আশঙ্কার ঘনমেঘ সরে গেল ইস্টবেঙ্গলের উপর থেকে। ফের তারা ফিরে এলো জয়ের সরণীতে। শুধু ফিরল তাই নয়, প্রতিপক্ষকে একপ্রকার গুঁড়িয়ে দিল ৯০ মিনিটের মধ্যে। ইস্টবেঙ্গল জিতল ১৪-১ গোলে। হারাল সরোজিনী নাইডু ওরিয়েন্ট স্পোর্টস ক্লাবকে।
না, এমনটা যে হবে বোধহয় ইস্টবেঙ্গলের অতি গোঁড়া সমর্থকও ভাবেননি। শুক্রবার রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে শুরু থেকে খেলা বেশ জমে উঠেছিল। যদিও ৬ মিনিটের মধ্যে প্রথম গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন দেবলিনা ভট্টাচার্য। এই গোল খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে সরোজিনী তা শোধও করে দেয়। তারপর থেকেই শুরু হয় ইস্টবেঙ্গল ঝড়। যেখানে তছনছ করে দেয় প্রতিপক্ষ শিবিরকে। একের পর এক আক্রমণে তখন সরোজিনী ডিফেন্স মনে মনে ভাবছে ছেড়ে দে মা কেঁদে বঁাচি। তবু বুক চিতিয়ে লড়াই করছিল প্রতিপক্ষ শিবির। সেই মুহূর্তে একটা অপ্রত্যাশিত গোল খেয়ে বসে দল। গোলটির জন্য সম্পূর্ন দায়ী গোলকিপার সরস্বতী সোরেন। শট মেরেছিলেন কার্তিকা আঙ্গামুথু। সেই শট তালুবন্দী করতে গিয়ে হাত ফসকে গোলে ঢুকে যায়। ফলে গোল তো খেলই সরোজিনী। উল্টে গোলকিপারের মনোবল সম্পূর্ন ভেঙে চৌচির হয়ে গেল। মনের মধ্যে একটা কঁাপুনি এসে গেল সরস্বতীর। তারপর থেকে যে বল গোলের দিকে আসতে থাকে তাতেই দেখা যায় সরস্বতীর আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেছে। তাই বিরতির আগেই ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে যায় ৫-০ গোলে। এক এক করে গোল করে যান ইস্টবেঙ্গলের আস্থাম ওঁরাও, সুস্মিতা লেপচা, দেবলিনা ভট্টাচার্য। বিরতির পর বাকি নটা গোল হয়। ইস্টবেঙ্গলের তিনজন হ্যাটট্রিক করেছেন। তিন হ্যাটট্রিককারী হলেন-দেবলিনা ভট্টাচার্য, আস্থাম ওঁরাও, কার্তিকা আঙ্গামাথু। বাকি গোলদাতারা হলেন সুস্মিতা লেপচা (২), সুস্মিতা বর্ধন, সাথী দেবনাথ ও প্রিয়াঙ্কা সুজেশ। দলের হয়ে ৭৬ মিনিটে শেষ গোলটি করে যান প্রিয়াঙ্কা। ইস্টবেঙ্গল গতম্যাচে হেরে গিয়েছিল কালিঘাট স্পোর্টস লাভার্সের কাছে। শুক্রবার তাই শপথ নিয়ে নেমেছিলেন লাল-হলুদ ব্রিগেড। তাই ঘুরে দঁাড়াতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। কেন এমন হল জানতে চাইলে সরোজিনীর কোচ রাজু ওঁরাও আফসোসের সুরে বলছিলেন,“আসলে আমাদের গোলকিপার সরস্বতী দ্বিতীয় গোলটা খাওয়ার পর থেকে পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। তারপর যা বল গিয়েছে তাই গোল হয়ে গিয়েছে। এমনিতেই ইস্টবেঙ্গল বড় দল। তারউপর তারা আই লিগ জিতেছে। ফলে মনোবল তাদের তুঙ্গে। সেই দলকে তবু আমরা শুরুতে রুখে দিয়েছিলাম। প্রথম গোল খাওয়ার পর তা শোধও করে দিই। কিন্তু সব তালগোল পাকিয়ে গেল দ্বিতীয় গোলটা খেয়ে। ইস্টবেঙ্গলের কার্তিকার শট ধরতে গিয়ে গোল খেয়ে বসল। হাত ফস্কে বল জালে জড়িয়ে যায়। সেই যে গোল খেলাম তারপর থেকে আর আমরা ঘুরে দঁাড়ানোর মানসিকতা দেখাতে পারিনি। যদি গোলকিপারের কাছে যে কোনও বল গেলে গোল হয়ে যায় তখন দলের বাকিদের কিছু করার থাকে না।” বলছিলেন রাজু।
গতম্যাচে জেতার পথ ধরেই ফের শুক্রবার জিতল কালিঘাট স্পোর্টস লাভার্স। এদিন তারা হারিয়ে দেয় ৪-০ গোলে সেবায়নী সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারকে। দলের হয়ে গোলগুলি করেন প্রমীলা দাস ও পুজারি রায়। অপর ম্যাচে ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ-জে্যার্তিময় অ্যাথলেটিক ক্লাবের মধ্যে খেলাটি ১-১ গোলে ড্র হয়ে যায়।