। সেই চাপ কাটিয়ে দলকে জয়ে ফেরাতে মাঠে আসেন ধোনি। তারপর যা হওয়ার তাই হল। পন্থ প্রথমে ব্যাট করার সময় হেলিকপ্টার শটে বলকে মাঠ পার করেছিলেন। ধোনি পাল্টা দিলেন। এক হাতে তিনি শার্দুলের বল মিড উইকেটের উপর দিয়ে গ্যালারিতে ফেললেন। সঙ্গে শিভম দুবে মানানসই হয়ে উঠেছিলেন। তিনি ৩৯ বল খেলে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকলেন। এবং উইনিং স্ট্রোক তাঁর ব্যাট থেকেই এল। খেলার শেষে শিভম বলছিলেন, আগের ম্যাচগুলিতে রান পাইনি। এদিন তিন উইকেট তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার পর ঠিক করে নিই শেষপর্যন্ত ব্যাট করব। এম এস এসে বোলারদের ঘাড়ে চেপে বসতে ম্যাচ আমাদের দিকে ঢলে পড়ল। আমার কাজ সজ করে দিল এম এসের আক্রমানত্মক ব্যাটিং।