ক্লাব নয়, দেশের হয়ে ট্রফি জয়কে বড় করে দেখতে চান ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। নেশনস লিগের ফাইনালে ফেবারিট স্পেনকে টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পর্তুগাল। ২০১৯ সালের পর ফের ২০২৫ সালে নেশনস লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভাগীদার হলেন রোনাল্ডো। মহাদেশীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া ধরলে পর্তুগালের হয়ে তিনটে ট্রফি পেলেন তিনি। প্রথমবার দেশের হয়ে তঁার ট্রফি ছিল ইউরো কাপ। ২০১৬ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল হলেও সেবার কিন্তু শেষাবধি মাঠে থাকতে পারেননি। চোটের কারণে মাঠ থেকে সেবার বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। রবিবারও ঘটেছে তাই। ম্যাচের শেষ অব্দি মাঠে ছিলেন না। টাইব্রেকারে অংশ নিতে পারেননি। তবে স্পেনের বিরুদ্ধে ফাইনালে ২-২ গোলে খেলা শেষ হওয়ার পেছনে তঁার অবদান থাকলো। দলের হয়ে দ্বিতীয় গোলটি তঁার। যখন দল ২-১ গোলে পিছিয়ে ছিল।
২৩ বছরের ক্লাব খেলাকালীন তঁার ট্রফি জয়ের সংখ্যা ৩২। দেশের হয়ে তৃতীয় ট্রফি জয়কে বড় করে তুলে ধরতে চান রোনাল্ডো। খেলার পর এক সাক্ষাতকারে পর্তুগালের কিংবদন্তী বলেন,“পর্তুগালের হয়ে ট্রফি জেতাকে আমি সবসময় এগিয়ে রাখব। আমার কাছে এই জার্সির গুরুত্ব অপরিসীম। মানছি, দেশের চেয়ে ক্লাবের হয়ে প্রচুর ট্রফি জিতেছি। কিন্তু দেশের হয়ে ট্রফি জেতার আনন্দ আলাদা। আমার কাছে এরচেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। ম্যাচ জেতার পর চোখে জল চলে আসা বলুন কিংবা দলকে জেতানোর জন্য সর্বস্তরে ঝঁাপিয়ে পড়া, সবকিছুর মধ্যে আলাদা একটা আবেগ থাকে। তারসঙ্গে ক্লাবের তুলনা চলে না।” মিউনিখের অালিয়াঞ্জ এরিনায় নেশনস লিগের ফাইনালে পর্তুগাল-স্পেন ম্যাচ নির্ধারিত সময়ে ছিল ২-২। পরে অতিরিক্ত সময়ের খেলাতেও ফলের কোনও পরিবর্তন হয়নি। তাই টাইব্রেকারে খেলার নিষ্পত্তি ঘটে। মজার ঘটনা হল, স্পেন প্রতিটি ক্ষেত্রে গোল করে প্রথমে এগিয়ে গিয়েছে। মার্তিন জুবিমেন্ডি ২১ মিনিটের মাথায় প্রথমে গোল করে স্পেনকে এগিয়ে দেন। পঁাচ মিনিটের ব্যবধানে সমতা ফিরিয়ে আনেন পর্তুগালের নুনো মেন্ডেস। বিরতির ঠিক আগে ফের গোল করে স্পেনকে মিকেল ওইয়ারসাবাল এগিয়ে দিলে ৬১ মিনিটে তা শোধ করে দেন রোনাল্ডো। টাইব্রেকারে পর্তুগালের পঁাচজন গনসালো রামোস, ভিতিনিয়া, ব্রুনো ফার্নান্দেজ, নুনো মেন্ডেজ ও রুবেন নেভেস গোল করেন। স্পেনের হয়ে প্রথম তিনটে গোল দেন মিকেল মেরিনো, অ্যালেক্স বায়েনা ও ইসকো। চতুর্থ শট নিতে যাওয়া আলভারো মোরাতার শট রুখে দেন গোলরক্ষক দিয়োগো কোস্তা। এরপর পঞ্চম শট নিতে গিয়ে নেভেস গোল করতেই খেলার ফয়সালা হয়ে যায়। টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে জিতে যায় পর্তুগাল।
স্পেনের ইয়ামাল যেন অসহায় দর্শক।
দেশের হয়ে ১৩৮টা গোল করা রোনাল্ডো খেলার শেষে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “এই ট্রফি জিতে কী যে আনন্দ পাচ্ছি তা ভাষায় বোঝাতে পারব না। বর্তমান প্রজন্মের জন্য এই ট্রফির খুব প্রয়োজন ছিল। আসলে এমন বড় শিরোপা পাওয়ার এরা যোগ্য। আমাদের পরিবার-সন্তানরা সব এখানে এসেছে। আমার স্ত্রী, ভাই, বন্ধুরাও এসেছে খেলা দেখতে। তাদের জন্য এই ট্রফি জিতে দারুন লাগছে।” ২০০৩ সালে পর্তুগালের হয়ে খেলা শুরু করেন রোনাল্ডো। বর্তমান তিনি খেলেন সৌদি আরবে। সৌদির আল নাসের ক্লাবের হয়ে খেলা রোনাল্ডো বলেন, “ম্যাচের আগে ওয়ার্ম আপ করার সময় ঠিকমতো স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। কেমন যেন গরম লাগছিল। তবু কাউকে কিছু বলিনি। দেশের হয়ে খেলার জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দিতে কুন্ঠাবোধ করিনা। এদিনও করিনি। আমার কাছে একটাই লক্ষ্য ছিল, ট্রফি জেতার জন্য পা যদি ভাঙে ভাঙুক। বড়সড় চোট পেলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু খেলতে হবে। এই মনোভাব নিয়ে ঝঁাপিয়েছি। সবসময় ভেবেছি, দেশের হয়ে খেলছি। কোনও ক্লাবের হয়ে নয়। আসলে পর্তুগালে মানুষের সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু আমাদের উচ্চাকাঙ্কা অনেক বড়। তাই আমরা লক্ষ্যে পৌছনোর জন্য কখনও পিছপা হইনা।”