তরুণ ব্রিগেডের সাফল্যে ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন মোহনবাগান কোচ

একেবারে বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাস্তবটাকে বোঝার চেষ্টা করছেন বাস্তব রায়। সেমিফাইনাল জিতে ফাইনালে ওঠা, চ্যাম্পিয়ন হওয়া – এসব তাঁর মাথায় নেই। তাঁর মাথায় শুধু ঘুরছে তাঁর এই তরুণ ফুটবলাররা বড় মঞ্চে কত বেশি নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পান। এমন মঞ্চে কত বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পান। তাই ৬ জন বিদেশি নিয়ে গড়া প্রবলতর প্রতিপক্ষ কেরালা ব্লাস্টার্সকে হারিয়ে সুপার কাপের সেমিফাইনালে উঠে তিনি বললেন, “আমি সবচেয়ে বেশি খুশি ছেলেরা আর একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে।“ এই তরুণ ফুটবলারদের সুপার কাপে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ জানান বাস্তব। মোহনবাগান কোচ স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন কেরালা ভাল খেলেছে। গোলের সুযোগও তৈরি করেছে। কিন্তু তাঁর গোলরক্ষক ও ডিফেন্ডাররা আরও ভালভাবে সেগুলো সামলেছেন। যদিও কেরালা সুযোগ নষ্ট করেছে, সেটাও অবশ্য মেনে নিলেন। এমন মধুর জয়ের সব কৃতিত্ব ফুটবলারদেরই দিচ্ছেন বাস্তব। ফুটবলাররা সঠিক মানসিকতা দেখাতে পেরেছেন বলেই এমন গুরুত্বপূর্ণ জয় এসেছে, ব্যাখ্যা কোচের। মোহনবাগানের অনূর্ধ্ব ১৩, অনূর্ধ্ব ১৫ দল ও আরএফডিএলের দল সাফল্য পাচ্ছে, সেই প্রসঙ্গ তুলে মোলিনার সহকারি জানান, তাঁদের ইয়ুথ ডেভলপমেন্ট যে ঠিক পথে এগোচ্ছে, এটা তারই প্রমাণ। জুনিয়র দলটা কলকাতা লিগ ও আরএপডিএলের পর আর ম্যাচ খেলেনি। তাদের এই টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ করে দিয়ে নিজেদের চেনানোরও সুযোগ করে দিয়েছে ম্যানেজমেন্ট, তাই বারবার ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ জানান তিনি। ২-৩ বছরের মধ্যে এই দলের অনেকেই সিনিয়র দলে খেলবে, প্রবল আশাবাদি কোচ। একটা বড় জয়। তরুণদের কাছে তো জয়টা আরও বড়। তাই শনিবার দিনটা জয়কে উপভোগ করার। রবিবার থেকেই সেমিফাইনালের মোডে চলে যাবে টিম মোহনবাগান।
বাগানে ফুল ফোটালেন তরুণরাই

মোহনবাগান-২ (সাহাল, সুহেল) কেরল ব্লাস্টার্স-১ (্শ্রীকুট্টান) তরুণ তুর্কিরা যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা দেখিয়ে দিল মোহনবাগান। প্রথম একাদশের কেউই বলতে গেলে নেই। প্রথিতযশা বিদেশিরা যে যার বাড়ি চলে গিয়েছেন। কোচ মলিনাও আপাতত রয়েছেন ছুটির আমেজে। অথচ পালতোলা নৌকোর তাতে কোনও সমস্যা নেই। একবার ভাসলে যে তরতরিয়ে এগিয়ে চলে, আবার তা প্রমাণ করে ছাড়লেন সাহাল আব্দুল সামাদ, দীপক টাংরিরা। বুঝিয়ে দিলেন, প্রথম একাদশ নেই তো কী হয়েছে, মোহনবাগান আছে। সবুজ-মেরুন জার্সিধারীরা মাঠে নেমেছে। তাই সহজে হার স্বীকার করে মাঠ ছাড়বে এমন ঘটনা ঘটবে না। কেরল ব্লাস্টার্সকে ২-০ গোলে হারিয়ে পৌছে গেল সুপার কাপের সেমিফাইনালে। কোন কেরল ব্লাস্টার্স? যারা কিনা প্রথম ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে এসেছে। লাল-হলুদ শিবিরকে একপ্রকার দঁাড়াতে দেয়নি যারা তারাই কিনা আত্মসমর্পণ করে বসল। প্রথমার্ধে সাহাল আব্দুল সামাদ ও বিরতির ঠিক পরেই সুহেল ভাটের করা গোলে শেষ চারের রাস্তা খঁুজে পেয়ে গেল মোহনবাগান। যদিও শুরুটা করেছিল কেরল। বল পজিশন থেকে শুরু করে বারবার আক্রমণে উঠে এসে মোহনবাগানের রক্ষণে ত্রাস সৃষ্টি করে গিয়েছে। তবে সহজ সুযোগ বলতে যা বোঝায় তা কিন্তু পায়নি কেরল। অথচ ২২ মিনিটের মাথায় সাহাল আব্দুল সামাদ গোল করে খেলার অভিমুখ ঘুরিয়ে দিলেন। ডান দিক থেকে উঠে এসে পাশ বাড়িয়ে ছিলেন সালাউদ্দিন। সেই বল যখন সাহাল ধরেন তখন তঁার পাশে কেরলের এক ডিফেন্ডার দঁাড়িয়ে। সাহাল চলতি বল সামনের দিকে নিয়ে এসে ডান পায়ের আলতো পুশে গোল করে চলে যান। ব্যস, এই গোলটাই যেন খেলার গতিপ্রকৃতি পাল্টে দিল। যে মোহনবাগানের চেয়ে বল পজিশনে এগিয়ে ছিল কেরল সেই নোয়ারা ক্রমশ পিছিয়ে পড়তে লাগলেন। কেরল দল আক্রমণ তুলে নিয়ে আসছিল ঠিকই। প্রশ্ন হল, গোল করবেন কে। গোল করার লোক হলেন একজন নোয়া সাদুই। যে নোয়া লাল-হলুদের মশাল একাই নিভিয়ে দিয়েছিলেন। সেই নোয়াকে শনিবার ওড়িশার মাটিতে তেমন খঁুজেই পাওয়া গেল না। বারবার প্রান্ত বদল করেছেন। চেষ্টা করেছেন মোহনবাগানের সীমানায় ঢুকে ত্রাস সৃষ্টি করতে। কিন্তু ওই পর্যন্ত। নোয়া বল ধরলেই ডাবল কভারিংয়ের কব্জায় পড়ে নাভিশ্বাস উঠেছে তঁার। ঠিকমতো শট নিতে পারেননি। যে দু-একবার নিয়েছেন তা মোহনবাগানের রক্ষণের দেয়ালে ধাক্কা খেয়েছে নয়তো ধীরাজ সিংয়ের বিশ্বস্ত হাতে জমা পড়েছে। ধীরাজ সিং বেশ কয়েকবার নিশ্চিত পতন রুখে দিয়েছেন। ফলে কেরল তেমন সুবিধে করতে পারেনি। তাছাড়া দ্বিতীয় গোলটা পেয়ে গেল মোহনবাগান বিরতির ঠিক পরেই। ফলে কেরলের মনোবল টোল খেয়ে গেল সেখানেই। আশিক কুরিনিয়ন বঁা দিক থেকে উঠে এসে যে ক্রশ বাড়ান তা থেকে বলের গতিমুখ ঘুরিয়ে দেন সুহেল ভাট। সেই বল জালে জড়িয়ে যেতেই কেরলের যাবতীয় জারিজুরি শেষ হয়ে গেল। যে কোনও কাজে সফল হতে গেলে প্রথমত দরকার পড়ে অদম্য জেদ। তারপর প্রয়োজন হয়, বাড়তি তাগিদ। মোহনবাগান দুটো ক্ষেত্রেই সফল। অদম্য জেদ ছিল বলেই বারবার মোহনবাগানের সীমানায় ঢুকেও তেমন সুবিধে করতে পারেনি। রক্ষণের জালে ধরা পড়ে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত তাগিদ দেখিয়েছেন আশিক, সাহাল, দীপকরা। তঁারা চলতি মরশুমে ছিলেন অনিয়মিত। তাই তঁাদের প্রয়োজন ছিল প্রমাণ করার। সেই প্রমাণ করার তাগিদ থেকেই দুরন্ত ফুটবলের দৃষ্টান্ত রেখে গেল মোহনবাগান। কেরলের শ্রীকুট্টান যখন গোল করলেন তখন খেলা বলতে গেলে শেষ হয়ে গিয়েছে।
সাহালের গোলে এগিয়ে মোহনবাগান

মোহনবাগান-১ (সাহাল) কেরল ব্লাস্টার্স-০ দুই প্রধানের আগেই বিদায় ঘটে গিয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের পর মহামেডানও ফিরে এসেছে শহরে। বাংলা ফুটবলের ব্যাটন এখন মোহনবাগানের হাতে। প্রথমার্ধে খেলার শেষে বলা যেতে পারে সেই ব্যাটনকে শক্তপোক্ত ভাবেই ধরে রেখেছে সবুজ-মেরুন। তরুণদের নিয়ে গড়া দল। যারা এবার তেমন আইএসএল খেলেইনি। তারউপর ডেভলাপমেন্ট টিম থেকে ফুটবলারদের নিয়ে দল গড়েছে মোহনবাগান। অথচ সেই দল কিনা প্রথম ৪৫ মিনিটের শেষে ১-০ গোলে এগিয়ে। দলের হয়ে একমাত্র গোলটি করে যান সাহাল আব্দুল সামাদ। ২২ মিনিটের মাথায় ডানদিক থেকে সালাউদ্দিন যে ক্রশ করেন তা সাহাল এক ডিফেন্ডারকে গতিতে হারিয়ে ডান পায়ের আলতো পুশে গোল করে চলে যান। প্রথম ম্যাচে কেরল ব্লাস্টার্স হারিয়ে ছিল ইস্টবেঙ্গলকে। একা নোয়া সাদুই বলতে গেলে শেষ করে দিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলকে। দুটো গোলের মধ্যে একটা এসেছিল তাঁর মাধ্যমে। আর একটা তিনি দুরন্ত গোল করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। শনিবাসরীয় বিকেলে ভুবনেশ্বরের মাটিতে সেই নোয়া খুব একটা সুবিধে করতে পারছেন না। বেশ কয়েকবার প্রান্ত বদল করেছেন। গোলমুখী শট যে নেননি তাও নয়। কিন্তু যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই কড়া মার্কিংয়ের সামনে তাঁকে পড়তে হয়েছে। আসলে নোয়া হলেন কেরলের প্রাণভোমরা। তিনি ধরা পড়ে যেতেই খুব একটা সুবিধে করতে পারছে না কেরল। বল পজিশনে বারবার এগিয়ে থেকেছে কেরল। বেশ কয়েকবার গোলের কাছাকাছি এসেছে। কিন্তু শেষ কাজটা করে উঠতে পারছে না। কোনও সন্দেহ নেই, মোহনবাগানের ডিফেন্ডাররা ভাল খেলছেন। তারউপর গোলকিপার ধীরাজ সিং বেশ কয়েকবার নিশ্চিত পতন রুখে দেন। যাইহোক, কেরল একাধিক বিদেশি নিয়ে খেলছে। সেখানে মোহনবাগান কেবলমাত্র নুনোকে নিয়ে নেমেছে খেলতে। তবু বাগানের খেলায় একটা ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যারা অনায়াসে হার মানতে জানে না। এখন দেখার কেরল বিরতির পর কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায়।
সামনের মরশুমে আইপিএলে দেখা যাবে না ক্রিকেটার ধোনিকে

সরকারিভাবে সিলমোহর পড়েনি। প্রশ্ন অনেক আগেই উঠে গিয়েছে। কবে ব্যাট তুলে রাখবেন। উত্তর যিনি দেবেন, সেই মহেন্দ্র সিং ধোনি মুখ ঘুরিয়ে টানা খেলে চলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেও আইপিএল থেকে সরে দাঁড়াতে পারেননি। তাই ২০২৫ আইপিএল মরশুমেও তাঁকে খেলতে দেখা যাচ্ছে। তবে এটাই সম্ভবত শেষ মরশুম। টুর্নামেন্ট শেষ করে বাড়়ি ফিরে কিছুদিন সময় নেবেন। তারপর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন। এটাই কি সরে দাঁড়াবার সেরা সময়! না, সেই সময় অনেকদিন আগে পার করে এসেছেন ধোনি। ২০২৩ এর ২৮ মে আইপিএল ফাইনালে গুজরাট টাইটান্সকে পাঁচ উইকেটে হারানোর পর পুরস্কার মঞ্চে তাঁকে প্রথমেই প্রশ্ন করা হয়েছিল, এবারই কি অবসরের কথা জানিয়ে দেবেন! ধোনি বলেছিলেন, এই সিদ্ধান্ত এখন নিত ভল হত। কারন এটই সেরা সময়। কিন্তু তা আর পারছি কোথায়! পরের মরশুম শুরু হতে এখনও আটমাস বাকি। সময় নিয়ে ভাবব। তারপর জানিয়ে দেব। ধোনি কিছুই জানাননি। পরের আইপিএল শুধু নয়, তিনি এবারও আইপিএল খেলছেন। টুর্নামেন্টে সিএসকের জঘনয পারফরম্যান্সের পর প্রশ্ন উঠেছে ধোনি কি সামনের মরশুমেও খেলা চালিয়ে যাবেন! সিএসকের এখনও পাঁচ ম্যাচ বাকি। এখনই এ নিয়ে কথা বলবেন না। কিন্তু যা শোনা গিয়েছে সামনের মরশুমে ক্রিকেট ব্যাট হাতে ধোনিকে বইশশ গজে দেখা যাবে না। হয়তো সিএসকের হয়ে কোনও কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখবেন। কিন্তু ক্রিকেটার ধোনির সম্ভবত এটাই শেষ বছর। এবারের মরশুমে নটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটি জিতেছে সিএসকে। কেন এমন হল। সোজাসুজি বলা যায় যে তারা এবার মোটেও ভাল দল তৈরি করতে পারেননি। অকশন থেকে তেমন ক্রিকেটারও নিতে পারেননি। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। এ নিয়ে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। কারন ধোনি মানে সিএসকে। আর সিএসকে মানে ধোনি। দলের প্রথম ও শেষ কথা তিনিই বলেন। কাক রাখা হবে, কাকে বাইরে পাঠানো হবে, এসব সিদ্ধান্ত ধোনির। তাাই দলের ব্যর্থতার দায়ও তাঁকে নিতে হবে। স্পটাররা সারা বছর দেশের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ঘুরে কয়েকজন ক্রিকেটার দলে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তাদের উপর ভরসা রাখতে পারছে না ম্যানেজমেন্ট। ওপেনার শেখ বা মাত্রেকে শেষদিকে দলে আনা হল। তাদের আগে থেকে খেলিয়ে কেন তৈরি করা গেল না। আসলে সিএসকে সবসময় সিনিয়র ক্রিকেটার নিয়ে খেলতে ভালবাসে। তাদের ট্র্যাকরেকর্ড দেখলে সেটা ধরা পড়ে যাবে। যে দলে বিজয় শঙ্কর, ত্রিপাঠি বা অশ্বিনের মতো ক্রিকেটার এখনও খেলে চলেছেন, তাদের উপর কে ভরসা করবে। দলের সমস্যা বাড়িয়ে দিল অধিনায়ক ঋতুরাজ গায়কোয়াডের চোট। তিনি হঠাৎ করে টুর্নামেন্টের বাইরে চলে যাওয়ায় সিএসকের ব্যাটিংয়ে বড় ধাক্কা খেল। আগের বছরগুলিতে ডেভন কনওয়ের সঙ্গে ওপেন করতেন ঋতুরাজ। এবার তাঁকে তিনে নিয়ে আসা হল। কেন! ত্রিপাঠিকে তাঁর আগে জায়গা করে দেওয়া হল। বলা হল, মিডলঅর্ডারের দায়িত্ব নেবেন ঋতুরাজ। শুরুটা ভালই করেছিলেন সিএসকে অধিনায়ক। কিন্তু চোট তাঁকে ছিটকে দিল। একইসঙ্গে চাপে ফেলে দিল দলকে। দলে আর কোনও ব্যাটসম্যান ছিলেন না যিনি দায়িত্ব নিয়ে দলকে টানবেন। এমন দল গড় কেউ কি সাফল্যের মুখ দেখতে পারেন। সিএসকে তাই পায়নি। এসবের বাইরে আরও একটি কারন আছে। ধোনি কখনও সাতে তো কখনও আটে। আবার কখনও নয় নম্বরে ব্যাট করতে নামছেন। এটা কি অধিনায়কের কাজ। তাঁকে দেখে দলের বাকিরা ছুটবেন। সেটাই হচ্ছে না। ভাবা যায়, এমন দিনও গিয়েছে যে ধোনির আগে ব্যাট হাতে নেমে পড়েছেন অশ্বিন। কেন! ধোনিই জানেন তিনি কি করতে চাইছিলেন। আগ অধিনায়ক ছিলেন না বলে মিডিয়ার সামনে আসার রকার পড়েনি। কিন্তু ঋতুরাজ বাইরে চলে যাওয়ার পর তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব নিতে আবার সামনে চলে এলেন। প্রত্যেক ম্যাচের শেষে পুরস্কার মঞ্চে তাঁকে আসতে হচ্ছে। সেখানে এই প্রশ্নগুলি উঠে আসছে। এটা তো মেনে নেওয়াও সম্ভব নয়। ব্যর্থতার দিনে কি আর কথা বলবেন। যিনি সব কিছু করেছেন, তিনি কি তাঁর নিজের ভুল ধরবেন। জাতীয় দলের দায়িত্বে থাকার সময় অনেক কিছু করেছেন। সাফল্যও পেয়েছেন। ২০০৭, ২০১১ বিশ্বকাপ জিতেছেন। ২০১৩ চ্যম্পিয়ন্স ট্রফিও তাঁর পকেটে। ক্রিকেট সব কিছু দিয়েছে। এখনও মাঠে ব্যাট নিয়ে নামলে কেড়েও নেবে ক্রিকেট। ব্র্যাডম্যানকে চার রান করতে দেয়নি ক্রিকেট। করতে পারলে গড় ১০০ হত। কিন্তু তা তিনি করতে পারেননি। জীবনের শেষ ইনিংস ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। ধোনির জীবনেও তেমন কিছু হতে চলেছে। দুবছর আগে ক্রিকেট ছেড়ে দিলে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলে ফিরতে পারতেন। এখন ব্যর্থতার কাঁটা নিয়ে তাঁকে ছাড়তে হবে। এটা কি ধোনির মতো ক্রিকেটারের পক্ষে মানায়। ধোনি সেদিন বলেছিলেন, চেন্নাইয়ের মানুযের ভালবাসা তাঁকে মাঠে টেনে নিয়ে আসে। গ্যালারি থেকে ধোনির নাম ধরে চিৎকার তাঁর চোখ ভিজিয়ে দেয়। সব ঠিক আছে। কিন্তু এবার সেই গ্যালারি থেকে ধোনি বলে চিৎকার শোনা যাবে না। বলবে, একজনের জায়গা ধোনি আটকে রেখেছেন। সেটা কি শুনতে ভাল লাগবে! তাই অনেক হয়েছে। এবার মান থাকতে সরে দাঁড়ানো ভুদ্ধিমানের কাজ হবে। এতদিন খেললেন। এবার ক্রিকেটার গড়ার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। সেটাই বা কম কিসের। এতেও মানুষের ভালবাসা তিনি একইভাবে পাবেন। আসলে বাইশ গজ ছাড়তে কেউ চান না। সে শচীন তেন্ডুলকরও নন। বাধ্য হয়েছিলেন সরে দাঁড়াতে। যাঁরা তা পারেন তাঁরা এদিক থেকেও মহান হন। ধোনি তাই বাড়ি ফিরে কিছুদিন সময় নিয়ে সরে যাওয়ার কথা জানিয়ে দেবেন। যেমন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে একটার একটা ফরম্যাট থেকে সরে গিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের চমকে দিয়েছিলেন, তেমনভাবে এই আসর থেকেও সরবেন। তবে এই ঘোষণায় মানুষ কিন্তু চমকে উঠবেন না।
নীরজের পাশে দাঁড়ালেন যোগেশ্বর দত্ত

নীরজ চোপড়ার পাশে দাঁড়ালেন যোগেশ্বর দত্ত। ভারতের প্রাক্তন কুস্তিগির তথা অলিম্পিক পদক জয়ী যোগেশ্বর স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, যে বা যারা নীরজকে ছোট করতে চাইছে তারাই আদৌ দেশপ্রেমী নয়। ২৪ ঘন্টা আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভব্য বক্তব্য রাখার জন্য নিজস্ব প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ছিলেন নীরজ। এবার তঁার পাশে দাঁড়ালেন আর এক অলিম্পিয়ান। ২৪ মে নীরজ চোপড়া ক্লাসিকে যোগ দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের আরশাদ নাদিমকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন ভারতের সোনার ছেলে। কিন্তু পাহেলগাঁওয়ে ঘটনা ঘটার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় নীরজকে নিয়ে ঝড় উঠে যায়। কেন? যেহেতু পাকিস্তানের জ্যাভলিন থ্রোয়ারকে প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন নীরজ। টোকিওতে সোনা জয় ও প্যারিস অলিম্পিকে রুপো জেতা ভারতের শ্রেষ্ঠ অ্যাথলিটের বক্তব্য ছিল, “পরিবার ও তঁার সততা নিয়ে যেসব প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।” ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদকজয়ী যোগেশ্বর দত্ত মনে করছেন, নীরজ হলেন একজন জাতির নেতা। তঁাকে দেশপ্রেম প্রমাণ করার কোনও প্রয়োজন নেই। “নীরজ ভাই, তোমার দেশপ্রেম প্রমাণ করা বা নিজেকে প্রমাণ দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। মনে রাখবে একজন খেলোয়াড় ও দেশের সৈনিক বিদেশের মাটিতে তেরঙা পতাকা তোলার সুযোগ পায়। দেশের নাম গৌরবান্বিত করে। তাই বলতে পারি, তুমি শুধু একজন খেলোয়াড় নও, একজন তেরঙাধারী সৈনিকও।” পরমুহূর্তে যোগেশ্বর দত্ত নীরজকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, “তুমি একজন চ্যাম্পিয়ন। মনে রাখবে, তুমি হলে জাতির নেতা। কে কী বললো সেদিকে খেয়াল রাখার কোনও প্রয়োজন নেই। তুমি এগিয়ে চলো।” এমনিতেই নীরজ জানিয়ে ছিলেন, গত ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যা ঘটেছে তাতে আরশাদের ভারতে আসা অসম্ভব ছিল। এমন কী নীরজ এও বলেছেন, দেশের স্বার্থ সবসময় তঁার কাছে প্রাধান্য পায়। ভারতীয় সেনাবাহিনিতে কর্মরত একজন সুবেদার তঁার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “যেসব পাকিস্তানি আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে তাদেরকে কোনওভাবে ক্ষমা করা যায়না। কিন্তু বাকিদের প্রতি আমার চিন্তাভাবনা ও প্রার্থনা আপনার মতের সাথে মিল রয়েছে।” নীরজ এদিন বলেছেন, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দেশের প্রতিক্রিয়া যেভাবে ব্যক্ত হয়েছে তা একটা দেশের নাগরিক হিসেবে গর্ব করা উচিত। আমরা বুঝিয়ে দিয়েছি, দেশের স্বার্থে আমরা সকলে এক। আশাকরি ভবিষ্যতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।” আরশাদ যে এনসি ক্লাসিকে আসবেন না তা আগেই মোটামুটি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এমনই মন্তব্য করেছেন নীরজ চোপড়া। তারপর পাহেলগাঁও ঘটনার পর তো আরশাদের আসার কোনও প্রশ্নই ছিল না। অথচ কিছু মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে দিয়েছেন। যা আঘাত করেছে নীরজ চোপড়াকে।
কোপা ফাইনালের আগে জমজমাট নাটক

কোপা দেল রে ফাইনালের আগে সাংবাদিক সম্মেলনে কাঁদছেন রেফারি রিকার্দো।
আইপিএল শেষ, চিপকে হার এখন অভ্যাস করে ফেলেছেন ধোনিরা

সিএসকে: ১৫৪ ( ১৯.৫ ওভার) এসআরএইচ: ৫ উইকেট ১৫৫ (১৮.৪ ওভার) সিএসকে ফ্যানরা এরপর কী বলবেন! যারা আসছে, তারাই হারিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে। এ কোন সিএসকে! যাদের পারফরম্যান্সে আলোর রোশনাই নেই। পুরোটাই অন্ধকারে ঢাকা। এবারের আইপিএলে ব্যর্থতার রেকর্ডে ধুয়ে মুছে সাফ ধোনিরা। না হলে ঘরের মাঠে চার ম্যাচ হেরে মাথা উঁচু করে কেউ মাঠ ছাড়তে পারেন। এতদিন যা হয়নি, এবার তাই দেখা যাচ্ছে। উদাহরন তো হাতের সামনে। এদিনের আগে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ কখনও চিপকের মাঠে জিততে পারেনি। এবারই প্রথম তারা চিপকের মাঠে ধোনিদের পাঁচ উইকেটে হারিয়ে দিল। এ কেউ বিশ্বাস করতে পারবেন! স্কোর বোর্ড না দেখলে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তব সেটাই বলছে। গতবছরের শেষদিকে ক্রিকেটার রিটেন করায় ভুল। অকশন থেকে ক্রিকেটার তুলে নেওয়ার কাজেও ভুল। এত ভুলে ভরা দল নিয়ে কোনও অধিনায়ক ম্যাচ বের করে আনতে পারে না। এখনও পর্যন্ত তারা নটি ম্যাচ খেলেছে। পয়েন্ট চার। লিগ টেবিলের একেবারে শেষ লাইনে দাঁড়িয়ে। দুবছর আগে যারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, তারা কীভাবে এমন পারফরম্যান্স করে! সত্যি বুদ্ধিতে এর ব্যাখ্যা নেই। যে দলে ধোনিই শেষ কথা, সেই দল এমন মুখ থুবড়ে পড়বে কেন! নিয়ম মানতে হলে বলতে হয় সিএসকে-কে এখনও পাঁচটি ম্যাচ খেলতে হবে। কিন্তু সে সব নিয়মরক্ষার ম্যাচ। তারাই প্রথম দল হিসেবে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেল। এরপর সব ম্যাচ জিতলেও সিএসকে ১৪ পয়েন্টে যেতে পারে। যা দিয়ে চিড়ে ভিজবে না। সামনের মরশুমে কাদের দলে রাখা হবে, তার বিচার হতে পারে। এর বাইরে কিছু নয়। শুরুবারের রাতের লড়াইয়ে সিএসকে কার কাছে হারল। এমন প্রশ্ন করলে যার উত্তরে বলা যেতে পারে যে নিজেদের কাছে তারা হেরে গিয়েছে। প্রথম বল থেকে ব্যর্থতার ছবি। ম্যাচের প্রথম বলে শামি আউট করেদেন শেখকে। মুম্বইয়ের ছেলে মাত্রে ভাল খেলছেন। কিন্তু সুযোগ পাওয়ার পরও যদি কেউ ২০ বা ৩০ রান করে আউট হয়ে যান, তা হলে বলার কি থাকতে পারে। একজন ক্রিকেটারকে দেখ গেল না যিনি দলকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবেন। সে জাদেজা হোক, শিভম দুবে, দীপক হুডা বা ধোনি হোক। কেউ নয়। এমন কি ম্যাচের সেরা হর্যল প্যাটেলের বোলিংয়ের সামনে তরা ধরাশায়ী। তিনি ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়ে গেলেন। সেখানেই সিএসকে পিছিয়ে পড়ল। চিপকের উইকেটে স্পিন হচ্ছে না। অনেকটা টুপেস উইকেট। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলে রান করা যায়। এই ১৫৪ যদি ১৮০তে নিয়ে যাওয়া যেত, তা হলে ধোনিদের ম্যাচ জিততে অসুবিধা হত না। খেলার শেষে ধোনি বলছিলেন ১৫ থেকে ২০ রান কমম হয়েছে। এটা এসে গেলে ম্যাচ বের করা কঠিন ছিল না। কিন্তু যা হয়নি, তা নিয়ে কথা বলে কি লাভ। বিশেষ করে ধোনির কথা বলতে হবে। ১৬.৩ ওভারের মাথায় হর্যল প্যাটেলের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল ধোনি হাল্কাভাবে কাট মারলেন। বল সোজা পয়েন্টের হাত চলে গেল। ধোনি থাকলেও রানটা ১৮০ পার করা যেত। কারন তখনও ২১ বল বকি ছিল। কিন্তু সেই সুযোগ কেউ নিতে পারল না। হায়দরাবাদ যে সহজে রান করে নিয়ে গিয়েছে তা-ও নয়। একসময় ৯১ রানে চার উইকেট চলে যায়। ১০৫ রানে পাঁচ উইকেট। সেই সময় কাউকে দুর্দান্ত স্পেল করেত দেখা গেল না। নীতিশ রেড্ডি ও কামিন্দু রানটাকে টেনে নিয়ে গেল। স্পিনাররা বল টার্ন করাতে পারলেন না। দলের প্রধান অস্ত্র নুরকে পেসার মনে হল। এত জোরে কেন বল করলেন। শিশিরের জন্য বল ঠিকভাবে গ্রিপ করতে পারছিলেন না। এটাও মাথায় ঢুকল না কেন অশ্বিনকে ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার হিসেবে কাজে লাগানো গেল না। কেন স্যাম কারেনকে দলে রাখা হল। এমন অনেক প্রশ্ন উঠে আসবে। যার উত্তর মিলবে না। উত্তর শুধু আছে, ধোনিরা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেলেন। আর কিছু নয়।