ভুলটা শুরুতেই ভেঙ্গে গেল। ১২ মে টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিরাট কোহলির অবসর ঘোষণার পর অনেকেই বলেছিলেন, বন্ধুর কারনেই নাকি এমন সিদ্ধান্ত।
রোহিতের সঙ্গে বিরটের সম্পর্ক গভীর। সাম্প্রতিককালে অনেক বেড়েছে। তাই রোহিত শর্মার অবসরের ঘোষণা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। হিটম্যানের অবসরের পাঁচদিনের মাথায় বিরাট অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।
কী এমন ঘটনা ঘটল যে বিরাট টেস্ট ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন। একথাও শোনা গিয়েছিল, বিরাট নাকি বোর্ডকে অবসরের কথা আগে জানিয়ে দিয়েছিলেন। এমন কথা শোনার পর বোর্ড ঠিক করেছিল, তাঁর সঙ্গে এ নিয়ে আলাদাভাবে কথা বলা হবে। প্রয়োজনে কোন সিনিয়র ক্রিকেটারকে এই কাজে ব্যবহার করা হবে। তেমন কিছুই হল না। বিরাট টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ালেন।
ইংল্যান্ড সফরের জন্য দল নির্বাচনের পর নির্বাচক প্রধান অজিত আগারকর মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে আসেন। দল নির্বাচন নিয়ে একথা-সেকথার পর বিরাট প্রসঙ্গ চলে এল। আগারকরের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে বিরাট কবে অবসরের কথা বোর্ডকে জানিয়েছিলেন! এরপর আগরকর যা বললেন, তাই শুনে সবাই অবাক। তা হলে এই খবর এতদিন চাপা ছিল! কী করে এমনটা হল! কারোর কাছে তখন উত্তর নেই।
তো শুনে নেওয়া যেতে পারে আগারকর কি বলেছেন। নির্বাচক প্রধান আগারকর বলেন, এপ্রিলের শুরুতে বিরাট আমাদের জানিয়ে দিয়েছিল, টেস্ট ক্রিকেট আর খেলতে চায় না।
হ্যাঁ, অবাক লাগলেও কথাট সত্যি। অস্ট্রেলিয়া থেকে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি হেরে দেশে ফিরে আসার পর বিরাট এ নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেন। তারপর নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে টেস্ট ক্রিকেট আর তিনি খেলবেন না। বোর্ড সব শুনে তাঁকে পুনরায় ভাবার জন্য অনুরোধ করে। এর প্রায় দেড় মাস পর বিরাট সরকারিভাবে অবসরের কথা জানিয়ে দেন। কেন বিরাট টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ালেন। এমন প্রশ্ন আগারকরের কাছে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, বিরাট হয়তো মনে করেছে টেস্ট ক্রিকেটে নতুন করে কিছু দেওয়ার নেই। টেস্টে মাঠে নেমে যে কট বল খেলেছে, তার পিছনে দুশো শতাংশ মনেনিবেশ করেছে। একই কথা ফিল্ডিংয়ের সময়ও করেছে। প্রত্যেকটা বলের পিছনে ছোটার সময় ওর লক্ষ্য একশো শতাংশ সঠিক থেকেছে। নিজের সবটা দিয়েছে। ওর হয়তো মনে হয়েছে এখনও টেস্ট ক্রিকেট খেললে সেটা আর সম্ভব হবে না। তাই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা সেই সিদ্ধান্তকে সন্মান জানিয়েছি।
আগারকর অনেক কিছুই শোনালেন। সাদা চোখে সব মেনে নিলে কিছু বলার থাকে না। এটাই মনে হবে কোনও চাপে পড়ে বিরাট এমন সিদ্ধান্ত নেন নি। নিজের যা ভাল হয়েছে, তাই তিনি করেছেন। তা হলে সিডনি টেস্টের আগে কেন তাঁর কাছে আগারকর জানতে চেয়েছিলেন টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে বিরাটের ভবিষ্যত ভাবনা কি! শোনা যায়, এই কথোপকথনের সময় কোচ গম্ভীর কাছেই ছিলেন। তিনি অবশ্য কোনও কথা বলেননি। পারথ টেস্টে সেঞ্চুরির পর বিরাটের ব্যাটে রান ছিল না। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে তিনি বারবার আউট হয়ে যাচ্ছিলেন। হতাশা থেকে হয়তো এমন আলোচনা সেদিন হয়েছিল। কিন্তু বিরাট সেটা হয়তো ঠিকভাবে নেন নি। দলরে সতীর্থরা জানিয়েছিলেন, বিরাট অনেকবার নাকি বলেছিলেন, এরপর আর টেস্ট ক্রিকেট তিনি খেলবেন না। কেউ বিশ্বাস করেননি। ভেবেছিলেন বিরাট রসিকতা করছেন। কিন্তু তারপর এমনটা যে হবে তার আভাস কারোর কাছে ছিল না।
বিরাট সরছেন। এমন আভাস পাওয়ার পর কি নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট রোহিতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি। তাঁরা বুঝে গিয়েছিলেন, নেতৃত্ব থেকে সরানো হলে রোহিত নিজেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেবেন। সেটাই হল। দুই সিনিয়র ক্রিকেটার সরে যেতে গম্ভীরদের কাজ সুবিধা হয়ে গেল। তরুন ব্রিগেড নিয়ে তাঁরা ছোটার চেষ্টা করবেন। সেখানে কেউ বলার থাকবে না। এর থেকে ভাল আর কি হতে পারে।