খেলা তখন ২৪ মিনিট হয়েছে। বার্সেলোনা ঘরের মাঠে তখন ০-২ গোলে পিছিয়ে। প্রায় হাজার ৫০ দর্শক তখন হতবাক। পুরো স্টেডিয়াম স্তব্ধ। বাক্যহারা স্টেডিয়ামে হাসির ঝিলিক তুলে ধরলেন লামিনে ইয়ামাল। ইন্টার মিলানের পঁাচজন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে জটলার মধ্যে থেকে দুরন্ত এক শট নিলেন। দূরের পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়িয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে। স্টেডিয়ামের রঙ পাল্টে গেল। এই গোল দেখেই ম্যাঞ্চেস্টার সিটির তারকা আর্লিং হালান্ড হতবাক। মুহূর্তের মধ্যে ইয়ামালের গোল করার একটা ছবি পোস্ট করে হালান্ড লিখলেন, “অবিশ্বাস্য। ছেলেটা সত্যি অবিশ্বাস্য গোল করে গেল।” শুধু হালান্ড নন, পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে তখন শুরু হয়ে গিয়েছে ইয়ামাল ইয়ামাল ধ্বনি। ১০০তম ম্যাচ খেলতে নামা ইয়ামাল ততক্ষণে রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন। কী রেকর্ড! চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে সবচেয়ে কম বয়সী কোনও ফুটবলার গোল করলেন। এতদিন রেকর্ড ছিল কিলিয়ান এমবাপের। তিনি করেছিলেন ১৮ বছর ১৪০ দিনে। ইয়ামাল করলেন ১৭ বছর ২৯১ দিনে। খেলার শেষে তাই ইয়ামালকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল ফুটবল বিশ্ব।
ততক্ষণে রুদ্ধশ্বাস ও রোমাঞ্চকর ঘটনার সাক্ষী থেকেছে গোটা ফুটবল দুনিয়া। কেউ থেকেছেন সরাসরি মাঠ থেকে। আবার কেউ দেখেছেন টিভির সামনে বসে। ৩-৩ গোলে ড্র হয়ে গিয়েছে বার্সেলোনা-ইন্টার মিলান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল ম্যাচ। খেলা শুরুর ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে গোল করে মিলানকে এগিয়ে দিয়েছিলেন মার্কাস থুরাম। দুরন্ত ব্যাকহিলে গোল করে চলে যান। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে যা সবচেয়ে দ্রুততম গোল। পরবর্তী গোলটা ইন্টার করে ২১ মিনিটে। গোলদাতা ডেঞ্জাল ডামপ্রিস। প্রথম গোলের ক্ষেত্রে যিনি সাহায্য করেছিলেন। তারপর ২৪ মিনিটে সেই দুরন্ত গোল ইয়ামালের। খেলার শেষে ইয়ামাল সম্পর্কে বলতে গিয়ে বার্সেলোনা কোচ হ্যান্সি ফ্লিককে বলতে শোনা যায়, এমন ফুটবলার বিশ্বে ৫০ বছরের মধ্যে একজন আসে। “ফিরে আসার রাস্তাটা দেখিয়েছে কিন্তু ইয়ামাল। সত্যি একজন অবিশ্বাস্য ফুটবলার। বিস্ময়কর।” পরমুহূর্তে তঁাকে বলতে শোনা যায়, “অনেককেই বলতে শুনছি ইয়ামাল একজন বিস্ময়কর প্রতিভার ফুটবলার। যঁারা বলছেন তঁাদের সঙ্গে আমিও সহমত পোষণ করছি। সেই সঙ্গে এও বলব, ৫০ বছরে এই ধরনের ফুটবলার বিশ্বে একজন জন্মায় কিনা সন্দেহ।” ফেরান তোরেসকেও বলতে শোনা যায়, “লামিনে কী ধরনের ফুটবলার নিশ্চয় আমার বলার অপেক্ষা থাকে না। প্রত্যেকেই জেনে গিয়েছে, ইয়ামাল হল এখন বিশ্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার। আজ তো ম্যাচ খেলার জন্য যেন মুখিয়ে ছিল। তা নাহলে এভাবে গোল করতে পারত না।” এক্স হ্যান্ডেলে রিও ফার্দিনান্দ জানিয়ে দিয়েছেন, “বিশ্বের সেরা পঁাচটা লিগে খেলা ফুটবলারদের মধ্যে ব্যতিক্রম হল ইয়ামাল। অন্যদের সঙ্গে যার তুলনাই চলে না। ১৭ বছর বয়স, সত্যিই অবিশ্বাস্য।” ৩৮তম মিনিটে ফেরান তরেসের গোলে ২-২ সমতা নিয়ে আসে বার্সেলোনা। এই গোলে মূল অবদান রাফিনিয়ার। তাঁর বাড়ানো বলে শুধু পা ছোঁয়াতে হয়েছে তরেসকে। এই অ্যাসিস্টে চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার হয়ে এক মৌসুমে গোল অবদানে (গোল+অ্যাসিস্টে ২০টি) লিওনেল মেসিকে স্পর্শ করেছেন রাফিনিয়া।৩৮ মিনিটে ফেরান তোরেস গোল করে বার্সাকে সমতায় ফিরিয়ে আনেন। এই গোলের পেছনেও হয়ে যায় একটা রেকর্ড। কী রেকর্ড! সেই রেকর্ড গড়েছেন রাফিনিয়া। গোলের রাস্তা পুরোপুরি তৈরি করে দিয়েছিলেন রাফিনিয়া। তোরেস শুধু পা ছোঁয়ান। বার্সার হয়ে এক মরশুমে গোল ও অ্যাসিস্ট করেছেন ২০বার। লিওনেল মেসিকে স্পর্শ করলেন রাফিনিয়া। প্রথমার্ধ শেষ হয় ২-২ গোলে। যা ২০০০ সালের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে চার গোল হল।
ম্যাচটা শুধু জমজমাট হয়ে উঠেছে তা নয়। পরতে পরতে রেকর্ডের ছড়াছড়ি হয়েছে। ৬৪ মিনিটে ডামপ্রিস ফের গোল করে মিলানকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও ডাচ ফুটবলার তিনটে গোলের ক্ষেত্রে অবদান রাখলেন। দু মিনিটের মধ্যে গোল করে বার্সাকে সমতায় ফিরিয়ে আনেন রকেট গতিতে শট নেওয়া রাফিনিয়া। তঁার শট ক্রসবারে লেগে ফিরে এলে সেই বল মিলানের গোলকিপার ইয়ান সোমারের পিঠে লেগে গোলে ঢুকে যায়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে সেমিফাইনাল ম্যাচে কখনও ৬ গোল হয়নি। যা হল এবার। তাই ফুটবল ইতিহাস কখনও ভুলতে পারবে না এমন নাটকীয় ম্যাচকে। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে কোন দল উঠবে তা জানা যাবে আগামী সপ্তাহে সান সিরোর দ্বিতীয় লেগে।

সিনার শীর্ষে, দ্বিতীয় স্থানে আলকারাজ
গতবার জকোভিচকে ফাইনালে হারিয়ে ট্রফি তুলে ধরেছেন উইম্বলডন বিজয়ী আলকারাজ।