এটাই ঘটনা। এর মধ্যে কোনও ভুল নেই। ক্রিকেট মহলে একটা চালু কথা আছে- রোহিত খেললে তাঁর দলও খেলে। সেটাই যেন আরও একবার প্রমান হল।
এবারের আইপিএলে শুরুর দিকে মোটেও ফর্মে ছিলেন না রোহিত শর্মা। প্রথম ছয় ম্যাচে রান ছিল ৮২। ইনিংসগুলির দিকে একবার চোখ রাখা যেতে পারে। প্রথম ছয়টি ইনিংস এমন- চেন্নাই সুপার কিংস (৪ বলে ০), গুজরাট টাইটান্স (৪ বলে ৮), কেকেআর (১২ বলে ১৩), লখনউ সুপর জায়ন্টাস (৯ বলে ১৭) , রয়্যাল চ্যালে়জার্স বেঙ্গালুরু (১২ বলে ১৮), দিল্লি ক্যাপিটালস (১৬ বলে ২৬)। এটা তো রোহিতের পারফরম্যান্স হতে পারে না। কিন্তু তারপর নিজেকে যেন ফিরে পেলেন তিনি। এবার বাকি পাঁচ ম্যাচের দিকে তাকানো যাক, চেন্নাই সুপার কিংস (৪৫ বলে ৭৬), সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (৪৬ বলে ৭০), লখনউ সুপার জায়ান্টাস ( ৫ বলে ১২), রাজস্থান রয়্যালস (৩৬ বলে ৫৩)। মুম্বইয়ের ১১টি ম্যাচের মধ্যে রোহিত খেলেছেন ৯টি ম্যাচ। মোট রান করেছেন ২৯৩। স্ট্রাইক রেট-১৫৫। গড় ৩২.৫৬। বাউন্ডারি- ২৭টি। ওভার বাউন্ডারি- ১৭টি।
এমন পারফরম্যান্স দেখার পর বলা যেতে পারে যে রোহিত যেদিন খেলেন, সেদিন দলও খেলে। তাঁর পারফরম্যান্স তো সেকথা আরও একবার প্রমান করে দিল। তাঁর ব্যাটিং দেখে প্রাক্তন ক্রিকেটার বীরেন্দ্র শেহবাগ বলেই ফেললেন, রোহিতের ব্যাটিং দেখার পর একটা কথাই বলা যেতে পারে যে ক্রিকেট খেলা কত সহজ। ফর্মে থাকলে বোলারদের রাতের ঘুম উড়ে যায়। তাদের কখনই মাথায় উঠতে দেয় না। এত সহজে ড্রাইভ মারে। পুল মারে। সত্যি ভাবাই যায় না। ওর দিনে উল্টোদিকের ব্যাটসম্যানের কাজ সুবিধা যায়। নিজেকে রানের পিছনে ছোটাতে হয় না। নিজে শুরুতে সেট হওয়ার সময় পায়। তারপর স্ট্রোকের পিছনে ছুটতে পারে
শুধু শেহবাগ নন, দলে রোহিতের সতীর্থ সুর্যকুমার যাদবের কথা শুনে নেওয়া যেতে পারে। এনিয়ে সূর্য বলেছেন, এবারের আইপিএলে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামছি। শুরুর দিকে না হলেও পরে রোহিত রানে ফিরে আসার পর আমার কাজ সুবিধা হয়ে যায়। উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে দেখি অনায়াসে বোলারকে উড়িয়ে দিচ্ছে। বোলাররা চাপে পড়ে যায় বলে আমি স্ট্রাইক নেওয়র সময় ওরা লাইনে গোলমাল করে ফেলে। আমি তখন স্ট্রোক খেলে নিজের রান বাড়িয়ে নিয়ে পারি। রোহিত থাকলে বোর্ডের দিকে তাকাতে হয় না। কারন রান তোলার কাজটা তখন ও নিজের কাঁধে তুলে নেয়। এটা শুধু আইপিএলে নয়, জাতীয় দলে খেলার সময় এই সুবিধা রোহিতের উল্টোদিকে থাকা ব্যাটসম্যানও পায়।
শুরুতে টানা ব্যর্থতার পর জয়ে ফিরে মুম্বইয়ের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনা আগে ঘটছে। এটা যেন ওদের কাজের ধারবাহিকতা। রোহিতের ক্যাপ্টেনশিপে মুম্বই এর আগেও করে দেখিয়েছে। আইপিএল শুরু করেছিলেন ডেকন চার্জাসের হয়ে। দুবছর সেখানে খেলার পর তিনি চলে আসেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে। তখন ছিলেন শুধুই একজন ক্রিকেটার। তার অনেক পরে তিনি অধিনায়ক হন। সেটাও একট ঘটনা। শুরুতে তিনি অধিনায়ক ছিলেন না। দলের বেহাল অবস্থা দেখে মাঝপর্বে অধিনায়কের দায়িত্ব পান। সেই ব্যর্থ দলটি কোন যাদুতে যে ঘুরে দাঁড়ায়, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। সেবারই রোহিতের মুম্বই প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়। তারপর আর চারবার তারা ট্রফি জিতেছে। কিন্তু গত চার বছর মুম্বইকে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। গত বছর হার্দিক পান্ডিয়া গুজরাট টাইটান্স থেকে এসে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হন। নেতা হয়ে দলের মধ্যে বাঁধন ধরে রাখতে পারেননি। রোহিতের সঙ্গেও ঝামেল বাঁধে। এর ছাপ দলের খেলায় পড়ে। মুম্বই সুবিধা করতে পারেনি। এবার শোনা গিয়েছিল, রোহিত হয়তো অন্য কোনও দলে চলে যাবেন। কিন্তু মুম্বই রিলিজ না করে তাঁকে রিটেন করে। সেটারই ছাপ কি শুরুতে রোহিতের খেলায় পড়ে। এর উত্তরও অজানা। কিন্তু ছয় ম্যাচ পর রোহিতের ক্যারিশ্মা দেখতে পাওয়া গেল। রোহিত ছুটছেন। ছুটছে মুম্বইও। এবার তারা প্লে অফের অনেক কাছে। শেষ চার দলের লড়াইয়ে তারা চলে আসবে। তারপর নকআউট। মুম্বই দলে অনেক ম্যাচ উইনার আছে। তারা যে কোনও দিন ম্যাচ ধরে নিতে পারেন। তা হলে মু্ম্বই কি আবার ট্রফি জিতবে! তবে জিততে হলে রোহিতকে এই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে হবে। না হলে কাজটি সহজ হবে না। মুম্বইকররা আশা করছেন, রোহিত একবার ফর্মে চলে এলে পিছন ফিরে তাকান না। তাই তারা ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।