প্রত্যাবর্তনের লড়াই যে এতটা মধুর করে তুলতে পারেন তা টেনিস মহল বোধহয় প্রথম দেখল। জানতে পারল ৩৮ বছর বয়সটা তঁার কাছে স্রেফ সংখ্যা। নাহলে নোভাক জকোভিচ এভাবে অনায়াস ভঙ্গিতে সেমিফাইনালে পৌছতে পারতেন না। হারালেন কাকে? যিনি আবার কিনা ২০২৪ সালের ফরাসি ওপেনের রানার্স আলেকজান্ডার জাভেরভকে। খেলার ফল ৪-৬, ৬-৩, ৬-২ ও ৬-৪। সেমিফাইনালে মুখোমুখি হলেন জানিক সিনারের। সেই সঙ্গে ৫১তম গ্র্যান্ড স্লাম সেমিফাইনালে পৌছে রেকর্ড গড়লেন জকোভিচ।
প্রথম সেট হারার পর ৩৮ বছরের তরুনের মনে ধাক্কা লাগা স্বাভাবিক। অথচ প্রথম সেট হারার পর আর কোনও সার্ভিস তিনি হারাননি। চতুর্থ সেটে একটা সময় ৩-২ ব্যবধানের সময় ব্রেক পয়েন্ট উদ্ধার করার সময় ৪১ শটের খেলা ছিল। যা সকলকে চমকে দেয়। খেলার শেষে তিনি জানিয়ে দেন, সিনারের বিরুদ্ধে খেলার জন্য তিনি এবার প্রস্তুত। “আমি দৌড়নোর উপর ভিত্তি করে খেলে থাকি। জানি এই বয়সে এসে এতটা দৌড়ের ধকল নেওয়া অসম্ভব।” খেলার শেষে বলেন ফরাসি ওপেনে দ্বিতীয় বয়স্ক হিসেবে সেমিফাইনালে ওঠা জকোভিচ। সিনার এবার ফরাসি বিপ্লব ঘটাতে চান। কোনওদিন ফরাসি ওপেন জেতেননি। তিনিও রয়েছেন দুর্ধর্ষ ফর্মে। সেমিফাইনালে উঠে এসেছেন একটা সেট না খুইয়ে। গতবছর কার্লোস আলকারাজের কাছে সেমিফাইনালে হেরে গিয়েছিলেন। তবে লড়াই হয়েছিল সেয়ানে সেয়ানে।
জকোভিচ এবার যেন প্রতিজ্ঞা নিয়ে পা দিয়েছেন প্যারিসের মাটিতে। দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন তিনিও। হতে পারে ক্রমাগত ব্যর্থতার পর তঁাকে নিয়ে টেনিস মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। অনেকে এও বলেছিলেন, জকোভিচের জমানা শেষ। সেইজন্য বোধহয় বাড়তি তাগিদ দেখাতে শুরু করেছেন সার্বিয়ান তারকা। মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে জাভেরেভের কাছে খেলা চলাকালীন চোট পেয়ে বসায় ম্যাচ ছেড়ে িদতে বাধ্য হয়েছিলেন সার্বিয়ান তারকা। কিন্তু বুধবার রাতে জেতার পর জকোভিচকে বলতে শোনা যায়, “এখানে আলকারাজ ও জাভেরেভের বিরুদ্ধে জেতাটাই প্রমাণ করে যে আমি এখনও সর্বোচ্চ স্তরে খেলার মতো জায়গায় আছি। আসল সময়ে জ্বলে ওঠার মতো মনোবল এখনও আমার আছে। তাই সেরাটা দিতে কুন্ঠাবোধ করিনা। এটুকু বলতে পারি, সেমিফাইনালে খেলার জন্য আমি প্রস্তুত।” জাভেরেভকে একসময় ধরা হচ্ছিল জকোভিচ, মারে, নাদাল, রজার ফেডেরার স্থান পূরণের প্রধান দাবিদার হিসেবে। তবে প্যারিসের মাটিতে প্রমাণ হল, জাভেরেভ এখনও জকোভিচকে সহজে হারানোর জায়গায় আসেননি। টেনিস মহল মনে করছে, জাভেরেভ বুধবার কেমন যেন নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ম্যাচ চলাকালীন দেখা গিয়েছে বেশিরভাগ সময় তিনি বেসলাইনের পিছনে রয়েছেন। এও হতে পারে, জকোভিচ অনেক বেশি সদর্থক খেলা খেলেছেন বলেই জাভেরেভকে পিছু হঠতে বাধ্য করে। ৩ ঘন্টা ১৭ মিনিট ধরে চলা এই ম্যাচে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, জকোভিচ এখনও যে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বীকে সমস্যায় ফেলার ক্ষমতা রাখেন।
ফরাসি ওপেনে বৃহস্পতিবার মেয়েদের সেমিফাইনালে ইগা সিয়ানটেক-সাবালেঙ্কা ও বইসোন-কোকো গফ মুখোমুখি হবেন।