কেকেআর: ৪ উইকেটে ২০৬ (২০ ওভার)
রাজস্থান রয়্যালস: ৮ উইকেটে ২০৫ (২০ ওভার)
আরও এক পা সামনে। প্লে অফে খেলা হবে কিনা তা নিয়ে এখনই ভেবে লাভ নেই। নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী খেলে সামনে তাকানো ভাল। সেটাই করছে কেকেআর। ১১ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে তারা ছুটছে। পাঁচ ম্যাচে পাঁচ জয় দরকার ছিল। দিল্লির পর রাজস্থানকে হারিয়ে রাহানেদের টার্গেট এখন তিনে তিন। সেটা হলে কেকেআর ১৭ পয়েন্টে যাবে। এমন হলেও ছবি পরিস্কার হবে না। লিগ টেবিলে উপরের দিকে থাকা অন্য দলগুলির দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। সেটা পরের কাজ। আগে তো নিজেদের টার্গেটে ছোটা যাক।
আট নম্বরে থাকা একটি দল কী করে ২০৭ রানের পিছনে ছুটে ম্যাচ জিতে যাওয়ার জায়গায় প্রায় পৌঁছে যায়। ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলাকে টানলেন ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার শুভম দুবে। ইডেনের বাইশ গজে এমনভাবে খেললেন, যেখানে কেকেআর অধিনায়ক রাহানের প্রেসার অনেকটাই বেড়ে গেল। জিততে হলে শেষ ওভারে রাজস্থানের দরকার ছিল ২২ রান। কেকেআরের হয়ে শেষ ওভার করতে আসেন বৈভব অরোরা। শুভম এমনভাবে মারা শুরু করলেন যা দেখে মনে হল রাজস্থান হয়তো জিতেই গেল। দুটি ওভার বাউন্ডারি ও একটি বাউন্ডারির সাহায্যে শুভম ম্যাচ প্রায় ধরে নিয়েছিলেন। জিততে হলে শেষ বলে দরকার ৩ রান। ২ রান হলে সুপার ওভার। কিন্তু এক রান হওয়ার পর দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে আর্চার রান আউট। এক রানে এগিয়ে থেকে ম্যাচ শেষ করল কেকেআর। ইডেন দেখল জয় কেকেআর।
কেকেআর ম্যানেজমেন্টের দারুন এক স্ট্র্যাটেজিতে বিকেলেই ম্যাচ থেকে প্রায় হারিয়ে গেল রাজস্থান। ১২.৪ ওভারে রাহানে যখন আউট হলেন (কেকেআর ৩ উইকেটে ১১১), তখন মনে হল এবার অফ ফর্মে থাকা আইয়ার আসবেন। কিন্তু এখানেই চমক। এর আগে বারবার বলা সত্বেও কেকেআর ম্যানেজমেন্ট তাঁদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছিলেন না। রবিবার ইডেনে পাঁচ নম্বরে ব্য়াট করতে এলেন রাসেল। হাতে অনেক বল আছে। নিজেকে সেট করে নিয়ে লম্বা খেলা কঠিন নয়। রাসেল অবশ্য সে পথে গেলেন না। তিনি আক্রমনাত্মক ক্রিকেট খেলতে ভালবাসেন। সেভাবেই খেললেন। তাঁর ২৫ বলে ৫৭ রনের ইনিংস (৪টি বাউন্ডারি ও ৬টি ওভার বাউন্ডারি, স্ট্রাইক রেট ২২৮) কেকেআরকে চালকের আসনে বসিয়ে দিল। একই সঙ্গে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও। এটা হওয়ারই ছিল। বৈভবের জন্য মঞ্চে দাদাগিরি করে গেলেন রাসেল। সঙ্গী রঘুবংশীর ৪৪ (৩১ বল) রানের ইনিংসও সময় উপযোগী হয়ে উঠল। তাই রাজস্থানের সামনে কেকেআর টার্গেট দিল ২০৭ রানের।
দিল্লির বিরুদ্ধেও এভাবে খেলে কেকেআর ম্যাচ জিতে ফিরেছিল। ইডেনে সেভাবেই শুরু করল। মঞ্চ তৈরি ছিল অন্য একজনের জন্য। সেই ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশী শুরুটা দারুন করেও হারিয়ে গেলেন। প্রথম বল দুর্দান্ত কভার ড্রাইভে বাউন্ডারি পেয়ে গেলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বল অফস্ট্যাম্পের সামান্য বাইরে পেতে পুল মারার চেষ্টা করলেন। মন্থর বলে সময় ঠিক করতে পারলেন না। বল ব্যাটের উপরের দিকের কানায় লেগে মিড উইকেটে উঁচু হয়ে উঠল। রাহানে ক্যাচ ধরার জন্য ফলো করলেন। গ্যালারির দিকে তাকিয়ে ছোটা রাহানের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরে যেতে হল বৈভবকে। বিকেলের শুরুতে গ্যালারিতে হতাশা। কেকেআর সাফল্যেও ক্রিকেট ফ্যানদের মুখে হতাশার ছবি। তাঁরা চাইছিলেন বৈভবের কাছ থেকে একটা ভাল ইনিংস। পাশাপাশি রাহানেদের জয়। কিন্তু সেটা আর হল কোথায়। যশ্বসী ভল শুরু করেও হারিয়ে গেলেন। আট ওভারের মধ্যে ৭১ রানে পাঁচ উইকেট চলে গেল রাজস্থানের। তখনই পরিস্কার, এই ম্যাচে কিছু করতে পারবে ন তারা। ২০ ওভারের আগেই হয়তো ম্যাচ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সেই জায়গা থেকে রিয়ান পরাগ ও হেটমায়ার দলকে টানলেন। কঠিন পরিস্থিতিতে রিয়ান দারুন ইনিংস খেললেন। আট ওভারে রিয়ান হেটমায়ার জুটি যোগ করল ৯২ রান। কিন্তু হেটমায়ার আউট হওয়ার পর ছন্দপতন। তার পরপরই ফিরলেন রিয়ান (৪৫ বলে ৯১, ৬টি বাউন্ডারি ও ৮টি ওভার বাউন্ডারি)। ১৭.৪ ওভারে রাজস্থান ৭ উইকেটে ১৭৩। আর কতদূর! কিন্তু তারপর শুভম যে এভাবে চমক দেবেন তা আগে কে ভেবেছিল। তবে তীরে এসে তরি ডুবল। শহর কলকাতা থেকে ম্যাচ হেরে রাজস্থানকে মাথা নিচু করে ইডেন ছাড়তে হল।