লিওনেল মেসি নামক একজন ম্যাজিসিয়ান যদি দলে থাকে তাহলে প্রতিপক্ষের চক্ষু চড়কগাছ হবে না তা হয় নাকি। হলও ঠিক তাই। মেসির জাদুকরী ফ্রি-কিকের গোল জিতিয়ে দিল ইন্টার মায়ামিকে। ৮ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল দিয়ে বসেছিল পোর্তো। সেই ম্যাচ কিনা মেসি ঘুরিয়ে দিলেন। ইন্টার মায়ামি জিতল ২-১ ব্যবধানে। সেই সঙ্গে ক্লাব বিশ্বকাপের পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার পথও অনেকটা প্রশস্ত হল যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাবটির।
খেলা শুরুর ৮ মিনিটের মাথায় যখন পেনাল্টি থেকে গোল করে পোর্তো এগিয়ে গেল তখন মায়ামি সমর্থকদের মাথায় হাত। ওমোরোদিয়ান গোল করেন পেনাল্টি থেকে। হতাশ হবেন না কেন মায়ামির সমর্থকরা? প্রথম ম্যাচে আল হিলালের কাছে ড্র করে বসেছেন মেসিরা। দ্বিতীয় ম্যাচ না জিতলে ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে বিদায় একপ্রকার নিশ্চিত। সেই কঠিন পরিস্থিতি থেকে গেল প্রথম ৪৫ মিনিট। সকলে তখন ধরে নিয়েছেন, এই ম্যাচ পোর্তোর কপালে নাচছে। পুরো চাকাটাই ঘুরে গেল বিরতির পর। যখন ৪৭ ও ৫৪ মিনিটে গোল করে বসল মায়ামি। তার উপর আবার মেসির ট্রেডমার্ক ফ্রি-কিক থেকে গোল হতেই উল্লাসে ফেটে পড়লে আটলান্টার মার্সিডিজ বেঞ্জ স্টেডিয়াম। মায়ামি শুধু সেই মুহূর্তে এগিয়ে গেল তাই নয়, রেকর্ড গড়ে বসল। কি রেকর্ড? কনকাকাফ অঞ্চলের প্রথম ক্লাব হিসেবে ফিফার কোনও সরকারী প্রতিযোগিতায় ইউরোপের কোনও প্রতিপক্ষকে হারাল যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে খেলা কোনও দল।
খেলার শেষে আলিঙ্গনে আবদ্ধ হলেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।
৪৭ মিনিটে তেলেসকো সেগোভিয়ার গোল করে মায়ামিকে সমতায় ফিরিয়ে আনতেই দলের মধ্যে যাবতীয় হীনম্মন্যতা কেটে যায়। তার উপর বিরতির পর খেলা শুরু হওয়ার দু-মিনিটের মধ্যে এই গোল মায়ামির উপর চেপে থাকা যাবতীয় সংশয় তখন অনেকটা দূর হয়ে গিয়েছে। প্রথম গোল হওয়ার ৭ মিনিট পরেই সেই সন্ধিক্ষণ মুহূর্ত হাজির হয়। পেনাল্টি বক্সের বাইরে মেসিকে ফাউল করেছিলেন পোর্তোর এক ফুটবলার। রেফারি ফ্রি-কিক দেন মায়ামিকে। বল বসিয়ে যখন মেসি মারতে যাচ্ছেন তখনও অনেকে আশা করেননি, মেসির সেই জাদুকরী গোলের সাক্ষী হতে পারবেন। আর্জেন্টাইন তারকার শট জালে জড়িয়ে যেতেই পুরো স্টেডিয়াম যেন ভেঙে পড়ে। পোস্টের ডান দিকের কর্ণার দিয়ে বল চলে যায় জালে। পোর্তোর গোলকিপার তখন অসহায় এক দর্শক। সরাসরি ফ্রি-কিক থেকে মেসি গোল করলেন ৬৮টি। এই মুহূর্তে মেসির চেয়ে সরাসরি ফ্রি-কিকে গোল করার তালিকায় দুজন এগিয়ে আছেন। একজন হলেন ব্রাজিলিয়ান জুনিনিও (৭৭), অপরজন স্বয়ং ফুটবল সম্রাট পেলে (৭০)। এই গোলের সুবাদে মেসি মায়ামির হয়ে করে ফেললেন ৫০তম গোল। হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করতে মেসির ম্যাচ লাগলো ৬১।
দলকে জেতানোর পর স্বভাবতই মেসিকে ঘিরে উচ্ছ্বাস শুরু হয়ে যায়। সাংবাদিকরা মেসিকে ছেঁকে ধরতে তিনি বলেন, “প্রথম ম্যাচের পর আমরা সকলে যেন একটু ভেঙে পড়েছিলাম। গোলশূন্য ড্র কেউই মানতে চায়নি। তাই আজ খেলতে নামার আগে সকলে নিজেদের উপর আস্থা রেখেছিল। পরিশ্রমে কেউ খামতি করেনি। শুরুতে গোল খেলেও বাকি সময় আমাদের রক্ষণ কোনও সময়ের জন্য বিপক্ষ দলকে গোল করার রাস্তা তৈরি করে দেয়নি। সেই সঙ্গে আমাদের ছেলেরা বলের নিয়ন্ত্রণ খুব ভালভাবে রাখতে পেরেছিল। সুতরাং এই জয় এখন আমাদের উপভোগ করতে হবে। একটা গুরুত্বপূর্ণ জয় আমরা পেয়ে গেলাম।”
এ গ্রুপে ইন্টার মায়ামি, আল হিলাল, পোর্তো ও ব্রাজিলের দল পালমেইরাস রয়েছে। মায়ামির মতো পালমেইরাসের পয়েন্টও ৪। তবু তারা গোল পার্থক্যে এগিয়ে আছে বলে গ্রুপ টেবিলের শীর্ষে রয়েছে। ২৩ জুন পালমেইরাসের মুখোমুখি হবে মায়ামি। সেই ম্যাচ পরবর্তী রাউন্ডে ওঠার পথ পরিষ্কার করে দেবে। মায়ামি কোচ জাভিয়ের মাসচেরানো প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন মেসিকে। “মেসিকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার থাকতে পারে না। শুধু গোল করে দলকে জেতায় তাতো নয়। দেখায় কীভাবে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা যায়। প্রতিদ্বন্দ্বিতা চরমে নিয়ে যেতে হলে কার কী ভূমিকা হওয়া দরকার। গোল ক্ষুধা এখনও তার মধ্যে খুব প্রকট। যে কোনও ম্যাচ খেলুক না কেন, নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ থাকে যথেষ্ট। তাই মেসিকে নিয়ে সত্যিই বলার কিছু থাকতে পারে না। যাই বলিনা কেন, নতুন কিছু শোনাবে না। ফুটবলের ইতিহাসে মেসিকে সকলের সেরা মানতেই হবে। ওর মতো ফুটবলার দলে থাকলে কোচের কাজ অনেকটা হাল্কা হয়ে যায়। জয়ের তীব্র আকাঙ্খা দেখলে এখনও চমকে উঠি। ক্লান্ত ছিল, ছিল চোট-আঘাতও। তবু দলকে জেতাতে তার ভূমিকা থাকল সকলের চেয়ে বেশি।” বলেছেন মাসচেরানো।