রুদ্ধশ্বাস। নাটকীয়তায় মোড়া। পেন্ডুলামের মতো দোদুল্যমান প্রতিটি প্রহর। অনেক কিছু বিশেষণকে সামনে নিয়ে এসে ইন্টার মিলান বনাম বার্সেলোনা ম্যাচে ব্যবহার করা যায়। সান সিরোতে রোমাঞ্চকর ম্যাচের মুহূর্তগুলো যখন কারও মনে পড়বে নিঃসন্দেহে কখনও ভুলতে পারবে না। ৪-৩ গোলে ম্যাচ জিতে মিলান চলে গেল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। দু-লেগ মিলিয়ে খেলার ফল গিয়েে দঁাড়াল ৭-৬। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এই সেমিফাইনাল সব উত্তেজনাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। নির্ধারিত সময়ে খেলার ফল ছিল ৩-৩। অতিরিক্ত সময়ের খেলায় মিলানের হয়ে বাজিমাত করেন ডেভিড ফ্র্যাত্তেসি।
এস্তাদি অলিম্পিক লুইস কোম্পানির মাঠে গত সপ্তাহে যখন খেলা শেষ হয় তখনই চাপে পড়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা। কারণ একটাই, ৩-৩ ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ফাইনালে উঠতে গেলে বার্সেলোনাকে সান সিরোতে গিয়ে জিততেই হতো। অথচ ইতিহাস বলছে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে কখনও সান সিরোতে হারেনি মিলান। তাছাড়া এই মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মিলান ৯৭২ দিন অপরাজিত। এতকিছু প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে বার্সার পক্ষে ফাইনালে ওঠা ছিল বেশ কষ্টকর। বিরতির আগে লাওতারো মার্তিনেজ ও হাকান চালহানোয়লুর করা ২-০ গোলে বার্সা পিছিয়ে পড়ার পর সেই ধারণা আরও বদ্ধমূল হয়ে দঁাড়ায়। তবে বিরতির পর সকলকে চমকে দেয় বার্সা। খেলা শুরুর মিনিট ১৫-র মধ্যে ম্যাচে সমতায় ফিরিয়ে আসে বার্সেলোনা। গোলদুটি করেন এরিক গার্সিয়া ও দানি ওলমো। ৮৮ মিনিটে রাফিনিয়া ফের গোল করে বার্সার নিশ্চিত জয়ের ঠিকানা লিখে ফেলেছিলেন। তারমানে নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হতে তখন বাকি ছিল মাত্র দু-মিনিট। কামব্যাক বার্সাকে নিয়ে তখন অনেকে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। ঠিক সেই সময় ছন্দপতন। ইনজুরি টাইমের তৃতীয় মিনিটে গোল করে মিলানকে ৩-৩ করে দেন ডেনজেল ডামফ্রিসের ক্রস থেকে সেন্টারব্যাক ফ্রান্সেসকো আচেরবি। ফলে দু-লেগ মিলিয়ে তখন খেলার ফল গিয়ে দঁাড়ায় ৬-৬। অতিরিক্ত সময়ের খেলাতেই মিলানের বাজিমাত। ইরানের স্ট্রাইকার মেহদী তারোমির ক্রস থেকে গোল করে যান ফ্র্যাত্তেসি।
তবে মিলানের এই জয়ের নেপথ্যে একজনই নায়ক, তিনি হলেন গোলকিপার ইয়ান সোমের। সুইস গোলকিপার যেভাবে ইয়ামালের গোলমুখী শট একের পর এক রক্ষা করেছেন যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। হয়তো বলবেন, দু-লেগ মিলিয়ে যিনি ৬টা গোল খেয়েছেন তিনি আবার নায়ক হতে পারেন নাকি। অথচ ম্যাচের পরিসংখ্যান বলছে, দ্বিতীয় সেমিফাইনালে শুধু বঁাচিয়েছেন নিশ্চিত সাতটা গোল। দু-লেগ মিলিয়ে সেই সংখ্যা হল ১৪। বার্সার সমর্থকদের মতোই হতাশ করেছেন তিনি ইয়ামালকে। মঙ্গলবার রাতে ইয়ামাল গোলমুখী শট নিয়েছিলেন ৫টা। কিন্তু কোনওবারেই সোমের বাধা পেরোতে পারেনি। অথচ নিজেদের মাঠে ইয়ামাল বার্সাকে ম্যাচে ফিরিয়ে নায়ক হয়েছিলেন। তবে ১১৪ মিনিটের সেভ অবিশ্বাস্যের খাতায় লেখা থাকবে। বক্সের বঁা প্রান্ত দিয়ে ভিতরে ঢুকে বঁাক খাওয়ানো শট নিয়েছিলেন ইয়ামাল। স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রতিটি দর্শক তখন ধরেই নিয়েছেন জালে বল জড়িয়ে গিয়েছে। অথচ শরীরকে যতটা সম্ভব শূন্যে ভাসিয়ে আঙুলের স্পর্শে সেই বল বাইরে পাঠিয়ে দেন সোমের। তখন কিন্তু পিছিয়ে ছিল মিলান। খেলার পর তাই এই গোল বঁাচানোর কথা তুলে ধরে সোমেরকে বলতে শোনা যায়। “লামিনের শটে শেষ গোল বঁাচানোটা আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বক্সের ভিতরে ঢুকে যেভাবে শট নিয়েছিল তা গোল হওয়ার কথাই ছিল। ভাললাগছে, সকলের ধারণাকে পাল্টাতে পেরেছি। তবে এই ম্যাচ থেকে আমাদের একটাই শিক্ষা নেওয়া উচিত, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যেন অপেক্ষা করি। পিছিয়ে পড়লেও ভেঙে পড়া চলবে না। এই মুহূর্তগুলোর জন্যই তো এত পরিশ্রম, এত প্র্যাকটিশ। সবশেষে আমরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলব। এরচেয়ে বেশি আনন্দের আর কী হতে পারে।” বক্তা উচ্ছ্বসিত সোমের।

সিনার শীর্ষে, দ্বিতীয় স্থানে আলকারাজ
গতবার জকোভিচকে ফাইনালে হারিয়ে ট্রফি তুলে ধরেছেন উইম্বলডন বিজয়ী আলকারাজ।