ইংল্যান্ডে ভারতীয় দলের হোটেলে বসে হেড কোচ গৌতম গম্ভীর টিভিতে নিশ্চয় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল দেখেছেন। প্রথমদিনের খেলা দেখে তাঁর কি মনে হল! সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। ইংল্যান্ডের ভারি আবহাওয়ায় বাইশ গজে দাঁড়িয়ে ব্যাটসম্যানদের লড়াই করা সহজ হবে না। এটাই কি! ভারতীয় দল নিয়ে ইংল্যান্ড উড়ে যাওয়ার আগে গম্ভীর বলেছিলেন, আমার জীবনে সব সময় চ্যালেঞ্জ থাকে। এটা নিয়েই চলতে হয়। আর আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলতে ভালবাসি। তা হলে নিজের ভিতর থেকে সেরাটা বেরিয়ে আসে। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিন আফ্রিকার বিশ্ব টেসট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের প্রথমদিনের খেলার শেষে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি একথাই বলতেন। তবে ভাল হয়েছে ভারতীয় দল মাঠে নামার আগে এমন ম্যাচ দেখে নিতে পারলেন। এর ফলে আগাম ছক কেটে নেওয়া সুবিধা হবে। বিশেষ করে দক্ষিন আফ্রিকার কাগিসো রাবাডা পাঁচ উইকেট নিয়ে কেমন নজরে এলেন। তার পাল্টা দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বোলাররাও পিছিয়ে থাকলেন না। তাই টেস্টের প্রথমদিনে ১৪ উইকেট পড়ল। রান উঠল ২৬৫। বোঝাই যাচ্ছে ব্যাটে-বলের লড়াইয়ে কেউ এগিয়েবা পিছিয়ে থাকছে না। তবে অ্যডভান্টেজ অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া। এমন পরিসংখ্যান সামনে এনে শুধু ভারতীয় হেড কোচের কথা বলি কেন, দলের ক্রিকেটাররাও টিভিতে টেস্ট ম্যাচ দেখে আগাম ধারনা করে নিতে পারছেন। ইংল্যান্ডের উইকেটে বল বেশি সুইং করবে। সিম করবে। বাউন্স কতটা হবে, তার আন্দাজ আগে ভাগে করে নিয়ে ক্রিকেটাররা মাঠে নামতে পারছেন। তবে লর্ডসের মতো উইকেট হবে না লিডসে। ভারতীয় দল প্রথম টেস্ট ম্যাচ লিডসে খেলতে নামবে ২০ জুন। সেখানে বাউন্স বেশি হবে। যেমন অস্ট্রেলিয়ার মাঠে সিরিজের সূচি এমনভাবে তৈরি হয়েছিল যা প্রথম থেকে ভারতীয় দলকে চাপে রেখেছিল। বাউন্সি উইকেটে বিরাটদের নামানোর ছক তৈরি করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট কর্তারা। তবে প্রথম টেস্টে (পারথ) লাভ হয়নি। ভারতীয় দলের দাপটে অস্ট্রেলিয়া হারিয়ে যায়। সিরিজের বাকি ম্যাচে ভারত সেই সুবিধা নিয়ে এগোল কোথায়! সিরিজ ১-৩ ম্যাচে হেরে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার টিকিট হাতছাড়া করল। তার আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়ে কফিনে প্রথম পেরেক পোঁতা হয়ে গিয়েছিল। এই সিরিজ থেকে এবার নতুন সার্কেল শুরু হচ্ছে। রোহিত ও বিরাটহীন ভারতীয় দল টেস্টে কেমন খেলে, তার ছবি ইংল্যান্ডের মাঠে দেখা যাবে। মঙ্গলবার কেন্টের মাঠে গিলরা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে। এই ম্যাচে খেলতে নামার আগে পিচ কিউরেটরকে টিম ম্যানেজমেন্ট জানিয়েছে, উইকেটে বেশি ঘাস রাখা যাবে না। আবার পাটা উইকেট হবে না। এমন উইকেট চাই যেখানে ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি বোলাররাও সুবিধা পায়। কিউরেটর সেভাবেই উইকেট বানিয়েছেন। পিচে বেশি ঘাস নেই। বাউন্স থাকবে। যা বোলারদের শুরুতেই সাহায্য করবে। এখান থেকেই নোট বুক হাতে নিয়ে বসে পড়তে চলেছেন গম্ভীর। ইংল্যান্ডের আবহাওয়া নিয়ে দলের সকলের ধারনা আছে। অনেকে আগে ইংল্যান্ডে খেলেছেন। কেউ জাতীয় দলের হয়ে, কেউ কাউন্টি ক্রিকেটে। সেই ধারনা নিয়ে ক্রিকেটররা খেলতে নামবেন। আবহাওয়া কখনও ভারি, কখনও রোদ ঝলমলে হয় বলে আগাম আভাস পাওয়া যায় না উইকেট কেমন খেলবে। দক্ষিন আফ্রিকার বিরুদ্ধে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ৭২ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস খেলা ওয়েবস্টার বলছিলেন, এখানে শুরুতে ব্যাটিং করা কঠিন ছিল। বুঝতে পারছিলাম না বল কতটা সুইং করবে। কতটাই বাউন্স হবে। তাই অসুবিধা হচ্ছিল। কিন্তু উইকেটে দাঁড়িয়ে যেতে মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়েছিল। আমাকে সাহায্য করেছে ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতাও। সেটা নিয়েই দলের হয়ে বড় ইনিংস খেলতে পেরেছি। ভারতীয় ক্রিকেটাররা কি শুনছেন ওয়েবস্টারের কথা। শুনছেন সাই সুদর্শন! তিনি সারের হয়ে গত মরশুমে খেলেছেন। রানও করেছেন। টেস্ট অভিষেক লগ্নে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বড় ইনিংস খেলতে হবে। লর্ডসের থেকে বেশি বাউন্স থাকবে লিডসে। সেখানে খেলার ছক এখন থেকে মাথায় ঢুকিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে সারের ডিরক্টের অফ ক্রিকেট অ্যালেক স্টুয়ার্টের সঙ্গে কথাও বলে নিতে পারেন। জাতীয় দলের হয়ে দীর্ঘদিন খেলেছেন স্টুয়ার্ট। তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে পারে সুদর্শনের। এখন দেখার অপেক্ষা ভারতীয় দলের প্রস্তুতি কেমন হল। কারন সিরিজ শুরু হতে সপ্তাহখানেক বাকি। নিজেদের ভুল শুধরে ভারত মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছে।