হট ফেবারিট দলকে যখন কেউ অঘটন ঘটিয়ে বসায় তখন ফুটবলের মাহাত্ম্য বহুগুণ বেড়ে যায়। ঠিক যেমনটি ঘটলো পিএসজি বনাম বোতাফোগো ম্যাচে। অশ্বমেধের ঘোড়া হয়ে ছুটছিল ফরাসি দল। বিপক্ষে শুধু ধরাশায়ী করা নয়, গুঁড়িয়ে দিচ্ছিল। সেই পিএসজি কিনা হেরে বসল বোতাফোগোর কাছে। ৩৬ মিনিটে একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেন ইগর জেসুস। অথচ বাকি ৭০ মিনিটে সেই গোল কিনা পরিশোধ করতে পারল না ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হওয়া দল।
শুধু ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হওয়া দল তো তারা নয়, ট্রেবল জয়ী দল। যে দলে একগাদা তারকা। বিপক্ষ দলকে ৫,৪ গোলের ব্যবধানে ক্রমাগত হারাচ্ছে। তার মানে ছন্দের বাহার ঘটছে খেলায়। বোতাফোগো সেখানে দক্ষিণ আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব ক্লাব কোপা লিবের্তাদোরেস চ্যাম্পিয়ন হোক না কেন। কে বোতাফোগোকে পাত্তা দেয়। সকলেই ধরে নিয়েছিলেন পিএসজি কচুকাটা করবে দক্ষিণ আমেরিকার শ্রেষ্ঠ ক্লাবকে। ৩৬ মিনিটে সব অঙ্ক গুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন ইগর জেসুস জেফারসন সাভারিনোর পাশ থেকে গোলটি করে যান তিনি। শুধু জিতল তাই নয়, ক্লাব বিশ্বকাপে প্রথম শেষ ১৬-তে পৌছে গেল ব্রাজিলের ক্লাব। যেহেতু তারা গ্রুপের প্রথম ম্যাচে ২-১ গোলে হারিয়ে ছিল সিয়াটেল সাউন্ডার্সকে। দু ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে চলে গেল নকআউট পর্বে।
যদি ম্যাচের পরিসংখ্যান দেখা হয় তাহলে পিএসজি বল পজিসনে অনেক এগিয়ে ছিল। ৭৫ শতাংশ বলের দখল নিয়ে খেলেছে লুইস এনরিকের দল। শুধু তাই নয়, ১৬টা শট নিয়েছে বোতাফোগোর গোল লক্ষ্য করে। অন্যদিকে বোতাফোগোর বল পজিশন ছিল মাত্র ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে ৪টা শট নিয়েছে বোতাফোগো। সবগুলি ছিল গোল লক্ষ্য করে। আরও মজার ঘটনা হল, ম্যাচের আগে অপ্টার সুপারকম্পিউটার জয়ের সম্ভাবনার তালিকায় ৮১.৯ শতাংশ দিয়ে এগিয়ে রেখেছিল পিএসজিকে। অথচ ঘটলো ঠিক উল্টো। শেষ তিন ম্যাচে যারা কিনা ১২-০ গোলে জিতেছে, তারা যদি ব্রাজিলের দলের কাছে হেরে বসে তখন তো ফুটবলের মাহাত্ম্যের গুণগান গাইতেই হবে। মাঠে হাজির ছিলেন ৫৩ হাজার ৬৯৯জন। এই প্রথম দর্শকরা একটা ইতিহাসের সাক্ষী থাকলেন। দেখলেন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন দলকে কিনা হারাচ্ছে কনমেবলের কোন দল। শুধু তাই নয়, বোতাফোগো দেখিয়ে দিল, পিএসজিকে তারা হারানো ছাড়া অন্যকিছু ভাবে না। যেহেতু শেষবার দুটো দল মুখোমুখি হয়েছিল ১৯৮৪ সালের ৬ আগস্ট। যদিও ছিল প্রীতি ম্যাচ। সেই খেলায় বোতাফোগো ৩-১ গোলে জিতে যায়।
গোলদাতা জেসুসকে ঘিরে সতীর্থরা মেতে উঠেছেন উল্লাসে।
জয়ের নায়ক জেসুসকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে। গত চারটে আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিনি গোল করলেন। ২৪ বছরের জেসুসের কাছে গোল করার অনুভূতি জানতে গিয়ে শোনা যায়, দেয়াল বেয়ে উঠে যখন গোল করলেন তখন নিজেকে একজন স্বপ্নের নায়ক বলে মনে হয়েছে। “এই মুহূর্তে বলতে পারেন আমি একজন স্বপ্নের নায়ক। গোল করার পর মনে হচ্ছিল, সবকিছু যেন পাওয়া হয়ে গেল। যখন আমি দেওয়াল বেয়ে (পিএসজির ডিফেন্স ভেঙে) উঠলাম তখন চোখের সামনে সব যেন মুহূর্তের জন্য অন্ধকার হয়ে গেল। সেই সময় নিজেকে মনে করলাম আমি একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।” পরমুহূর্তে টিম ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে জেসুস বলেন, “আমি তঁাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যঁারা আমার উপর ভরসা রেখেছিলেন। ভেবেেছিলেন, আমাকে দিয়ে কিছু করা সম্ভব হবে। এখনও বলছি, বোতাফোগোতে যখন প্রথম আসি তখন অনেকে আমাকে পুরোপুরি ভরসা করতে পারেনি। সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে অনেকে আমাকে সেই সময় দেখেছেন। কিন্তু আমি জানতাম, কী করতে পারি। কীভাবে এই দলকে সাহায্য করা সম্ভব। তাই এই মুহূর্তে আমি একজন সবচেয়ে সুখী মানুষ।”