কার্লো আনচেলেত্তি ব্রাজিলের কোচ হওয়া নিয়ে তদন্তে নামল ফিফা বা বিশ্ব ফুটবল সংস্থা। গত কয়েকদিন ধরে এই বিষয়টা নিয়ে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল। এবার তা এলো প্রকাশ্যে। ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন বা সিবিএফের কাছে ফিফা স্পষ্ট জানতে চাইল, আনচেলেত্তিকে কোচ হওয়ার বিষয়টা সবিস্তারে জানাতে হবে। নাহলে কড়া শাস্তির মুখে পড়বে ব্রাজিল। এখন দেখার কঠিন বিষয়টা থেকে কীভাবে সিবিএফ বেরিয়ে আসতে পারে।
প্রশ্ন হল, আনচেলেত্তি ব্রাজিলের কোচ হলে ফিফার সমস্যা কোথায়? ফিফা কি কখনও একটা ফেডারেশনকে এভাবে পরিচালিত করতে পারে? কিংবা ফিফার কি এক্তিয়ার আছে ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন কাকে কোচ করল না করল সেদিকে খেয়াল রাখার? সব প্রশ্নের উত্তর হবে একটাই, ফিফার নাক গলানোর ক্ষমতা আছে। নিয়ম বিরুদ্ধে হলেই তারা তদন্তে নামতে পারে। তেমন অধিকার তাদের আছে। ইতালিয়ান কোচকে ব্রাজিল দলের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে সমস্যাটা হল একটা জায়গাতেই। কোন জায়গায়? আনচেলেত্তিকে ব্রাজিল দলের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে মধ্যস্থতা করেছেন দিয়োগো ফার্নান্দেজ। কে এই ফার্নান্দেজ? তিনি হলেন মাদ্রিদের একজন ব্যবসায়ী। যঁাকে আনচেলেত্তিকে রাজি করানোর জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন তদকালীন সিবিএফের সভাপতি এডনাল্ডো রদ্রিগেজ। যদিও তিনি এখন আর সিবিএফের সভাপতি নন। ১৫ মে রিও ডি জেনেইরোর আদালত অপসারণ করেছে এডনাল্ডো রদ্রিগেজকে। রবিবার বিতর্কিত এক নির্বাচনের মাধ্যমে সিবিএফের নতুন সভাপতি হয়েছেন সামির জাউদ। যখন দিয়োগো ফার্নান্দেজ নিয়মিত আলোচনা করতেন আনচেলেত্তির সঙ্গে তখন উপস্থিত থাকতেন রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের প্রতিনিধি হোসে আনহেল সানচেজ। আনচেলেত্তিকে কোচ হওয়ার জন্য রাজি করাতে ফার্নান্দেজকে সিবিএফ দিয়েছে ১২ লাখ ইউরো। এখানেই প্রশ্ন তুলেছে ফিফা। কেন? ফিফা জানতে চেয়েছে কেন ফার্নান্দেজকে মোটা কমিশন দিয়েছে সিবিএফ? মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এত মোটা অর্থের কমিশন দেওয়ার পিছনে কারণ কি?
ফিফার এই ব্যাখ্যা চাওয়ার পেছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। ফিফা সংবিধানে ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বলা আছে, যদি কোনও ফুটবলার বা কোচের নতুন কোন জায়গায় নিয়োগ হয় তাহলে পুরো বিষয়টা দেখভাল করবেন কেবলমাত্র পেশাদার এজেন্ট। অর্থাত্্ ফিফার লাইসেন্স পাওয়া এজেন্টকে এই কাজে পুরোপুরি যুক্ত করতে হবে। যে কেউ এসে এই ব্যাপারে নাক গলাতে পারবে না। ফিফার সংবিধানে বলা আছে- ‘ফুটবল এজেন্ট নয়, এমন কাউকে দিয়ে যদি ক্লাব বা কোনও সংস্থা ফুটবলার বা কোচকে নিতে চায় তাহলে তিনি চুক্তি সইয়ের সময় কোনও ভাবে ফুটবল এজেন্ট হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পারবেন না। কোনও ভূমিকায় তঁাকে রাখা অসম্ভব।’ মজার ঘটনা হল, সিবিএফের সঙ্গে আনচেলেত্তির যে চুক্তি হয়েছে সেখানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নাম আছে মাদ্রিদ ব্যবসায়ী ফার্নান্দেজের। তিনি আবার লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফিফার এজেন্ট নন। তাই ফিফা এখানেই প্রশ্ন তুলে বসেছে। খবর অনুযায়ী ৪ জুনের মধ্যে সিবিএফকে সবিস্তারে ব্যাখ্যা দিতে হবে। অথচ তারপরের দিন ৫ জুন বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের খেলা রয়েছে ব্রাজিলের। তাই এখন কী হবে এই নিয়ে ব্রাজিল জুড়ে জোর উঠেছে গুঞ্জন।
এমনিতেই আনচেলেত্তিকে নিয়ে ব্রাজিল ফুটবল মহলে ক্ষোভ তীব্র। কিংবদন্তী প্রাক্তন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা মনে করছেন, তঁাদেরকে অসম্মান করল সিবিএফ। বিশ্ব জুড়ে যেখানে ব্রাজিলিয়ানদের নিয়ে যাওয়া হয় কোচ হিসেবে সেই দেশেই কিনা নিয়ে আসা হল একজন বিদেশিকে। যা ব্রাজিল ফুটবলের ইতিহাসে আগে কখনও হয়নি। যে দুবার বিদেশি কোচ ব্রাজিল দলের দায়িত্বে এসেছেন তঁাদের মেয়াদ ছিল মাত্র কয়েক ঘন্টার। কিংবা কয়েকটা দিন মাত্র। অথচ আনচেলেত্তিকে নিয়ে আসা হয়েছে দীর্ঘমেয়াদে। তাছাড়া ফার্নান্দেজের উপর দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে সিবিএফের উপর জোর চটে যায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। কোপ পড়ে ফার্নান্দেজের উপরও। গত রবিবার যখন আনচেলেত্তি ব্রাজিলে পা রাখেন তখন তঁার সঙ্গী ছিলেন ফার্নান্দেজ। জানানো হয়েছিল, তিনি আবার সিবিএফের প্রতিনিধি। ফিফা যে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে সেখানে সিবিএফকে দিতে হবে আনচেলেত্তির সঙ্গে চুক্তিপত্রের প্রতিলিপি ও লেনদেনের যাবতীয় শর্তাবলী। ইতিমধ্যে ফার্নান্দেজ আরও একটা কারণে ব্রাজিলিয়ানদের কাছে বিরাগভাজন হয়েছেন। কি কারণ? মাদ্রিদের ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে এই বিষয়টাকে যাতে প্রচারের তুঙ্গে রাখা যায় তারজন্য একটা এজেন্সিকে কাজে লাগান। তাই কোনও কিছু আর গোপন থাকেনি। সবকিছু ফঁাস করে দিয়েছেন সিবিএফের উচ্চস্থানীয় কর্তাব্যক্তিরা। শেষমেশ সিবিএফ কীভাবে সমস্যার সমাধান করে সেটাই এখন দেখার বিষয় হয়ে রইল।

সিনার শীর্ষে, দ্বিতীয় স্থানে আলকারাজ
গতবার জকোভিচকে ফাইনালে হারিয়ে ট্রফি তুলে ধরেছেন উইম্বলডন বিজয়ী আলকারাজ।