ভবানীপুর-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচকে ঘিরে ধুন্ধুমার কান্ড ঘটে গেল সিএবিতে। ঘটনার রেশ শেষ অব্দি গড়াল দুই ক্লাব কর্তারা হাতাহাতিতে। বৃষ্টির জন্য মাঝপথে খেলা ভেস্তে যাওয়ায় দু-দলকে যুগ্নজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক শুরু থেকেই ছিল। তারপর ক্রিকেটারদের মধ্যে অশান্তিতে ম্যাচ সাময়িক বন্ধ থাকা। শেষমেশ ৬ ঘন্টা খেলা বন্ধ থাকার পর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে খেলা ফের শুরু হয়। সেখানেই নাটক শেষ হয়নি। পরে এক ঘন্টায় মাত্র তিন ওভার হওয়া নিয়ে ঝামেলা বঁাধে। সব মিলিয়ে দু দলের মধ্যে রেষারেষি চলছিল তুঙ্গে। অবশেষে সেই ঝামেলার পরিণতি গিয়ে ঠেকল দু-দলের হাতাহাতিতে। সিএবি কর্তারা এগিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাতে অবশ্য চিড়ে ভেজেনি। পরে সিএবি বাধ্য হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়।
সিএবির বর্তমান লিগের পরিকাঠামো অনুযায়ী পঁাচদিনের খেলা হয়ে থাকে। কিন্তু ঝামেলা শুরু খেলার দ্বিতীয় দিন থেকেই। সমস্যার সূত্রপাত একটা আউটকে কেন্দ্র করে। ভবানীপুর ক্লাবের ক্রিকেটার শাকির হাবিব গঁাধীকে আম্পায়ার আউট দেন। ব্যাটসম্যান চলে গিয়েছিলেন ড্রেসিংরুমে। সেই সময় লেগ আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলে সেই ব্যাটসম্যানকে নট-আউট ঘোষণা করে ফের ডেকে নেওয়া হয়। মানতে চায়নি ইস্টবেঙ্গল। ক্ষোভে ফেটে পড়ে লাল-হলুদ শিবির। খেলা পঁাচ ঘন্টা বন্ধ থাকে। সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় দু-দলের সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটা মেটানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতে কিছুই হয়নি। সমস্যার সমাধান ঘটে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে। পরবর্তীকালে খেলা শুরু হলে কী হবে, খেলার নামে প্রহসন হতে থাকে। তৃতীয় দিনে মাত্র তিন ওভার বল করে সকলকে চমকে দেয় ইস্টবেঙ্গল। লাল-হলুদ শিবিরের একটাই বক্তব্য ছিল, ড্রেসিংরুম থেকে ক্রিকেটারকে ফিরিয়ে নিয়ে ক্রিকেটকে হত্যা করা হয়েছে। তারপর তঁারা খেলার জন্য মাঠে নেমেছেন এটাই যথেষ্ট। ভবানীপুর শুরু থেকেই বলে আসছে, ক্রিকেটীয় আচরণ মোটেই দেখাচ্ছে না ইস্টবেঙ্গল। এইভাবে বক্তব্য ও পাল্টা বক্তব্য কয়েকদিন ধরে চলছিল। বৃহস্পতিবার ঘটল সেই ঘটনার চরম পরিণতি।
বৃহস্পতিবার কী ঘটেছিল? ইস্টবেঙ্গলের স্কোর যখন ৮ উইকেটে ২৪৩ তখন ঝিরঝির করে বৃষ্টি নামে। তবে বৃষ্টির মাত্রা এতটা জোর ছিল না যে খেলা বন্ধ করে দিতে হবে। ভবানীপুর দাবি জানাতে থাকে, এই বৃষ্টিতে খেলা না হওয়ার কোনও কারণ নেই। আসলে ভবানীপুরের লক্ষ্য ছিল দু-উইকেট তুলে নেওয়া। তাহলে প্রথম ইনিংসের লিড নেওয়ার সূত্রে তারা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত। সেই সূত্রে ভবানীপুরে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। অভিযোগ, যখন বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায় তখন মাঠ ছেড়ে ভবানীপুর দলের সঙ্গে ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় ও কনিষ্ক শেঠ। সেই সময় মাঠের মধ্যে দুই ব্যাটারের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় সাকিরের। সেই ঝামেলাকে কেন্দ্র করে দু-দলের কর্তারা একে অপরের দিকে তেড়ে যেতে থাকে। তখন দু-দলের ড্রেসিংরুমের সামনে প্রচুর লোকের জমায়েত। প্রশ্ন হল, এত মানুষের সমাগম ঘটা সত্ত্বেও সিএবি কেন নিশ্চুপ থাকবে? কেন বাড়তি নিরাপত্তা রক্ষী সেখানে মোতায়েন করা হবে না? যদি প্রথম থেকে সতর্ক থাকতো সিএবি তাহলে এই ঝামেলা বাধেই না। যাইহোক দু-দল ড্রেসিংরুমের সামনেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। সিএবি-র পদাধিকারীরা ছুটে আসেন। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। শেষ অবধি খেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। নৈশালোকে খেলা হওয়া সত্ত্বেও দু-দলকে যুগ্ন জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
ভবানীপুর ক্লাবের পক্ষ থেকে সম্রাট মুখোপাধ্যায় পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, এই ঘটনার জন্য সম্পূর্ন দায়ী সিএবি। “প্রথম থেকে সিএবি যদি সতর্ক হত তাহলে এমন ঘটনা ঘটতো না। আসলে ভবানীপুরের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছে। দেখানো হয়েছে কীভাবে একটা দলকে সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার জন্য কত কী করা যায়।”
ইস্টবেঙ্গল কোচ আব্দুল মুনায়েম অবশ্য ঘটনার জন্য ইস্টবেঙ্গলের আচরণকে দায়ী করছেন। তঁার মতে, মাঠে যে আচরণ দেখিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট তা আশা করা যায় না। “ক্রিকেট মাঠে এমন ঘটনা আদৌ বাঞ্ছনীয় নয়। এভাবে স্লো ওভার করার কোনও মানে হয় না। এক ঘন্টায় কখনও তিন ওভার বল হতে পারে নাকি। এরচেয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত আর কিছু হতে পারে না। যাইহোক সময় নষ্ট করার একটা পদ্ধতি বাংলার ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এভাবে চললে বাংলার ক্রিকেটের ক্ষতি হবে।”তবে ক্রিকেটীয় কৌশলের কারণে ভবানীপুরকে দায়ী করতে ছাড়লেন না আব্দুল মুনায়েম। তঁার মতে, “ভবানীপুরের উচিত হয়নি এতক্ষণ ব্যাট করে যাওয়া। ৫০০ রান অতিক্রম করে গেলেই ইনিংস ঘোষণা করে দিতে পারত।”