অবাক লাগে, তাই না! এতটাই ফারাক! আইপিএল খেলে সহজেই কোটিপতি হতে পারেন ক্রিকেটাররা। আর জাতীয় দলে খেলল খুঁড়িয়ে হাঁটা। উদাহরন হাতের কাছেই। ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশী এবার আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে অভিষেকে বাজিমাত করেছে। ব্যাটে চমক দিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে অবাক করেছে। রানের সঙ্গে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছে প্রায় কোটি টাকা। তাকে দেখে অনেক বাচ্চা এবার জাতীয় দলের খেলার স্বপ্ন ছেড়ে আইপিএল খেলতে চেষ্টা চালাবে। এ এক লটারির মতো। লাগলে মুহূর্তে কোটিপতি। ডাগআউটে বসে থাকলেও টাকার অঙ্ক খারাপ হবে না।
কবছর আগে এক ভদ্রলোক বলছিলেন, এখন ক্রিকেট ক্যাম্পের আলোচনা বদলে গিয়েছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে বাচ্চা ক্যাম্পে এসে প্র্যাকটিস করল। কিছুদিন পর তার ববা-মায়ের প্রশ্ন স্যর আমার ছেলে কি আইপিএল খেলতে পারবে! তাঁরা ক্লাব ক্রিকেট, রাজ্য দল বা জাতীয় দলের কথা জানতে চাইছেন না। প্রশ্ন একটাই, ছেলে আইপিএল খেলতে পারবে কিনা! তার মধ্যে সেই মশলা আছে কিনা। আগে এই প্রশ্ন অন্যরকম ছিল। আইপিএল যুগে তা বদলে গিয়েছে।
এবার বৈভবকে দেখে, তার সম্পর্কে সব কিছু জানার পর সেই বাবা- মায়ের প্রশ্ন আরও কয়েকগুন বেড়ে যাবে। তাঁদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আইপিএলে ঢুকে যেতে পারলে ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। কোটি টাকা রোজগার করতে অসুবিধা হবে না। এর জন্য মনে হয়ে দায়ি বৈভবদের মতো ক্রিকেটাররা। আর কিছুটা হলেও সোশ্যাল মিডিয়া। বাড়িতে স্মার্ট ফোন আছে। সেই ফোন অনেক অজানাকে সামনে নিয়ে আসছেন। ভারতীয় অনুধ্ব ১৯ দলে বৈভব সুযোগ পেতে খবর নেওয়া শুরু হল। এবার কত টাকা পাবে বৈভব। জাতীয় দলে খেলার জন্য পারিশ্রমিকের অঙ্ক শুনে সবাই অবাক। প্রশ্ন এমন আবার হয় নাকি। আসলে বাস্তবকে মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন হারিয়ে গিয়েছে। সেখানে জায়গা করে নিয়েছে আইপিএল।
একবার বৈভবের পারিশ্রমিকের দিকে তাকানো যাক। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলে প্রতি ম্যাচে বৈভব পেয়েছে সাড়ে সাত লাখ টাকা। টুর্নামেন্টে সাতটি ম্যাচ খেলেছে বৈভব। তার অর্থ বৈভববাড়ি নিয়ে গিয়েছে ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে নানা পুরস্কারের অর্থ। তা হলে টাকার অঙ্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে! ১৪ বছরের ছেলের এই উপার্জন অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে! কিন্তু সত্যিকে তো মেনে নিতে হবে।
এবার জাতীয় দলের কথায় আসা যাক। ইংল্যান্ডে অনুধ্ব ১৯ ভারতীয় দল খেলবে পাঁচটি একদিনের ম্যাচ। সঙ্গে দুটি চারদিনের ম্যাচ। এই সিরিজ থেকে বৈভবের উপার্জন কত হবে। জানা গেল, এই স্তরে খেলার জন্য ম্যাচ পিছু ক্রিকেটাররা পাবে ২০ হাজার টাকা। চারদিনের ম্যাচের ক্ষেত্রে টাকার অঙ্ক বাড়বে। ইংল্যান্ডে খেলে দেশে ফিরে আসার পর বৈভবদের পকেটে কত টাকা ঢুকবে! আইপিএলে এক ম্যাচ খেলে যে টাকা পেয়েছে, তার থেকেও কম। তা হলে কি দাঁড়াল! জাতীয় দলের হয়ে হিল্লি দিল্লি না করে বছরে তিন মাস আইপিএল খেললে টাকা নিয়ে ভাবতে হবে না। তা হলে ক্রিকেট ক্যাম্পে ছেলেকে নিয়ে আসা বাবা- মায়ের প্রশ্ন কি কঠিন ছিল। ছেলের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে এখন জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট খেলার দরকার নেই। আইপিএল খেল, ব্যাঙ্ক ব্যালান্স বাড়িয়ে নাও। এটাই তো স্লোগান হয়ে গিয়েছে। তাই আইপিএলে নিয়ে পড়ে থাকাই তো ভাল।