শহরে বৈভব, আইয়ারকে নিয়ে অস্বস্তিতে কেকেআর

এখন ১৪। আট বছর আগে বাবার সঙ্গে ইডেনে খেলা দেখতে এসেছিলেন বছর ছয়েকের বাচ্চা ছেলে বৈভব সূর্যবংশী। সেদিন কি ভেবেছিলেন একদিন তাঁর খেলা দেখতে মাঠে ভিড় জমাবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। দুনিয়ায় কখন কি ঘটে যায় তা কেউ জানেন না। জিন্দেগী মে সব কুছ হোতা হ্যায়। সেটাই শনিবার দুপুরে হতে চলেছে। যখন রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ইডেনে প্র্যাকটিসে নামবেন আজকের ক্রিকেটের বিস্ময় বালক। রবিবার ইডেনে কি ঘটবে কেউ জানেন না। কেকেআরের সাফল্য দেখতে সবাই ভিড় করবেন ক্রিকেটের নন্দন কাননে। তারই মধ্যে অনেকের চাওয়ার শেষ নেই। তাঁরা চান বৈভবের একটি ভাল ইনিংস দেখতে। সঙ্গে অবশ্যই রাহানেদের জয়। এই দুয়ের মিশেলের কি দেখা মিলবে রবিবার শেষ বিকেলে ইডেনের বাইশ গজে! রাজস্থানের কাছে নতুন করে পাওয়ার কিছু নেই। তারা আইপিএল থেকে ছিটকে গিয়েছে। তবু পচ শামুকে পা কাটে। তেমন হলে রাহানেরা আইপিএল থেকে ছিটকে যাবেন। কারন এখন চারে চার করতে না পারলে প্লে অফ খেলার স্বপ্ন হারিয়ে যাবে। দিল্লি জয় করে বাড়তি অক্সিজেন নিয়ে শহরে এসেছেন ক্রিকেটাররা। অক্ষর প্যাটেলদের বিরুদ্ধে ১৪ রানে জয় দলকে তাতাচ্ছে। ঘরের মাঠে আবার ধাক্কা দিতে চায় কেকেআর। সেটা কি সম্ভব হবে! তার আগে অনেকগুলি প্রশ্ন সামনে আসছে। প্রথমত কেকেআর অধিনায়ক কি রবিবার খেলতে পারবেন। দিল্লি ম্যাচে ডুপ্লেসির একটি শট আটকাতে গিয়ে হাতে বড় ধরনের চোট পান। হতে কয়েকটি সেলাইও পড়ে। ম্যাচ শুরুর ৪৮ ঘন্টা আগেও রাহানে পুরো ফিট নন। তিনি নিজেও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না যে রাজস্থান ম্যাচ খেলবেন। তবে আশা করা হচ্ছে য়ে রাহানে খেলবেন। তিনি ন খেললে দের ব্যাটিংয়ে বড় ধাক্কা। কারন এবারের আসরে অধিনায়ক রাহানে দলের হয়ে সব থেকে ভাল পারফর্ম করছেন। তাই এমন অবস্থায় নিজেকে সরিয়ে নিতে রাজি হবেন না রাহানে। রাহানেকে নিয়ে বড় চিন্তা দেখা গেল না শিবিরে। দলে অস্বস্তি বাড়িয়েছে সহঅধিনায়ক বেঙ্কটেশ আইয়ারের ফর্ম। প্রায় ২৪ কোটি টাকা দিয়ে দলে নিয়েছে কেকেআর। কিন্তু বদলে তিনি কি করছেন। একটি বড় ইিংস খেলা ছাড়া বিশেষ কিছু করতে পারেননি আইয়ার। সেটা দলকে বেশি করে ভোগাচ্ছে। রাহানে অবশ্য তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। তিন জানিয়েছেন, একটি ম্য়াচ রান পেয়ে গেলে বেঙ্কিকে রোখা যাবে না। হয়তো রবিবারের ম্যাচে ওকে দারুন মেজাজে খেলতে দেখা যাবে। আমরাও চাই তাড়াতাড়ি রানে ফিরুক বেঙ্কি। তা হলে আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। শুক্রবার প্র্যাকটিসে বেঙ্কির সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতে দেখা গেল সহকারি কোচ অভিষেক নায়ারকে। তিনি নেটের পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন ঠিক কোথায় ভুল হচ্ছে আইয়ারের। নেটের পিছনে ছিলেন রাহানেও। তিনিও চাইছেন ভুল হলে সেটা প্র্যাকটিসের পর নিজেদের মধ্যে আলোচনায় সমধান করতে। শুধু আইয়ার নয়। রিঙ্কু ও রাসেলের ব্যাটেও রানের দেখা মিলছে না। রিঙ্কু দিল্লি ম্যাচে রন পেয়েছেন। তবে তাঁকে আগের মেজাজে দেখা যাচ্ছে না। যেমন দেখা যাচ্ছে না রাসেলকে। এদের ব্যাটে রান না এলে দল কীভাবে বড় ইনিংস খেলতে পারবে। রাসেল নেটে কিছুটা সময় কাটিয়ে বাইরে চলে এলেন। বরং রিঙ্কু অনেকটা সময় ব্যাট করে নিজেকে ঝালিয়ে নিতে চাইলেন। রবিবার যে পিচে খেল হবে, সেখানে তেমন ঘাস দেখতে পাওয়া গেল না। ধরে নেওয়া যেতে পারে স্লো টার্নার উইকেটে খেলতে হবে। তা হলে তিন স্পিনারে যেতে পারে কেকেআর। সুনীল ও বরুনের সঙ্গে আবার মইনকে খেলতে দেখা যাবে। আবার আগের ম্যাচে অনুকূল রায় খারপ বল করেননি। মইনের বদলে তিনি দলে ঢুকে পড়ত পারেন। কেকেআর শিবিরে এই সব যদি বা কিন্তুর প্রস্ন উঠে আসছে। সেটা নিয়ে কেকেআর মাঠ ছেড়ে হোটেলে ফিরে গেল।
জোড়া হ্যাটট্রিকে উজ্জ্বল লাল-হলুদ

ইস্টবেঙ্গলের চার গোলদাতা বঁা দিক থেকে কার্তিকা, আস্থাম, সন্ধ্যা ও ঋতিকা।
ইংল্যান্ড সফরে আর্শদীপকে চান শাস্ত্রী

শাস্ত্রীর নজরে আর্শদীপ। তিনি চাইছেন ইংল্যান্ড সফরে একজন বঁা হাতি বোলার।
বাংলাদেশ সফর নিয়ে সংশয় বাড়ছে

ভারত-পাকিস্তান ২২ গজের লড়াই মনে হয়না ইদানীং আর দেখা যাবে। (ফাইল চিত্র)।
বুমরায় উচ্ছ্বসিত বোল্ট, বোলিংয়ের ব্র্যাডম্যান বললেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট

বৃহস্পতিবার জয়পুরের সোয়াই মান সিং স্টেডিয়ামে বল হাতে ঝড় তুলে দেন জসপ্রীত বুমরা। চোট থেকে সেরে উঠে আবার নিজের ছন্দে বুম বুম বুমরা। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ১৫ রানে নিলেন ২ উইকেট। ঈর্ষণীয় ইকনমি রেট। তাঁকে এভাবে ফর্মে ফিরতে দেখে উচ্ছ্বসিত মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সতীর্থ ট্রেন্ট বোল্ট। কিউয়ি পেসার বলেন, এই হল জাত বোলার। ঠিক সময়ে জ্বলে উঠতে জানে। এভাবেই সতীর্থকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন বোল্ট। অস্ট্রেলিয়ান লেজেন্ড অ্যাডাম গিলক্রিস্ট তো বুমরায় আরও মজেছেন। মুগ্ধ গিলি বলেন, বুমরা হল বোলিংয়ের ডন ব্র্যাডম্যান। আইপিএলে যেভাবে বল করছেন বুমরা, তাঁর যা ইকনমি রেট ও ডট বলের সংখ্যা, তাতে মুগ্ধ প্রাক্তন অজি উইকেটরক্ষক ব্যাটার। শুধু টি টোয়েন্টি নয়, সব ধরণের ক্রিকেটেই বুমরা সেরা, মনে করেন গিলক্রিস্ট। টেস্টে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের যেভাবে সমস্যায় ফেলেছিলেন সে কথাও মনে করছেন গিলি। পিঠের চোটের জন্য আইপিএলের প্রথম চারটি ম্যাচে খেলেননি বুমরা। তিনি ফিরে আসার পরই অন্যরকম মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। অসাধারণ ৬.৯৬ ইকনমি রেট। ইনিংস প্রতি প্রায় দশটা ডট বল। সব প্রতিপক্ষই তাঁর বিরুদ্ধে রক্ষণাত্মক খেলার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। আর এসব দেখেই গিলক্রিস্ট বলে ফেললেন বুমরা হলেন বোলিংয়ের ডন ব্র্যাডম্যান।
সঞ্জু বিতর্কে মন্তব্যের জের, তিন বছরের জন্য নির্বাসিত শ্রীসন্থ

আবার বিতর্ক তাড়া করল এস শ্রীসন্থকে। সঞ্জু স্যামসনকে নিয়ে কেরল ক্রিকেটে যা হচ্ছে, সেই বিতর্কে মন্তব্য করে আবার সমস্যায় পড়লেন শ্রীসন্থ। তাঁকে তিন বছরের জন্য নির্বাসিত করল কেরলা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। বিজয় হাজারে ট্রফিতে সঞ্জুকে দল থেকে বাদ দেয় কেসিএ। এর ফলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য ভারতীয় দলে তাঁর সুযোগ পাওয়ার ওপর প্রভাব পড়েছিল। এই নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। সেই বিতর্কেই মুখ খুলে একটি টেলিভিশন প্রোগ্রামে কেসিএর বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছিলেন শ্রীসন্থ। তিনি সঞ্জুর পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, সঞ্জু ও আরও কয়েক জন ক্রিকেটারকে কেসিএ-র হাত থেকে রক্ষা করা দরকার। কেসিএ জানিয়েছে, তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছেন শ্রীসন্থ সঞ্জুকে সমর্থন করেছে বলে নয়, নিয়েছেন কেসিএ-র বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর মন্তব্য করার জন্য।তারা আগেই শো কজ নোটিশ পাঠিয়েছিল শ্রীসন্থের সঙ্গে কেরল লিগে খেলা কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকেও। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির উত্তর সন্তোষজনক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, টিম ম্যানেজমেন্টে সদস্য নিয়োগের সময় যেন সতর্ক থাকা হয়। পাশাপাশি সঞ্জুর নাম করে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনার জন্য সঞ্জুর বাবা স্যামসন বিশ্বনাথ ও আরও দুজনের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে।
কেকেআর ম্যাচের আগে রোহিতের কথায় চাঙ্গা হতে পারেন ব্যর্থ বৈভব

মাঠের বাইরে থেকে ফের চাপে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়ে গেল। বৈভব সূর্যবংশীকে নিয়ে ঝড় উঠল সোশ্যাল মিডিয়ায়। অভিযোগ, ১৪ নয়, বৈভবের বর্তমান বয়স নাকি ১৬। প্রমান সহ বিসিসিআইয়ের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। বিসিসিআই জানিয়েছে ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটা কতটা সত্যি! কতটা মিথ্যে! ভারতীয় ক্রিকেটে বৈভব সূর্যবংশীকে নিয়ে প্রথম যখন আলোচনা শুরু হয়, তখনও এমন কথা শোনা গিয়েছিল। সেদিনও বলা হয়েছিল, বৈভবের বয়স দুবছর কমিয়ে দেখানো হচ্ছে। আইপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলার পর এক সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে বৈভবের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেদিন তিনি বলেছিলেন, আমার বয়স নিয়ে অনেক কথা শুনেছি। বিসিসিআই রেজিস্টারে আমার বয়স যা দেখানো হয়েছে সেটাই আসল। এ নিয়ে জলঘোলা করা অর্থহীন। তাই এবারের অভিযোগ নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছেন না। বৈভবকে খেলতে দিন। এভাবে চাপে ফেলার দরকার নেই। বয়সের কারচুপি করা হয়েছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব বোর্ড কর্তারা। তারা সরকারিভাবে এ নিয়ে কোনও কিছু না জানানো পর্যন্ত চুপ থাকাই ভাল। ১৪ নাকি ১৬, এই বিতর্কে না ঢুকে ক্রিকেট মাঠে ফিরে যাওয়া যেতে পারে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে দুবলের ইনিংসে কোনও রান না পেয়ে হতাশ বৈভব মাঠেই কেঁদে ফেলেন। তখন এগিয়ে এসে রোহিত শর্মা তাঁর পিঠে রাখেন। এখানেই শেষ নয়, খেলার শেষে মাঠের একধারে বৈভবকে দেখে এগিয়ে যান ভারত অধিনায়ক। তিনি কিছুটা সময় কথাও বলেন। তিনি কি বলেছেন, তা জানা যায়নি। বৈভবকে মোটিভেট করার মতো কথা তিনি শুনিয়েছেন। সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়েই সাইকে এগোতে হয়। শুধু সাফল্য আসবে, এমনটা হতে পারে না। ব্যর্থতাকেও দেখতে হবে। এই দুয়ের মিশেলকে সঙ্গে নিয়ে চলে নিজেকে মানসিক দিক তৈরি করতে হবে। যাঁরা পারবেন, তাঁরা নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পরবেন। না হলে আটকে যেতে হবে। রোহিত ও বৈভবের কথোপকথন জানা না গেলেও ভারতীয় দলের প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রীর কথায় উজ্জ্বীবিত হতে পারেন বিস্ময় বালক। শাস্ত্রী বলেন, এর থেকে বড় কিছু আর হতে পারেনা। রোহিতের কথা শুনে বৈভব নিজেকে নিশ্চয় গুছিয়ে নিতে পারবে। আমি আগেও বলেছি, একদিন আসবে যেদিন ব্যাটে রানের দেখা পাওয়া যাবে না। সেদিন ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। নিজেকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তারপর ঠিক রান আসবে। শুক্রবার রাতের মধ্যে কলকাতায় ঢুকে পড়বে রাজস্থান রয়্যালস। রবিবার তারা কেকেআরের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে। একদিক থেকে দেখলে মনে হতেই পারে যে রাহানেদের কিছুটা চাপে ফেলে দিল রাজস্থান। গুজরাটের বিরুদ্ধে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করা বৈভব আকাশের মাথায় উঠে পড়েছিলেন। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে রান করতে না পেরে আকাশ থেকে একেবারে নিচে পড়েছে। এই সাপ লুডোর খেলা ক্রিকেট মাঠে চলতেই থাকবে। এটাই ক্রিকেটারদের জীবন। একে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। এবার দেখতে হবে রোহিতের কথায় নিজেক কতট মোটিভেট করতে পারলেন বৈভব। তাঁর ব্যাটের সুইং দেখার মতো। ব্যাটের ফ্লো খুব ভাল। ইডেনে সেই ভেল্কি তাঁর কাছ থেকে সকলে দেখার অপেক্ষায়। রাহুল দ্রাবিড় আগেই বৈভবকে জানিয়েছিলেন সব বলকে ওভার বাউন্ডারি মারা যায় না। নিজেকে ধরে নিতে হবে। সেটাই কি ইডেনে দেখিয়ে ছাড়বেন। হতে পারে। আর সেট হলে কেকেআর চাপে পড়ে যাবে। মানসিক দিক থেকে চাঙ্গা কেকেআরও। আগের ম্যাচ তারা জিতেছে। এখন চারে চার করতে হবে। সেই লক্ষ্যে কতটা ছুটতে পারেন রাহানেরা, সেটই এখন দেখার বিষয়। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের পেসার দীপক চাহার বলেছেন, তাঁরা পরিকল্পনা করে বৈভবকে আউট করে দিয়েছেন। সবাইকে নিয়ে আলাদা করে পরিকল্পনা হয়। যখন কাজে লাগে, তখন ভাল লাগে। না লাগলে হতাশা আসে। দীপকের পরিকল্পনা কাজে লাগায় তিনি বলতে পারছেন, বৈভবের দুর্বলতা বের করে ফেলেছেন। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, দীপকের এক স্লোয়ার মাঠের বাইরে ফেলতে গিয়ে সময়ের ভুল চুক করে ফেলেন। বল সোজা মিড অনে দাঁড়ানো জ্যাকসের হাতে চলে যায়। ২১৮ রান তাড়া করতে নেমে মারমুখী মেজাজে খেলর চেষ্টা করেছিলেন বৈভব। তিনি অবশ্য এভাবেই খেলেন। সেটা করতে গিয়ে সময়ের ভুল। কেকেআর পেসারদের মাথায় রাখতে হবে। ফুল বল করে সুবিধা পাওয়া যাবে না। যশ্বসী আছেন। তবে বৈভবকে নিয়ে এমন আলাদা ভাবনা মাথায় নিয়ে রানা অরোরাদের ছুটতে হবে। তাঁদের কাজ শুরুতে বৈভবকে আউট করা। এটা করতে পারলে রাজস্থানের রান তোলার গতি শ্লথ হয়ে পড়বে। যা কেকেআরকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আর উল্টো হলে চাপ পড়বে কেকেআর।
ধোনি, রায়নাকে পিছনে ফেলে দিলেন রোহিত

আইপিএলে সবার আগে ছুটছেন আরসিবির বিরাট কোহলি। তাঁর ধারে কাছে কেউ নেই। রোহিত যেভাবে ছুটছেন ,একমাত্র তাঁর পক্ষে বিরাটকে ধরা কিছুটা হলেও সম্ভব বলে মনে করা যেতে পারে। কিন্তু সেটাও সম্ভব হবে না। কারন বিরাট সব কিছুর বাইরে। সবার উপরে। টি ২০ ফর্মাটের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে যে আরসিবির হয়ে খেলে বিরাট এখনও পর্যন্ত করেছেন ৮৮৭১ রান। বৃহস্পতিবার রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ৫৩ রানের ইনিংস খেলে রোহিত ছয় হাজার ক্লাবের সদস্য হয়ে গেলেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলে তিনি করেছেন ৬০০৮ রান। আইপিএলের শুরুতে তিনি দুবছর খেলেছেন ডেকান চার্জাসের হয়ে। সেই দুবছরের রান যোগ করলে রোহিত প্রায় সাত হাজারের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন। কিন্তু এই রেকর্ড ধরা হচ্ছে একটি দলের হয়ে পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে। তাই ডেকান চার্জাসের হয়ে সাতশোর উপর রানকে ধরা হচ্ছে না। বিরাট ও রোহিতের পর তিন নম্বরে আছেন জেমস ভিন্স। তিনি হ্যাম্পশায়ারের ক্রিকেটার। সেই দলের হয়ে খেলে টি২০ লিগে করেছেন ৫৯৩৪ রান। তাঁর করা রেকর্ড অনেক ভেঙ্গে দিয়েছেন বিরাট ও রোহিত। জেমসের পর আছেন ভারতীয় দুই ক্রিকেটার। তার মধ্যে একজন অবসর নিয়ে ফেলেছেন। তিনি হলেন সুরেশ রায়না। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলে তিনি করেছেন ৫৫২৮ রান। পাঁচ নম্বরে সিএসকে অধিনয়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। তিনি করেছেন ৫২৬৯ রান। ধোনির পক্ষে প্রথম দুজনের ধারে কাছে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই লড়াইটা এখন শুধু বিরাট ও রোরিতের মধ্যে চলবে। দেখা যাক, এই লড়াইয়ে দুজনে কোথায় শেষ করতে পারে। টি২০ ক্রিকেটে এক দলের হয়ে খেলে প্রথম পাঁচ ক্রিকেটারের পারফরম্যান্স এমন বিরাট কোহলি (আরসিবি)- ৮৮৭১ রান। রোহিত শর্মা ( মুম্বই ইন্ডিয়ান্স) ৬০০৮ রান। জেমস ভিন্স ( হ্যাম্পশায়ার) ৫৯৩৪ রান। সুরেশ রায়না (সিএসকে) ৫৫২৮ রান। মহেন্দ্র সিং ধোনি (সিএসকে) ৫২৬৯ রান।
ডেটিং করছেন শিখর

একই ফ্রেমে শিখর ধাওয়ান-শোফি সাইন।
রোহিতের পারফরম্যান্স মুম্বইকে ট্রফি জয়ের দিশা দেখাচ্ছে

এটাই ঘটনা। এর মধ্যে কোনও ভুল নেই। ক্রিকেট মহলে একটা চালু কথা আছে- রোহিত খেললে তাঁর দলও খেলে। সেটাই যেন আরও একবার প্রমান হল। এবারের আইপিএলে শুরুর দিকে মোটেও ফর্মে ছিলেন না রোহিত শর্মা। প্রথম ছয় ম্যাচে রান ছিল ৮২। ইনিংসগুলির দিকে একবার চোখ রাখা যেতে পারে। প্রথম ছয়টি ইনিংস এমন- চেন্নাই সুপার কিংস (৪ বলে ০), গুজরাট টাইটান্স (৪ বলে ৮), কেকেআর (১২ বলে ১৩), লখনউ সুপর জায়ন্টাস (৯ বলে ১৭) , রয়্যাল চ্যালে়জার্স বেঙ্গালুরু (১২ বলে ১৮), দিল্লি ক্যাপিটালস (১৬ বলে ২৬)। এটা তো রোহিতের পারফরম্যান্স হতে পারে না। কিন্তু তারপর নিজেকে যেন ফিরে পেলেন তিনি। এবার বাকি পাঁচ ম্যাচের দিকে তাকানো যাক, চেন্নাই সুপার কিংস (৪৫ বলে ৭৬), সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (৪৬ বলে ৭০), লখনউ সুপার জায়ান্টাস ( ৫ বলে ১২), রাজস্থান রয়্যালস (৩৬ বলে ৫৩)। মুম্বইয়ের ১১টি ম্যাচের মধ্যে রোহিত খেলেছেন ৯টি ম্যাচ। মোট রান করেছেন ২৯৩। স্ট্রাইক রেট-১৫৫। গড় ৩২.৫৬। বাউন্ডারি- ২৭টি। ওভার বাউন্ডারি- ১৭টি। এমন পারফরম্যান্স দেখার পর বলা যেতে পারে যে রোহিত যেদিন খেলেন, সেদিন দলও খেলে। তাঁর পারফরম্যান্স তো সেকথা আরও একবার প্রমান করে দিল। তাঁর ব্যাটিং দেখে প্রাক্তন ক্রিকেটার বীরেন্দ্র শেহবাগ বলেই ফেললেন, রোহিতের ব্যাটিং দেখার পর একটা কথাই বলা যেতে পারে যে ক্রিকেট খেলা কত সহজ। ফর্মে থাকলে বোলারদের রাতের ঘুম উড়ে যায়। তাদের কখনই মাথায় উঠতে দেয় না। এত সহজে ড্রাইভ মারে। পুল মারে। সত্যি ভাবাই যায় না। ওর দিনে উল্টোদিকের ব্যাটসম্যানের কাজ সুবিধা যায়। নিজেকে রানের পিছনে ছোটাতে হয় না। নিজে শুরুতে সেট হওয়ার সময় পায়। তারপর স্ট্রোকের পিছনে ছুটতে পারে শুধু শেহবাগ নন, দলে রোহিতের সতীর্থ সুর্যকুমার যাদবের কথা শুনে নেওয়া যেতে পারে। এনিয়ে সূর্য বলেছেন, এবারের আইপিএলে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামছি। শুরুর দিকে না হলেও পরে রোহিত রানে ফিরে আসার পর আমার কাজ সুবিধা হয়ে যায়। উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে দেখি অনায়াসে বোলারকে উড়িয়ে দিচ্ছে। বোলাররা চাপে পড়ে যায় বলে আমি স্ট্রাইক নেওয়র সময় ওরা লাইনে গোলমাল করে ফেলে। আমি তখন স্ট্রোক খেলে নিজের রান বাড়িয়ে নিয়ে পারি। রোহিত থাকলে বোর্ডের দিকে তাকাতে হয় না। কারন রান তোলার কাজটা তখন ও নিজের কাঁধে তুলে নেয়। এটা শুধু আইপিএলে নয়, জাতীয় দলে খেলার সময় এই সুবিধা রোহিতের উল্টোদিকে থাকা ব্যাটসম্যানও পায়। শুরুতে টানা ব্যর্থতার পর জয়ে ফিরে মুম্বইয়ের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনা আগে ঘটছে। এটা যেন ওদের কাজের ধারবাহিকতা। রোহিতের ক্যাপ্টেনশিপে মুম্বই এর আগেও করে দেখিয়েছে। আইপিএল শুরু করেছিলেন ডেকন চার্জাসের হয়ে। দুবছর সেখানে খেলার পর তিনি চলে আসেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে। তখন ছিলেন শুধুই একজন ক্রিকেটার। তার অনেক পরে তিনি অধিনায়ক হন। সেটাও একট ঘটনা। শুরুতে তিনি অধিনায়ক ছিলেন না। দলের বেহাল অবস্থা দেখে মাঝপর্বে অধিনায়কের দায়িত্ব পান। সেই ব্যর্থ দলটি কোন যাদুতে যে ঘুরে দাঁড়ায়, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। সেবারই রোহিতের মুম্বই প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়। তারপর আর চারবার তারা ট্রফি জিতেছে। কিন্তু গত চার বছর মুম্বইকে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। গত বছর হার্দিক পান্ডিয়া গুজরাট টাইটান্স থেকে এসে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হন। নেতা হয়ে দলের মধ্যে বাঁধন ধরে রাখতে পারেননি। রোহিতের সঙ্গেও ঝামেল বাঁধে। এর ছাপ দলের খেলায় পড়ে। মুম্বই সুবিধা করতে পারেনি। এবার শোনা গিয়েছিল, রোহিত হয়তো অন্য কোনও দলে চলে যাবেন। কিন্তু মুম্বই রিলিজ না করে তাঁকে রিটেন করে। সেটারই ছাপ কি শুরুতে রোহিতের খেলায় পড়ে। এর উত্তরও অজানা। কিন্তু ছয় ম্যাচ পর রোহিতের ক্যারিশ্মা দেখতে পাওয়া গেল। রোহিত ছুটছেন। ছুটছে মুম্বইও। এবার তারা প্লে অফের অনেক কাছে। শেষ চার দলের লড়াইয়ে তারা চলে আসবে। তারপর নকআউট। মুম্বই দলে অনেক ম্যাচ উইনার আছে। তারা যে কোনও দিন ম্যাচ ধরে নিতে পারেন। তা হলে মু্ম্বই কি আবার ট্রফি জিতবে! তবে জিততে হলে রোহিতকে এই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে হবে। না হলে কাজটি সহজ হবে না। মুম্বইকররা আশা করছেন, রোহিত একবার ফর্মে চলে এলে পিছন ফিরে তাকান না। তাই তারা ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।