ঘরোয়া লিগ ক্রিকেটের ফাইনালে গোলমাল, সৌরভের হস্তক্ষেপে পাঁচ ঘন্টা পর খেলা শুরু

বাংলার ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে কজনের মাথাব্যথা আছে! কতজন রনজিতে খেলা বাংলার ১১ জন ক্রিকেটারের নাম বলতে পারবেন! কেউ পারবেন না। আসলে ফুটবলের মতো বাংলার ঘরোয়া ক্রিকেট জনপ্রিয় না হওয়ায় এমনটা হয়েছে। তবে মঙ্গলবার দুপুরে সেই ক্রিকেট নিয়েই গোল বাঁধল। খেলা বন্ধ হল। শুরু করতে এগিয়ে আসতে হল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। পাঁচ ঘন্টা বন্ধ থাকার পর খেলা শুরু হল। এমন ঘটনা বাংলার ক্রিকেটে আগে হয়েছে কিনা অনেকেই মনে করতে পারলেন না। এটাই হয়তো ময়দানে ক্রিকেটকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এল। ঘটনাটি কি হয়েছে। সেদিকে তাকানো যেতে পারে। লিগ ফাইনাসল শুরু হয়েছে রবিবার। দিনরাতের ফাইনাল গোলাপি বলে খেলা হয়। দুপুর একটায় খেলা শুরু। প্রথমদিনের শেষে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভবানীপুর করে ৩ উইকেটে ২৫৭ রান। সেঞ্চুরি করে নজর কাড়েন শাকির হাবিব গাধীঁ। তিনি ১০২ রান অপরাজিত ছিলেন। সোমবার দুপুরে তাঁকে ঘিরেই গোল। প্রথম ওভারে দ্বিতীয় বলে কনিষ্ক শেঠের বোলিংয়ে গাধীঁ স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। আম্পায়ার অভিজিত ভট্রাচার্য ( যিনি এবার আইপিএল ম্যাচ করেছেন) আউটের সিদ্ধান্ত দেন। তাঁর সিদ্ধান্ত জানার পর গাধীঁ প্যাভিলিয়েনের দিকে হাঁটা শুরু করেন। পরের ব্যাটসম্যান বিবেক সিংও মাঠে ঢুকে পড়েন। বাউন্ডারি লাইনের বাইরে আসার আগে গাধীঁকে আটকে দেন প্যাভিলিয়েনের বাইরে বসে থাকা ভবানীপুরের ক্রিকেটার ও কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য গাধীঁ আউট নন। রিপ্লেতে দেখা গিয়েছে ক্যাচ ঠিকভাবে ধরা হয়নি। তাঁদের অভিযোগে তৃতীয় আম্পায়ার টিভিতে ঘটনাটি দেখেন। তিনি দেখে বোঝেন ক্যাচটি ঠিকভাবে ধরা হয়নি। এনিয়ে গোল বাঁধে দুই দলের মধ্যে। ভবানীপুরে জানায় গাধিঁকে আবার ব্যাট করতে না দিলে তার খেলবেন না। পাশাপাশি ইস্টবেঙ্গলও এক কথা জানায়। এই টাপান উতোরে খেলা বন্ধ হয়ে য়ায়। সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় মাঠে এসে দুই দলের কর্তাদের সঙ্গে বলেন। কিন্তু সেই কথায় কাজ হয় না। ফলে আম্পায়াররা খেলা বন্ধ করে মাঠের বাইরে চলে আসেন। এটাই লিগ ফাইনালকে আলোচনায় নিয়ে আসে। খবর যায় সৌরভের কাছে। সোমবার বিকেলে সিএবিতে অ্যাপেক্স কমিটির মিটিং ছিল। তার জন্য সৌরভ বিকেলের দিকে ইডেনে আসেন। এসে পুরো ঘটনা শোনেন। দুই শিবির তাঁর সঙ্গে কথা বলে। তাঁদের কথা শুনে সৌরভ যান আম্পায়ার্স রুমে। সেখানে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানিয়ে দেন গাধীঁ আবার ব্যাট করবেন। কারন টিভি রিপ্লেতে দেখা গিয়েছে গাধীঁর ক্যাচ ঠিকভাবে ধরা হয়নি। এতেই সব মিটে যায়। সন্ধ্যে ৬টা ১০ মিনিটে আবার খেলা শুরু হয়। খেলা বন্ধ হয়েছিল দুপুরে ১টা ৫ মিনিটে। এর অর্থ পাঁচ ঘন্টা খেলা বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হল। এখন প্রশ্ন, সৌরভ শহরের বাইরে থাকলে কি হত! খেলা কি শুরু করা যেত! মাঠের কেউ কেউ বলছেন প্রচন্ড গরমের জন্য নাকি ক্রিকেটাররা খেলতে চাইছিলেন না। তাঁরাও মনে করেছিলেন খেলা বন্ধ থাকলে ভাল হয়। ঘটনা বাস্তব কিনা তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে এটাও ঘটনা যে দুপুরে প্রচন্ড গরম ছিল। এই তাপদাহে খেলা সম্ভব নয়। দিনরাতের খেলা। তাহলে বিকেল তিনটেয় শুরু করলে অসুবিধা কোথায়! ফ্লাড লাইটে খেলা হবে। সেটা তো করাই যায়। এটা ভেবে দেখতে পারেন বাংলার ক্রিকেটার কর্তারা।
স্বমূর্তি ধারণ করলেন গফ

দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছেন কোকো গফ। প্রতিপক্ষকে একপ্রকার উড়িয়ে দিয়ে ফরাসি ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি পৌছে গেলেন। ২১ বছরের আমেরিকান কোকো গফ ২০তম বাছাই রাশিয়ান একাতেরিনা আলেকজান্দ্রোভাকে ৬-০ ও ৭-৫ সেটে হারিয়ে দিয়েছেন। প্রথম সেটটি মাত্র ২৯ মিনিটে শেষ হয়ে যায়। এতটা অনায়াস ভঙ্গিতে আমেরিকান মহিলা খেলতে থাকেন যে সামনে কোনও প্রতিপক্ষ রয়েছেন তা বোঝাই যাচ্ছিল না। কিন্তু দ্বিতীয় সেটে রাশিয়ান একাতেরিনা ঘুরে দঁাড়ান। সেয়ানে সেয়ানে লড়াই বলতে যা বোঝায় তাই হয়েছে। প্রথমের সঙ্গে দ্বিতীয় সেটের কোনও সাদ্ৃশ খঁুজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এবারের ফরাসি ওপেনে এই প্রথম দেখা গেল গফ সার্ভিস ব্রেক করে বসেছেন। কিন্তু পরমুহূর্তে তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে ফের ঘুরে দঁাড়ান। পৌছে যান ৪-৩ সেটে। বারবার দেখা গিয়েছে চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে একাতেরিনাকে। তবে টানা তিনটে গেম অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে খেলে নিশ্চিত জয় তুলে নেন। গফের এটা চতুর্থ টানা সেট জয়। এবার নিয়ে টানা পঁাচবার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলেন গফ। শুধু তাই নয়, এই ঘটনার সাক্ষী থাকল কেবলমাত্র পঁাচজন মহিলা খেলোয়াড়। তবে গফ হলেন এই পঁাচজনের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড়। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন চ্যাম্পিয়ন ম্যাডিসন কিস-হেইলি ব্যাপটিস্টের মধ্যে বিজয়ীর সঙ্গে মুখোমুখি হবেন গফ। (ছবি-বিধ্বংসী মেজাজে খেলা চালিয়ে গেলেন কোকো গফ।)
মঙ্গলবার ধোনিকে ছোঁয়ার হাতছানি শ্রেয়সের সামনে

সোজাসুজি কথাটি বলা যাবে না। বললে ভুল হবে । তবু মঙ্গলবার রাতে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিতে পারেন পাঞ্জাব কিংসের অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। তবে মুম্বইকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট হাতে পাওয়ার পর এক অনন্য নজির গড়ে ফেলেছেন শ্রেয়স। তিনিই একমাত্র অধিনায়ক, যিনি তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালে তুলেছেন। ২০২০ দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। দিল্লি ফাইনাল খেলেছিল। গতবছর কেকেআরকে নেতৃত্ব দিয়ে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। আর এবার পাঞ্জাবকে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালে তুললেন। এখনও পর্যন্ত আইপিএলে কোনও অধিনায়কের এমন রেকর্ড নেই। আর পাঞ্জাবকে ট্রফি দিতে পারলে ধোনির পাশে নাম লিখিয়ে তিনি আরও একটা রেকর্ড গড়বেন। এখনও পর্যন্ত আইপিএল জেতেনি পাঞ্জাব। ২০১৪ সালে শেষবার ফাইনালে উঠেছিল। তারপর ১১ বছর পার। আবার ফাইনালে পাঞ্জাব। এবং সেটা সম্ভব হয়েছে শ্রেয়স আইয়ারের হাত ধরে। কদিন আগে প্লে অফে বিশ্রিভাবে তারা হেরেছে আরসিবির কাছে। ট্রফি জিততে হলে সেই বিরাটদের হারাতে হবে। পারবেন শ্রেয়সরা! শুরুতে বলেছি, ফাইনাল জিতলে ধোনিকে ছুঁতে পারবেন শ্রেয়স। কীভাবে! সেটা বরং একবার দেখে নেওয়া যেতে পারে। ২০১০ ও ২০১১ আইপিএল জিতেছিল চেন্নাই সুপার কিংস। অধিনায়ক ধোনির হাতে ট্রফি দেখা গিয়েছিল। তারপর কোনও অধিনায়ক টানা দুবার ট্রফি জিততে পারেননি। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সিএসকেও তাই। কিন্তু কোনও অধিনায়ক ধোনির মতো নয়। এবার জিতলে শ্রেয়স জায়গ পাবেন ধোনির পাশে বসার। তবে এখানে একটু গরমিল আাছে। ২০২৪ আইপিএলে কেকেআরকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন শ্রেয়স। এবার তিনি পাঞ্জাবের অধিনায়ক। দল বদলেছে। কিন্তু নেতা একজনই। এই জায়গায় ধোনিকে ছুঁতে পারবেন শ্রেয়স! মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ জিতে সেরার পুরস্কার হতে নিয়ে পাঞ্জাব অধিনায়ক বলছিলেন, ফাইনাল নিয়ে এখনই ভাবছি না। ফাইনাল নিয়ে ভাবার সময় আছে। সোমবার পুরোটা আমরা হাতে পাব। তারপর মঙ্গলবার প্রায় পুরো দিন। তাই ফাইনল নিয়ে ভাবনার সময় আছে। আগে এই জয় দলের সতীর্থরা আনন্দ করে কাটাক। রাতটা এভাবে কাটার পর সবাইকে নিয়ে আমরা আলোচনায় বসব। ব্যস এটুকু। আর বেশি কথা বললেন না শ্রেয়স। মাঝরাতে কথা বলার অবস্থায় তিনি ছিলেন না। তখন ঘড়ির কাঁটা রাত দুটোর ঘর পার করে গিয়েছে। রাতটা ভাল করে ঘুমিয়ে ফাইনাল নিয়ে ভাবার সময় তিনি পাবেন। তাঁর ৪১ বলে অপরাজিত ৮৭ রানের ইনিংস (৫টি বাউন্ডারি ও ৮টি ওভার বাউন্ডারি) দলের হাতে ফাইনালের টিকিট তুলে দেওয়ার পর ডাগ আউটে উল্লাসের ছবি কি তিনি হারিয়ে ফেলতে পেরেছিলেন। দলকে জিতিয়ে মাঠের বাইরে আসতে না আসতেই কোচ রিকি পন্টিং জড়িয়ে ধরলেন। ততক্ষণে গ্যালারি থেকে মাঠে নেমে এসেছেন মালকিন প্রীতি জিন্টা। তিনিও জড়িয়ে ধরলেন শ্রেয়সকে। এমন ছবিই স্বাভাবিক। কারন ১১ বছর পর পাঞ্জাব যে আইপিএল ফাইনালে। এমনই তো হওয়ার কথা। মু্ম্বইয়ের বিরুদ্ধে ফাইনল জেতার মন্ত্র কি! নানা জনে নানা কথা বলছেন। প্রাক্তন ক্রিকেটার বীরেন্দ্র শেহবাগ বলছিলেন, ১১ থেকে ১৫ ওভার, এই পাঁচ ওভারে ম্যাচ ঘুরিয়েছে পাঞ্জাব। শ্রেয়স ও নেহাল জুটি ৪৯ রান যোগ করে। ১০ ওভারে পাঞ্জাবের রান ছিল ৩ উইকেটে ৯৮। ১৫ ওভারে গিয়ে দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ১৪৭। তখন জেতার জন্য দরকার পাঁচ ওভারে ৫৭ রান। ফর্মে থাকা শ্রেয়স ও নেহাল উইকেটে। এই জায়গা থেকে ম্যাচ বের করা কঠিন নয়। মুম্বই ১১ থেকে ১৫ ওভারে করেছিল ৪৪ রান। কিন্তু তাদের দুটি উইকেট পড়ে গিয়েছিল। ফারাক এখানেই। জয়ের মন্ত্র এই জায়গা থেকে পেয়ে গিয়েছে পাঞ্জাব। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার টম মুডি ব্যপারটা মেনে নিলেও তিনি বলেন ১৩ রানের মাথায় নেহালের সহজ ক্যাচ ফাইনলেগে ফেলে দেয় বোল্ট। এমন ক্যাচ ১০০ বারের মধ্যে ৯৯ বার ক্রিকেটার ধরবে। জীবন পেয়ে নেহাল তারপর ৩৫ ( ম্যাচে করে ৪৮ রান) রান করে। এখানেই ম্যাচ ঘুরে যায়। আমি বলছি না, নেহাল আউট হলেও পাঞ্জাব ম্যাচ বের করতে পারত না। হয়তো পারত। কিন্তু সেটা সহজ হত না। একজন নতুন ব্যাটসম্যান এসে কঠিন সময়ে ম্যাচকে টেনে নিয়ে যেতে পারত না। এমন সব ঘটনা ম্যাচে হয়েই থাকে। ইনিংসের শেষ পাঁচ ওভারে ৫৭ রান মানে ওভার প্রতি প্রায় ১২ রান। সেটাও সহজ নয়। বোলাররা লাইন ধরতে পারলে কাজটা কঠিন ছিল। শেষ দুওভারে দকার ছিল ২৩ রান। অশ্বিনী এসে সব শেষ করে দিলেন। তাঁর ওভারে শ্রেয়স নিলেন ২৬ রান। এর মধ্যে চারটি ওভার বাউন্ডারি। আর কি! মুম্বই সাবরমতীর জলে ভেসে গেল। এবং সব থেকে অদ্ভুত ব্যাপার এটাই যে মুম্বই হারল একজন মুম্বইকরের কাছে। মালকিন নীতা আম্বানি কি আফসোস করছিলেন। ইস, অকশন থেকে শ্রেয়সকে তুলে নিতে পারলে এমন দিন দেখতে হত না।
বিশ্বকাপ কলম্বোতে খেলবে পাকিস্তান

পাহেলগাম ঘটনার রেশ এসে পড়ল মেয়েদের বিশ্বকাপে। বহুদিন ধরেই ভারত জানিয়ে আসছে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনওভাবে আপোষে যেতে নারাজ। অন্তত মহিলাদের বিশ্বকাপে সেই ছবিটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। সোমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি জানিয়ে দিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত মেয়েদের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। সেই প্রতিযোগিতায় পাকিস্তান দল সব ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কায়। ভারত পাকিস্তানিদের ভিসা না দেওয়ার কারণেই যে এই সিদ্ধান্ত তা না বললেও চলে। এমন কী পাকিস্তান যদি ফাইনাল বা সেমিফাইনালে ওঠে তখন কী হবে ভেবে তাও ঠিক করে রেখেছে আসিসি। তাই কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামকে ধরা হয়েছে ফাইনাল ম্যাচের বিকল্প হিসেবে। নাহলে ফাইনাল হবে বেঙ্গালুরুতে। এমন কী সেমিফাইনালের একটা ম্যাচ ধরা হয়েছে গুয়াহাটি কিংবা কলম্বোকে। আসলে সবকিছুর মূলে রয়েছে পাকিস্তান। সত্যি বলতে কী পাহেলগাম ঘটনা। ভারতে চারটে ও শ্রীলঙ্কার একটা ভেনু মোট ৫টা ভেনুতে অনুষ্ঠিত হবে মেয়েদের বিশ্বকাপ। ভারতের চারটে ভেনু হল চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম (বেঙ্গালুরু), এসিএ স্টেডিয়াম (গুয়াহাটি), হোলকার স্টেডিয়াম (ইন্দোর) ও এসিএ-ভিডিসিএ স্টেডিয়াম (বিশাখাপত্তনম)। কলম্বোর হল প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম। আইসিসি জানিয়েছে, ফাইনাল সহ সমস্ত নক-আউট ম্যাচের জন্য বিকল্প ভেনু হিসেবে কলম্বোকে রাখা হচ্ছে। বেঙ্গালুরুতে ভারতের একটা ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে মেয়েদের বিশ্বকাপ। “প্রথম সেমিফাইনাল ২৯ অক্টোবর হবে। কলম্বো বা গুয়াহাটিতে যে কোনও জায়গায় হতে পারে। তারপরের দিন ৩০ অক্টোবর দ্বিতীয় সেমিফাইনাল হবে বেঙ্গালুরুতে।” আইসিসি এক প্রেস বিবৃতিতে একথা জানিয়েছে। আরও জানিয়েছে আইসিসি, “ফাইনালে ওঠা দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে দু-দিন সময় দেওয়া হবে যাতে তারা ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারে। যেহেতু কলম্বো বা বেঙ্গালুরুকে সম্ভাব্য ফাইনালের ভেনু হিসেবে ধরা হচ্ছে।” আইসিসি আগেই জানিয়ে ছিল, ২০২৭ সাল অব্দি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যদি আইসিসির কোনও প্রতিযোগিতা হয় তাহলে একটা নিরপেক্ষ ভেনু ঠিক করা হবে। যেখানে যোগদানকারী দুটো দেশ নিরপেক্ষ ভেনুতে গিয়ে খেলতে পারে। আসলে পাকিস্তান বোর্ডের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান মহসিন নকভি জানিয়ে দিয়েছিলেন, মহিলাদের বিশ্বকাপ খেলতে কোনওভাবে ভারতে যাবে না পাকিস্তান দল। তবে নকভি এও জানিয়ে ছিলেন, যদি অন্যকোথাও খেলার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে পাকিস্তান খেলতে দ্বিধা করবে না। আসলে ভারত চ্যাম্পয়িন্স ট্রফিতে পাকিস্তানে খেলতে চায়নি। সব খেলা ভারতের হয়েছিল দুবাইতে। তাই আইসিসি এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল। গতবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হল অস্ট্রেলিয়া। ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডকে তারা হারিয়ে ছিল। এবার দেখার কে শ্রেষ্ঠত্বের আসন লাভ করে। ভারতের মাটিতে যেহেতু খেলা হচ্ছে তাই ধরে নেওয়া যায়, ভারত এবার প্রতিযোগিতার ফেবারিট হিসেবে প্রথম সারিতেই থাকবে। (ছবি—ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের একটা মুহূর্ত। ফাইল ছবি)
টেস্টে কোহলিকে ফেরাতে চায় বোর্ড!

বিরাট কোহলিকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করতে চলেছে ভারতীয় বোর্ড। না, একটু ভুল বলা হল, অরুণ ধুমাল। আইপিএল বা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের চেয়ারম্যান হলেন অরুণ। তবে তিনি এখন ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি হলেন বিসিসিআইয়ের প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ। ফলে বোর্ড অনুরোধ করছে কোহলিকে, এই কথাগুলো ঠিক নয়। তবে একটা কথা মানতেই হবে, আইপিএল চালায় বোর্ড। আর সেই আইপিএলের চেয়ারম্যান হলেন অরুণ ধুমাল। সুতরাং ধরে নেওয়া যেতেই পারে, বোর্ডের পক্ষ থেকেই বিরাটকে অবসর ভাঙার কথা বলা হচ্ছে। অরুণ জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করবেন যাতে কোহলি টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে আসেন। ২০ জুন হেডিংলেতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট শুরু করবে ভারত। সকলে আশা করেছিল, দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেই দেখা যাবে ব্যাট হাতে কোহলিকে নামতে। কিন্তু তিনি আচমকা ঘোষণা করে দেন, টেস্ট ক্রিকেট আর খেলবেন না। টেস্ট থেকে অবসর নিচ্ছেন। তাই দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর কোহলির জায়গায় এখন অনেকে করুণ নায়ারের কথা ভাবতে শুরু করেছেন। যেহেতু সদ্য বেসরকারি টেস্টে ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিরুদ্ধে ডাবল সেঞ্চুরি করে বসেছেন ভারতীয় এ দলের সঙ্গে যাওয়া করুণ। কিংবা অধিনায়ক শুভমান গিলকে দেখলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবু এখনও ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীরা মনে করছেন, বিরাট কোহলিকে ওই জায়গায় খুব প্রয়োজন ছিল। ভারতীয়দের আশা, নিশ্চয় সাদা পোশাকে আবার কোহলিকে মাঠে প্রবেশ করতে দেখা যাবে। সেই আশার প্রদীপকে উস্কে দিলেন স্বয়ং আইপিএল চেয়ারম্যান। প্রশ্ন উঠছে, কোহলি যদি প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়ে এখান থেকেও অবসরের কথা ঘোষণা করে দেন? অরুণ ধুমাল জানিয়েছেন, তেমন হবে তা তিনি আশা করছেন না। বরং তঁার ধারণা, কোহলি ঠিক আইপিএল খেলা চালিয়ে যাবেন। “দেখুন আমি তা মনে করিনা। বিরাট কোহলি আইপিএল খেলবে না, তেমন আশাও করছি না।” সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে একথা বলেছেন অরুণ ধুমাল। তিনি বরং জানালেন মঙ্গলবার কোহলি যদি আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হন তাহলে তিনি তঁাকে অনুরোধ করবেন ফের টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে আসতে। “টেনিসে যেমন রজার ফেডেরার, নোভাক জকোভিচ, ঠিক তেমনি ক্রিকেটে হলেন বিরাট কোহলি। বিরাট হল ক্রিকেটের সর্বশ্রেষ্ঠ দূত। তার টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার িসদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করাই বাস্তবসম্মত। তাই আমি সব সময় চাইবো একদিকে যেমন বিরাট কোহলি আইপিএল চালিয়ে যাক। অন্যদিকে চাইব, টেস্ট ক্রিকেটে আবার ফিরে আসুক। তাই আইপিএল মঙ্গলবার জিতলে বিরাটকে বলব, টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে আসতে।” অরুণ ধুমাল মনে করছেন, প্রথমবার আইপিএল খেলার সময় যেমন ফিট ছিলেন কোহলি ১৮ বছর খেলার পর তারচেয়েও বেশি ফিট হয়ে উঠেছেন। তাই আগের তুলনায় তঁাকে কোনও অংশে কম মনে করছেন না তিনি। “আরসিবি জিতলে শুধু আমি চাইব না, পুরো দেশ চাইবে বিরাট যেন টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে আসে।” বলেন অরুণ ধুমাল। ভারতের নতুন টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে শুভমান গিল সম্পর্কে দারুন প্রশংসা করলেন আইপিএল চেয়ারম্যান। তঁার মতে ২৫ বছরের তরুণ তুর্কির নেতৃত্বকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না। গুজরাট টাইটান্সের হয়ে আইপিএলে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু এটা কোনও বড় মাপের দল নয়। তবে িজম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে তঁার নেতৃত্ব দেওয়া দেখে তিনি খুশি হয়েছেন। (ছবি-টেস্টে কোহলিকে ফেরানোর চিন্তা ভাবনা শুরু বোর্ডের।)
নেমারের স্যান্টোসে খেলা শেষ!

লালকার্ড দেখে রেফারির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেন নেমার। জানিয়ে দিলেন, এই ধরনের রেফারি থাকলে আর যাইহোক ভাল কিছু আশা করা ঠিক হবে না। ১৭ এপ্রিল চোট পাওয়ার পর মাঠ থেকে ছিটকে যান ব্রাজিলিয়ান তারকা। প্রায় দেড় মাস পরে সোমবার ফিরেছিলেন মাঠে। কিন্তু সেই ফেরা মোটেই সুখকর হল না। হাত দিয়ে গোল করার অপরাধে রেফারি তঁাকে লালকার্ড দেখালেন। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার দশ মিনিট পর গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ল স্যান্টোস। সেই গোলই ম্যাচের ফল নির্ধারিত করে দেয়। সোমবার স্যান্টোসের খেলা ছিল বোতাফোগোর সঙ্গে। প্রথমার্ধে বোতাফোগোর এক ফুটবলারকে ফাউল করায় রেফারি নেমারেক হলুদ কার্ড দেখান। দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখলেন আবার ৭৬ মিনিটে। স্যান্টোস আক্রমণে উঠে যে শট নিয়েছিল তা বোতাফোগোর গোলকিপার কোনওমতে সামাল দেন। কিন্তু সেই বল আদৌ তঁার নিয়ন্ত্রনে ছিল না। গোলকিপারের বঁাচানো বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে ছুটে আসেন নেমার। সেই সময় বোতাফোগোর এক ডিফেন্ডার পা উঁচিয়ে বল ক্লিয়ার করতে মরিয়া মনোভাব দেখান। ছুটে যান নেমারও। কিন্তু বোতাফোগোর ডিফেন্ডার বল ক্লিয়ার করার আগেই নেমার হাত দিয়ে বল জালে ঢুকিয়ে দেন। ব্যস, শুরু হয়ে যায় হইচই। বোতাফোগোর ফুটবলাররা ছুটে আসেন। রেফারিকে তঁারা ক্রমাগত প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। এই ঘটনার জন্য নেমারকে দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড সহ লালকার্ড দেখান রেফারি। নেমার মাঠ ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই গোল করে চলে যায় বোতাফোগো। ফলে নেমার যেমন একদিকে দীর্ঘদিন পর খেলতে নেমে স্যান্টোস সমর্থকদের চক্ষুশূল হলেন। অন্যদিকে দলকে হারানোর জন্য তিনি হয়ে গেলেন এক নম্বর ভিলেন। ম্যাচ শেষে দেখা যায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা পোস্ট করেছেন নেমার। সেই পোস্টে মূলত দোষী সাব্যস্ত করেছেন রেফারিকে। তঁার দাবি প্রথম কার্ড দেখানোটাই ছিল আসলে ভুল। “দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখানো নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। বলব ঠিকই আছে। কিন্তু রেফারি প্রথম কার্ড কেন যে দেখালেন সেটাই বুঝলাম না। আমার মনে হয় পুরোটাই তিনি তামাশা করলেন। সামান্য আঘাত করেছিলাম। দেখলাম রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে কার্ড বের করে দেখিয়ে বসলেন। রেফারিং এতটাই খারাপ যে বলার কিছু নেই। তবে যা জানাচ্ছি তা আমার ব্যক্তিগত মত। দয়া করে আমাকে যেন বাড়তি শাস্তি দেওয়া না হয়।” সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন নেমার। তবে ফুটবল মহলের খবর স্যান্টোসে হয়তো শেষ ম্যাচ খেলে ফেললেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। জুনে তঁার সঙ্গে চুক্তি শেষ হচ্ছে স্যান্টোসের। লিগের একটা ম্যাচ বাকি। তারপর মরশুম শেষ হয়ে যাবে। লালকার্ড দেখায় সেই ম্যাচ তিনি খেলতে পারবেন না। মনে হয়না স্যান্টোস চুক্তি নবীকরণের দিকে এগোবে। তাই বলে দেওয়া যায়, নেমারের হয়তো শেষ ম্যাচ খেলা হয়ে গেল। হারের ফলে অবনমনে থাকা স্যান্টোসের অবস্থা মোটেই ভাল জায়গায় থাকলো না। ২০ দলের মধ্যে লিগ টেবিলে স্যান্টোসের অবস্থান এখন ১৮ নম্বরে। (ছবি-নেমারকে লালকার্ড দেখাচ্ছেন রেফারি।)
শ্রেয়সকে নিয়ে সমগ্র পাঞ্জাব উত্তাল

শ্রেয়স আইয়ারকে নিয়ে গোটা পাঞ্জাব এখন উত্তাল। বিশেষ করে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মতো দলকে হারানোর প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। তঁার বিধ্বংসী ব্যাটিং চমকে দিয়েছে গোটা ক্রিকেট মহলকে। অতীতে পাঞ্জাব কিংস ফাইনালে উঠলেও কোনওদিন চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এমন কী অপর ফাইনালিস্ট দল আরসিবিও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পায়নি। তাই মঙ্গলবার যে দলই জিতুক না কেন, তারাই হবে প্রথম দল যারা আইপিএল ট্রফি ঘরে তুলবে। পাঞ্জাব দলের সমর্থকরা বুঝে গিয়েছেন, যদি পাঞ্জাবের ঘরে আইপিএল ট্রফি এনে দিতে পারেন তাহলে একজনই পারবেন। তিনি আর কেউ নন, দলের অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। ফলে তঁাকে নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে পঞ্চনদীর কোলে। সম্প্রতি শ্রেয়স আইয়ারকে নিয়ে একটা পডকাস্ট ভাইরাল হয়েছে। যেখানে তঁাকে হাস্যকরভাবে বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যদি তিনি পাঞ্জাবের ঘরে আইপিএল ট্রফি তুলে দিতে পারেন তাহলে তঁাকে বাড়ি থেকে ১০০ একর জমি, তঁার নামে একটা হাউজিং থেকে কানাডিয়ান কনেও দেওয়া হবে। এই পডকাস্ট এখন পাঞ্জাবের ঘরে ঘরে চলছে। ‘দ্য বাউন্ডারি এজ’ নামক এক পডকাস্টে স্বয়ং উপস্থাপক পাঞ্জাবি ভাষায় শ্রেয়সকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, “যদি তুমি পাঞ্জাবের ঘরে আইপিএল ট্রফি আনতে পার তাহলে তুমি সারা জীবন সরপঞ্চ বা প্রধান হয়ে থাকবে। তোমার নামে একটা কলোনি তৈরি করে দেওয়া হবে। রাস্তার নামকরণ হবে তোমার নামেই। এমন কী রাস্তার পাশে দেওয়া হবে একশো একর জমি। শুধু তাই নয়, তোমার হাতে তুলে দেওয়া হবে একজন কানাডিয়ান মহিলা। যাকে তুমি বিয়ে করবে।” একটা পডকাস্টে উপস্থাপকের এই বিবৃতি দেখে চমকে উঠবেন না। একজন তো বলেই দিয়েছেন, তঁাকে এমএলএ করবেন। যদি তিনি পাঞ্জাবকে আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন করতে পারেন। সোমবার মধ্যরাতের প্রায় এক ঘন্টা পরে ম্যাচের গতিপথ স্পষ্ট হয়ে যায়। যেখানে শ্রেয়স আইয়ার জিতিয়ে দেন পিবিকেএসকে। ১৯ তম ওভারে মুম্বই দলের অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া বল করতে নিয়ে আসেন অশ্বিনী কুমারকে। সেই ওভারে শ্রেয়স আইয়ার ধরেন ভয়ংকর মুর্তি। চারটি ছক্কা মেরে তিনি পিবিএকএসকে পৌছে দেন ২০৪ রান জয়ের লক্ষ্যে। সেই সঙ্গে পাঞ্জাবকে আইপিএল ট্রফি পাওয়ার দিকে এক ধাপ এগিয়ে যান। তবে শ্রেয়সের হিমশীতল মেজাজ অনেককে অবাক করেছে। মুম্বইয়ের মতো শক্তিশালী দলকে হারানোর পরও তিনি কোনও উত্্্সবে মাতেননি। হেলমেট, গ্লাভস খুলে তিনি এগিয়ে যান মুম্বই দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাতে। কিছুক্ষণ পরে কোচ রিকি পন্টিংকে জড়িয়ে ধরে কিছুটা আবেগ প্রকাশ করেন। ব্যস এইটুকু ছিল জয়ের উত্্সব পালন। তবে শ্রেয়স আইয়ার বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই ধরনের মঞ্চ তিনি বরাবর পছন্দ করেন। যেখানে হাজার হাজার মানুষ আসবেন তঁাদের খেলা দেখতে। হবে চিত্্কার। দর্শকরা আবেগে ফেটে পড়বেন। খেলার পর তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, “আমি সবসময় একটা কথা সকলকে বলি, যতবড় খেলা হবে ততই খেলতে গিয়ে মজা পাওয়া যায়। তবে এইসব খেলায় নিজেকে শান্ত রাখা জরুরী। শান্ত না রাখলে কখনও বড় সাফল্য আসেনা।” শ্রেয়স এই কয়েকটা কথার মধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি ফাইনাল ম্যাচ খেলার জন্য কীভাবে মুখিয়ে আছেন। (বিধ্বংসী মেজাজে ব্যাট করছেন শ্রেয়স আইয়ার।)
্রেয়সের ব্যাটিং দেখে বাক্যহারা ডিভিলিয়ার্স

শ্রেয়স আইয়ারের বিধ্বংসী মেজাজের ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ এবি ডিভিলিয়ার্স। বিশেষ করে যশপ্রীত বুমরার বলকে যেভাবে হেলায় ব্যাট চালিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়েছেন তা দেখে যেন বিশ্বাস হচ্ছে না দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তীর। তঁার মনে হচ্ছে, তিনি যদি এমন পরিস্থিতিতে ব্যাটিং করতেন তাহলে কোনওভাবেই বুমরার বলকে এভাবে মারার সাহস দেখাতে পারতেন না। ২০১৪ সালের পর পাঞ্জাব কিংস ফাইনালে খেলার ছাড়পত্র পেল। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে হারানোর পেছনে ক্রিকেট মহল একবাক্যে স্বীকার করছেন, শ্রেয়স আইয়ারের অসাধারণ ব্যাটিং। মাত্র ৪১ বলে তিনি ৮৭ রানে অপরাজিত থেকে দলকে এক ওভার বাকি থাকতে জিতিয়ে দেন। তখন আবার পাঞ্জাবের হাতে ছিল পঁাচটা উইকেট। তঁার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের মধ্যে ছিল ৮টা ছক্কা ও ৫টা বাউন্ডারি। তবে আইপিএলের ইতিহাসে এক অনন্য নজীর গড়ে ফেললেন। কি নজির? অধিনায়ক হিসেবে দলের দায়িত্ব নিয়ে আইপিএলে তিনটে দলকে ফাইনালে তুললেন। এমন মাইলস্টোন ভারতীয় ক্রিকেটে কারও নেই। ২০১৮ সালে তিনি দিল্লি ক্যাপিটেলসের হয়ে প্রথম আইপিএলে নেতৃত্ব দেন। দু-বছর বাদে দিল্লি ওঠে ফাইনালে। ফাইনালে হেরে বসেন। হারিয়ে দেয় রোহিত শর্মার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। এরপর ২০২২ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে যোগ দেন। নেতৃত্বে আনা হয় ২০২৪ সালে। গতবার তিনি কলকাতার হাতে তুলে দিয়েছিলেন আইপিএল ট্রফি। এবার পাঞ্জাবে এসেছিলেন মেগা নিলামের মাধ্যমে। পাঞ্জাব তঁাকে কিনেছিল ২৬.৭৫ কোটি টাকায়। সেই পাঞ্জাবকে নেতৃত্ব দিয়ে তুলে দিলেন ফাইনালে। এখন দেখার ফাইনালে বেঙ্গালুরুকে হারাতে পারেন কিনা। যদি পারেন তাহলে পরপর দু-বছর দুটি দলের অধিনায়ক হয়ে আইপিএল ট্রফি হাতে তুলবেন। মঙ্গলবার ফাইনাল। এখন বৃষ্টিতে আমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে খেলা করা যাবে কিনা তাই নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে আরসিবি বা পিবিকেএস যেই জিতুক এবারের আইপিএল একটা নতুন দলকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখবে। তবে সকলেই মনে করছেন, শ্রেয়স আইয়ার যেভাবে ব্যাট করে গেলেন তা এককথায় অবিস্মরণীয়। ২০৪ রান তাড়া করতে নেমে একটা সময় পাঞ্জাবের প্রয়োজন ছিল ৩ ওভারে ৩১ রান। সেই সময় আবার যশপ্রীত বুমরাকে বল করতে নিয়ে আসেন হার্দিক পান্ডিয়া। বুমরা আসা মানে সকলের ধারণা ছিল, পাঞ্জাব কোনওমতে বুমরাকে হেলায় খেলার সাহস দেখাতে পারবে না। স্বয়ং বুমরাও বুঝে গিয়েছিলেন, দলকে টেনে তোলার জন্য সকলে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তিনি প্রায় ১৪০ কিমি গতিতে মিডল স্ট্যাম্প লক্ষ্য করে ইয়র্কার দেন। অথচ সেই বল শ্রেয়স আইয়ার পাঠিয়ে দেন বাউন্ডারের বাইরে। এবি ডিভিলিয়ার্স এমন শর্ট দেখে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে শ্রেয়সের প্রশংসা করে বলেন, “আমার দেখা আইপিএলের সেরা শট। মিডল স্ট্যাম্প লক্ষ্য করে ইয়র্কার দিয়েছিল বুমরা। একদম নিখঁুত ইয়র্কার বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই। এমন বল তাকে তুমি এড়াতেও পারবে না। সত্যি বলতে কী, আমাকে যদি এই বলের মোকাবিলা করতে হত তাহলে আমার স্ট্যাম্প বঁাচানো যেত না। অথচ সেই বল কিনা সরাসরি বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দিল। আসলে এই শটটাই চাপে ফেলে দিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে। একজন বিশ্বের সেরা বোলারের বিরুদ্ধে যদি এমন মারমুখি মেজাজে খেলতে পারে তাহলে বুঝে দেখুন কতটা বেপরোয়া ছিল। এককথায় অবিশ্বাস্য ব্যাটিং। দুরন্ত শক্তি ও বলের উপর নিজের ব্যাটকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় তা দেখিয়েছে শ্রেয়স আইয়ার। দুর্দান্ত একজন ক্রিকেটার।” টিভিতে কথা বলার সময় ডিভিলিয়ার্স বুঝে উঠতে পারছিলেন না শ্রেয়সকে নিয়ে কী বলবেন, “কোথা থেকে শুরু করলে শ্রেয়সকে নিয়ে বলা যায় তাই বুঝে উঠতে পারছি না। এমনিতেই তার খেলা দেখতে আমার ভাললাগে। কিন্তু মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ওর ব্যাটিং অতীতের যাবতীয় ট্যাকটিক্সকে ভেঙে দিয়েছে। প্রতিটি প্রশংসা তার প্রাপ্য। অসম্ভব চাপের মধ্যে খেলে গেল। আসলে শ্রেয়সের সামনে দুটো রাস্তা ছিল পরিষ্কার। এক মর নইলে মারার চেষ্টা কর। তাছাড়া প্রতিকূল পরিস্থিতির পাহাড় তার সামনে তখন দঁাড়িয়ে গিয়েছে। তবু দেখলাম একদিকে শান্ত ও স্থিতথী হয়ে প্রতিটি বল খেলে যাচ্ছে। তার প্রতিটি ছক্কা ছিল দেখার মতো। ব্যাটিং দেখে আমি আবার বলছি মুগ্ধ। এটুকু বলতে পারি, এই ক্রিকেটার কিন্তু ভবিষ্যতে প্রচুর রান করবে। তাকে স্যালুট জানাচ্ছি।”
ফাইনালে কোহলি বনাম রোহিত হতে দিলেন না শ্রেয়স, মুম্বইকে হারিয়ে ফাইনালে পঞ্জাব

একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে গেল এবার নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে আইপিএল। কোয়ালিফায়ার টু-তে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের সামনে পঞ্জাব কিংস। বলা ভাল মুম্বইকে হারালেন শ্রেয়স আইয়ার। ২০৪ রানের টার্গেট নিয়ে খেলতে নেমে ৭২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে তখন পঞ্জাব। কিন্তু চাপকে দূরে সরিয়ে দিয়ে দুরন্ত ইনিংস খেললেন অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। করলেন ৪১ বলে অপরাজিত ৮৭ রান। নেহাল ওয়াধেরাকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ উইকেটের জুটিতে তুললেন ৮৪ রান। ম্যাচটা ওখানেই অনেকটা শেষ করে দিয়েছিলেন। তবে কোহলি যদি চেজ মাস্টার হন, তাহলে শ্রেয়স চেজ এক্সপার্ট। তাই ম্যাচ পুরোপুরি শেষ করে অপরাজিত থেকেই সাজঘরে ফিরলেন। কিন্তু দলকে এভাবে জেতানোর পরও কোনও উচ্ছ্বাস ছিল না শ্রেয়সের শরীরী ভাষায়, হয়ত অভিমান। জাতীয় টেস্ট দলে সুযোগ না পাওয়ার অভিমান। আর একটা জবাবও দিলেন তিনি। কেকেআর ম্যানেজমেন্টকে। গতবার কেকেআরকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন অধিনায়ক শ্রেয়স, তবু তাঁকে রাখেনি কলকাতা। এবার পঞ্জাবকে ফাইনালে তুলে নাইট ম্যানেজমেন্টকেও বার্তা দিলেন আইয়ার। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ২০৩ রান করেছিল মুম্বই। বেয়ারস্টো ২৪ বলে ৩৮ রান করে ভাল শুরু করেছিলেন। তারপর তিলক ভার্মা ও সূর্য়কুমার যাদব তৃতীয় উইকেটের জুটিতে ৭২ রান যোগ করে মুম্বইকে ২০০-র ওপরে নিয়ে যান। তিলক ২৯ বলে ৪৪ ও সূর্য ২৬ বলে ৪৪ রান করেন। নমন ধীর করেন ১৮ বলে ৩৭। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ইংলিশ ২১ বলে ৩৮ রান করলেও ৭২ রানে তিন উইকেট হারায় পঞ্জাব। তারপর ম্যাচে শুধুই শ্রেয়স আইয়ার। ম্যাচের পর বলে গেলেন, “সব সময় নিজেকেও বলি, সতীর্থদেরও বলি শান্ত থাকতে পারলে সেরাটা বেরিয়ে আসে।“ তবে কাজ অর্ধেকটা বাকি আছে বলেই মনে করেন পঞ্জাব অধিনায়ক। ফাইনালে বিরাট কোহলি বনাম রোহিত শর্মা হওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু শ্রেয়সই সেটা হতে দিলেন না। প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে কোহলির সামনেও বড় বাধা এই মুম্বইকরই। তবে মঙ্গলবার আরসিবি বা পঞ্জাব কিংস যেই চ্যাম্পিয়ন হোক নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে আইপিএল।